নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করুন!
“হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ।” —প্রকা. ৪:১১.
১, ২. আমাদের প্রত্যেককে কোন বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
আমরা যেমন আগের প্রবন্ধে আলোচনা করেছি, দিয়াবল দাবি করে, যিহোবা মানবজাতির উপর শাসন করার যোগ্য নন। সে বলে যে, যিহোবা ন্যায্যভাবে শাসন করেন না আর মানুষ যদি নিজেরাই নিজেদের উপর শাসন করে, তা হলে তারা আরও সুখী হবে। শয়তানের কথাগুলো কি সঠিক? কল্পনা করুন, মানুষ যদি নিজেরাই নিজেদের উপর শাসন করতে পারত এবং চিরকাল বেঁচে থাকতে পারত, তা হলে ঈশ্বরের শাসনের অধীনে তারা যতটা সুখী হতে পারে, সেটার চেয়ে তারা কি আরও বেশি সুখী হতে পারত? আপনি যদি চিরকাল বেঁচে থাকতে পারতেন এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে পুরোপুরি স্বাধীন হতেন, তা হলে আপনি কি আরও সুখী হতেন?
২ কেউই আপনার হয়ে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারে না। আমাদের প্রত্যেককেই এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে। এরপর, আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট হওয়া উচিত যে, যিহোবার শাসন করার পদ্ধতি হল সর্বোত্তম আর তিনি আমাদের আন্তরিক সমর্থন লাভ করার যোগ্য। আমরা বাইবেল পড়ার মাধ্যমে এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি। আসুন আমরা এখন দেখি, নিখিলবিশ্বের উপর যিহোবার শাসন করার অধিকার সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে।
যিহোবার শাসন করার অধিকার রয়েছে
৩. কেন যিহোবার নিখিলবিশ্বের শাসক হওয়ার অধিকার রয়েছে?
৩ যিহোবা হলেন নিখিলবিশ্বের একমাত্র স্বামিন বা শাসক কারণ তিনি হলেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এবং সৃষ্টিকর্তা। (১ বংশা. ২৯:১১; প্রেরিত ৪:২৪) একটা স্বর্গীয় দর্শনে দেখানো হয়েছিল, খ্রিস্টের ১,৪৪,০০০ জন সহ-শাসক এই কথাগুলো বলছেন: “হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।” (প্রকা. ৪:১১) যিহোবা সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন আর তাই পৃথিবীতে অথবা স্বর্গে প্রত্যেকের উপর তাঁর শাসন করার অধিকার রয়েছে।
৪. কেন স্বাধীন ইচ্ছা আমাদের ঈশ্বরের বিরোধিতা করার অধিকার দেয় না?
৪ শয়তান কোনো কিছু সৃষ্টি করেনি। তাই, নিখিলবিশ্বের উপর শাসন করার কোনো অধিকার তার নেই। শয়তান এবং প্রথম মানবদম্পতি যখন নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারের বিরোধিতা করেছিল, তখন তারা প্রত্যেকেই খুবই উদ্ধত মনোভাব দেখিয়েছিল। (যির. ১০:২৩) তাদের স্বাধীন ইচ্ছা কি যিহোবার শাসন ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করার অধিকার দিয়েছিল? না। স্বাধীন ইচ্ছা একজন ব্যক্তিকে বিভিন্ন বাছাই করার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দেয় কিন্তু এটা তাকে আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবার বিরোধিতা করার অধিকার দেয় না। স্পষ্টতই, ঈশ্বরের বিরোধিতা করার অর্থ হল স্বাধীন ইচ্ছার অপব্যবহার করা। মানুষ হিসেবে আমাদের যিহোবার শাসন ও নির্দেশনার প্রয়োজন।
৫. কেন ঈশ্বরের সিদ্ধান্তগুলো সবসময় ন্যায্য?
৫ যিহোবার যে শাসন করার অধিকার রয়েছে, সেই বিষয়ে আরেকটা কারণ বিবেচনা করুন। তিনি নিখুঁত ন্যায়বিচারের সঙ্গে তাঁর কর্তৃত্ব ব্যবহার করেন। তিনি আমাদের বলেন: “আমি সদাপ্রভু পৃথিবীতে দয়া, বিচার ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করি, কারণ ঐ সকলে আমি প্রীত।” (যির. ৯:২৪) কোনটা সঠিক, যিহোবার তা নির্ণয় করার জন্য মানুষের তৈরি কোনো আইনের সাহায্যের প্রয়োজন নেই। এর পরিবর্তে, কোনটা সঠিক সেই বিষয়ে তিনি নিজে মান স্থাপন করেন। আর তাঁর নিখুঁত ন্যায়বিচারের উপর ভিত্তি করে, যিহোবা মানুষকে বিভিন্ন আইন দেন। গীতরচক বলেছিলেন: “ধর্ম্মশীলতা ও ন্যায়বিচার তোমার সিংহাসনের ভিত্তিমূল।” তাই, যিহোবার কাছ থেকে আসা প্রত্যেকটা আইন, নীতি ও সিদ্ধান্ত হল ন্যায্য। (গীত. ৮৯:১৪; ১১৯:১২৮) শয়তান দাবি করে, যিহোবা ন্যায্য শাসক নন। অথচ, শয়তান নিজেও জগতে ন্যায় আনতে পারেনি।
৬. কোন কারণে যিহোবার শাসন করার অধিকার রয়েছে?
৬ যিহোবার যে শাসন করার অধিকার রয়েছে, সেই বিষয়ে আরেকটা কারণ হল, নিখিলবিশ্বের যত্ন নেওয়ার মতো জ্ঞান ও প্রজ্ঞা তাঁর রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, তিনি তাঁর পুত্রকে সেইসমস্ত রোগ সারানোর ক্ষমতা দিয়েছিলেন, যেগুলো কোনো ডাক্তার সারাতে পারেনি। (মথি ৪:২৩, ২৪; মার্ক ৫:২৫-২৯) যদিও আমাদের জন্য এগুলো হল অলৌকিক কাজ, কিন্তু যিহোবার কাছে এগুলো কোনো অলৌকিক কাজ ছিল না। আমাদের শরীর কীভাবে কাজ করে, তা তিনি বোঝেন আর তাই তিনি শরীরের যেকোনো ক্ষতি পূরণ করতে পারেন। এ ছাড়া, তিনি মৃত ব্যক্তিদের জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ করতে পারেন।
৭. কীভাবে যিহোবা শয়তানের জগতের যেকোনো ব্যক্তির চেয়ে আরও বিজ্ঞ?
৭ শয়তানের শাসনের অধীনে থাকা জগৎ শান্তি আনতে পারে না, হোক তা একটা দেশের মধ্যে অথবা বিভিন্ন দেশের মধ্যে। কেবল যিহোবার কাছেই বিশ্বব্যাপী শান্তি স্থাপন করার মতো প্রজ্ঞা রয়েছে। (যিশা. ২:৩, ৪; ৫৪:১৩) আমরাও প্রেরিত পৌলের মতো অনুভব করি, যিনি বলেছিলেন: “আহা! ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কেমন অগাধ! তাঁহার বিচার সকল কেমন বোধাতীত! তাঁহার পথ সকল কেমন অননুসন্ধেয়!”—রোমীয় ১১:৩৩.
যিহোবার শাসন ব্যবস্থা সর্বোত্তম
৮. যিহোবার শাসন করার পদ্ধতি সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন?
৮ আমরা যেমনটা দেখলাম, বাইবেল স্পষ্টভাবে দেখায় যে, যিহোবার শাসন করার অধিকার রয়েছে। এটি এও দেখায়, কেন তিনি হলেন সর্বোত্তম শাসক। এর একটা কারণ হল, তিনি প্রেমের সঙ্গে শাসন করেন। আমরা যখন এই বিষয়ে চিন্তা করি যে, তিনি “স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে [“অনুগত প্রেমে,” NW] ও সত্যে মহান্,” তখন আমরা তাঁর আরও নিকটবর্তী বোধ করি। (যাত্রা. ৩৪:৬) ঈশ্বর আমাদের প্রতি মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে আচরণ করেন। আমরা নিজেদের যতটা যত্ন নিতে পারি, তার চেয়ে তিনি আমাদের আরও ভালো যত্ন নেন। দিয়াবল বলে যে, যিহোবা তাঁর দাসদের মঙ্গল করতে অস্বীকার করেন বা তাদের ভালো বিষয় থেকে বঞ্চিত করেন কিন্তু এটা আসলে একটা মিথ্যা। ঈশ্বর এমনকী তাঁর প্রিয় পুত্রকে দান করেছিলেন, যেন আমরা চিরকাল বেঁচে থাকার আশা লাভ করতে পারি।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৮৪:১১; রোমীয় ৮:৩২.
৯. কীভাবে আমরা জানি যে, ঈশ্বর ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে আমাদের জন্য চিন্তা করেন?
৯ যিহোবা তাঁর সমস্ত লোককে একটা দল হিসেবে ভালোবাসেন। কিন্তু, একইসময় তিনি প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিও প্রচুর আগ্রহ দেখান। প্রাচীন কালে কী ঘটেছিল, তা বিবেচনা করুন। প্রায় তিন-শো বছর ধরে যিহোবা বিচারকদের ব্যবহার করেছিলেন, যেন তারা তাঁর জাতিকে নির্দেশনা দিতে পারে এবং তাদের শত্রুদের পরাজিত করতে পারে। তবে, এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে, যিহোবা বিভিন্ন ব্যক্তি-বিশেষের প্রতিও মনোযোগ দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন রূৎ নামে এক মহিলা। তিনি একজন ন-ইস্রায়েলীয় ব্যক্তি ছিলেন আর যিহোবার উপাসক হওয়ার জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করেছিলেন। যিহোবা তাকে একজন উত্তম স্বামী ও একটা পুত্রসন্তান দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। কিন্তু এর চেয়েও বড়ো বিষয়, রূতের পুত্রসন্তান সেই বংশের একজন ছিলেন, যে-বংশের মাধ্যমে মশীহ এসেছিলেন। এ ছাড়া, যিহোবা রূতের জীবনকাহিনি বাইবেলে লিপিবদ্ধ করিয়েছিলেন আর সেই বইটা তারই নামে নামকরণ করা হয়েছিল। আপনার কী মনে হয়, রূৎ যখন আবার জীবিত হবেন এবং এই সমস্ত বিষয় সম্বন্ধে জানতে পারবেন, তখন তার অনুভূতি কেমন হবে?—রূৎ. ৪:১৩; মথি ১:৫, ১৬.
১০. কেন আমরা বলতে পারি যে, যিহোবার শাসন ব্যবস্থা কঠোর নয়?
১০ যিহোবার শাসন ব্যবস্থা কঠোর নয়। এর পরিবর্তে, যারা তাঁর বাধ্য থাকে, তারা স্বাধীনতা ও আনন্দ উপভোগ করে। (২ করি. ৩:১৭) দায়ূদ যিহোবার বিষয়ে বলেছিলেন: “প্রভা ও প্রতাপ তাঁহার অগ্রবর্ত্তী, শক্তি ও আনন্দ তাঁহার বাসস্থানে বিদ্যমান।” (১ বংশা. ১৬:৭, ২৭) গীতরচক এথন লিখেছিলেন: “ধন্য সেই প্রজারা, যাহারা সেই আনন্দধ্বনি জানে, হে সদাপ্রভু, তাহারা তোমার মুখের দীপ্তিতে গমনাগমন করে। তাহারা সমস্ত দিন তোমার নামে উল্লাস করে, তাহারা তোমার ধর্ম্মশীলতায় উন্নত হয়।”—গীত. ৮৯:১৫, ১৬.
১১. কীভাবে আমরা আরও বেশি নিশ্চিত হতে পারি যে, নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার শাসন হল সর্বোত্তম?
১১ আমরা যত বেশি যিহোবার মঙ্গলভাব নিয়ে ধ্যান করি, তত বেশি এই বিষয়ে নিশ্চিত হই যে, তাঁর শাসন হল সর্বোত্তম। আমরা সেই গীতরচকের মতো অনুভব করি, যিনি ঈশ্বরকে বলেছিলেন: “তোমার প্রাঙ্গণে এক দিনও সহস্র দিন অপেক্ষা উত্তম।” (গীত. ৮৪:১০) যিহোবা আমাদের গঠন করেছেন ও সৃষ্টি করেছেন আর তাই তিনি একেবারে সঠিকভাবে জানেন, কোন বিষয়গুলো আমাদের আনন্দিত করবে। তিনি উদারভাবে আমাদের প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি বিষয় দেন। যিহোবা আমাদের যা-কিছু করতে বলেন, সেগুলো আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। আমাদের যদি এমনকী বিভিন্ন ত্যাগস্বীকারও করতে হয়, তবুও আমরা যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকলে সবসময় আনন্দিত থাকব।—পড়ুন, যিশাইয় ৪৮:১৭.
১২. কোন প্রধান কারণে আমরা নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করি?
১২ আমরা বাইবেল থেকে জানতে পারি, খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের পর, কেউ কেউ নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারের বিরোধিতা করবে। (প্রকা. ২০:৭, ৮) কী তাদের এমনটা করতে পরিচালিত করবে? সেই সময়, দিয়াবল মানুষকে স্বার্থপরভাবে কাজ করতে প্ররোচিত করার চেষ্টা করবে। সে সবসময়ই এমনটা করে এসেছে। সে হয়তো লোকেদের এই বিষয়ে নিশ্চিত করানোর চেষ্টা করবে যে, তারা যিহোবার প্রতি বাধ্য না হয়েই চিরকাল বেঁচে থাকতে পারবে। এটা কখনোই সত্য হতে পারে না। কিন্তু, আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘আমি কি এইরকম একটা মিথ্যা কথা বিশ্বাস করব?’ আমরা যদি সত্যিই যিহোবাকে ভালোবাসি এবং এই বিষয়ে নিশ্চিত হই যে, তিনি হলেন মঙ্গলময় এবং নিখিলবিশ্বের উপর তাঁর শাসন করার অধিকার রয়েছে, তা হলে এইরকম একটা মিথ্যা আমাদের কাছে এক ঘৃণার্হ বিষয় হবে। আমরা কেবল যিহোবার শাসনের অধীনে বাস করতে চাইব, যিনি প্রেমের সঙ্গে শাসন করেন।
নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে ঈশ্বরের অধিকারকে অনুগতভাবে সমর্থন করুন
১৩. কীভাবে আমরা সেইসময় নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে ঈশ্বরের অধিকারকে সমর্থন করি, যখন আমরা তাঁকে অনুকরণ করি?
১৩ আমরা যেমনটা দেখেছি, যিহোবার শাসন করার অধিকার রয়েছে এবং তাঁর শাসন করার পদ্ধতি হল সর্বোত্তম। নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে তাঁর অধিকার আমাদের পূর্ণ সমর্থন লাভ করার যোগ্য। আমরা সেইসময় এর প্রতি আমাদের সমর্থন দেখাই, যখন আমরা যিহোবার প্রতি অনুগত থাকি এবং তাঁকে অনুকরণ করি। আমরা যখন যিহোবার মতো করে বিভিন্ন কাজ করার জন্য যথাসাধ্য করি, তখন আমরা দেখাই যে, আমরা তাঁকে ভালোবাসি এবং তাঁর শাসন করার পদ্ধতিকে সমর্থন করি।—পড়ুন, ইফিষীয় ৫:১, ২.
১৪. কীভাবে প্রাচীনরা এবং পরিবারের মস্তকরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারেন?
১৪ বাইবেল থেকে আমরা শিখি, যিহোবা সবসময় তাঁর ক্ষমতাকে এক প্রেমময় উপায়ে ব্যবহার করেন। পরিবারের মস্তকরা এবং প্রাচীনরা, যারা নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে ভালোবাসেন, তারা তাঁকে অনুকরণ করবেন এবং কঠোর কিংবা নিয়ন্ত্রণপ্রবণ হবেন না। ঈশ্বর এবং তাঁর পুত্রকে অনুকরণ করার জন্য প্রেরিত পৌল কঠোর প্রচেষ্টা করেছিলেন। (১ করি. ১০:৩৪) তিনি অন্যদের লজ্জায় ফেলেননি অথবা যা সঠিক, তা করার জন্য অন্যদের জোর করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি সদয়ভাবে তাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যেন তারা যা সঠিক, তা-ই করে। (রোমীয় ১২:১; ইফি. ৪:১; ফিলী. ৮-১০) এমনটা করার মাধ্যমে পৌল যিহোবাকে অনুকরণ করেছিলেন। আমরা যখন অন্যদের সঙ্গে প্রেমপূর্ণ আচরণ করি, তখন আমরা নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করি।
১৫. যাদের কর্তৃত্ব রয়েছে, তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করার মাধ্যমে কীভাবে আমরা যিহোবার শাসন ব্যবস্থাকে সমর্থন করি?
১৫ এ ছাড়া, যিহোবা যাদের কর্তৃত্ব দিয়েছেন, তাদের সঙ্গে সম্মান ও সহযোগিতা করার মাধ্যমেও আমরা তাঁর শাসন ব্যবস্থাকে সমর্থন করি। এমনকী আমরা যদি তাদের নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বুঝতে না পারি অথবা কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হই, তবুও আমরা তাদের সমর্থন করি। জগতের লোকেরা এমনটা করে না কিন্তু আমরা যখন যিহোবাকে আমাদের শাসক হিসেবে মেনে নিই, তখন আমরা এমনটাই করে থাকি। (ইফি. ৫:২২, ২৩; ৬:১-৩; ইব্রীয় ১৩:১৭) আর এমনটা করার মাধ্যমে আমরা সুখী হই কারণ ঈশ্বর আমাদের জন্য সর্বোত্তমটা চান।
১৬. কীভাবে আমাদের সিদ্ধান্তগুলো দেখাতে পারে যে, আমরা নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে ঈশ্বরের অধিকারকে সমর্থন করি?
১৬ আমরা যে-সিদ্ধান্তগুলো নিই, সেগুলোর মাধ্যমেও আমরা নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে ঈশ্বরের অধিকারকে সমর্থন করতে পারি। যিহোবা আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা পরিস্থিতি সম্বন্ধে নির্দিষ্ট আজ্ঞা দেন না। এর পরিবর্তে, তিনি আমাদের তাঁর চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে জানান। এটা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, আমাদের কী করা উচিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, খ্রিস্টানরা কী পরবে অথবা কী পরবে না, সেই বিষয়ে যিহোবা কোনো তালিকা দেন না। এর পরিবর্তে, তিনি ব্যাখ্যা করেন, তাঁর সাক্ষি হিসেবে আমাদের বেশভূষা সলজ্জ বা মার্জিত ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়া উচিত। (১ তীম. ২:৯, ১০) তিনি চান যেন আমরা এই বিষয়ে চিন্তা করি যে, আমাদের সিদ্ধান্তগুলো অন্যদের উপর কেমন প্রভাব ফেলে। (১ করি. ১০:৩১-৩৩) আমরা যখন যিহোবার চিন্তাভাবনার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমরা দেখাই যে, আমরা তাঁর শাসন করার পদ্ধতিকে ভালোবাসি ও সমর্থন করি।
১৭, ১৮. কীভাবে বিবাহিত দম্পতিরা দেখাতে পারে যে, তারা নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করে?
১৭ একটা উপায় বিবেচনা করুন, যেটার মাধ্যমে বিবাহিত খ্রিস্টানরা নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করতে পারে। বিয়ে সম্বন্ধে একটা দম্পতি যেমনটা আশা করেছিল, তেমনটা বাস্তবে না-ও হতে পারে। তাদের বিয়েতে হয়তো এমনকী গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি এমনটা হয়, তা হলে তারা হয়তো প্রাচীন ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে যিহোবা যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা নিয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে উপকার লাভ করতে পারে। যিহোবা নিজেকে তাঁর লোকেদের পতি বা স্বামী হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। (যিশা. ৫৪:৫; ৬২:৪) সেই জাতি অনেক বার যিহোবাকে দুঃখ দিয়েছিল। তাদের সম্পর্ক একটা সমস্যাপূর্ণ বিয়ের মতো হয়ে উঠেছিল। কিন্তু, যিহোবা ইস্রায়েল জাতির বিষয়ে দ্রুত হাল ছেড়ে দেননি। এর পরিবর্তে, তিনি তাদের বার বার ক্ষমা করেছিলেন এবং তাদের প্রতি করা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করেছিলেন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৬:৪৩-৪৫.
১৮ যে-বিবাহিত খ্রিস্টানরা যিহোবাকে ভালোবাসে, তারা তাঁকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। এমনকী তাদের বিয়েতে যদি সমস্যা দেখে দেয়, তবুও তারা অশাস্ত্রীয় উপায়ে তাদের বিয়ে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে না। তারা জানে যে, যিহোবা বিয়ের অঙ্গীকারকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন এবং তিনি চান যেন স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যের প্রতি “আসক্ত” হয়। বিবাহবিচ্ছেদ করার এবং এরপর পুনরায় বিয়ে করার জন্য স্বাধীন হওয়ার একমাত্র শাস্ত্রীয় কারণ হল ব্যভিচার। (মথি ১৯:৫, ৬, ৯) খ্রিস্টানরা যখন তাদের বিয়েকে সফল করার জন্য যথাসাধ্য করে, তখন তারা নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করে।
১৯. আমরা যখন ভুল করি, তখন আমাদের কী করা উচিত?
১৯ আমরা সকলেই অসিদ্ধ আর তাই মাঝে মাঝে আমরা এমন কাজ করে ফেলি, যা যিহোবাকে দুঃখ দেয়। তিনি এটা জানেন আর এই কারণেই তিনি খ্রিস্টের মাধ্যমে মুক্তির মূল্য জুগিয়েছেন। তাই, আমরা যখন কোনো ভুল করি, তখন আমাদের যিহোবার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। (১ যোহন ২:১, ২) আমাদের ভুলের বিষয়ে কেবল দুঃখিত হওয়ার পরিবর্তে, আমরা সেটা থেকে শিক্ষা লাভ করার চেষ্টা করতে পারি। আমরা যিহোবার নিকটবর্তী থাকতে চাই, যিনি আমাদের ক্ষমা করবেন এবং আমাদের আবেগগত ক্ষত সারাতে ও তাঁর সেবা চালিয়ে যেতে সাহায্য করবেন।—গীত. ১০৩:৩.
২০. কেন আমাদের এখনই নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করতে হবে?
২০ নতুন জগতে, প্রত্যেকে যিহোবার শাসনের অধীনে বাস করবে এবং তাঁর ধার্মিক পথ সম্বন্ধে শিখবে। (যিশা. ১১:৯) কিন্তু এমনকী এখনই, আমরা তাঁর চিন্তাভাবনা এবং বিভিন্ন কাজ সম্বন্ধে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে প্রচুর শিক্ষা লাভ করতে পারি। শীঘ্রই, যিহোবার শাসন করার অধিকার নিয়ে আর কেউই প্রশ্ন তুলবে না। তাই আসুন, আমরা যিহোবার বাধ্য হওয়ার, বিশ্বস্তভাবে তাঁর সেবা করার এবং আমাদের সমস্ত কাজে তাঁকে অনুকরণ করার জন্য সর্বোত্তম প্রচেষ্টা করি। আর এভাবে নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করার জন্য যথাসাধ্য করি।