সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২০

গান ৭ যিহোবা আমার বল

যিহোবা আমাদের অবশ্যই সান্ত্বনা দেবেন

যিহোবা আমাদের অবশ্যই সান্ত্বনা দেবেন

“ঈশ্বরের প্রশংসা হোক। তিনি করুণাময় পিতা এবং সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর।”২ করি. ১:৩.

আমরা কী শিখব?

আমরা জানতে পারব যে, কীভাবে যিহোবা ব্যাবিলনে থাকা সেই যিহুদিদের সান্ত্বনা দিয়েছিলেন এবং এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

১. ব্যাবিলনে বন্দি থাকা যিহুদিদের জীবন কেমন ছিল?

 একটু মনে করে দেখুন, সেই যিহুদিদের অবস্থা কেমন ছিল, যারা ব্যাবিলনে বন্দি ছিল। তারা নিজের চোখে দেখেছিল, কীভাবে তাদের দেশটা ধ্বংস হয়েছে আর এখন তারা একটা অচেনা দেশে রয়েছে। কিন্তু, কেন তাদের প্রতি এমনটা ঘটেছিল? কারণ তারা এবং তাদের পূর্বপুরুষেরা যিহোবার বিরুদ্ধে পাপ করেছিল। (২ বংশা. ৩৬:১৫, ১৬, ২০, ২১) ব্যাবিলনে তারা এক সাধারণ জীবনযাপন করছিল এবং তাদের কাছে কিছুটা স্বাধীনতাও ছিল। (যির. ২৯:৪-৭) কিন্তু, তাদের জীবন অতটাও সহজ ছিল না। আসলে বলতে গেলে বাধ্য হয়েই তাদের সেখানে থাকতে হচ্ছিল। লক্ষ করুন, তাদের মধ্যে একজন বিশ্বস্ত যিহুদি কী বলেছিলেন: “আমরা ব্যাবিলনের নদীগুলোর ধারে বসে ছিলাম। আমরা সিয়োনকে স্মরণ করে কেঁদেছিলাম।” (গীত. ১৩৭:১, NW) ব্যাবিলনে থাকা যিহুদিরা অনেক নিরুৎসাহিত ছিল। এমন পরিস্থিতিতে কে তাদের সান্ত্বনা দিতে পারত?

২-৩. (ক) যে-যিহুদিরা ব্যাবিলনে বন্দি ছিল, তাদের জন্য যিহোবা কী করেছিলেন? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?

যিহোবা হলেন “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর।” (২ করি. ১:৩) তিনি তাঁর লোকদের অনেক ভালোবাসেন এবং সান্ত্বনা দেন। যিহোবা জানতেন, ব্যাবিলনে যাওয়ার পর কিছু যিহুদি তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং তারা আবারও তাঁর উপাসনা করতে শুরু করবে। (যিশা. ৫৯:২০) তাই, তাদের বন্দিত্বে যাওয়ার ১০০ বছর আগেই যিহোবা যিশাইয়ের মাধ্যমে কিছু ভবিষ্যদ্‌বাণী লিখিয়েছিলেন। এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো যিশাইয় বইয়ে লেখা রয়েছে। যিহোবা কেন এটা লিখিয়েছিলেন? যিশাইয় লিখেছিলেন, “আমার লোকদের সান্ত্বনা দাও, তাদের সান্ত্বনা দাও।” (যিশা. ৪০:১, NW) আসলে যিহোবা তাঁর লোকদের সান্ত্বনা দিতে চান। পরবর্তী সময়ে এই বই থেকে ব্যাবিলনে থাকা সেই যিহুদিরা অনেক সান্ত্বনা লাভ করেছিল।

এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব যে, যিহুদিদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য যিহোবা কী করেছিলেন: (১) তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যারা অনুতপ্ত হবে তাদের তিনি ক্ষমা করবেন, (২) তিনি তাঁর লোকদের আশা প্রদান করেছিলেন আর (৩) তিনি তাদেরকে ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন। আমাদেরও সময়ে সময়ে সান্ত্বনার প্রয়োজন হয়। তাই, আমরা লক্ষ করব, যিহোবা যিহুদিদের জন্য যে-কথাগুলো লিখিয়েছিলেন, সেখান থেকে কীভাবে আমরা সান্ত্বনা লাভ করতে পারি।

যিহোবা আমাদের প্রতি দয়া দেখান এবং আমাদের ক্ষমা করেন

৪. যিহোবা কীভাবে যিহুদিদের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন? (যিশাইয় ৫৫:৭)

যিহোবা হলেন “করুণাময় পিতা।” (২ করি. ১:৩) তিনি যিশাইয়ের মাধ্যমে অনুতপ্ত হওয়া যিহুদিদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি তাদের প্রতি দয়া দেখাবেন এবং তাদের ক্ষমা করে দেবেন। (পড়ুন, যিশাইয় ৫৫:৭.) তিনি বলেছিলেন, “আমি তোমার প্রতি করুণা দেখাব কারণ তোমার প্রতি আমার অনন্তকালস্থায়ী অটল প্রেম রয়েছে।” (যিশা. ৫৪:৮, NW) যিহোবা কীভাবে তাদের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন? যদিও যিহুদিদের নিজেদের ভুলের কারণে অনেক বছর ধরে ব্যাবিলনে বন্দি থাকতে হয়েছিল, কিন্তু যিহোবা তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তারা সারাজীবন বন্দি অবস্থায় থাকবে না। (যিশা. ৪০:২) একটু কল্পনা করুন, যে-যিহুদিরা অনুতপ্ত হয়েছিল, তারা যখন এটা শুনেছিল, তখন কতই-না সান্ত্বনা পেয়েছিল!

৫. যিহোবা আমাদের ক্ষমা করেন, এই বিষয়টার উপর বিশ্বাস করার কোন কারণ আমাদের কাছে রয়েছে, যা যিহুদিদের কাছে ছিল না?

এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি? যিহোবা তাঁর সেবকদের পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করেন। এটা বিশ্বাস করার আমাদের কাছে আরও বড়ো কারণ রয়েছে, যা সেই যিহুদিদের কাছে ছিল না। বর্তমানে আমরা জানি যে, আমাদের পাপ ক্ষমা করার জন্য যিহোবা কী করেছেন। যিশাইয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করার প্রায় ৭০০ বছর পর যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্রকে আমাদের জন্য এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, যাতে তিনি তাঁর জীবন মুক্তির মূল্য হিসেবে দিতে পারেন। বর্তমানে যারা এই মুক্তির মূল্যের প্রতি বিশ্বাস দেখায় এবং অনুতপ্ত হয়, যিহোবা তাদের পাপ “মুছে” ফেলেন। (প্রেরিত ৩:১৯; যিশা. ১:১৮; ইফি. ১:৭) সত্যিই, যিহোবা কতই-না করুণাময় ঈশ্বর!

৬. যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন, এই বিষয়টা মনে রাখলে আমরা কীভাবে সান্ত্বনা লাভ করি? (ছবিও দেখুন।)

যদি আমরা আমাদের কোনো ভুলের জন্য নিজেদের দোষী বলে মনে করছি, তা হলে আমরা যিশাইয় ৫৫:৭ পদ থেকে সান্ত্বনা পেতে পারি। হতে পারে, অতীতে আমরা কোনো ভুল করেছি এবং এর জন্য অনুতপ্তও হয়েছি। কিন্তু, অনেক বছর কেটে যাওয়ার পরও আমরা হয়তো সেই ভুলটা নিয়ে বার বার চিন্তা করে নিজেদের দোষী মনে করছি। আর এখনও যদি আমাদের সেই ভুলের পরিণতি ভোগ করতে হয়, তা হলে আমরা হয়তো নিজেদের আরও দোষী বলে মনে করতে পারি। এই পরিস্থিতিতে আমরা কী করতে পারি? মনে রাখুন, আমরা যদি আমাদের ভুলগুলো ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছি এবং সঠিক পথে চলতে শুরু করেছি, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর ক্ষমা করে দেওয়ার পর তিনি কখনো আমাদের ভুলগুলো মনে রাখেন না। (তুলনা করুন, যিরমিয় ৩১:৩৪.) চিন্তা করে দেখুন, যিহোবা যখন আমাদের ভুলগুলো মনে রাখেন না, তখন আমাদেরও কি সেই ভুলগুলো নিয়ে চিন্তা করে নিজেদের দোষী মনে করা উচিত? আর এটাও মনে রাখুন, আগে আমরা কোন ভুল করেছি, এটা যিহোবা দেখেন না বরং তিনি দেখেন আমরা বর্তমানে কী করছি। (যিহি. ৩৩:১৪-১৬) আমাদের করুণাময় পিতা খুব শীঘ্রই সেই সমস্ত কষ্ট দূর করে দেবেন, যা আমরা অতীতের ভুলগুলোর কারণে ভোগ করছি!

অতীতে আমরা কী ভুল করেছি, তা যিহোবা দেখেন না বরং তিনি এটা দেখেন যে, আমরা আজ কী করছি (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)


৭. আমাদের গুরুতর পাপ প্রাচীনদের কাছে স্বীকার করার জন্য কোন বিষয়টা আমাদের সাহায্য করবে?

আমরা যদি কোনো গুরুতর পাপ করে ফেলি এবং সেটাকে লুকিয়ে রাখার কারণে নিজেদের দোষী বলে মনে করি, তা হলে আমাদের কী করা উচিত? বাইবেলে বলা হয়েছে, আমাদের প্রাচীনদের কাছে সাহায্য চাইতে হবে। (যাকোব ৫:১৪, ১৫) এটা ঠিক যে, পাপ স্বীকার করা আমাদের জন্য অনেক কঠিন হতে পারে। কিন্তু, একটা বিষয় মনে রাখলে আমরা তা করতে পারব। সেটা কী? সেটা হল, যিহোবা প্রাচীনদের মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করেন এবং প্রাচীনেরা যিহোবার মতো আমাদের ভালোবাসেন এবং আমাদের প্রতি করুণা দেখান। আমরা যদি এই বিষয়টা মনে রাখি এবং হৃদয় থেকে অনুতপ্ত হই, তা হলে আমরা এই বিষয়ে প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলতে ভয় পাব না। আসুন, এই বিষয়ে আমরা ভাই আর্থারের a উদাহরণের উপর মনোযোগ দিই। তিনি তার পাপের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছিলেন। কিন্তু, যিহোবা প্রাচীনদের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করেছিলেন এবং তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। ভাই আর্থার বলেন, “আমি প্রায় এক বছর ধরে পর্নোগ্রাফি দেখেছি। কিন্তু, বিবেকের বিষয়ে একটা বক্তৃতা শোনার পর আমি আমার স্ত্রীর কাছে ভুল স্বীকার করি এবং প্রাচীনদেরও এই বিষয়ে জানাই। এরপর আমার মনে হয়েছিল, যেন আমার ওপর থেকে একটা ভারী বোঝা নেমে গিয়েছে এবং আমি অনেক স্বস্তি বোধ করেছিলাম। আমি অনুতপ্ত হয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু তারপরও আমি নিজেকে দোষী বলে মনে করছিলাম। সেইসময় প্রাচীনেরা আমাকে আশ্বস্ত করেছিল যে, যিহোবা আমার সঙ্গে রয়েছেন এবং তিনি আমাকে একা ছেড়ে দেননি। তিনি আমাকে ভালোবাসেন বলে আমাকে সংশোধন করছেন। প্রেমের সঙ্গে বলা তাদের কথা আমার হৃদয় স্পর্শ করেছিল এবং আমি নিজের চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করতে পেরেছিলাম।” বর্তমানে, ভাই আর্থার একজন অগ্রগামী এবং একজন পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করছেন। এটা জেনে আমরা কতই-না সান্ত্বনা পাই যে, আমরা যখন অনুতপ্ত হই, তখন যিহোবা আমাদের প্রতি করুণা দেখান এবং আমাদের ক্ষমা করে দেন।

যিহোবা আমাদের আশা দিয়েছেন

৮. (ক) ব্যাবিলনে থাকা যিহুদিদের যিহোবা কোন আশা দিয়েছিলেন? (খ) অনুতপ্ত যিহুদিরা যখন এই আশা পেয়েছিল, তখন তাদের কেমন লেগেছিল? (যিশাইয় ৪০:২৯-৩১)

ব্যাবিলনের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হওয়া যিহুদিদের পক্ষে অসম্ভব ছিল। কেন? কারণ ব্যাবিলন ছিল সেই সময়কার বিশ্বশক্তি এবং ব্যাবিলন কখনোই তার বন্দিদের মুক্ত করত না। (যিশা. ১৪:১৭) কিন্তু, যিহোবা তাঁর লোকদের একটা আশা দিয়েছিলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি তাদের মুক্ত করবেন এবং পৃথিবীর কোনো শক্তি তাঁকে বাধা দিতে পারবে না। (যিশা. ৪৪:২৬; ৫৫:১২) যিহোবার কাছে ব্যাবিলনের লোকেরা মেঝেতে পড়ে থাকা ধুলোর মতো ছিল। (যিশা. ৪০:১৫) যাদের শুধুমাত্র ফু দিয়েই উড়িয়ে দেওয়া যেত। যিহোবার প্রতিজ্ঞা শুনে যিহুদিদের কেমন লেগেছিল? তারা নিশ্চয়ই অনেক সান্ত্বনা পেয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, যিশাইয় লিখেছিলেন, “যারা যিহোবার উপর আশা রাখে, তারা শক্তি ফিরে পাবে।” (পড়ুন, যিশাইয় ৪০:২৯-৩১, NW.) যিহোবা যে-আশা দিয়েছিলেন, সেটা থেকে যিহুদিরা এতটা উৎসাহিত হয়েছিল যে, তারা “ঈগল পাখির মতো ডানা মেলে উপরের দিকে” উড়তে পারত।

৯. কোন কারণগুলোর জন্য যিহুদিরা যিহোবার প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস করেছিল?

যিহোবা ব্যাবিলনে থাকা যিহুদিদের তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস করার কারণও জুগিয়েছিলেন। একটু চিন্তা করুন, যিহুদিরা কত ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হতে দেখেছিল! তারা জানত, অশূরীয়েরা ইস্রায়েলের উত্তরের রাজ্য দখল করে নিয়েছে এবং তারা লোকদের বন্দি করে নিয়ে গিয়েছে। (যিশা. ৮:৪) তারা নিজের চোখে দেখেছে যে, কীভাবে ব্যাবিলনের লোকেরা তাদের জেরুসালেম নগরকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং তাদের বন্দি করে নিজেদের দেশে নিয়ে গিয়েছে। (যিশা. ৩৯:৫-৭) তারা নিজেদের জীবনকালে এটাও দেখেছিল যে, কীভাবে রাজা সিদিকিয়ের চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল এবং তাকে ব্যাবিলনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। (যির. ৩৯:৭; যিহি. ১২:১২, ১৩) এই সমস্ত বিষয় যিহোবা আগেই বলে দিয়েছিলেন আর তাঁর বলা প্রতিটা কথা পরিপূর্ণ হয়েছিল। (যিশা. ৪২:৯; ৪৬:১০) এটা থেকে যিহুদিদের বিশ্বাস নিশ্চয়ই দৃঢ় হয়েছিল এবং এই নির্ভরতা বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, যিহোবা তাদের ব্যাবিলন থেকে মুক্ত করার যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেটাও পরিপূর্ণ হবে।

১০. এই শেষকালে আমাদের আশা যেন অস্পষ্ট হয়ে না পড়ে, সেইজন্য আমরা কী করতে পারি?

১০ এর থেকে আমরা কী শিখি? আমরা যখন হতাশ হয়ে পড়ি, তখন যিহোবার দেওয়া আশা থেকে আমরা সান্ত্বনা লাভ করি এবং এই আশা আমাদের আবারও উদ্যোগ ফিরে পেতে সাহায্য করে। শেষকালের এই কঠিন সময়ে আমরা অনেক শক্তিশালী শত্রুদের মুখোমুখি হই। কিন্তু, আমাদের ভয় পাওয়ার বা হতাশ হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যিহোবা আমাদের এক চমৎকার আশা দিয়েছেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, আমাদের অনন্তজীবন দেবেন এবং এমন একটা জগৎ আনবেন, যেখানে প্রকৃত শান্তি এবং সুরক্ষা থাকবে। আমাদের এই আশা মনে রাখতে হবে। আমরা যদি তা না করি, তা হলে এটা এমন হবে যেন আমাদের জানালা থেকে যে-সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়, সেটা অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কেন? কারণ আমাদের জানালার কাঁচে ধুলো পড়েছে। কীভাবে আমরা এই “ধুলো” পরিষ্কার করতে পারি, যাতে আমরা আমাদের আশা স্পষ্টভাবে দেখতে পাই? নতুন জগতে আমাদের জীবন কত সুন্দর হবে, এই বিষয়ে প্রতিদিন সময় বের করে চিন্তা করুন। আমাদের চমৎকার আশার বিষয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধ রয়েছে, সেগুলো পড়ুন। এ ছাড়া, যে-ভিডিও রয়েছে, সেগুলো দেখুন এবং গানগুলো শুনুন। শুধু তা-ই নয়, যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে বলুন যে, তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হতে দেখার জন্য আপনি কতটা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছেন। এমনটা করলে আমাদের আশা কখনো অস্পষ্ট হবে না।

১১. বোন জয়ী নিজের কঠিন রোগের সঙ্গে লড়াই করার জন্য কোথা থেকে শক্তি পেয়েছিলেন?

১১ জয়ী নামে একজন বোনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। বোনের এক কঠিন রোগ রয়েছে। কিন্তু, তিনি নিজের আশা নিয়ে চিন্তা করে অনেক সান্ত্বনা ও শক্তি লাভ করেছেন। তিনি বলেন, “যখন দুশ্চিন্তা আমাকে ঘিরে ধরে, তখন আমি যিহোবাকে আমার মনের কথা খুলে বলি। আমি জানি, তিনি আমাকে খুব ভালোভাবে বোঝেন আর তিনি আমার প্রার্থনার উত্তরও দিয়েছেন। তিনি আমাকে ‘অসাধারণ শক্তি’ দেন।” (২ করি. ৪:৭) প্রার্থনা করার পাশাপাশি বোন জয়ী আরেকটা কাজ করেন। তিনি নতুন জগতে নিজেকে কল্পনা করেন। তিনি চিন্তা করেন, সেখানে কতই-না এক সুন্দর জীবন হবে, যখন কেউ বলবে না “আমি অসুস্থ।” (যিশা. ৩৩:২৪, NW) এই বোনের মতো আমরাও যদি যিহোবার কাছে আমাদের মনের কথা খুলে বলি এবং আমাদের আশা নিয়ে চিন্তা করি, তা হলে তিনি আমাদেরও শক্তি দেবেন।

১২. কোন কোন কারণে আমরা যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর বিশ্বাস করতে পারি? (ছবিও দেখুন।)

১২ যিহোবা ব্যাবিলনে থাকা যিহুদিদের কিছু কারণ দিয়েছিলেন, যাতে তারা তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস করতে পারে। বর্তমানে তিনি আমাদেরও বিভিন্ন কারণ জুগিয়েছেন। একটু চিন্তা করুন, আমরা কোন ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো পরিপূর্ণ হতে দেখছি। বর্তমানে, সেই বিশ্বশক্তি শাসন করছে, যেটার “একাংশ দৃঢ় ও একাংশ ভঙ্গুর।” (দানি. ২:৪২, ৪৩) আমরা “একের-পর-এক স্থানে . . . ভূমিকম্প” হতে দেখছি। আর আমরা নিজেদের চোখে পুরো পৃথিবীতে “সুসমাচার প্রচার” হতে দেখছি। (মথি ২৪:৭, ১৪) এই ভবিষ্যদ্‌বাণী এবং অন্যান্য ভবিষ্যদ্‌বাণী থেকে যিহোবার উপর আমাদের এই নির্ভরতা আরও বেড়ে যায় যে, তিনি তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পূরণ করবেন।

বর্তমানে আমরা যে-ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো পরিপূর্ণ হতে দেখছি, তা আমাদের যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর উপর আস্থা রাখতে সাহায্য করে (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)


যিহোবা আমাদের ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেন

১৩. (ক) বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার আগে যিহুদিরা কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল? (খ) কীভাবে যিহোবা ব্যাবিলনে বসবাসকারী যিহুদিদের সান্ত্বনা দিয়েছিলেন? (যিশাইয় ৪১:১০-১৩)

১৩ যিহোবা জানতেন যে, তিনি যিহুদিদের যে-আশা দিয়েছিলেন, সেটা থেকে তারা সান্ত্বনা পাবে। কিন্তু, তিনি এটাও জানতেন, তাদের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার সময় যত কাছে চলে আসছে, ততই তাদের সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হবে। যিহোবা ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার কিছু সময় আগে একজন রাজা আশেপাশের দেশগুলোকে ধ্বংস করে দেবেন এবং এরপর ব্যাবিলনের উপরও আক্রমণ করবেন। (যিশা. ৪১:২-৫) কিন্তু, যিহুদিদের কি ভয় পাওয়ার প্রয়োজন ছিল? একদমই না। যিহোবা তাঁর লোকদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আগে থেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “ভয় পেয়ো না কারণ আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি। দুশ্চিন্তা কোরো না কারণ আমি তোমার ঈশ্বর।” (পড়ুন, যিশাইয় ৪১:১০-১৩, NW.) কেন যিহোবা বলেছিলেন যে, “আমি তোমার ঈশ্বর”? যিহোবা তাদের এটা বলছিলেন না যে, তিনি তাদের ঈশ্বর আর তাদের তাঁকে উপাসনা করা উচিত। এই বিষয়টা তো যিহুদিরা ইতিমধ্যেই জানত। এর পরিবর্তে, যিহোবা তাদের মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন যে, তিনি এখনও তাদের সঙ্গে রয়েছেন।—গীত. ১১৮:৬.

১৪. যিহোবা তাঁর লোকদের ভয় দূর করার জন্য তাদের কী মনে করিয়ে দিয়েছিলেন?

১৪ যিহোবা তাঁর লোকদের ভয় দূর করার জন্য এটাও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাঁর কাছে প্রচুর শক্তি রয়েছে এবং তিনি সমস্ত কিছু জানেন। তিনি সেই যিহুদিদের তারা ভরা আকাশ দেখতে বলেছিলেন। যিহোবা তাদের শুধু এটাই বলেননি যে, তিনি সেই অগণিত তারা সৃষ্টি করেছেন বরং এটাও বলেছিলেন, তিনি এই প্রত্যেকটা তারার নাম জানেন। (যিশা. ৪০:২৫-২৮) যিহোবা যদি এই সমস্ত তারার নাম জানেন, তা হলে তিনি কি তাঁর এক জন সেবককেও ভুলে যেতে পারেন? একেবারেই না। তিনি তাঁর প্রত্যেক সেবককে ভালোভাবে জানেন। যিহোবার কাছে যদি এই সমস্ত তারা সৃষ্টি করার শক্তি থাকে, তা হলে তিনি কি তাঁর সেবকদের সাহায্য করবেন না? সত্যিই, ব্যাবিলনে থাকা যিহুদিদের কাছে ভয় পাওয়ার কোনো কারণই ছিল না।

১৫. যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন?

১৫ যিহোবা তাঁর লোকদের ভবিষ্যতের জন্যও প্রস্তুত করেছিলেন। যিশাইয় বইয়ের শুরুর অধ্যায়গুলোতে যিহোবা বলেন, “হে আমার লোকেরা, যাও, তোমরা ভিতরের ঘরে প্রবেশ করো আর দরজা বন্ধ করে দাও। কিছুক্ষণের জন্য নিজেদের লুকিয়ে রাখো, যতক্ষণ না প্রচণ্ড রাগ শান্ত হয়।” (যিশা. ২৬:২০, NW) এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর কিছুটা অংশ সেই সময় পরিপূর্ণ হয়েছিল, যখন কোরস ব্যাবিলন আক্রমণ করেছিলেন। প্রাচীন কালের একজন গ্রিক ঐতিহাসিক বলেন, “কোরস যখন ব্যাবিলনে প্রবেশ করেছিলেন, তখন তিনি তার সৈনিকদের আদেশ দিয়েছিলেন, কাউকে যদি বাইরে দেখা যায়, তা হলে তারা যেন তাকে কেটে ফেলে।” চিন্তা করুন, ব্যাবিলনের লোকেরা কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, যিহুদিরা যিহোবার কথা শুনেছিল এবং নিজেদের ঘরেই ছিল। আর হয়তো এই কারণেই তারা রক্ষা পেয়েছিল।

১৬. কেন আমাদের ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা করা উচিত নয়? (ছবিও দেখুন।)

১৬ এর থেকে আমরা কী শিখি? খুব শীঘ্রই আমরা এমন মহাক্লেশের মুখোমুখি হব, যেটা আজ পর্যন্ত কখনো আসেনি। এই মহাক্লেশ যখন শুরু হবে, তখন লোকেরা এতটাই ভয় পেয়ে যাবে যে তারা কিছুই বুঝতে পারবে না যে, তারা কী করবে। কিন্তু, যিহোবার লোকদের বিষয়ে কী বলা যায়? সেইসময় আমরা ভয় পাব না। কারণ, আমরা জানি যে, আমাদের ঈশ্বর যিহোবা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকব, কারণ আমরা জানি, আমাদের “উদ্ধার লাভ করার সময় কাছে এগিয়ে এসেছে।” (লূক ২১:২৮) এমনকী সমস্ত জাতির জোট যখন আমাদের বিরোধিতা করবে, তখনও আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করব এবং স্থির থাকব। সেইসময় যিহোবা তাঁর স্বর্গদূতদের মাধ্যমে আমাদের সুরক্ষা জোগাবেন। তিনি আমাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেবেন। এই নির্দেশনাগুলো কোথা থেকে আসবে? এটা জানার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে এমনটা মনে করা হয়, এই নির্দেশনা আমরা মণ্ডলীগুলোর কাছ থেকে পাব। হয়তো এই মণ্ডলীগুলো হল ‘ভিতরের ঘর’ আর সেখানে আমরা সুরক্ষিত থাকব। ভবিষ্যতে যে-ঘটনাগুলো ঘটবে, সেগুলোর জন্য কীভাবে আমরা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারি? আমাদের এখন থেকেই ভাই-বোনদের সঙ্গে এক দৃঢ় সম্পর্ক রাখতে হবে, যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলতে হবে এবং নিশ্চিত থাকতে হবে, বর্তমানে আমাদের সংগঠনকে যিহোবাই পরিচালনা দিচ্ছেন।—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫; ১৩:১৭.

যিহোবা হলেন সবচেয়ে শক্তিশালী এবং তিনি আমাদের সমস্ত সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারেন। এই বিষয়টা মনে রাখলে মহাক্লেশের সময় আমরা দুশ্চিন্তা করব না (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) b


১৭. যিহোবার কাছ থেকে সান্ত্বনা লাভ করার জন্য আপনি কী করতে পারেন?

১৭ ব্যাবিলনে যিহুদিদের জীবন সহজ ছিল না এবং তারা নিরুৎসাহিত ছিল। কিন্তু, যিহোবা তাদের সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। তিনি আমাদেরও সান্ত্বনা দেবেন। তাই আগামীকাল কী হবে, সেটা নিয়ে চিন্তা করবেন না বরং যিহোবার উপর আস্থা রাখুন। নিশ্চিত থাকুন, তিনি আমাদের প্রতি করুণা দেখাবেন এবং আমাদের ক্ষমা করবেন। যিহোবা আমাদের যে-আশা দিয়েছেন, সেটা কখনো অস্পষ্ট হতে দেবেন না। মনে রাখুন, যিহোবা আপনার ঈশ্বর, তাই আপনার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।

গান ৩ দৃঢ় দুর্গ তুমি ও বিশ্বাসভূমি

a কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

b ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: কিছু ভাই-বোন একটা ঘরে একসঙ্গে রয়েছে। তারা এই বিষয়ে নিশ্চিত যে, যিহোবা অনেক শক্তিশালী এবং তিনি তাঁর দাসদের সমস্ত সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারেন, তা তারা পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন।