আপনার শত্রুকে জানুন
“[শয়তানের] কল্পনা [“ষড়যন্ত্র,” ইজি-টু-রিড ভারশন] সকল আমরা অজ্ঞাত নই।”—২ করি. ২:১১.
১. আদম ও হবা পাপ করার পর যিহোবা আমাদের শত্রু সম্বন্ধে কী প্রকাশ করেছিলেন?
আদম জানতেন, সাপ কথা বলতে পারে না। তাই, তিনি যখন জানতে পেরেছিলেন, একটা সাপ হবার সঙ্গে কথা বলেছে, তখন আদম সম্ভবত বুঝতে পেরেছিলেন যে, কোনো আত্মিক প্রাণীই হবার সঙ্গে কথা বলেছে। (আদি. ৩:১-৬) আদম ও হবা জানতেন না যে, সেই আত্মিক প্রাণী আসলে কে। তা সত্ত্বেও, আদম সেই অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগ দেওয়া ও সেইসঙ্গে তার প্রেমময় স্বর্গীয় পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা বেছে নিয়েছিলেন। (১ তীম. ২:১৪) যিহোবা সঙ্গেসঙ্গে সেই মন্দ শত্রু সম্বন্ধে তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করেছিলেন এবং প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, সেই শত্রুকে অবশেষে ধ্বংস করা হবে। কিন্তু যিহোবা সতর্ক করেছিলেন, সেই সময় না আসা পর্যন্ত, যে-আত্মিক প্রাণী সাপের মাধ্যমে কথা বলেছিল, সে এমন সকলের বিরোধিতা করবে, যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে।—আদি. ৩:১৫.
২, ৩. সম্ভবত কোন কারণে মশীহ পৃথিবীতে আসার আগে যিহোবা শয়তান সম্বন্ধে খুব কম তথ্য প্রকাশ করেছিলেন?
২ যিহোবা কখনো আমাদের সেই দূতের নাম বলেননি, যে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। a এদনে বিদ্রোহের পর ২,৫০০ বছর পার না হওয়া পর্যন্ত যিহোবা প্রকাশ করেননি যে, সেই বিদ্রোহী আসলে কে। (ইয়োব ১:৬) সেই বিদ্রোহী “শয়তান” উপাধি দ্বারা পরিচিত, যেটার অর্থ হল “বিপক্ষ।” ইব্রীয় শাস্ত্র-এর মাত্র তিনটে বইয়ে অর্থাৎ ১ বংশাবলি, ইয়োব ও সখরিয় বইয়ে শয়তানের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। কেন মশীহ আসার আগে এই শত্রু সম্বন্ধে এত কম তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল?
৩ যিহোবা ইব্রীয় শাস্ত্র-এ শয়তান ও তার কাজ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করেননি। কেন? কারণ ইব্রীয় শাস্ত্র-এর উদ্দেশ্য ছিল মশীহকে চেনার ও তাঁকে অনুসরণ করার জন্য লোকেদের সাহায্য করা। (লূক ২৪:৪৪; গালা. ৩:২৪) মশীহ যখন পৃথিবীতে এসেছিলেন, তখন যিহোবা তাঁকে ও তাঁর শিষ্যদের ব্যবহার করে শয়তান ও তার সঙ্গে যে-দূতেরা যোগ দিয়েছে, তাদের সম্বন্ধে এমন অনেক তথ্য প্রকাশ করেছিলেন, যেগুলো সম্বন্ধে বর্তমানে আমরা জানি। b এটা উপযুক্ত কারণ যিহোবা যিশুকে ও অভিষিক্ত ব্যক্তিদের ব্যবহার করে শয়তান ও তার অনুসারীদের ধ্বংস করবেন।—রোমীয় ১৬:২০; প্রকা. ১৭:১৪; ২০:১০.
৪. কেন দিয়াবলের কারণে আমাদের আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়?
৪ প্রেরিত পিতর শয়তান দিয়াবলকে ‘গর্জ্জনকারী সিংহ’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং যোহন তাকে “সর্প” ও ‘নাগ’ বলে উল্লেখ করেন। (১ পিতর ৫:৮; প্রকা. ১২:৯) কিন্তু, দিয়াবলের কারণে আমাদের আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়। তার ক্ষমতা সীমিত। (পড়ুন, যাকোব ৪:৭.) যিহোবা, যিশু ও বিশ্বস্ত স্বর্গদূতেরা আমাদের সুরক্ষিত রাখেন। তাদের সাহায্যে আমরা আমাদের শত্রুর প্রতিরোধ করতে পারি। তারপরও, আমাদের তিনটে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে: শয়তানের কতটা প্রভাব রয়েছে? সে কীভাবে লোকেদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করে? আর সে কোন বিষয়গুলো করতে পারে না? আসুন, আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে আলোচনা করি এবং দেখি যে, আমরা কোন শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি।
শয়তানের কতটা প্রভাব রয়েছে?
৫, ৬. কেন মানবসরকারগুলো সেইসমস্ত পরিবর্তন আনতে পারে না, যেগুলোর মানবজাতির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রয়েছে?
৫ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে করা বিদ্রোহে অনেক স্বর্গদূত শয়তানের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। জলপ্লাবনের আগে, শয়তান তাদের মধ্যে অন্ততপক্ষে কয়েক জনকে নারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার জন্য প্রলুব্ধ করেছিল। বাইবেল এই বিষয়টাকে রূপকভাবে বর্ণনা করে বলে যে, সেই নাগ তার সঙ্গে স্বর্গের এক তৃতীয়াংশ নক্ষত্রকে আকর্ষণ করে নিয়ে এসেছিল। (আদি. ৬:১-৪; যিহূদা ৬; প্রকা. ১২:৩, ৪) সেই দূতেরা যখন ঈশ্বরের পরিবার ত্যাগ করেছিল, তখন তারা শয়তানের নিয়ন্ত্রণের অধীনে থাকা বেছে নিয়েছিল। আমাদের সেই বিদ্রোহী দূতদের কোনো অসংগঠিত দল হিসেবে মনে করা উচিত নয়। অদৃশ্য আত্মিক জগতে শয়তান ঈশ্বরের রাজ্যের মতো নিজের আধিপত্য বা সরকার গঠন করেছে। সে নিজেকে সেই সরকারের রাজা করেছে এবং মন্দদূতদের সংগঠিত করেছে, তাদের ক্ষমতা দিয়েছে ও তাদের জগৎপতি বা জগতের শাসক করেছে।—ইফি. ৬:১২.
৬ শয়তান তার সংগঠনকে ব্যবহার করে সমস্ত মানবসরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি কারণ সে যিশুকে “জগতের সমস্ত রাজ্য” দেখিয়ে বলেছিল: “তোমাকেই আমি এই সমস্ত কর্ত্তৃত্ব ও এই সকলের প্রতাপ দিব; কেননা ইহা আমার কাছে সমর্পিত হইয়াছে, আর আমার যাহাকে ইচ্ছা, তাহাকে দান করি।” (লূক ৪:৫, ৬) তারপরও, অনেক সরকার তাদের নাগরিকদের জন্য উত্তম বিষয়গুলো করে থাকে এবং কোনো কোনো শাসক সত্যিই লোকেদের সাহায্য করতে চায়। কিন্তু, কোনো মানবশাসকই সেইসমস্ত পরিবর্তন আনতে পারে না, যেগুলোর আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রয়েছে।—গীত. ১৪৬:৩, ৪; প্রকা. ১২:১২.
৭. সরকারগুলোকে ব্যবহার করার পাশাপাশি কীভাবে শয়তান মিথ্যা ধর্ম ও বাণিজ্যিক জগৎকে ব্যবহার করে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৭ এ ছাড়া, শয়তান ও মন্দদূতেরা মিথ্যা ধর্ম ও বাণিজ্যিক জগৎকে ব্যবহার করে ‘সমস্ত নরলোককে’ ভ্রান্ত করে। (প্রকা. ১২:৯) শয়তান মিথ্যা ধর্মকে ব্যবহার করে যিহোবা সম্বন্ধে মিথ্যা ছড়ায় আর সে এমনকী ঈশ্বরের নাম গোপন করার চেষ্টা করে। (যির. ২৩:২৬, ২৭) এর ফলে, কোনো কোনো আন্তরিক ব্যক্তি, যারা মনে করে যে, তারা ঈশ্বরের উপাসনা করছে, তারা আসলে ভূত বা মন্দদূতদের উপাসনা করে থাকে। (১ করি. ১০:২০; ২ করি. ১১:১৩-১৫) এ ছাড়া, শয়তান বাণিজ্যিক জগৎকে ব্যবহার করেও এইরকম কিছু মিথ্যা ছড়িয়ে থাকে যেমন, টাকাপয়সা ও বস্তুগত বিষয় লোকেদের সুখী করে। (হিতো. ১৮:১১) যারা এই মিথ্যা কথাকে বিশ্বাস করে, তারা তাদের সারা জীবনকে ঈশ্বরের নয় বরং ‘ধনের’ সেবা করার জন্য ব্যয় করে থাকে। (মথি ৬:২৪) এমনকী তাদের যদি একসময় ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা থেকেও থাকে, তারপরও বস্তুগত বিষয়ের প্রতি তাদের ভালোবাসা এতটাই গভীর হয়ে ওঠে যে, ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভালোবাসা হারিয়ে যায়।—মথি ১৩:২২; ১ যোহন ২:১৫, ১৬.
৮, ৯. (ক) আদম, হবা ও বিদ্রোহী স্বর্গদূতদের কাজ থেকে আমরা কোন দুটো শিক্ষা লাভ করতে পারি? (খ) কেন আমাদের জন্য এটা জানা উত্তম যে, শয়তান এই জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করে?
৮ আদম, হবা ও বিদ্রোহী স্বর্গদূতদের কাছ থেকে আমরা দুটো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি। প্রথমত আমরা শিখি, কেবল দুটো পক্ষ রয়েছে এবং আমাদের অবশ্যই যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে। আমরা হয় যিহোবার পক্ষে থাকতে পারি, না হয় শয়তানের পক্ষে থাকতে পারি। (মথি ৭:১৩) দ্বিতীয়ত আমরা শিখি, যারা শয়তানের সঙ্গে যোগ দেয়, তারা কেবল সীমিত উপকার লাভ করে। আদম ও হবা তাদের জন্য কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ লাভ করেছিলেন আর মন্দদূতেরা মানবসরকারগুলোর উপর কিছুটা ক্ষমতা লাভ করেছে। (আদি. ৩:২২) কিন্তু, শয়তানের পক্ষ বেছে নেওয়া সবসময় মন্দ পরিণতি ডেকে আনে। তার পক্ষ বেছে নেওয়ার কোনো প্রকৃত উপকার নেই!—ইয়োব ২১:৭-১৭; গালা. ৬:৭, ৮.
৯ কেন আমাদের জন্য এটা জানা উত্তম যে, শয়তান এই জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করে? এটা আমাদের সরকারগুলোর প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং সুসমাচার প্রচার করতে অনুপ্রাণিত করে। আমরা জানি, যিহোবা চান যেন আমরা সরকারগুলোর প্রতি সম্মান দেখাই। (১ পিতর ২:১৭) তিনি চান যেন আমরা সরকারগুলোর বিভিন্ন আইনের বাধ্য হই, যতক্ষণ না সেগুলো তাঁর মানগুলোর বিরুদ্ধে যাচ্ছে। (রোমীয় ১৩:১-৪) কিন্তু আমরা এও জানি যে, আমাদের অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকতে হবে এবং যেকোনো রাজনৈতিক দল অথবা মানবনেতাকে সমর্থন করা এড়িয়ে চলতে হবে। (যোহন ১৭:১৫, ১৬; ১৮:৩৬) যেহেতু আমরা জানি, শয়তান যিহোবার নামকে গোপন করার ও তাঁর সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে, তাই আমরা আমাদের ঈশ্বর সম্বন্ধে লোকেদের সত্য শেখানোর জন্য যথাসাধ্য করি। আমরা তাঁর নাম বহন করতে পেরে আর তা ব্যবহার করতে পেরে গর্বিত। টাকাপয়সা অথবা বস্তুগত বিষয়ের প্রতি ভালোবাসার চেয়ে ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা আরও বেশি মূল্যবান।—যিশা. ৪৩:১০; ১ তীম. ৬:৬-১০.
শয়তান কীভাবে অন্যদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করে?
১০-১২. (ক) কীভাবে শয়তান হয়তো কোনো কোনো স্বর্গদূতকে প্রলুব্ধ করার জন্য টোপ ব্যবহার করেছিল? (খ) সেই স্বর্গদূতেরা যা করেছিল, সেখান থেকে আমরা কী শিখি?
১০ শয়তান অন্যদের প্রভাবিত করার জন্য কার্যকরী পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে। লোকেরা যাতে তার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করে, সেইজন্য কখনো কখনো সে তাদের প্রলুব্ধ করার জন্য টোপ ব্যবহার করে আর অন্যান্য সময়ে সে তাদের সরাসরি আক্রমণ করার চেষ্টা করে।
১১ শয়তান এক বৃহৎসংখ্যক স্বর্গদূতকে প্রলুব্ধ করার জন্য টোপ ব্যবহার করেছিল। হতে পারে, সে অনেক সময় ধরে তাদের লক্ষ করেছিল, যাতে সে এটা জানতে পারে যে, কোন বিষয়টা ব্যবহার করে তাদের প্রলুব্ধ করা যায়। কোনো কোনো স্বর্গদূত সেই টোপ গিলেছিল এবং নারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছিল। তাদের সন্তানরা দৌরাত্ম্যপূর্ণ দৈত্য ছিল, যারা তাদের চারপাশের লোকেদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করত। (আদি. ৬:১-৪) সেই স্বর্গদূতদের প্রলুব্ধ করার জন্য অনৈতিকতার টোপ ব্যবহার করার পাশাপাশি শয়তান হয়তো তাদের কাছে এই প্রতিজ্ঞাও করেছিল যে, তারা সমস্ত মানুষের উপর ক্ষমতা লাভ করবে। এভাবে, শয়তান হয়তো ‘নারীর বংশ’ সম্বন্ধে করা যিহোবার ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছিল। (আদি. ৩:১৫) কিন্তু, যিহোবা তাকে সফল হতে দেননি। তিনি জলপ্লাবন নিয়ে এসেছিলেন, যেটা শয়তান ও মন্দদূতদের এই ধরনের যেকোনো চক্রান্তকে নষ্ট করে দিয়েছিল।
১২ আমরা এখান থেকে কী শিখি? অনৈতিকতা ও গর্ব হল খুবই কার্যকরী ধরনের টোপ। যে-স্বর্গদূতেরা শয়তানের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল, তারা অনেক বছর ধরে স্বর্গে স্বয়ং ঈশ্বরের সঙ্গে ছিল! তা সত্ত্বেও, তাদের মধ্যে অনেকে নিজেদের হৃদয়ে মন্দ আকাঙ্ক্ষাকে গড়ে উঠতে দিয়েছিল আর একসময়, সেই আকাঙ্ক্ষা খুবই প্রবল হয়ে উঠেছিল। আমাদের অবশ্যই সবসময় মনে রাখতে হবে যে, আমরা যত দীর্ঘসময় ধরেই যিহোবার সেবা করি না কেন, আমাদের হৃদয়ে মন্দ আকাঙ্ক্ষা শিকড় বিস্তার করতে পারে। (১ করি. ১০:১২) এই কারণে আমাদের অবশ্যই বার বার পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, আমাদের হৃদয়ে কী রয়েছে এবং যেকোনো ধরনের অনৈতিক চিন্তাভাবনা ও গর্ব ত্যাগ করতে হবে!—গালা. ৫:২৬; পড়ুন, কলসীয় ৩:৫.
১৩. শয়তানের ব্যবহৃত আরেক ধরনের টোপ কী এবং কীভাবে আমরা তা এড়িয়ে চলতে পারি?
১৩ শয়তানের ব্যবহৃত আরেক ধরনের টোপ হল অতিপ্রাকৃতিক বিষয় সম্বন্ধে কৌতূহল। এর অন্তর্ভুক্ত হল জাদুবিদ্যা, মৃতদের সঙ্গে কথা বলা, মন্দদূতদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন বিষয় ও এই ধরনের অন্যান্য খারাপ বিষয়। বর্তমানে, সে মিথ্যা ধর্ম ও সেইসঙ্গে আমোদপ্রমোদ ব্যবহার করে মন্দদূতদের সম্বন্ধে লোকেদের আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করে। সিনেমা, ইলেকট্রনিক গেম ও অন্যান্য ধরনের আমোদপ্রমোদ অতিপ্রাকৃতিক বিষয়গুলোকে রোমাঞ্চকর হিসেবে তুলে ধরতে পারে। কীভাবে আমরা এই টোপ এড়িয়ে চলতে পারি? আমাদের এমনটা আশা করা উচিত নয় যে, ঈশ্বরের সংগঠন আমাদের ভালো ও মন্দ আমোদপ্রমোদের একটা তালিকা তৈরি করে দেবে। আমাদের অবশ্যই নিজেদের বিবেককে প্রশিক্ষিত করতে হবে, যাতে আমরা যিহোবার নীতির উপর ভিত্তি করে ভালো বাছাই করতে পারি। (ইব্রীয় ৫:১৪) আর ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভালোবাসা যদি “নিষ্কপট” হয়, তা হলে আমরা বিজ্ঞ বাছাই করব। (রোমীয় ১২:৯) একজন কপট ব্যক্তি মুখে একরকম বলেন, কাজে অন্যরকম করেন। তাই, আমোদপ্রমোদ বাছাই করার সময়ে আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি সেই একই নীতি অনুসরণ করি, যা আমি অন্যদের অনুসরণ করতে বলি? আমি যাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করি অথবা পুনর্সাক্ষাৎ করি, তারা যদি দেখে যে, আমি কোন ধরনের আমোদপ্রমোদ বাছাই করি, তা হলে তারা কী মনে করবে?’ আমরা যখন সেই একই নীতি অনুসরণ করি, যা আমরা অন্যদের অনুসরণ করতে বলি, তখন আমাদের পক্ষে শয়তানের টোপগুলো প্রত্যাখ্যান করা সহজ হয়।—১ যোহন ৩:১৮.
১৪. শয়তান কীভাবে আমাদের সরাসরি আক্রমণ করার চেষ্টা করতে পারে আর কীভাবে আমরা তার বিরুদ্ধে অটল থাকতে পারি?
১৪ শয়তান আমাদের সরাসরি আক্রমণ করার ও ভয় দেখানোর চেষ্টা করে, যাতে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের আনুগত্য ভেঙে ফেলি। উদাহরণ স্বরূপ, সে হয়তো সরকারগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে, যাতে সেগুলো আমাদের প্রচার কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সে আমাদের সহকর্মী অথবা সহপাঠীদের প্রভাবিত করতে পারে, যাতে তারা এই কারণে আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করে যে, আমরা বাইবেলের নীতি অনুসরণ করি। (১ পিতর ৪:৪) শয়তান এমনকী আমাদের পরিবারের ন-সাক্ষি সদস্যদেরও প্রভাবিত করতে পারে, যাদের হয়তো ভালো উদ্দেশ্য রয়েছে কিন্তু যারা হয়তো আমাদের সভায় যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। (মথি ১০:৩৬) শয়তান যখন আমাদের সরাসরি আক্রমণ করে, তখন আমরা তার বিরুদ্ধে অটল থাকার জন্য কী করতে পারি? এই ধরনের আক্রমণের কারণে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয় কারণ আমরা জানি, শয়তান আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। (প্রকা. ২:১০; ১২:১৭) এ ছাড়া আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা কী: শয়তান দাবি করে যে, আমরা কেবল সেইসময়েই যিহোবার সেবা করি, যখন তা করা আমাদের পক্ষে সহজ হয় এবং পরিস্থিতি যদি কঠিন হয়ে পড়ে, তা হলে আমরা ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করব। (ইয়োব ১:৯-১১; ২:৪, ৫) শেষে, আমাদের অবশ্যই সবসময় যিহোবার কাছে শক্তি চাইতে হবে। মনে রাখবেন, যিহোবা কখনো আমাদের ত্যাগ করবেন না।—ইব্রীয় ১৩:৫.
শয়তান যা করতে পারে না
১৫. শয়তান কি আমাদের এমন কিছু করার জন্য জোর করতে পারে, যেটা আমরা করতে চাই না? ব্যাখ্যা করুন।
১৫ শয়তান লোকেদের এমন কিছু করার জন্য জোর করতে পারে না, যেটা তারা করতে চায় না। (যাকোব ১:১৪) জগতের অনেকে এমনকী বুঝতেই পারে না যে, তারা শয়তানের পক্ষে রয়েছে। কিন্তু, একজন ব্যক্তি যখন সত্য শেখেন, তখন তাকে অবশ্যই এটা বাছাই করতে হয় যে, তিনি যিহোবার পক্ষ নেবেন, না শয়তানের পক্ষ নেবেন। (প্রেরিত ৩:১৭; ১৭:৩০) আমরা যখন ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই, তখন শয়তান আমাদের আনুগত্যকে ভেঙে ফেলতে পারে না।—ইয়োব ২:৩; ২৭:৫.
১৬, ১৭. (ক) শয়তান ও মন্দদূতেরা আর কোন বিষয়টা করতে পারে না? (খ) কেন আমাদের জোরে জোরে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার বিষয়ে ভয় পাওয়া উচিত নয়?
১৬ আরও এমন বিষয় রয়েছে, যেগুলো শয়তান ও মন্দদূতেরা করতে পারে না। উদাহরণ স্বরূপ, বাইবেল কখনো এমনটা বলে না যে, তারা আমাদের মন বা হৃদয়ে কী রয়েছে, তা জানতে পারে। কেবল যিহোবা ও যিশুই তা জানতে পারেন। (১ শমূ. ১৬:৭; মার্ক ২:৮) তাই, আমাদের কি এই ভেবে ভয় পাওয়া উচিত যে, আমরা যদি জোরে জোরে কথা বলি অথবা প্রার্থনা করি, তা হলে শয়তান ও মন্দদূতেরা তা শুনে ফেলবে এবং সেই তথ্যকে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে? না! কেন? এই তুলনাটা নিয়ে চিন্তা করুন: আমরা এই ভেবে যিহোবার সেবায় ভালো বিষয়গুলো করতে ভয় পাই না যে, দিয়াবল আমাদের দেখে ফেলবে। একইভাবে, আমাদের এই ভেবে জোরে জোরে প্রার্থনা করার বিষয়ে ভয় পাওয়া উচিত নয় যে, দিয়াবল আমাদের কথাগুলো শুনে ফেলবে। এ ছাড়া, বাইবেল একাধিক বার বলে যে, ঈশ্বরের দাসেরা জোরে জোরে প্রার্থনা করেছিল আর আমরা কখনো এমনটা পড়ি না যে, তারা এই ভেবে ভয় পেয়েছিল, দিয়াবল তাদের কথাগুলো শুনে ফেলবে। (১ রাজা. ৮:২২, ২৩; যোহন ১১:৪১, ৪২; প্রেরিত ৪:২৩, ২৪) আমরা যদি ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী কথা বলার ও কাজ করার জন্য যথাসাধ্য করি, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা দিয়াবলকে আমাদের স্থায়ী ক্ষতি করতে দেবেন না।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৪:৭.
১৭ আমাদের শত্রুকে আমাদের জানতে হবে কিন্তু আমাদের তার কারণে আতঙ্কিত হতে হবে না। এমনকী যদিও আমরা অসিদ্ধ, তা সত্ত্বেও আমরা শয়তানের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারি! (১ যোহন ২:১৪) আমরা যদি তার প্রতিরোধ করি, তা হলে সে আমাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাবে। (যাকোব ৪:৭; ১ পিতর ৫:৯) বর্তমানে এমনটা মনে হচ্ছে যেন শয়তান বিশেষভাবে অল্পবয়সিদের আক্রমণ করছে। কীভাবে তারা দিয়াবলের আক্রমণের প্রতিরোধ করতে পারে? আমরা পরবর্তী প্রবন্ধে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করব।
a বাইবেল কোনো কোনো স্বর্গদূতের নাম প্রকাশ করে। (বিচার. ১৩:১৮; দানি. ৮:১৬; লূক ১:১৯; প্রকা. ১২:৭) এটি এও বলে যে, যিহোবা প্রত্যেকটা তারার নাম দিয়েছেন। (গীত. ১৪৭:৪) তাই, এমনটা চিন্তা করা যুক্তিসংগত, যে-স্বর্গদূত পরবর্তী সময়ে শয়তানে পরিণত হয়েছিল, তাকে সহ সমস্ত দূতকে যিহোবা নাম দিয়েছেন।
b “শয়তান” উপাধিটা ইব্রীয় শাস্ত্র-এ মাত্র ১৮ বার পাওয়া যায় কিন্তু খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ ৩০ বারেরও বেশি পাওয়া যায়।