অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১০
কেন বাপ্তিস্ম নেবেন?
“তোমরা প্রত্যেকে . . . বাপ্তিস্ম নাও।”—প্রেরিত ২:৩৮.
গান ৩৪ বিশ্বস্ততার পথে চলি
সারাংশ a
১-২. (ক) যখন কিছু ব্যক্তি বাপ্তিস্ম নেয়, তখন সাধারণত কেমন পরিবেশ থাকে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দেব?
আপনি কি কখনো কিছু ব্যক্তিকে বাপ্তিস্ম নিতে দেখেছেন? সেই দৃশ্যটা একটু কল্পনা করুন। বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে তাদের দুটো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, যেগুলোর উত্তর তারা সম্পূর্ণ আস্থার সঙ্গে এবং উচ্চস্বরে দিচ্ছে। তাদের পরিবারের সদস্যেরা এবং বন্ধুবান্ধব তাদের দেখে খুবই আনন্দিত হচ্ছে। পরে, যখন তারা বাপ্তিস্ম নিয়ে জল থেকে উঠে আসছে, তখন জোরে জোরে হাততালির শব্দ শোনা যাচ্ছে। আর তাদের চোখে-মুখে এক ভিন্ন ধরনের খুশি দেখা যাচ্ছে। এভাবে, প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার ব্যক্তি যিহোবা ঈশ্বরের কাছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করছে এবং বাপ্তিস্ম নিয়ে তাঁর সাক্ষি হচ্ছে।
২ আপনিও কি বাপ্তিস্ম নেওয়ার কথা চিন্তা করছেন? যদি করে থাকেন, তা হলে আপনি এই দুষ্ট জগতে খুবই বিশেষ ব্যক্তি কারণ আপনি ‘ঈশ্বরের অন্বেষণ’ করছেন। (গীত. ১৪:১, ২) এই প্রবন্ধটা বিশেষভাবে আপনার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তা আপনি অল্পবয়সি কিংবা বয়স্ক যে-ই হোন না কেন। এই প্রবন্ধে আমরা যিহোবাকে সেবা করার তিনটে কারণের উপর মনোযোগ দেব। যাদের বাপ্তিস্ম নেওয়া হয়ে গিয়েছে, তারাও এই প্রবন্ধ থেকে উপকৃত হবে। এখান থেকে তাদের এই সংকল্প আরও দৃঢ় হবে যে, তারা চিরকাল যিহোবার সেবা করে চলবে।
সত্যের এবং ধার্মিকতার প্রতি আপনার ভালোবাসা রয়েছে
৩. কেন যিহোবার লোকেরা সত্য এবং ধার্মিকতাকে ভালোবাসে? (গীতসংহিতা ১১৯:১২৮, ১৬৩)
৩ যিহোবা তাঁর লোকদের আজ্ঞা দিয়েছেন যেন তারা ‘সত্যকে ভালবাসে।’ (সখ. ৮:১৯) যিশুও তাঁর শিষ্যদের উৎসাহিত করেছিলেন, তারা যেন সবসময় ধার্মিকতার পথে চলে। (মথি ৫:৬) এর মানে হল, আমাদের দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে যে, আমরা সেই কাজগুলো করব, যেগুলো ঈশ্বরের মান অনুযায়ী সঠিক আর আমরা তাঁর দৃষ্টিতে শুচি থাকব। আপনি কি সত্য এবং ধার্মিকতাকে ভালোবাসেন? আমরা নিশ্চিত, আপনি ভালোবাসেন। আর আপনি মিথ্যা এবং সব ধরনের মন্দ বিষয়কে ঘৃণা করেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:১২৮, ১৬৩.) যারা মিথ্যা কথা বলে, তারা ধীরে ধীরে এই জগতের শাসক শয়তানের মতো হয়ে যায়। (যোহন ৮:৪৪; ১২:৩১) শয়তান যিহোবার পবিত্র নামের উপর নিন্দা নিয়ে আসার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে আর সে এমনটা এদন উদ্যানে হওয়া বিদ্রোহের পর থেকে করে আসছে। সেইসময় সে যেন বলেছিল, যিহোবা মিথ্যাবাদী, স্বার্থপর আর এমন একজন শাসক, যিনি তাঁর লোকদের ভালো বিষয়গুলো দিতে চান না। (আদি. ৩:১, ৪, ৫) শয়তান আজও যিহোবা সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলার মাধ্যমে লোকদের মন ও হৃদয়কে বিষিয়ে তুলছে। আর এই কারণে লোকেরা যখন ‘সত্যকে ভালবাসে’ না, তখন শয়তান খুব সহজেই তাদের ভুল পথে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় এবং তারা সব ধরনের মন্দ কাজ করতে শুরু করে।—রোমীয় ১:২৫-৩১.
৪. কীভাবে যিহোবা প্রমাণ করেছেন, তিনি হলেন “সত্যের ঈশ্বর”? (ছবিও দেখুন।)
৪ যিহোবা হলেন “সত্যের ঈশ্বর” এবং তিনি সেই সত্য নিজের কাছে রাখেন না। এর পরিবর্তে, যারা তাঁকে ভালোবাসে, তিনি তাদেরও সত্য সম্বন্ধে জানিয়ে থাকেন। (গীত. ৩১:৫) যিহোবা যখন লোকদের সত্য শেখান, তখন তারা শয়তানের বলা মিথ্যা শিক্ষাগুলোর জাল থেকে মুক্ত হয়ে যায়। যিহোবা তাঁর লোকদের এও শেখান, তারা যেন সবসময় সত্য কথা বলে এবং সঠিক কাজ করে। এমনটা করার মাধ্যমে তারা মনের শান্তি লাভ করে এবং সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারে। (হিতো. ১৩:৫, ৬) আপনি যখন বাইবেল অধ্যয়ন করছিলেন, তখন আপনারও কি এমনটাই মনে হয়েছিল? আপনি জেনেছিলেন, যিহোবার বলা পথে চলাই মানুষের জন্য সর্বোত্তম আর এই পথে চলার মাধ্যমে আপনি নিজেও অনেক উপকার পেয়েছেন। (গীত. ৭৭:১৩) তাই, আপনি চিন্তা করেছেন, আপনি সেটাই করবেন, যেটা যিহোবার দৃষ্টিতে সঠিক। (মথি ৬:৩৩) আপনি সত্যের পক্ষসমর্থন করতে চান এবং শয়তান যিহোবার বিরুদ্ধে যে-অভিযোগ নিয়ে এসেছে, সেটা মিথ্যা প্রমাণ করতে চান। কিন্তু, আপনি এটা কীভাবে করতে পারেন?
৫. কীভাবে আপনি প্রমাণ করতে পারেন, সত্যের এবং ধার্মিকতার প্রতি আপনার ভালোবাসা রয়েছে?
৫ আপনি যেভাবে জীবনযাপন করেন, সেটার মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারেন যে, সত্যের এবং ধার্মিকতার প্রতি আপনার ভালোবাসা রয়েছে। এভাবে আপনি যেন বলছেন, “আমি শয়তানের বলা মিথ্যা কথাগুলোর উপর বিশ্বাস করব না বরং সত্যের পক্ষসমর্থন করব। যিহোবা হলেন নিখিলবিশ্বের প্রভু এবং আমি সেটাই করব, যেটা যিহোবার দৃষ্টিতে সঠিক।” কিন্তু, কীভাবে আপনি তা করতে পারেন? প্রার্থনায় আপনার জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করার মাধ্যমে আর এর চিহ্ন হিসেবে সবার সামনে বাপ্তিস্ম নেওয়ার মাধ্যমে। সত্যের এবং ধার্মিকতার প্রতি ভালোবাসা আপনাকে বাপ্তিস্ম নিতে পরিচালিত করবে।
যিশু খ্রিস্টের প্রতি আপনার ভালোবাসা রয়েছে
৬. গীতসংহিতা ৪৫:৪ পদে যিশুকে ভালোবাসার কোন কারণ সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে?
৬ কেন আপনি যিশু খ্রিস্টকে ভালোবাসেন? গীতসংহিতা ৪৫:৪ পদে বলা কিছু কারণের উপর মনোযোগ দিন। (পড়ুন।) এখানে বলা হয়েছে, যিশু সত্যের, ধার্মিকতার এবং নম্রতার পক্ষসমর্থন করেন। তাঁর কাছে এই তিনটে বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই, আপনার যদি সত্যের এবং ধার্মিকতার প্রতি ভালোবাসা থাকে, তা হলে স্বাভাবিকভাবে আপনি যিশুকেও ভালোবাসবেন। মনে করে দেখুন, কীভাবে যিশু সাহসের সঙ্গে ধার্মিকতার এবং সত্যের পক্ষসমর্থন করেছিলেন। (যোহন ১৮:৩৭) তবে, তিনি নম্র হওয়ার জন্য কীভাবে অন্যদের উৎসাহিত করেছিলেন? আসুন তা লক্ষ করি।
৭. যিশু যে কতটা নম্র, তা থেকে তাঁর সম্বন্ধে কোন বিষয়টা আপনার ভালো লাগে?
৭ যিশু তাঁর জীবনযাপন করার ধরন থেকে শিখিয়েছেন, কীভাবে আমরা নম্র হতে পারি। যেমন, তিনি কখনোই লোকদের দিয়ে নিজের প্রশংসা করাননি বরং সমস্ত প্রশংসা তাঁর পিতাকে দিয়েছিলেন। (মার্ক ১০:১৭, ১৮; যোহন ৫:১৯) আপনি যখন এই বিষয়ে চিন্তা করেন যে, যিশু কতটা নম্র, তখন আপনার কেমন লাগে? আপনারও কি তাঁকে ভালোবাসতে এবং তাঁর মতো হতে ইচ্ছে করে না? নিশ্চয়ই করে! কিন্তু, যিশু কেন এতটা নম্র? কারণ তিনি তাঁর পিতাকে ভালোবাসেন, যিনি খুবই নম্র এবং তিনি তাঁর পিতার মতো হতে চান। (গীত. ১৮:৩৫; ইব্রীয় ১:৩) সত্যিই, যিশু হুবহু তাঁর পিতার গুণ প্রকাশ করেছিলেন। এটা জেনে আপনি কি যিশুকে আরও ভালোবাসতে শুরু করেননি?
৮. কেন আমরা আমাদের রাজা যিশুকে ভালোবাসি?
৮ আমরা যিশুকে ভালোবাসি আর খুশি যে, যিশু আমাদের রাজা কারণ তাঁর চেয়ে ভালো রাজা আর কেউই হতে পারে না। যিহোবা নিজে তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং আমাদের জন্য রাজা হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। (যিশা. ৫০:৪, ৫) আর যিশুও আমাদের এতটা ভালোবাসেন যে, তিনি আমাদের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত দান করেছেন। (যোহন ১৩:১) এইরকম একজন রাজাকে আমরা সবাই ভালোবাসব, তা-ই না? যিশু বলেছিলেন, যে-লোকেরা প্রকৃতই তাঁকে ভালোবাসে, তারা তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করে আর এমন লোকদের তিনি তাঁর বন্ধু বলে ডাকেন। (যোহন ১৪:১৫; ১৫:১৪, ১৫) চিন্তা করুন, যিহোবার পুত্রের বন্ধু হওয়া কতই-না সম্মানের এক বিষয়!
৯. যিশু যে-বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন এবং তাঁর শিষ্যেরা যে-বাপ্তিস্ম নিয়ে থাকে, সেটার মধ্যে কী মিল রয়েছে?
৯ যিশুর একটা আজ্ঞা হল, তাঁর শিষ্যেরা যেন বাপ্তিস্ম নেয়। (মথি ২৮:১৯, ২০) তিনি নিজেও বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। কিন্তু, যিশু যে-বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন এবং তাঁর শিষ্যেরা যে-বাপ্তিস্ম নিয়ে থাকে, সেটার মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। (“ যিশুর বাপ্তিস্ম এবং তাঁর শিষ্যদের বাপ্তিস্মের মধ্যে কোন পার্থক্য রয়েছে?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) তবে, কিছু মিলও রয়েছে। যেমন, যিশু যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, তখন তিনি এটা দেখিয়েছিলেন, এখন থেকে তিনি তাঁর পিতার ইচ্ছা পূরণ করবেন। (ইব্রীয় ১০:৭) একইভাবে, তাঁর শিষ্যেরা যখন যিহোবার কাছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে বাপ্তিস্ম নেয়, তখন তারা সবার সামনে এটা দেখায় যে, এখন থেকে তাদের কাছে নিজেদের ইচ্ছা নয় বরং যিহোবার ইচ্ছা পূরণ করাই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এভাবে তারা তাদের প্রভুর উদাহরণ অনুকরণ করে থাকে।
১০. কেন আপনি যিশুকে ভালোবাসেন আর এই ভালোবাসা আপনাকে কী করতে পরিচালিত করবে?
১০ বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আপনি যিশুর বিষয়ে অনেক কিছু জেনেছেন। আপনি বিশ্বাস করেন, যিশুই হলেন যিহোবার একজাত পুত্র এবং আপনি খুশি যে, ঈশ্বর তাঁকে আমাদের উপর শাসন করার অধিকার দিয়েছেন। আপনি জানেন, যিশু খুবই নম্র এবং তিনি একেবারে তাঁর পিতার মতো। আপনি বাইবেল থেকে জেনেছেন, কীভাবে তিনি অনেক ব্যক্তিকে খাবার জুগিয়েছিলেন, যারা হতাশ হয়ে পড়েছিল, তাদের সান্ত্বনা দিয়েছিলেন এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের সুস্থ করেছিলেন। (মথি ১৪:১৪-২১) আপনি নিজে দেখেছেন, বর্তমানে কীভাবে যিশু মণ্ডলীগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। (মথি ২৩:১০) আর আপনি জানেন, একজন রাজা হিসেবে ভবিষ্যতে তিনি আরও বড়ো বড়ো কাজ করবেন। তাহলে, কীভাবে আপনি দেখাতে পারেন, আপনি যিশুকে ভালোবাসেন? তাঁর উদাহরণ অনুকরণ করার মাধ্যমে। (যোহন ১৪:২১) এমনটা করার জন্য সবচেয়ে প্রথমে আপনাকে আপনার জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করে বাপ্তিস্ম নিতে হবে।
যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আপনার ভালোবাসা রয়েছে
১১. আপনার মতে বাপ্তিস্ম নেওয়ার সবচেয়ে বড়ো কারণ কী?
১১ বাপ্তিস্ম নেওয়ার সবচেয়ে বড়ো কারণ কী? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য যিশুর একটা কথার উপর মনোযোগ দিন। তিনি বলেছিলেন, ঈশ্বরের সর্বমহৎ আজ্ঞা হল: “তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ এবং তোমার সমস্ত মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর যিহোবাকে ভালোবাসবে।” (মার্ক ১২:৩০) আপনিও কি ঈশ্বরকে এভাবে ভালোবাসেন?
১২. কেন আপনি যিহোবাকে ভালোবাসেন? (ছবিও দেখুন।)
১২ যিহোবাকে ভালোবাসার অনেক কারণ রয়েছে। যেমন আপনি শিখেছেন, যিহোবাই সবাইকে ‘জীবন’ দেন। আর বাইবেল জানায়, ‘সমস্ত উত্তম ও নিখুঁত দান তাঁর কাছ থেকে আসে।’ (গীত. ৩৬:৯; যাকোব ১:১৭) আজ আমরা যে-বিষয়গুলো উপভোগ করি, সেগুলো আমাদের ঈশ্বর যিহোবাই আমাদের দিয়েছেন। তিনি আমাদের খুব ভালোবাসেন এবং আমাদের উদারভাবে সব কিছু দেন।
১৩. কেন মুক্তির মূল্য এক অপূর্ব উপহার?
১৩ মুক্তির মূল্যও যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এক অপূর্ব উপহার। কেন আমরা তা বলতে পারি? একটু চিন্তা করুন, যিহোবা ও যিশুর মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল। যিশু বলেছিলেন: ‘পিতা আমাকে ভালোবাসেন’ এবং “আমি পিতাকে ভালোবাসি।” (যোহন ১০:১৭; ১৪:৩১) তাঁরা কোটি কোটি বছর ধরে একে অন্যের সঙ্গে ছিলেন এবং সেইসময় তাঁদের সম্পর্ক কতই-না মজবুত হয়েছিল! (হিতো. ৮:২২, ২৩, ৩০) এখন একটু চিন্তা করুন, ঈশ্বর যখন দেখেছিলেন, তাঁর পুত্রকে কীভাবে অত্যাচার করে মেরে ফেলা হচ্ছে, তখন তিনি কেমন অনুভব করেছিলেন এবং কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন! সত্যিই, যিহোবা সমস্ত মানুষকে এমনকী আপনাকেও এতটা ভালোবাসেন যে, তিনি তাঁর পুত্রকে আমাদের জন্য দান করেছেন, যাতে আপনি এবং বাকি মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকতে পারেন। (যোহন ৩:১৬; গালা. ২:২০) তাই কী মনে হয়, যিহোবাকে ভালোবাসার এর চেয়ে কি কোনো বড়ো কারণ থাকতে পারে?
১৪. আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো লক্ষ্য কী হতে পারে?
১৪ আপনি যখন যিহোবাকে আরও ভালোভাবে জেনেছেন, তখন আপনি তাঁকে আরও ভালোবাসতে শুরু করেছেন। তাঁর সঙ্গে আপনার এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আর এখন আপনি এটাই চান যেন এই সম্পর্ক ক্রমাগত আরও ঘনিষ্ঠ হয়। বিশ্বাস করুন, এমনটা হতে পারে! যিহোবা নিজে চান, আপনি যেন তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করেন এবং তাঁর নিকটবর্তী হন। (হিতো. ২৩:১৫, ১৬) আপনি শুধু কথার দ্বারাই নয়, কিন্তু আপনার কাজের দ্বারাও তা করতে পারেন। আপনি যেভাবে জীবনযাপন করেন, সেটা থেকে বোঝা যাবে, আপনি প্রকৃতই যিহোবা ভালোবাসেন এবং তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করতে চান। (১ যোহন ৫:৩) জীবনে এর চেয়ে ভালো লক্ষ্য কি আর কিছু হতে পারে?
১৫. আপনি কী করতে পারেন, যেটা থেকে বোঝা যায়, আপনি যিহোবাকে ভালোবাসেন?
১৫ আপনি এমন কী করতে পারেন, যেটা থেকে বোঝা যায়, আপনি যিহোবাকে ভালোবাসেন? আপনি আপনার জীবন সত্য ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করতে পারেন। আর তা করার জন্য আপনি একা একটা বিশেষ প্রার্থনা করতে পারেন। (গীত. ৪০:৮) এরপর, এর চিহ্ন হিসেবে সবার সামনে বাপ্তিস্ম নিতে পারেন। যেমন, এই প্রবন্ধে আমরা আগে আলোচনা করেছি, এটা আপনার জীবনে খুবই খুশির এক মুহূর্ত হবে। এখন আপনি জীবনে একটা নতুন যাত্রা শুরু করবেন। এখন থেকে আপনি নিজের জন্য নয় বরং যিহোবার জন্য বেঁচে থাকবেন। (রোমীয় ১৪:৮; ১ পিতর ৪:১, ২) আপনার মনে হতে পারে, এটা অনেক বড়ো পদক্ষেপ আর সত্যিই এটা একটা বড়ো পদক্ষেপ। কিন্তু ঘাবড়াবেন না, এই পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে আপনি সবচেয়ে উত্তম জীবন লাভ করতে পারবেন। কীভাবে?
১৬. গীতসংহিতা ৪১:১২ পদ অনুযায়ী যারা যিহোবার সেবা করে, তাদের জন্য তিনি কী করবেন?
১৬ যিহোবা ঈশ্বর হলেন সবচেয়ে উদার ব্যক্তি। আপনি তাঁর জন্য যা-কিছু করবেন, তিনি সবসময় সেগুলোর চেয়ে আরও ভালো কিছু আপনার জন্য করবেন। (মার্ক ১০:২৯, ৩০) আপনি যখন তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী জীবনযাপন করবেন, তখন তিনি আপনাকে প্রচুর আশীর্বাদ করবেন। এই দুষ্ট জগতেও আপনার কোনো কিছুরই অভাব হবে না এবং আপনি এক শান্তিপূর্ণ জীবন লাভ করতে পারবেন। এগুলো কেবল শুরু মাত্র! বাপ্তিস্মের পর আপনি যে-যাত্রা শুরু করবেন, সেটা কোনো দিনও শেষ হবে না। আপনার পিতা যিহোবার সঙ্গে আপনার যে-সম্পর্ক রয়েছে, সেটা ক্রমাগত আরও মজবুত হবে এবং আপনি চিরকাল তাঁর সেবা করে যেতে পারবেন। আর যতক্ষণ পর্যন্ত যিহোবা থাকবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকতে পারবেন অর্থাৎ চিরকালের জন্য!—পড়ুন, গীতসংহিতা ৪১:১২.
১৭. আপনি যিহোবাকে এমন কী দিতে পারেন, যেটা তাঁর কাছে নেই?
১৭ যিহোবা হলেন স্বর্গ ও পৃথিবীর মালিক, আজ আমরা যে-আনন্দের মুহূর্তগুলো উপভোগ করি এবং আমাদের কাছে যে-ভালো বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো যিহোবাই দিয়েছেন। কিন্তু, উৎসর্গ করার এবং বাপ্তিস্ম নেওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের পিতা যিহোবাকে এমন কিছু দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করি, যেটা তাঁর কাছে নেই। সেটা হল, আমাদের একাগ্র ভক্তি বা উপাসনা। আমরা আমাদের জীবন তাঁর সেবায় বিলিয়ে দিতে পারি। (ইয়োব ১:৮; ৪১:১১; হিতো. ২৭:১১) জীবনযাপন করার এর চেয়ে ভালো উপায় কি আর কিছু হতে পারে? আপনি যিহোবাকে ভালোবাসেন, বাপ্তিস্ম নেওয়ার এটাই হল সবচেয়ে বড়ো কারণ।
কোন বিষয়টা আপনাকে বাধা দিচ্ছে?
১৮. আপনি নিজেকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারেন?
১৮ তাহলে আপনি কি বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য প্রস্তুত? এই প্রশ্নের উত্তর আপনিই দিতে পারেন। কিন্তু, ভালো হবে যেন আপনি এই ব্যাপারেও চিন্তা করেন যে, ‘বাপ্তিস্ম নিতে কোন বিষয়টা আমাকে বাধা দিচ্ছে?’ (প্রেরিত ৮:৩৬) আমরা যে-তিনটে কারণ নিয়ে আলোচনা করেছি, সেগুলো মনে রাখুন। প্রথমত, আপনি সত্য ও ধার্মিকতাকে ভালোবাসেন। তাই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কি সেই দিন দেখার জন্য উৎসুক হয়ে আছি, যখন সবাই সত্য বলবে এবং সঠিক কাজ করবে?’ দ্বিতীয়ত, আপনি যিশু খ্রিস্টকে ভালোবাসেন। তাই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কি যিশুকে আমার রাজা হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি?’ তৃতীয় এবং সবচেয়ে বড়ো কারণ হল, আপনি যিহোবাকে ভালোবাসেন। তাই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কি যিহোবা ঈশ্বরের সেবা করার মাধ্যমে তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করতে চাই?’ আপনার কাছে যদি এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তা হলে দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি পারেন বাপ্তিস্ম নিন না কেন?—প্রেরিত ১৬:৩৩.
১৯. কেন আপনার বাপ্তিস্ম নিতে ইতস্তত বোধ করা উচিত নয়? একটা উদাহরণ দিন। (যোহন ৪:৩৪)
১৯ আপনি যদি বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য ইতস্তত বোধ করেন, তা হলে যিশুর বলা একটা কথার উপর মনোযোগ দিন। (পড়ুন, যোহন ৪:৩৪.) লক্ষ করুন, যিশু তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করাকে খাবারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। খাবারের সঙ্গে কেন? কারণ খাবার খেলে আমাদের উপকার হয়, আমরা সুস্থ থাকি। যিশু জানতেন, যিহোবা আমাদের যা-কিছু করতে বলেন, সেগুলো আমাদেরই মঙ্গল নিয়ে আসে। যিহোবা কখনো আমাদের এমন কিছু করতে বলবেন না, যেগুলো আমাদের ক্ষতি করবে। এবার একটু চিন্তা করুন, এটা কি যিহোবার ইচ্ছা নয় যেন আপনি বাপ্তিস্ম নেন? হ্যাঁ, এটা যিহোবার ইচ্ছা। (প্রেরিত ২:৩৮) সেইজন্য আপনি সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারেন, আপনি যদি তাঁর আজ্ঞা পালন করে বাপ্তিস্ম নেন, তা হলে আপনারই মঙ্গল হবে। আপনি যেমন কোনো সুস্বাদু কিংবা পুষ্টিকর খাবার খেতে ইতস্তত বোধ করেন না, তা হলে কেন বাপ্তিস্ম নিতে ইতস্তত বোধ করছেন?
২০. পরের প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?
২০ কেন কিছু ব্যক্তি বাপ্তিস্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যায়? তারা হয়তো চিন্তা করে, ‘বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য আমি এখনও প্রস্তুত নই।’ যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করা এবং বাপ্তিস্ম নেওয়া অনেক বড়ো এক সিদ্ধান্ত। এটা ঠিক যে, এতে সময় লাগে, অনেক কিছু চিন্তা করতে হয় এবং অনেক পরিশ্রমও করতে হয়। তাই, আপনি যদি বাপ্তিস্ম নেওয়ার কথা চিন্তা করে থাকেন, তা হলে কীভাবে আপনি এরজন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেন? পরের প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে পারব।
গান ২৮ যিহোবার বন্ধুত্ব লাভ করা
a বাপ্তিস্ম নেওয়া প্রত্যেক বাইবেল ছাত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, কোন বিষয়টা তাকে এই পদক্ষেপ নিতে পরিচালিত করবে? ভালোবাসা। কিন্তু প্রশ্ন হল, কার প্রতি ভালোবাসা? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা এই প্রবন্ধে জানতে পারব। আমরা এও জানতে পারব, যারা বাপ্তিস্ম নেয়, তারা কোন আশীর্বাদগুলো লাভ করতে পারে।