যিহোবাতে নির্ভর রাখো, সদাচরণ করো
“সদাপ্রভুতে নির্ভর রাখ, সদাচরণ কর, . . . বিশ্বস্ততাক্ষেত্রে চর।”—গীত. ৩৭:৩.
১. যিহোবা মানুষকে কোন কোন অসাধারণ ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন?
যিহোবা মানুষকে অসাধারণ ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের পরিণামদর্শিতা বা চিন্তা করার ক্ষমতা দিয়েছেন, যা আমাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে ও ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে। (হিতো. ২:১১) তিনি আমাদের কর্মশক্তি দিয়েছেন, যেন আমরা আমাদের পরিকল্পনামতো কাজ করতে ও নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি। (ফিলি. ২:১৩) এ ছাড়া, তিনি আমাদের বিবেক অর্থাৎ ভালো-মন্দ বোঝার সহজাত ক্ষমতা দিয়েছেন। আমাদের বিবেক পাপ করা এড়িয়ে চলতে ও নিজেদের ভুলত্রুটি সংশোধন করতে সাহায্য করে।—রোমীয় ২:১৫.
২. আমরা আমাদের ক্ষমতাকে কীভাবে ব্যবহার করব বলে যিহোবা চান?
২ যিহোবা চান যেন আমরা আমাদের ক্ষমতাকে উত্তম উপায়ে ব্যবহার করি। কেন? কারণ তিনি আমাদের ভালোবাসেন আর তিনি জানেন, আমরা যদি তাঁর দেওয়া দানগুলো ব্যবহার করি, তা হলে আমরা সুখী হব। উদাহরণ স্বরূপ, ইব্রীয় শাস্ত্রে আমরা পড়ি: “পরিশ্রমীর চিন্তা হইতে কেবল ধনলাভ হয়” এবং “তোমার হস্ত যে কোন কার্য্য করিতে পায়, তোমার শক্তির সহিত তাহা কর।” (হিতো. ২১:৫; উপ. ৯:১০) গ্রিক শাস্ত্রে আমরা পড়ি: “আমরা যেমন সুযোগ পাই, তেমনি সকলের প্রতি, . . . সৎকর্ম্ম করি” এবং “তোমরা যে যেমন অনুগ্রহদান পাইয়াছ, তদনুসারে . . . পরস্পর পরিচর্য্যা কর।” (গালা. ৬:১০; ১ পিতর ৪:১০) তাই এটা স্পষ্ট, যিহোবা চান যেন আমরা নিজেদের ও অন্যদের মঙ্গলের জন্য যথাসাধ্য করি।
৩. মানুষের কোন কোন সীমাবদ্ধতা রয়েছে?
৩ যদিও যিহোবা চান যেন আমরা আমাদের ক্ষমতা ব্যবহার করি, তবে তিনি এটাও জানেন, আমাদের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা অসিদ্ধতা, পাপ ও মৃত্যু দূর করতে পারি না। (১ রাজা. ৮:৪৬) এ ছাড়া, আমরা অন্য লোকেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না কারণ তাদের নিজেদের বাছাই করার স্বাধীনতা রয়েছে। আর আমাদের যত জ্ঞান অথবা অভিজ্ঞতাই থাকুক না কেন, তা কখনোই যিহোবার সমান হবে না।—যিশা. ৫৫:৯.
৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?
৪ আমাদের সবসময় যিহোবার দ্বারা নিজেদের নির্দেশিত হতে দিতে হবে আর এই নির্ভরতা রাখতে হবে, তিনি আমাদের সাহায্য করবেন এবং আমাদের জন্য সেই বিষয়গুলো করবেন, যা আমরা নিজেরা করতে পারি না। তবে যিহোবা এটাও চান, যেন আমরা বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার জন্য ও অন্যদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য করি। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৭:৩.) আমাদের ‘সদাপ্রভুতে নির্ভর রাখিতে’ ও সেইসঙ্গে ‘সদাচরণ করিতে’ হবে। আর আমাদের ‘বিশ্বস্ততাক্ষেত্রে চরিতে’ বা বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কীভাবে আমরা তা করতে পারি? আসুন আমরা নোহ, দায়ূদ ও ঈশ্বরের অন্যান্য বিশ্বস্ত দাসের উদাহরণ বিবেচনা করি, যারা যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন। আলোচনা করার সময় আমরা লক্ষ করব, এমন কিছু বিষয় ছিল, যেগুলোর ব্যাপারে তারা কিছু করতে পারতেন না। কিন্তু, তারা সেই বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা বেছে নিয়েছিলেন, যেগুলো তারা করতে পারতেন।
আমাদের চারপাশে যখন দুষ্টতা ছেয়ে থাকে
৫. নোহের পরিস্থিতি বর্ণনা করুন।
৫ নোহ এমন এক জগতে বাস করেছিলেন, যে-জগৎ অনৈতিকতায় ও “দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ ছিল।” (আদি. ৬:৪, ৯-১৩) যদিও নোহ জানতেন, একটা সময়ে যিহোবা সেই দুষ্ট জগৎকে ধ্বংস করবেন, কিন্তু তার আশেপাশের লোকেদের কাজ দেখে তিনি নিশ্চয়ই হতাশ হয়েছিলেন। সেই পরিস্থিতিতে নোহ বুঝতে পেরেছিলেন, এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলোর ব্যাপারে তিনি কিছু করতে পারেন না। তবে তিনি এটাও বুঝতে পেরেছিলেন, এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো তিনি করতে পারেন।
৬, ৭. (ক) নোহ কী করতে পারেননি? (খ) কীভাবে আমরা নোহের মতো একইরকম পরিস্থিতিতে আছি?
৬ নোহ যা করতে পারতেন না: নোহ বিশ্বস্ততার সঙ্গে যিহোবার সতর্কবাণী প্রচার করেছিলেন, কিন্তু তিনি লোকেদেরকে সেই বার্তা গ্রহণ করার জন্য বাধ্য করতে পারেননি। আর তিনি জলপ্লাবনের সময় এগিয়েও আনতে পারেননি। কিন্তু, যিহোবা যে দুষ্টতা শেষ করার বিষয়ে তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবেন, নোহকে সেই নির্ভরতা বজায় রাখতে হয়েছিল আর এই বিশ্বাসও বজায় রাখতে হয়েছিল, ঈশ্বর উপযুক্ত সময়ে তা করবেন।—আদি. ৬:১৭.
৭ আমরাও এমন এক জগতে বাস করছি, যে-জগৎ দুষ্টতায় ছেয়ে আছে আর আমরা জানি, যিহোবা এই জগৎকে ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। (১ যোহন ২:১৭) এই সময়ের মধ্যে, আমরা লোকেদেরকে ‘রাজ্যের সুসমাচার’ গ্রহণ করার জন্য বাধ্য করতে পারি না। আর ‘মহাক্লেশ’ শুরু হওয়ার সময় এগিয়ে আনার জন্যও আমরা কিছু করতে পারি না। (মথি ২৪:১৪, ২১) নোহের মতো, আমাদেরও দৃঢ়বিশ্বাস থাকতে হবে ও এই নির্ভরতা বজায় রাখতে হবে, শীঘ্রই ঈশ্বর সমস্ত দুষ্টতা শেষ করবেন। (গীত. ৩৭:১০, ১১) আমরা দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, এই দুষ্ট জগতের যতদিন অস্তিত্বে থাকা দরকার, যিহোবা এটাকে তার চেয়ে এক দিনও বেশি থাকতে দেবেন না।—হবক্. ২:৩.
৮. নোহ কোন বিষয়ের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৮ নোহ যা করতে পারতেন: নোহ যা করতে পারেননি, সেগুলোর কারণে হতাশ না হয়ে বরং তিনি যা করতে পারতেন, সেগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিলেন। নোহ বিশ্বস্ততার সঙ্গে যিহোবার সতর্কবাণী প্রচার করেছিলেন। (২ পিতর ২:৫) এই কাজ নিশ্চয়ই তাকে দৃঢ়বিশ্বাস বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল। প্রচার করার পাশাপাশি তিনি জাহাজ নির্মাণ করার বিষয়ে যিহোবার আজ্ঞাও পালন করেছিলেন।—পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৭.
৯. আমরা কীভাবে নোহের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি?
৯ নোহের মতো, আমরাও “প্রভুর কার্য্যে” ব্যস্ত থাকতে পারি। (১ করি. ১৫:৫৮) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা হয়তো কিংডম হল ও সম্মেলন হল নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজে সাহায্য করতে পারি, সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে পারি অথবা কোনো শাখা অফিসে কিংবা রিমোট ট্রানস্লেশন অফিসে (শাখা থেকে দূরবর্তী অনুবাদ অফিসে) সেবা করতে পারি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমরা প্রচার কাজে ব্যস্ত থাকতে পারি, যা আমাদের ভবিষ্যতের আশাকে দৃঢ় করে। একজন বিশ্বস্ত বোন বলেছিলেন, তিনি যখন অন্যদের সঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্যের আশীর্বাদ নিয়ে কথা বলেন, তখন তিনি বুঝতে পারেন, লোকেরা মনে করে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তাদের কোনো আশাই নেই আর তাদের সমস্যাগুলো চিরস্থায়ী। আর বোন যেমন উল্লেখ করেছিলেন, আমাদের একটা আশা রয়েছে এবং আমরা যখন অন্যদের সঙ্গে সেই বিষয়ে কথা বলি, তখন এটা আরও দৃঢ় হয়। এই আশা আমাদের জীবনের দৌড় অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে!—১ করি. ৯:২৪.
আমরা যখন পাপ করি
১০. দায়ূদের পরিস্থিতি বর্ণনা করুন।
১০ রাজা দায়ূদ একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছিলেন আর যিহোবা তাকে খুব ভালোবাসতেন। (প্রেরিত ১৩:২২) তা সত্ত্বেও, দায়ূদ বৎশেবার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছিলেন, যা এক গুরুতর পাপ ছিল। এর চেয়েও খারাপ বিষয় হল, বৎশেবার স্বামী ঊরিয়কে যুদ্ধে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তিনি নিজের পাপ লুকানোর চেষ্টা করেছিলেন। এমনকী ঊরিয়ের হত্যার নির্দেশনা সংক্রান্ত চিঠিটা দায়ূদ ঊরিয়ের হাতেই পাঠিয়েছিলেন! (২ শমূ. ১১:১-২১) কিন্তু একটা সময়ে, দায়ূদের পাপ প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল। (মার্ক ৪:২২) সেই সময়ে দায়ূদ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
১১, ১২. (ক) পাপ করার পর দায়ূদ কী করতে পারেননি? (খ) আমরা যদি অনুতপ্ত হই, তা হলে যিহোবা কী করবেন?
১১ দায়ূদ যা করতে পারতেন না: দায়ূদ যা করেছিলেন, সেটা তিনি সংশোধন করতে পারতেন না। আসলে, বাকি জীবন ধরে তাকে তার পাপের কিছু ফল ভোগ করতে হয়েছিল। (২ শমূ. ১২:১০-১২, ১৪) তাই, তার বিশ্বাস প্রয়োজন ছিল। তাকে এই নির্ভরতা বজায় রাখতে হয়েছিল, তিনি যদি সত্যিই অনুতপ্ত হন, তা হলে যিহোবা তাকে ক্ষমা করবেন এবং তাকে নিজের কর্মফল সহ্য করতে সাহায্য করবেন।
১২ আমরা যেহেতু অসিদ্ধ, তাই আমরা সবাই পাপ করি। তবে কিছু পাপ রয়েছে, যেগুলো গুরুতর আর কিছু পরিস্থিতিতে আমরা হয়তো নিজেদের ভুল সংশোধন করতে পারি না। আমাদেরও হয়তো নিজেদের কর্মফল ভোগ করতে হয়। (গালা. ৬:৭) কিন্তু, আমরা ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞার উপর নির্ভরতা বজায় রাখি, আমরা যদি অনুতপ্ত হই, তা হলে তিনি কঠিন সময়ে, এমনকী আমাদের নিজেদের ভুলের কারণে সৃষ্ট সমস্যার সময়েও, আমাদের সাহায্য করবেন।—পড়ুন, যিশাইয় ১:১৮, ১৯; প্রেরিত ৩:১৯.
১৩. কীভাবে দায়ূদ যিহোবার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করেছিলেন?
১৩ দায়ূদ যা করতে পারতেন: দায়ূদ যিহোবার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। কীভাবে তিনি তা করেছিলেন? দায়ূদ যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি যিহোবার ভাববাদী নাথনের কাছ থেকে সংশোধন মেনে নিয়েছিলেন। (২ শমূ. ১২:১৩) এ ছাড়া, দায়ূদ যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার ও নিজের পাপ স্বীকার করার মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন, তিনি সত্যিই আবার যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করতে চান। (গীত. ৫১:১-১৭) অপরাধবোধের দ্বারা ভারগ্রস্ত হয়ে পড়ার পরিবর্তে দায়ূদ নিজের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আর কখনো সেইসমস্ত গুরুতর পাপ করেননি। বহু বছর পর, তিনি একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসেবে মারা গিয়েছিলেন আর যিহোবা তাকে বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসেবেই মনে রেখেছেন।—ইব্রীয় ১১:৩২-৩৪.
১৪. দায়ূদের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৪ দায়ূদের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা যদি কোনো গুরুতর পাপ করি, তা হলে আমাদের আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হতে হবে, যিহোবার কাছে আমাদের পাপ স্বীকার করতে হবে এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। (১ যোহন ১:৯) এ ছাড়া, প্রাচীনদের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে হবে কারণ তারা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন। (পড়ুন, যাকোব ৫:১৪-১৬.) আমরা যখন যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করি, তখন আমরা দেখাই যে, আমাদের ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়ে তাঁর প্রতিজ্ঞার প্রতি আমাদের নির্ভরতা রয়েছে। এ ছাড়া, নিজেদের ভুল থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং আস্থা সহকারে যিহোবার সেবা করে যেতে হবে।—ইব্রীয় ১২:১২, ১৩.
অন্যান্য পরিস্থিতিতে
১৫. হান্নার উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৫ আপনি হয়তো বাইবেলে উল্লেখিত অন্যান্য বিশ্বস্ত দাসের কথা চিন্তা করতে পারেন, যারা তাদের কঠিন পরিস্থিতিতে যা করতে পারতেন, তা করার পাশাপাশি যিহোবার উপর নির্ভরতা বজায় রেখেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, একটা সময়ে হান্না বন্ধ্যা ছিলেন। তার এই পরিস্থিতি তিনি পরিবর্তন করতে পারতেন না। কিন্তু তিনি এই নির্ভরতা বজায় রেখেছিলেন, যিহোবা তাকে সান্ত্বনা দেবেন। তাই, তিনি সবসময় উপাসনার জন্য আবাসে যেতেন ও যিহোবার কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে প্রার্থনা করতেন। (১ শমূ. ১:৯-১১) আমাদের জন্য কতই-না চমৎকার এক উদাহরণ! আমাদের যখন এমন গুরুতর অসুস্থতা অথবা অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়, যা আমরা পরিবর্তন করতে পারি না, তখন আমরা আমাদের উদ্বিগ্নতার ভার যিহোবার উপর ফেলে দিই আর এই নির্ভরতা বজায় রাখি, তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন। (১ পিতর ৫:৬, ৭) এ ছাড়া, খ্রিস্টীয় সভা ও যিহোবার সংগঠনের দ্বারা প্রস্তুতকৃত অন্যান্য কার্যক্রম থেকে উপকার লাভ করার জন্য আমরা যা করতে পারি, তা করি।—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
১৬. শমূয়েলের কাছ থেকে বাবা-মায়েরা কী শিখতে পারেন?
১৬ সেইসমস্ত বিশ্বস্ত বাবা-মায়ের বিষয়ে কী বলা যায়, যাদের সন্তান যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছে? ভাববাদী শমূয়েল তার ছেলেদেরকে ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকার জন্য বাধ্য করতে পারেননি। (১ শমূ. ৮:১-৩) তাকে সেই বিষয়টা যিহোবার হাতে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। কিন্তু, শমূয়েল নিজে ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকার জন্য এবং তার স্বর্গীয় পিতাকে খুশি করার জন্য যা করতে পারতেন, তা করেছিলেন। (হিতো. ২৭:১১) বর্তমানে, অনেক খ্রিস্টান বাবা-মা হয়তো একইরকম পরিস্থিতিতে রয়েছেন। তারা এই নির্ভরতা বজায় রাখেন, যিশুর বলা অপব্যয়ী পুত্রের দৃষ্টান্তের পিতার মতো, যিহোবা অনুতপ্ত পাপীদের গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছেন। (লূক ১৫:২০) এই সময়ের মধ্যে, বাবা-মায়েরা যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার ব্যাপারে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে পারেন ও এই আশা করতে পারেন, তাদের উদাহরণ তাদের সন্তানকে যিহোবার কাছে ফিরে আসতে অনুপ্রাণিত করবে।
১৭. কেন দরিদ্র বিধবার উদাহরণ উৎসাহজনক?
১৭ আরেকটা উত্তম উদাহরণ হল, যিশুর সময়ের দরিদ্র বিধবা। (পড়ুন, লূক ২১:১-৪.) মন্দিরে যে-সমস্ত দুর্নীতি চলছিল, সেই বিষয়ে তিনি কিছুই করতে পারেননি আর তিনি নিজের দরিদ্র অবস্থাও পরিবর্তন করতে পারেননি। (মথি ২১:১২, ১৩) কিন্তু, যিহোবার প্রতি তার নির্ভরতা তাকে সত্য উপাসনাকে সমর্থন করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি উদার ছিলেন ও “দুইটী সিকি পয়সা” অর্থাৎ তার কাছে যা ছিল, সেটার পুরোটাই দান করেছিলেন। সেই বিশ্বস্ত নারী যিহোবার প্রতি পূর্ণ নির্ভরতা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জানতেন, তিনি যদি যিহোবার সেবাকে তার জীবনে প্রথমে রাখেন, তা হলে যিহোবা তার প্রয়োজনীয় বিষয় জুগিয়ে দেবেন। একইভাবে, আমরাও এই নির্ভরতা বজায় রাখি, আমরা যদি ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রথমে রাখি, তা হলে যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেবেন।—মথি ৬:৩৩.
১৮. এমন একজন ভাইয়ের উদাহরণ তুলে ধরুন, যিনি সঠিক মনোভাব বজায় রেখেছিলেন।
১৮ বর্তমানে আমাদের অনেক ভাই-বোন, তারা যা করতে পারে না সেটার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে, তারা যা করতে পারে সেটার প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখার মাধ্যমে যিহোবার প্রতি একইরকম নির্ভরতা প্রকাশ করে। ম্যালকম নামে একজন ভাইয়ের কথা বিবেচনা করুন, যিনি ২০১৫ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন। বহু বছর ধরে যিহোবার সেবা করে চলার সময়, তিনি ও তার স্ত্রী সুসময় ও দুঃসময়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “জীবনে কী ঘটবে, তা মাঝে মাঝে আগে থেকে বলা যায় না, জীবন অনিশ্চিত আর এমনকী কষ্টকর। কিন্তু যিহোবা সেই ব্যক্তিদের আশীর্বাদ করেন, যারা তাঁর ওপর নির্ভর করে।” ভাই ম্যালকম কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন? “যিহোবার সেবায় যতটা সম্ভব ফলপ্রসূ হওয়ার এবং সক্রিয় থাকার জন্য প্রার্থনা করুন। আপনি যা করতে পারেন, সেটার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন, যা করতে পারেন না, সেটার ওপর নয়।” a
১৯. (ক) আমরা ২০১৭ সালের জন্য যে-বার্ষিক শাস্ত্রপদ বেছে নিয়েছি, তা কেন খুবই উপযুক্ত হয়েছে? (খ) ২০১৭ সালের জন্য বার্ষিক শাস্ত্রপদটা আপনি কীভাবে নিজের জীবনে কাজে লাগাবেন?
১৯ এই দুষ্ট জগৎ যেহেতু “উত্তর উত্তর কুপথে” অগ্রসর হচ্ছে, তাই আমরা দিন দিন আরও সমস্যার মুখোমুখি হতে পারি। (২ তীম. ৩:১, ১৩) আমরা যেন সমস্যাগুলোর দ্বারা ভারগ্রস্ত হয়ে না পড়ি, তা মনে রাখা এখন আগের চেয়ে আরও বেশি জরুরি। এর পরিবর্তে, যিহোবার উপর আমাদের পূর্ণ নির্ভরতা বজায় রাখতে হবে এবং আমরা যা করতে পারি, সেই বিষয়ের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে হবে। তাই, আমরা ২০১৭ সালের জন্য যে-বার্ষিক শাস্ত্রপদ বেছে নিয়েছি, তা খুবই উপযুক্ত হয়েছে: যিহোবাতে নির্ভর রাখো, সদাচরণ করো!—গীত. ৩৭:৩.
২০১৭ সালের জন্য আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ: যিহোবাতে নির্ভর রাখো, সদাচরণ করো—গীত. ৩৭:৩.