আপনারা অনুগ্রহের কারণে স্বাধীন হয়েছেন
“পাপ তোমাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে না; কারণ তোমরা . . . অনুগ্রহের অধীন।”—রোমীয় ৬:১৪.
১, ২. কীভাবে রোমীয় ৫:১২ পদ আমাদের সাহায্য করে?
রোমীয় ৫:১২ পদ বলে: “এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।” বাইবেলের এই পদের সঙ্গে আমরা খুব ভালোভাবে পরিচিত আছি আর বাইবেল সম্বন্ধে লোকেদের শিক্ষা দেওয়ার সময় আমরা প্রায়ই এই পদ ব্যবহার করে থাকি।
২ এই পদ বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ে অনেক বার ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের সন্তান ও অন্যদের সঙ্গে এই বইয়ের ৩, ৫ ও ৬ অধ্যায় আলোচনা করার সময় আমরা হয়তো রোমীয় ৫:১২ পদ পড়ে থাকি। কেন পৃথিবী এখন পরমদেশ নয়, কেন আমাদের মুক্তির মূল্য প্রয়োজন এবং কেন আমরা মারা যাই, তা বুঝতে তাদের সাহায্য করার জন্য আমরা সাধারণত এই পদ ব্যবহার করি। কিন্তু, এই পদ আমাদের সবাইকে যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের জন্য গভীরভাবে কৃতজ্ঞ হতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া, তাঁকে খুশি করার ব্যাপারে আমাদের আরও সংকল্পবদ্ধ হতে এবং তিনি আমাদের কাছে যা-কিছু প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেই বিষয়গুলোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে সাহায্য করে।
৩. আমাদের পাপপূর্ণ পরিস্থিতি সম্বন্ধে আমাদের কী মনে রাখতে হবে?
৩ দুঃখের বিষয় হল, আমরা সবাই পাপী। আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন ভুল করি। কিন্তু যিহোবা হলেন করুণাময়। আমরা যে অসিদ্ধ, তা তিনি জানেন আর তিনি আমাদের ক্ষমা করতে ইচ্ছুক। (গীত. ১০৩:১৩, ১৪) যিশু বলেছিলেন, আমাদের পাপের জন্য আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। (লূক ১১:২-৪) যিহোবা যখন আমাদের অতীতের ভুলগুলো ক্ষমা করেন, তখন সেগুলো নিয়ে আমাদের আর চিন্তা করে চলা উচিত নয়। আসুন আমরা দেখি, কীভাবে যিহোবা আমাদের ক্ষমা করতে পারেন।
আমরা অনুগ্রহের দ্বারা ক্ষমা লাভ করেছি
৪, ৫. (ক) রোমীয় ৫:১২ পদের অর্থ আরও ভালোভাবে বুঝতে কী আমাদের সাহায্য করে? (খ) “অনুগ্রহ” শব্দের অর্থ কী?
৪ রোমীয় ৫:১২ পদে প্রেরিত পৌল যা বলেছিলেন, তা বোঝার জন্য এই বইয়ের আগের ও পরের অধ্যায়গুলো থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাই। বিশেষভাবে রোমীয় ৬ অধ্যায় আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, কীভাবে যিহোবা আমাদের ক্ষমা করতে পারেন। এই বইয়ের ৩ অধ্যায়ে আমরা পড়ি: “সকলেই পাপ করিয়াছে . . . উহারা বিনামূল্যে তাঁহারই অনুগ্রহে, খ্রীষ্ট যীশুতে প্রাপ্য মুক্তি দ্বারা, ধার্ম্মিক গণিত হয়।” (রোমীয় ৩:২৩, ২৪) ‘অনুগ্রহ’ হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক শব্দটা যে-ধারণা প্রদান করে তা হল, কোনো প্রতিদান আশা না করে একজন ব্যক্তির প্রতি অসীম দয়ার কাজ করা, তার জন্য এমন কিছু করা, যা সেই ব্যক্তি নিজের যোগ্যতাবলে অর্জন করতে পারেন না।
৫ একজন পণ্ডিত ব্যক্তি ব্যাখ্যা করেছিলেন, গ্রিক শব্দটা প্রায়ই ঈশ্বর এবং খ্রিস্ট মানবজাতিকে পাপ ও মৃত্যু থেকে রক্ষা করার জন্য যা করেছেন, সেই বিষয়কে নির্দেশ করে। আসুন আমরা দেখি, ঈশ্বর আমাদের জন্য কী করেছেন আর কীভাবে তাঁর অনুগ্রহ এখন আমাদের উপকৃত করে এবং ভবিষ্যতের জন্য আশা প্রদান করে।
৬. কারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ থেকে উপকৃত হতে পারে এবং কীভাবে?
৬ আদম যেহেতু পাপ করেছিলেন, তাই প্রত্যেক অসিদ্ধ মানুষের উপর পাপ ও মৃত্যু প্রভাব ফেলেছে। এই কারণে বাইবেল বলে, “সেই একের অপরাধে . . . মৃত্যু রাজত্ব করিল।” কিন্তু, যিহোবা অসীম অনুগ্রহ দেখিয়েছেন এবং “এক ব্যক্তি দ্বারা, যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা” মানবজাতিকে উদ্ধার করার এক পথ জুগিয়েছেন। (রোমীয় ৫:১২, ১৫, ১৭) “এক ব্যক্তির আজ্ঞাবহতা দ্বারা অনেককে ধার্ম্মিক বলিয়া ধরা হইবে।” আর “যীশু খ্রীষ্ট, দ্বারা” তারা “অনন্ত জীবনের” প্রত্যাশা করতে পারে।—রোমীয় ৫:১৯, ২১.
৭. কেন মুক্তির মূল্য ঈশ্বরের কাছ থেকে অনুগ্রহের এক প্রকাশ?
৭ এই বিষয়টা চিন্তা করুন: যিহোবা মুক্তির মূল্য হিসেবে নিজের পুত্রকে দান করতে বাধ্য ছিলেন না। কিন্তু, আমাদের পাপ ও মৃত্যু থেকে রক্ষা করার জন্য এই মাধ্যম জোগানোর দ্বারা তিনি অসীম দয়া দেখিয়েছেন। আর ঈশ্বর ও যিশু আমাদের জন্য যা করেছেন, আমরা কেউই সেটার যোগ্য নই। তাঁরা আমাদের জন্য ক্ষমা লাভ করার ও চিরকাল বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করেছেন বলে আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ! আসুন, আমরা আমাদের জীবনযাপনের মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ
৮. কোন মনোভাব আমাদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে?
৮ আমরা জানি, ঈশ্বর আমাদের পাপ ক্ষমা করতে ইচ্ছুক আছেন, এমনকী গুরুতর পাপও। কিন্তু, যিহোবার অনুগ্রহকে আমরা কখনো লম্পটতায় পরিণত করিবার বা অন্যায় করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করব না ও এমন চিন্তা করব না, ‘যিহোবা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।’ প্রথম শতাব্দীতে, এমনকী প্রেরিতদের মধ্যে কেউ কেউ বেঁচে থাকার সময়ও, কোনো কোনো খ্রিস্টানের মধ্যে এই ধরনের মনোভাব ছিল। (পড়ুন, যিহূদা ৪.) বর্তমানে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন আমরা এই ধরনের ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবিত না হই ও ধীরে ধীরে সেভাবে চিন্তা করতে শুরু না করি।
৯, ১০. কীভাবে পৌল ও অন্যান্য খ্রিস্টান পাপ ও মৃত্যু থেকে স্বাধীন হয়েছিলেন?
৯ পৌল খ্রিস্টানদের বলেছিলেন, তারা যদি পাপ করেই চলেন আর এমন চিন্তা করেন যে, ঈশ্বর তাদের ক্ষমা করে দেবেন, তা হলে সেটা ভুল হবে। তিনি বলেছিলেন, তাদের এই ধরনের চিন্তা প্রত্যাখ্যান করা উচিত কারণ তারা ‘পাপের সম্বন্ধে মরিয়াছেন।’ (পড়ুন, রোমীয় ৬:১, ২.) তিনি কী বুঝিয়েছিলেন?
১০ ঈশ্বর মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে পৌল ও প্রথম শতাব্দীর অন্যান্য খ্রিস্টানের পাপ ক্ষমা করেছিলেন। যিহোবা তাদেরকে তাঁর সন্তান হওয়ার জন্য পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত করেছিলেন। তারা যদি বিশ্বস্ত থাকেন, তা হলে তারা স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে রাজত্ব করবেন। কিন্তু, তারা যেহেতু তখনও পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন, তা হলে কীভাবে তারা ‘পাপের সম্বন্ধে মরিয়াছেন’? পৌল এখানে একটা তুলনা ব্যবহার করে দেখিয়েছিলেন যে, তাদের জীবনধারা পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, যিশু মারা যাওয়ার পর, একজন অমর আত্মিক ব্যক্তি হিসেবে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। তাই, “তাঁহার উপরে মৃত্যুর আর কর্ত্তৃত্ব” ছিল না। একইভাবে, খ্রিস্টানরাও রূপকভাবে মারা গিয়েছিলেন। তাদের জীবন পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল কারণ তারা আর পাপপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত হতে দেননি। তখন থেকে তারা এমন উপায়ে জীবনযাপন করার জন্য যথাসাধ্য করেছিলেন, যা ঈশ্বরকে খুশি করে। তারা “পাপের সম্বন্ধে মৃত, কিন্তু খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের সম্বন্ধে জীবিত” ছিলেন।—রোমীয় ৬:৯, ১১.
১১. কীভাবে বর্তমানে খ্রিস্টানরা ‘পাপের সম্বন্ধে মরিয়াছে’?
১১ আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? কীভাবে আমরা ‘পাপের সম্বন্ধে মরিয়াছি’? যিহোবা আমাদের কাজকে কীভাবে দেখেন, তা চিন্তা না করেই আমরা হয়তো অতীতে অনেক অন্যায় করেছি। আমরা “অশুচিতার ও অধর্ম্মের কাছে দাসরূপে” ছিলাম অর্থাৎ “পাপের দাস” ছিলাম। (রোমীয় ৬:১৯, ২০) কিন্তু, ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কোন ধরনের জীবনযাপন আশা করেন তা যখন আমরা বাইবেল থেকে জানতে পেরেছিলাম, তখন আমরা নিজেদের জীবনকে পরিবর্তন করেছিলাম, তাঁর কাছে নিজেদের উৎসর্গ করেছিলাম ও বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে যিহোবার বাধ্য হওয়ার ও তাঁকে খুশি করে এমন উপায়ে জীবনযাপন করার এক দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠেছিল। আমরা ‘পাপ হইতে স্বাধীনীকৃত হইয়াছিলাম’ ও ‘ধার্ম্মিকতার দাস হইয়াছিলাম।’—রোমীয় ৬:১৭, ১৮.
১২. আমাদের প্রত্যেককে কোন বাছাই করতে হয়?
১২ তবে, আমাদের কাছে বাছাই করার মতো একটা বিষয় রয়েছে। পৌল বলেছিলেন: “পাপ তোমাদের মর্ত্ত্য দেহে রাজত্ব না করুক—করিলে তোমরা তাহার অভিলাষ-সমূহের আজ্ঞাবহ হইয়া পড়িবে।” (রোমীয় ৬:১২) আমরা হয় নিজেদের পাপপূর্ণ চিন্তাভাবনা ও আকাঙ্ক্ষার কাছে নতিস্বীকার করতে পারি কিংবা সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি নিজের মন্দ আকাঙ্ক্ষাকে এতটাই বৃদ্ধি পেতে দিই যে, এর ফলে আমি মন্দ কাজ করে ফেলি? না কি আমি সঙ্গেসঙ্গে সেই আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করি?’ আমরা যদি ঈশ্বরের অনুগ্রহের জন্য গভীরভাবে কৃতজ্ঞ হই, তা হলে আমরা তাঁকে খুশি করার জন্য যথাসাধ্য করব।
আপনি পাপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারেন
১৩. কেন আমরা এই আস্থা রাখতে পারি, আমরা যা সঠিক তা করতে পারব?
১৩ প্রথম শতাব্দীতে, করিন্থের লোকেদের মধ্যে কেউ কেউ চোর, সমকামী, ব্যভিচারী, প্রতিমাপূজক ও মাতাল ছিল। কিন্তু তারা যিহোবা সম্বন্ধে জেনে তাঁকে ভালোবাসতে শুরু করেছিল এবং নিজেদের পরিবর্তন করেছিল। তারা তাদের আগের কাজের জন্য লজ্জিত হয়েছিল। (রোমীয় ৬:২১; ১ করি. ৬:৯-১১) রোমের খ্রিস্টানদেরও একই ধরনের পরিবর্তন করা প্রয়োজন ছিল। পৌল তাদের বলেছিলেন: “আর আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অধার্ম্মিকতার অস্ত্ররূপে পাপের কাছে সমর্পণ করিও না, কিন্তু আপনাদিগকে মৃতদের মধ্য হইতে জীবিত জানিয়া ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ কর, এবং আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধার্ম্মিকতার অস্ত্ররূপে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ কর।” (রোমীয় ৬:১৩) পৌল নিশ্চিত ছিলেন, তারা যা সঠিক তা করতে পারবে এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ থেকে ক্রমাগত উপকৃত হবে।
১৪, ১৫. নিজেদেরকে আমাদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?
১৪ বর্তমানেও একই বিষয় বলা যায়। আমাদের ভাই ও বোনদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো করিন্থের লোকেদের মতো জীবনযাপন করত। কিন্তু যিহোবা সম্বন্ধে জানার পর, তারা নিজেদের পরিবর্তন করেছিল। এটা এমন ছিল যেন তারা নিজেদের ধৌত করেছে। যিহোবাকে খুশি করার জন্য আমরা সবাই জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন করেছিলাম। আর এখনও আমরা দেখাতে চাই, ঈশ্বরের অনুগ্রহের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তাই, আমরা নিজেদের মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ও আমাদের জীবনকে যিহোবার সেবায় ব্যবহার করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।
১৫ আমাদের অবশ্যই সেইসমস্ত গুরুতর পাপ করা এড়িয়ে চলতে হবে, যা করিন্থের কেউ কেউ করেছিল। আমরা এমনটা আশা করতে পারি না, আমরা এসব কাজ করে চলব আর একইসময়ে ঈশ্বর অনুগ্রহ দেখিয়ে আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু সেইসমস্ত পাপের বিষয়ে কী বলা যায়, যেগুলোকে কেউ কেউ হয়তো অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর বলে মনে করে? আমরা কি সমস্ত বিষয়ে যিহোবার বাধ্য হওয়ার জন্য যথাসাধ্য করার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?—রোমীয় ৬:১৪, ১৭.
১৬. প্রথম করিন্থীয় ৬:৯-১১ পদে উল্লেখ করা হয়নি এমন পাপগুলোও যে আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে, তা আমরা কীভাবে জানি?
১৬ প্রেরিত পৌলের কথা চিন্তা করুন। তিনি লিখেছিলেন: “আমি মাংসময়, পাপের অধীনে বিক্রীত। কারণ আমি যাহা সাধন করি, তাহা জানি না; কেননা আমি যাহা ইচ্ছা করি, তাহাই যে কাজে করি, এমন নয়, বরং যাহা ঘৃণা করি, তাহাই করি।” (রোমীয় ৭:১৪, ১৫) পৌল যদিও ১ করিন্থীয় ৬:৯-১১ পদে উল্লেখিত বিষয়গুলো করছিলেন না, তবে তিনি স্বীকার করেছিলেন, তিনি পাপ করছেন। তিনি যিহোবাকে খুশি করতে চেয়েছিলেন আর তাই মন্দ বিষয় করার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। (পড়ুন, রোমীয় ৭:২১-২৩.) আসুন, আমরা তার উদাহরণ অনুকরণ করি এবং যিহোবার বাধ্য হওয়ার জন্য যথাসাধ্য করি।
১৭. কেন আপনি সৎ হতে চান?
১৭ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা জানি, যিহোবাকে সেবা করার জন্য আমাদের সৎ হতে হবে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১৪:৫; ইফিষীয় ৪:২৫.) আমরা শয়তানের মতো হতে চাই না, যে হল “মিথ্যাবাদী ও তাহার পিতা।” আর আমাদের এটাও মনে আছে, অননিয় ও তার স্ত্রী মিথ্যা বলার কারণে মারা গিয়েছিলেন। তাই, আমরা মিথ্যা কথা বলি না। (যোহন ৮:৪৪; প্রেরিত ৫:১-১১) কিন্তু সততার সঙ্গে, মিথ্যা না বলার চেয়েও বেশি কিছু জড়িত। আমরা যদি ঈশ্বরের অনুগ্রহের জন্য সত্যিই কৃতজ্ঞ থাকি, তা হলে আমরা অন্যান্য ক্ষেত্রেও সৎ হব।
১৮, ১৯. সৎ হওয়ার অর্থ কী?
১৮ একজন ব্যক্তি মিথ্যা না বলেও অসৎ হতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ, যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “তোমরা চুরি করিও না, এবং আপন আপন স্বজাতীয়কে বঞ্চনা করিও না, ও মিথ্যা কথা কহিও না।” কেন তাদের এই আজ্ঞা পালন করা প্রয়োজন ছিল? যিহোবা বলেছিলেন: “তোমরা পবিত্র হও, কেননা আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর পবিত্র।” (লেবীয়. ১৯:২, ১১) আমরা হয়তো মিথ্যা কথা বলি না, কিন্তু আমরা যদি অন্যদের এমন ধারণা দিতে চাই যা পুরোপুরি সত্য নয়, তা হলেও আমরা বঞ্চনা বা প্রতারণা করার মাধ্যমে অসৎ আচরণ করি।
১৯ উদাহরণ স্বরূপ, একজন ব্যক্তি তার কর্মকর্তাকে অথবা সহকর্মীদের বলেন, তাকে আজকে কাজ থেকে একটু আগে চলে যেতে হবে কারণ ডাক্তারের সঙ্গে তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। কিন্তু আসল কারণ সেটা নয়। যেহেতু তিনি পরের দিন থেকে ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন, তাই আজ তিনি একটু আগে বের হয়ে যেতে চান। তিনি যে-‘অ্যাপয়েন্টমেন্টের’ কথা বলছেন, সেটা হচ্ছে, তাকে একটু ফার্মেসিতে যেতে হবে কিংবা হাসপাতাল থেকে তার রিপোর্ট আনতে হবে। তিনি কি সততা দেখাচ্ছেন, না কি অন্যদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন? এই ব্যক্তি অন্যদের এমন ধারণা দিয়েছেন, যা সত্য নয়। কখনো কখনো, লোকেরা কোনো কিছু পাওয়ার জন্য অথবা শাস্তি এড়ানোর জন্য অন্যদের সঙ্গে প্রতারণা করে। কিন্তু আমরা যিহোবার বাধ্য হই, যিনি বলেছিলেন: “বঞ্চনা করিও না।” তাই আমরা সেই বিষয়গুলো করতে চাই, যেগুলোকে তিনি সঠিক ও পবিত্র বলে গণ্য করেন।—রোমীয় ৬:১৯.
২০, ২১. আমরা যদি ঈশ্বরের অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ হই, তা হলে আমাদের আর কী এড়িয়ে চলতে হবে?
২০ আমরা নিশ্চিতভাবেই পারদারিকতা, মত্ততা ও অন্যান্য গুরুতর পাপ এড়িয়ে চলি। কিন্তু একইসময়ে, আমরা এমন যেকোনো কিছু করাও এড়িয়ে চলতে চাই, যা যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করে। যেমন, আমরা শুধু যৌন অনৈতিকতাই এড়িয়ে চলি না কিন্তু সেইসঙ্গে আমরা অনৈতিক আমোদপ্রমোদও এড়িয়ে চলি। আমরা শুধু মাতাল হওয়াই এড়িয়ে চলি না কিন্তু সেইসঙ্গে মাতাল হওয়ার পর্যায় পর্যন্ত যাওয়াও এড়িয়ে চলি। এই ধরনের প্রলোভন প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের অনেক প্রচেষ্টা করার প্রয়োজন হতে পারে, তবে এগুলো প্রতিরোধ করা অসম্ভব নয়।
২১ আমরা পৌলের কথা অনুসরণ করার লক্ষ্যস্থাপন করি, যিনি বলেছিলেন: “পাপ তোমাদের মর্ত্ত্য দেহে রাজত্ব না করুক—করিলে তোমরা তাহার অভিলাষ-সমূহের আজ্ঞাবহ হইয়া পড়িবে।” (রোমীয় ৬:১২; ৭:১৮-২০) এটা ঠিক, আমরা সমস্ত পাপ এড়িয়ে চলতে পারি না। তবে আমরা যখন সমস্ত ধরনের পাপের বিরুদ্ধে লড়াই করি, তখন আমরা দেখাই যে, ঈশ্বর ও খ্রিস্ট আমাদের প্রতি যে-অনুগ্রহ দেখিয়েছেন, সেটার জন্য আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ।
২২. আমরা যদি ঈশ্বরের অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ হই, তা হলে আমরা কোন পুরস্কার প্রত্যাশা করতে পারি?
২২ যিহোবা আমাদের পাপ ক্ষমা করেছেন আর তিনি ক্রমাগত তা করতে পারেন। তাঁর অনুগ্রহের জন্য আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ! তাই আসুন, আমরা সেই বিষয়গুলো এড়িয়ে চলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি, যেগুলোকে অন্যেরা পাপ বলে মনে না করলেও, যিহোবা মন্দ বলে গণ্য করেন। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা কোন পুরস্কার প্রত্যাশা করতে পারি? পৌল বলেছিলেন: “এখন পাপ হইতে স্বাধীনীকৃত হইয়া, এবং ঈশ্বরের দাস হইয়া তোমরা পবিত্রতার জন্য ফল পাইতেছ, এবং তাহার পরিণাম অনন্ত জীবন।”—রোমীয় ৬:২২.