Privacy Settings

To provide you with the best possible experience, we use cookies and similar technologies. Some cookies are necessary to make our website work and cannot be refused. You can accept or decline the use of additional cookies, which we use only to improve your experience. None of this data will ever be sold or used for marketing. To learn more, read the Global Policy on Use of Cookies and Similar Technologies. You can customize your settings at any time by going to Privacy Settings.

সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২২

যিহোবার পরামর্শ মেনে চলুন আর প্রজ্ঞাবান হোন

যিহোবার পরামর্শ মেনে চলুন আর প্রজ্ঞাবান হোন

“সদাপ্রভুই প্রজ্ঞা দান করেন।”—হিতো. ২:৬.

গান ১২০ শ্রবণ করো, বাধ্য হও ও আশীর্বাদ লাভ করো

সারাংশ a

১. কেন আমাদের প্রত্যেকের যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া প্রজ্ঞার প্রয়োজন? (হিতোপদেশ ৪:৭)

 সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমাদের প্রজ্ঞার প্রয়োজন হয়। (যাকোব ১:৫) আপনি যখন কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন আপনি নিশ্চয়ই যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং প্রজ্ঞা চেয়েছিলেন। রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “প্রজ্ঞাই প্রধান বিষয়, তুমি প্রজ্ঞা উপার্জ্জন কর।” (পড়ুন, হিতোপদেশ ৪:৭.) এখানে শলোমন এটা বলছিলেন না যে, আমরা যেন মানুষের কাছ থেকে প্রজ্ঞা “উপার্জ্জন” করি। এর পরিবর্তে, তিনি বলছিলেন যেন আমরা যিহোবার কাছ থেকে প্রজ্ঞা “উপার্জ্জন” করি। (হিতো. ২:৬) তবে, বর্তমানে আমাদের সামনে যে-সমস্যাগুলো আসে, সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে যিহোবার প্রজ্ঞা কি আমাদের সাহায্য করতে পারে? হ্যাঁ, এটা সাহায্য করতে পারে। আসুন দেখি, কীভাবে।

২. একটা কোন উপায়ে আমরা প্রজ্ঞাবান হতে পারব?

বাইবেলে এমন দু-জন ব্যক্তির কথা উল্লেখ রয়েছে, যারা প্রজ্ঞার জন্য খুবই পরিচিত ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন শলোমন। বাইবেল তার বিষয়ে বলে: “ঈশ্বর শলোমনকে প্রচুর প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিলেন।” (১ রাজা. ৪:২৯, NW) আরেকজন ব্যক্তি ছিলেন যিশু। তাঁর মতো প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি আজ পর্যন্ত জন্মগ্রহণ করেনি। (মথি ১২:৪২) তাঁর সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল: “সদাপ্রভুর আত্মা—প্রজ্ঞার ও বিবেচনার আত্মা, . . . তাঁহাতে অধিষ্ঠান করিবেন।” (যিশা. ১১:২) এই দু-জন ব্যক্তি যা-কিছু শিখিয়েছিলেন, সেগুলো আমরা যদি পড়ি আর সেই অনুযায়ী কাজ করি, তা হলে আমরাও প্রজ্ঞাবান হতে পারব।

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া প্রজ্ঞার কারণে শলোমন ও যিশু জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উত্তম পরামর্শ দিতে পেরেছিলেন। এই প্রবন্ধে আমরা সেগুলোর মধ্যে তিনটে ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করব। আর আমরা জানব যে, কীভাবে আমরা টাকাপয়সার ব্যাপারে, কাজের ব্যাপারে এবং নিজেদের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারি।

টাকাপয়সার ব্যাপারে

৪. শলোমন ও যিশুর মধ্যে একটা বড়ো পার্থক্য কী ছিল?

শলোমন খুব ধনী ছিলেন এবং বিলাসবহুল প্রাসাদে থাকতেন। (১ রাজা. ১০:৭, ১৪, ১৫) অন্যদিকে, যিশুর কাছে বেশি কিছু ছিল না, এমনকী তাঁর নিজের কোনো ঘরও ছিল না। (মথি ৮:২০) কিন্তু, টাকাপয়সার ব্যাপারে তারা দু-জনে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখেছিলেন। কেন? কারণ তারা দু-জনেই যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রজ্ঞা পেয়েছিলেন।

৫. টাকাপয়সার ব্যাপারে শলোমনের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল?

শলোমন বলেছিলেন, ‘ধন আশ্রয় বটে।’ (উপ. ৭:১২) টাকাপয়সা দিয়ে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো কিনতে পারি এবং কিছু শখও পূরণ করতে পারি। যদিও শলোমনের কাছে প্রচুর ধনসম্পদ ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি জানতেন যে, টাকাপয়সাই সব কিছু নয়। তিনি লিখেছিলেন: “প্রচুর ধন অপেক্ষা সুখ্যাতি বরণীয়; রৌপ্য ও সুবর্ণ অপেক্ষা প্রসন্নতা ভাল।” (হিতো. ২২:১) তিনি এও দেখেছিলেন, যারা টাকাপয়সাকে ভালোবাসে, প্রায়ই তাদের জীবনে আনন্দ থাকে না। (উপ. ৫:১০, ১২) তিনি বলেছিলেন, আমরা যেন এমনটা মনে না করি, টাকাপয়সাই সব কিছু কারণ টাকাপয়সা আজ আছে, কাল না-ও থাকতে পারে।—হিতো. ২৩:৪, ৫.

টাকাপয়সা রোজগার করার এবং অন্যান্য জিনিসপত্র অর্জন করার ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন? আমরা কি এগুলোকে জীবনে প্রথম স্থান দিচ্ছি, না কি যিহোবার সেবাকে প্রথম স্থান দিচ্ছি? (৬-৭ অনুচ্ছেদ দেখুন) d

৬. টাকাপয়সা ও জিনিসপত্রের ব্যাপারে যিশুর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল? (মথি ৬:৩১-৩৩)

যিশুও টাকাপয়সা ও জিনিসপত্রের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখেছিলেন। তিনি খাওয়া-দাওয়া করাকে উপভোগ করতেন। (লূক ১৯:২, ৬, ৭) তাঁর প্রথম অলৌকিক কাজ ছিল, তিনি জলকে উত্তম দ্রাক্ষারসে পরিণত করেছিলেন। (যোহন ২:১০, ১১) যে-দিন তিনি মারা গিয়েছিলেন, সে-দিন তিনি একটা দামি পোশাক পরে ছিলেন। (যোহন ১৯:২৩, ২৪) কিন্তু, তিনি কখনোই সেই বিষয়গুলোকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেননি। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “কেউই দুই প্রভুর দাসত্ব করতে পারে না; . . . তোমরা ঈশ্বর ও ধনসম্পদ, উভয়ের দাসত্ব করতে পার না।” (মথি ৬:২৪) তিনি তাদের এও শিখিয়েছিলেন, তারা যদি নিজেদের জীবনে ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রথম স্থান দেয়, তা হলে যিহোবা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেবেন।—পড়ুন, মথি ৬:৩১-৩৩.

৭. একজন ভাই যখন টাকাপয়সার ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখেছিলেন, তখন তিনি কোন কোন আশীর্বাদ পেয়েছিলেন?

অনেক ভাই-বোন যখন টাকাপয়সার ব্যাপারে যিহোবার দেওয়া পরামর্শ মেনে চলেছিল, তখন তারা বিভিন্ন উপকার পেয়েছিল। ড্যানিয়েল নামে একজন অবিবাহিত ভাইয়ের উদাহরণ লক্ষ করুন। তিনি বলেন: “যখন আমি কিশোরবয়সি ছিলাম, তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম যে, আমি সারাজীবন যিহোবার সেবা করব।” তিনি কম খরচে জীবনযাপন করতে শিখেছিলেন। তাই, তিনি ত্রাণ কাজে সাহায্য করতে পেরেছিলেন আর সেইসঙ্গে বেথেলে যাওয়ার সুযোগও পেয়েছিলেন। তিনি বলেন: “আমি যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেটার জন্য আমার কোনো আপশোস নেই। আমি চাইলে অনেক টাকাপয়সা রোজগার করতে পারতাম। কিন্তু, তা করলে আমি সেই সমস্ত আশীর্বাদ পেতাম না, যেগুলো আমি এখন পাচ্ছি। আমি আনন্দিত যে, ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রথম স্থান দিয়েছি এবং অনেক ভালো বন্ধু তৈরি করেছি। জগতের সমস্ত ধনসম্পদ পেলেও আমি এতটা আনন্দিত হতে পারতাম না।” সত্যিই, আমরা যখন টাকাপয়সার পিছনে দৌড়োনোর পরিবর্তে যিহোবার সেবা করব, তখন আমরা প্রচুর আশীর্বাদ পাব।

কাজের ব্যাপারে

৮. কাজের ব্যাপারে শলোমনের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল? (উপদেশক ৫:১৮, ১৯)

শলোমন বলেছিলেন, পরিশ্রম করলে আনন্দ পাওয়া যায় এবং এটা “ঈশ্বরের দান।” (পড়ুন, উপদেশক ৫:১৮, ১৯.) তিনি লিখেছিলেন: “সমস্ত পরিশ্রমেই সংস্থান হয়” অর্থাৎ অনেক উপকার নিয়ে আসে। (হিতো. ১৪:২৩) শলোমন নিজে অনেক পরিশ্রম করেছিলেন। তিনি নিজের জন্য প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন, আঙুর ফলের বাগান তৈরি করেছিলেন এবং অনেক পুকুর কেটেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি কিছু নগর নির্মাণ করেছিলেন। (১ রাজা. ৯:১৯; উপ. ২:৪-৬) এত পরিশ্রম করে শলোমন নিশ্চয়ই অনেক আনন্দিত হয়েছিলেন। তবে, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সবচেয়ে বেশি আনন্দ এই সমস্ত কাজের মাধ্যমে নয় বরং যিহোবার সেবা করার মাধ্যমেই পাওয়া যায়। তাই, তিনি যিহোবার জন্য একটা অপূর্ব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন, যেটা নির্মাণ করতে সাত বছর লেগেছিল। (১ রাজা. ৬:৩৮; ৯:১) সব ধরনের কাজ করার পর শলোমন বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবার সেবা করাই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তিনি লিখেছিলেন: “আইস, আমরা সমস্ত বিষয়ের উপসংহার শুনি; ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর।”—উপ. ১২:১৩.

৯. কীভাবে আমরা জানি যে, যিশু কাজকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেননি?

যিশুও অনেক পরিশ্রম করতেন। তিনি যখন যুবক ছিলেন, তখন তিনি কাঠের কাজ করতেন। (মার্ক ৬:৩) যিশুর বাবা-মা হয়তো তাঁর এই পরিশ্রমের জন্য অনেক উপলব্ধি প্রকাশ করতেন। কারণ তাদের এক বড়ো পরিবার ছিল এবং সংসার চালানো সহজ ছিল না। যিশু সিদ্ধ ছিলেন, তাই তিনি যা-কিছুই তৈরি করতেন, সেই সমস্ত কিছু হয়তো উচ্চ মানের হত। সেই কারণেই হয়তো লোকেরা তাঁকে দিয়ে কাজ করাতে চাইত। এই কাজ করে যিশু নিশ্চয়ই খুব আনন্দ পেতেন, তবে তিনি সবসময় এই কাজ করতেন না। তিনি যিহোবার উপাসনা করার জন্যও সময় বের করতেন। (যোহন ৭:১৫) পরবর্তী সময়ে, তিনি যখন পূর্ণসময়ে প্রচার কাজ করতে শুরু করেছিলেন, তখন তিনি তাঁর শ্রোতাদের বলেছিলেন: “যে-খাবার নষ্ট হয়ে যায়, সেটার জন্য নয়, বরং যে-খাবার নষ্ট না হয়ে বরং অনন্তজীবন দান করে, সেটার জন্য কাজ করো।” (যোহন ৬:২৭) আর তাঁর পর্বতের উপরে দেওয়া উপদেশে তিনি বলেছিলেন: “তোমরা স্বর্গে ধনসম্পদ সঞ্চয় করো।”—মথি ৬:২০.

কোলাজ: ১. জন অফিসে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করছেন। ২. টম এবং একজন প্রাচীন এক বোনের বাড়িতে গিয়েছেন আর বাইবেলে থেকে কিছু পদ দেখিয়ে বোনকে উৎসাহিত করছেন।

কীভাবে আমরা কাজ করার পাশাপাশি যিহোবার সেবা করার জন্য সময় বের করতে পারি? (১০-১১ অনুচ্ছেদ দেখুন) e

১০. আমাদের কাজের জায়গায় পরিশ্রম তো করতে হবে, কিন্তু আমাদের কী করা উচিত নয়?

১০ আমরা যদি বাইবেলে দেওয়া যিহোবার পরামর্শ মেনে চলি, তা হলে আমরা কাজের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারব। বাইবেলে বলা আছে যেন আমরা ‘পরিশ্রম করি, ভালো কাজ করি।’ (ইফি. ৪:২৮) প্রায়ই দেখা যায় যে, আমরা যখন ভালো কাজ করি এবং কঠোর পরিশ্রম করি, তখন তা দেখে আমাদের বস হয়তো খুব খুশি হন আর প্রশংসা করেন। এইরকম ক্ষেত্রে হতে পারে বসকে আরও খুশি করার জন্য আমরা আরও বেশি ঘণ্টা কাজ করতে শুরু করি। আমাদের মনে হতে পারে, এমনটা করলে তিনি যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে ভালো চিন্তা করবেন। কিন্তু, কাজের জাগায় আরও বেশি ঘণ্টা ব্যয় করলে আমাদের হাতে যিহোবার জন্য এবং আমাদের পরিবারের জন্য সময়ই থাকবে না। আমাদের প্রতি যদি এমনটা হয়ে থাকে, তা হলে আমাদের কিছু পরিবর্তন করতে হবে।

১১. কীভাবে ভাই উইলিয়াম কাজের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে শিখেছিলেন?

১১ উইলিয়াম নামে একজন যুবক ভাইয়ের প্রতি মনোযোগ দিন, যিনি আগে একজন প্রাচীনের অধীনে চাকরি করতেন। তিনি সেই প্রাচীনের কাছ থেকে শিখেছিলেন, কীভাবে কাজের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা যায়। উইলিয়াম বলেন: “[সেই ভাই] ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে কাজ করার ক্ষেত্রে এক উত্তম উদাহরণ রাখেন। তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন আর তার ক্রেতারা তার প্রশংসা করে কারণ তিনি খুব ভালোভাবে কাজ করেন। কিন্তু, সন্ধ্যা বেলায় তিনি তার কাজ বন্ধ করে দেন আর নিজের পরিবার এবং যিহোবার উপাসনার উপর মনোযোগ দেন। তাই, তিনি সবসময় আনন্দে থাকেন।” b

নিজেদের ব্যাপারে

১২. (ক) কীভাবে আমরা বলতে পারি, শলোমন তার নিজের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখেছিলেন? (খ) কীভাবে পরে তিনি তা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন?

১২ শলোমন যতদিন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন, ততদিন তার নিজের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় ছিল। যখন তিনি যুবক ছিলেন এবং রাজা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন, তখন তিনি খুব নম্র ছিলেন। তিনি স্বীকার করেছিলেন, তার অভিজ্ঞতা কম, তাই তিনি যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। (১ রাজা. ৩:৭-৯) তিনি এও বুঝতে পেরেছিলেন, গর্ব করা অনেক বিপদজনক হতে পারে। এই কারণে তিনি লিখেছিলেন: “বিনাশের পূর্ব্বে অহঙ্কার, পতনের পূর্ব্বে মনের গর্ব্ব।” (হিতো. ১৬:১৮) তবে দুঃখের বিষয় হল, পরে শলোমন নিজেই এই কথাগুলো ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি এতটা গর্বিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি যিহোবার আজ্ঞা পালন করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, যিহোবা আজ্ঞা দিয়েছিলেন, ‘একজন রাজা যেন অনেকগুলো বিয়ে না করে, যাতে তার হৃদয় বিপথে চলে না যায়।’ (দ্বিতীয়. ১৭:১৭, NW) কিন্তু, শলোমন এই আজ্ঞা পালন করেননি আর তিনি অনেক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। তার ৭০০ জন স্ত্রী এবং ৩০০ জন উপপত্নী ছিল, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই মিথ্যা দেব-দেবীদের উপাসনা করত। (১ রাজা. ১১:১-৩) শলোমন হয়তো মনে করেছিলেন, ‘আমার কিছুই হবে না,’ কিন্তু তার চিন্তা ভুল ছিল। এই স্ত্রীদের কারণেই তিনি যিহোবার কাছ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে গিয়েছিলেন।—১ রাজা. ১১:৯-১৩.

১৩. কীভাবে আপনি যিশুর মতো নম্র হতে পারেন?

১৩ যিশু সবসময় নম্র ছিলেন। পৃথিবীতে আসার আগে, স্বর্গে তিনি যিহোবার সঙ্গে অনেক কিছু করেছিলেন। “স্বর্গে ও পৃথিবীতে, . . . সমস্ত কিছু তাঁর মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে।” (কল. ১:১৬) যিশু যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, তখন তাঁর হয়তো সেইসমস্ত কিছু মনে পড়ে গিয়েছিল। (মথি ৩:১৬; যোহন ১৭:৫) কিন্তু, এই সমস্ত কিছু চিন্তা করে তিনি গর্বিত হয়ে পড়েননি। তিনি কখনোই নিজের কথাবার্তা ও কাজের মাধ্যমে দেখাননি যে, তিনি অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এর পরিবর্তে, যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, তিনি পৃথিবীতে “সেবা পেতে আসেননি, বরং সেবা করতে এবং অনেকের জীবনের পরিবর্তে নিজের জীবন মুক্তির মূল্য হিসেবে দিতে এসেছেন।” (মথি ২০:২৮) যিশু এও বলেছিলেন, তিনি নিজের ইচ্ছামতো নয় বরং যিহোবা যা চান, সেই কাজই করেন। (যোহন ৫:১৯) সত্যিই, যিশু কত নম্র ছিলেন! আমাদেরও তাঁর মতো নম্র হওয়া উচিত।

১৪. নিজেদের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার জন্য আমরা যিশুর কোন কথা মনে রাখতে পারি?

১৪ আমাদের নম্র হতে হবে। কিন্তু, আমরা যেন এইরকম চিন্তা না করি যে, আমরা অযোগ্য অথবা আমাদের কোনো মূল্য নেই। এই বিষয়ে যিশু আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। একবার তিনি বলেছিলেন: “তোমাদের মাথার প্রতিটা চুলও গোনা আছে।” (মথি ১০:৩০) এই কথাগুলো আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, যিহোবা আমাদের জন্য অনেক চিন্তা করেন এবং আমাদের মূল্যবান হিসেবে দেখেন। তাই, যদি যিহোবা আমাদের তাঁর উপাসক হওয়ার এবং অনন্তজীবন দেওয়ার জন্য বেছে নিয়ে থাকেন, তা হলে তাঁর এই সিদ্ধান্তের উপর আমাদের কখনোই প্রশ্ন তোলা উচিত নয়।

কোলাজ: ১. জন তার গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি নিচ্ছেন। ২. টম তার কিছু বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি নিচ্ছেন, যাদের সঙ্গে তিনি একটা সম্মেলন হল মেরামতের কাজ করছেন।

আমরা যদি শুধু নিজেদের ব্যাপারেই চিন্তা করতে থাকি, তা হলে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ হাতছাড়া করব? (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) f

১৫. (ক) প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় আমাদের কোন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল? (খ) ২৪ পৃষ্ঠায় দেওয়া ছবি অনুযায়ী আমরা যদি শুধু নিজেদের ব্যাপারে চিন্তা করতে থাকি, তা হলে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ হাতছাড়া করব?

১৫ প্রায় ১৫ বছর আগে প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় বলা হয়েছিল, আমরা যদি নিজেদের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখি, তা হলে এতে আমাদেরই ভালো হবে। সেখানে লেখা ছিল: ‘অবশ্যই, আমরা নিজেদের সম্বন্ধে অতিরিক্ত উচ্চ ধারণাও পোষণ করব না যে, তা আমাদের অহংকারী করে তোলে; আবার আমরা বিপরীত ক্ষেত্রেও চরমে যেতে চাইব না ও নিজেদের একেবারে মূল্যহীন মনে করব না। বরং, আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত নিজেদের সম্বন্ধে এমন এক যুক্তিসংগত দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা, যেটা আমাদের শক্তি ও সেইসঙ্গে আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলোও বিবেচনা করে। একজন খ্রিস্টান মহিলা এভাবে বলেছিলেন: “আমি একেবারে খারাপ ব্যক্তি নই; আবার অন্যদের কাছে ঈশ্বরের কাছ থেকে বরস্বরূপও নই। আমার মধ্যেও ভালো ও খারাপ উভয় গুণই রয়েছে আর প্রত্যেকেরই তা থাকে।”’ c

১৬. যিহোবা কোন কারণে আমাদের পরামর্শ দেন?

১৬ যিহোবা আমাদের খুব ভালোবাসেন আর চান যেন আমরা আনন্দে থাকি। তাই, তিনি তাঁর বাক্যের মাধ্যমে আমাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন, যেগুলো মেনে চললে আমরা প্রজ্ঞাবান হতে পারি। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) আজ জগতের বেশিরভাগ লোক শুধু টাকাপয়সা, কাজ আর নিজেদের ব্যাপারে চিন্তা করে থাকে। এর ফলে, তারা অনেক বিপদে পড়ে। কিন্তু, আমরা যদি যিহোবার দেওয়া পরামর্শগুলো মেনে চলি এবং তাঁর সেবাকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থান দিই, তা হলে আমরা টাকাপয়সার ব্যাপারে, কাজের ব্যাপারে এবং নিজেদের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারব এবং আনন্দে থাকব। তাই আসুন, আমরা যেন প্রজ্ঞাবান হই আর আমাদের পিতা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে চলি।—হিতো. ২৩:১৫.

গান ৩৭ শাস্ত্রলিপি—ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত

a শলোমন ও যিশু অনেক প্রজ্ঞাবান ছিলেন কারণ যিহোবা তাদের প্রজ্ঞা দিয়েছিলেন। তারা দু-জনে এমন অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমরা টাকাপয়সার ব্যাপারে, কাজের ব্যাপারে এবং নিজেদের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা এইরকম কিছু পরামর্শের উপর মনোযোগ দেব। আর এও জানব যে, কীভাবে কিছু ভাই-বোন সেই পরামর্শগুলো মেনে চলার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে।

b ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র ৪ পৃষ্ঠায় দেওয়া “সমস্ত পরিশ্রমের মধ্যে সুখভোগ করুন” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

c ২০০৫ সালের ১ আগস্ট প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় “বাইবেল আপনাকে আনন্দ খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

d ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: জন ও টম নামে দু-জন ভাই একই মণ্ডলীতে সেবা করেন। একদিকে, জন তার গাড়ি পরিষ্কার রাখার জন্য একটু বেশিই সময় ব্যয় করছেন। অন্যদিকে, টম তার গাড়ি করে অন্যদের কিংডম হলে এবং প্রচারে নিয়ে যাচ্ছেন।

e ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: জন তার কাজের জায়গায় ওভারটাইম করছেন। যখনই তার বস তাকে ওভারটাইম করতে বলেন, তখনই তাকে খুশি করার জন্য জন ওভারটাইম করেন। টম একজন পরিচারক দাস আর তিনি সেই একই দিনের সন্ধ্যা বেলায় একজন প্রাচীনের সঙ্গে পালকীয় সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। টম আগে থেকে তার বসকে বলে রেখেছেন যে, সপ্তাহের কয়েক দিন সন্ধ্যা বেলায় তার সভা থাকে এবং তাকে অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই, তিনি সেইসময় কাজ করতে পারবেন না।

f ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: জন শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন, কিন্তু টম যিহোবার সেবাকে তার জীবনে প্রথম স্থান দিয়েছেন। তিনি সম্মেলন হল মেরামত করার কাজে সাহায্য করছেন। এর ফলে, তিনি আরও নতুন বন্ধু তৈরি করতে পেরেছেন।