সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১১

কীভাবে বাপ্তিস্মের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন?

কীভাবে বাপ্তিস্মের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন?

“আমার বাপ্তিস্ম নিতে বাধা কী?”—প্রেরিত ৮:৩৬.

গান ৫০ আমার উৎসর্গীকরণের প্রার্থনা

সারাংশ a

সারা পৃথিবীতে অনেক অল্পবয়সি এবং বয়স্ক ব্যক্তি প্রচেষ্টা করছে এবং বাপ্তিস্ম নিচ্ছে (১-২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১-২. আপনি যদি এই মুহূর্তে বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন, তা হলে কেন আপনার হতাশ হওয়া উচিত নয়? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

 আপনি কি বাপ্তিস্ম নেওয়ার কথা চিন্তা করছেন? যদি চিন্তা করে থাকেন, তা হলে আপনি খুবই ভালো একটা লক্ষ্য রেখেছেন। আপনি কি এখন বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন? যদি আপনার এবং আপনার মণ্ডলীর প্রাচীনদের মনে হয় যে, আপনি প্রস্তুত আছেন, তা হলে বাপ্তিস্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি করছেন কেন? সুযোগ পেলেই দ্রুত এই পদক্ষেপ নিন। এমনটা করলে আপনি যিহোবার জন্য অনেক কিছু করতে পারবেন এবং প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করতে পারবেন।

অন্যদিকে, আপনাকে হয়তো বলা হয়েছে, বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য আপনাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে, এটা নেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য আপনাকে আরেকটু পরিশ্রম করতে হবে। অথবা আপনি হয়তো নিজেও তা অনুভব করেছেন। যদি এমনটা হয়ে থাকে, তা হলে হতাশ হবেন না। আপনি এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে পারেন, তা আপনি অল্পবয়সি কিংবা বয়স্ক যে-ই হোন না কেন।

“আমার বাপ্তিস্ম নিতে বাধা কী?”

৩. ইথিওপিয়ার এক রাজকর্মচারী ফিলিপকে কী জিজ্ঞেস করেছিলেন আর এর ফলে কোন প্রশ্ন উঠে আসে? (প্রেরিত ৮:৩৬, ৩৮)

প্রেরিত ৮:৩৬, ৩৮ পদ পড়ুন। একবার ইথিওপিয়ার এক রাজকর্মচারী ফিলিপ নামে একজন প্রচারককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমার বাপ্তিস্ম নিতে বাধা কী?” সেই রাজকর্মচারী বাপ্তিস্ম নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কি সত্যিই এরজন্য প্রস্তুত ছিলেন?

ইথিওপিয়ার রাজকর্মচারী দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি যিহোবা সম্বন্ধে শিখে চলবেন (৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৪. কেন আমরা বলতে পারি, ইথিওপিয়ার সেই ব্যক্তি আরও শিখতে চেয়েছিলেন?

ইথিওপিয়ার সেই ব্যক্তি “উপাসনা করার জন্য জেরুসালেমে গিয়েছিলেন।” (প্রেরিত ৮:২৭) এখান থেকে বোঝা যায়, তিনি হয়তো একজন ন-যিহুদি ছিলেন, যিনি যিহুদি ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি নিশ্চয়ই ইব্রীয় শাস্ত্র-এ লেখা কথাগুলো থেকে যিহোবা সম্বন্ধে জেনেছিলেন। কিন্তু, তিনি তাঁর সম্বন্ধে আরও জানতে চেয়েছিলেন। কীভাবে আমরা তা বলতে পারি? লক্ষ করুন, ফিলিপের সঙ্গে যখন তার রাস্তায় দেখা হয়েছিল, তখন তিনি কী করছিলেন। তিনি খুবই মনোযোগ দিয়ে যিশাইয় ভাববাদীর গ্রন্থ পড়ছিলেন। (প্রেরিত ৮:২৮) এর মানে হল, তিনি এই পর্যন্ত যা-কিছু শিখেছিলেন, সেগুলো তার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তিনি আরও শিখতে চেয়েছিলেন এবং শাস্ত্রের গভীর বিষয়গুলো বুঝতে চেয়েছিলেন।

৫. ইথিওপিয়ার ব্যক্তি যা-কিছু শিখেছিলেন, সেই অনুযায়ী তিনি কী করেছিলেন?

সেই ব্যক্তি ইথিওপিয়ার রানি কান্দাকির অধীনে উচ্চপদে ছিলেন ও সেইসঙ্গে “সেই রানির সমস্ত ধনকোষের অধ্যক্ষ” ছিলেন। (প্রেরিত ৮:২৭) এর মানে হল, তার কাঁধে অনেক দায়িত্ব ছিল। তারপরও, তিনি যিহোবার উপাসনার জন্য সময় বের করেছিলেন। তিনি যে কেবল শাস্ত্রে লেখা সত্যগুলো শিখেছিলেন এমন নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে সেই অনুযায়ী কাজও করেছিলেন। এই কারণে তিনি ইথিওপিয়া থেকে জেরুসালেম পর্যন্ত দীর্ঘ যাত্রা করেছিলেন, যাতে তিনি যিহোবার মন্দিরে তাঁর উপাসনা করতে পারেন। এই যাত্রায় তার হয়তো অনেক সময় লেগেছিল এবং অনেক খরচও হয়েছিল। কিন্তু, যখন যিহোবার উপাসনা করার বিষয়টা এসেছিল, তখন তিনি কোনো কিছু চিন্তা করেননি।

৬-৭. ইথিওপিয়ার সেই ব্যক্তির হৃদয়ে যিহোবার প্রতি ভালোবাসা কীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল?

ইথিওপিয়ার সেই ব্যক্তি ফিলিপের কাছ থেকে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ সত্য শিখেছিলেন, যেগুলোর বিষয়ে তিনি আগে জানতেন না। যেমন তিনি শিখেছিলেন, যিশুই হলেন খ্রিস্ট। (প্রেরিত ৮:৩৪, ৩৫) তিনি যখন জানতে পেরেছিলেন, যিশু তার জন্য কী কী করেছেন, তখন সেগুলো নিশ্চয়ই তার হৃদয় স্পর্শ করেছিল। এরপর তিনি কী করেন? এটা ঠিক যে, তিনি যিহুদি ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং সমাজে তার অনেক সম্মান ছিল, তাই তিনি চাইলে তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে পারতেন। কিন্তু, যিহোবা ও যিশুর জন্য তার ভালোবাসা আরও গভীর হয়েছিল, সেইজন্য তিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা চিন্তা করেছিলেন। তিনি চিন্তা করেছিলেন, তিনি বাপ্তিস্ম নিয়ে যিশুর শিষ্য হবেন। আর ফিলিপ যখন দেখেছিলেন, সেই ব্যক্তি এমনটা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন, তখন তিনি তাকে বাপ্তিস্ম দিয়েছিলেন।

সেই ব্যক্তি যা-কিছু করেছিলেন, আপনিও যদি তা করেন, তা হলে আপনি বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে পারেন। পরে, আপনিও সম্পূর্ণ আস্থার সঙ্গে বলতে পারবেন, “আমার বাপ্তিস্ম নিতে বাধা কী?” আসুন লক্ষ করি, ইথিওপিয়ার সেই ব্যক্তি যা-কিছু করেছিলেন, কীভাবে আপনিও তা করতে পারেন। (১) তিনি শিখে চলেছিলেন, (২) তিনি যা শিখেছিলেন, সেই অনুযায়ী কাজও করেছিলেন এবং (৩) তিনি ক্রমাগত ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করেছিলেন।

শিখে চলুন

৮. যোহন ১৭:৩ পদ থেকে আপনি কী শিখেছেন?

যোহন ১৭:৩ পদ পড়ুন। আপনি কি যিশুর এই কথাগুলো শুনে বাইবেল অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে, যারা এভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, এই কথাগুলো থেকে কি এটাও বোঝা যায়, আমাদের এরপরও শিখে চলতে হবে? হ্যাঁ। আমরা “একমাত্র সত্য ঈশ্বরকে” জানা কখনো বন্ধ করব না। (উপ. ৩:১১) আমরা চিরকাল ধরে যিহোবার বিষয়ে কিছু-না-কিছু শিখে চলব। আর আমরা যত ভালোভাবে তাঁকে জানব, তত তাঁর নিকটবর্তী হব।—গীত. ৭৩:২৮.

৯. বাইবেলের মৌলিক শিক্ষাগুলো শেখার পর আমাদের কী করা উচিত?

এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, আমরা যখন যিহোবাকে জানতে শুরু করি, তখন প্রথমে আমরা প্রাথমিক শিক্ষাগুলো শিখে থাকি। পৌল ইব্রীয় খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে এগুলোকে শাস্ত্রের ‘প্রথমে শেখা বিষয়গুলো’ অর্থাৎ ‘মৌলিক শিক্ষা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। এমনটা বলে তিনি এই বিষয়গুলোকে হালকাভাবে দেখেননি। তিনি এই শিক্ষাগুলোকে দুধের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যেটার মাধ্যমে শিশুরা পুষ্টি লাভ করে। (ইব্রীয় ৫:১২; ৬:১) কিন্তু, তিনি সমস্ত খ্রিস্টানকে এও বলেছেন, তারা যেন এই মৌলিক শিক্ষাগুলোর সাহায্যে উন্নতি করে চলে এবং ঈশ্বরের বাক্য থেকে গভীর শিক্ষাগুলো শেখে। আপনার মধ্যেও কি বাইবেলের গভীর শিক্ষাগুলো শেখার খিদে রয়েছে? আপনি কি এই খিদেকে আরও বাড়াতে চান এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আরও জানতে চান?

১০. কেন কিছু লোকের পক্ষে অধ্যয়ন করা কঠিন বলে মনে হয়?

১০ কিন্তু, আমাদের মধ্যে অনেকে অধ্যয়ন করাকে খুব কঠিন বলে মনে করে। আপনি নিজের সম্বন্ধে কী বলবেন? আপনি কি স্কুলে ভালোভাবে লেখাপড়া শিখেছিলেন? আপনার কি পড়াশোনা করতে ভালো লাগত? আর যখনই আপনি কোনো নতুন কিছু শিখতেন, তখন আপনি কি খুশি হতেন? অথবা আপনি কি এইরকমটা মনে করতেন, লেখাপড়া আমার দ্বারা হবে না? যদি মনে করতেন, তা হলে আপনি একা নন, অনেক লোক এমনটাই মনে করে। কিন্তু, যিহোবা আপনাকে সাহায্য করতে পারেন। তিনি খুব ভালোভাবে আপনাকে শেখাতে পারেন কারণ তিনি হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো শিক্ষক।

১১. কেন আমরা বলতে পারি, যিহোবা আমাদের মহান ‘শিক্ষক’?

১১ যিহোবা বাইবেলে লিখিয়েছেন, তিনি আমাদের মহান ‘শিক্ষক।’ (যিশা. ৩০:২০, ২১) তিনি হলেন এমন একজন শিক্ষক, যিনি তাঁর ছাত্রদের প্রতি ধৈর্য ধরেন, প্রেমের সঙ্গে আচরণ করেন এবং তাদের খুব ভালোভাবে বোঝেন। তিনি তাদের মধ্যে ভালো গুণগুলো খোঁজার চেষ্টা করেন। (গীত. ১৩০:৩) তিনি কখনো আমাদের কাছ থেকে এমন কিছু আশা করেন না, যেটা আমরা করতে পারব না। মনে রাখবেন, যিহোবাই আমাদের ব্রেন সৃষ্টি করেছেন আর সেটা সত্যিই অসাধারণ। (গীত. ১৩৯:১৪) আমাদের সবসময় কিছু-না-কিছু নতুন শেখার আকাঙ্ক্ষা হয়। যিহোবা চান, আমরা যেন সবসময় শিখি এবং তা থেকে আনন্দ লাভ করি। তাই, এটা কত ভালো হবে যেন আমরা এখন থেকেই বাইবেলের সত্যগুলো জানার জন্য ‘তীব্র আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলি!’ (১ পিতর ২:২) ছোটো ছোটো লক্ষ্য স্থাপন করুন আর বাইবেল পড়ার এবং অধ্যয়ন করার একটা তালিকা তৈরি করুন আর সেটা অনুসরণ করে চলুন। (যিহো. ১:৮) তখন যিহোবা আপনার প্রচেষ্টা দেখে আপনাকে আশীর্বাদ করবেন এবং ধীরে ধীরে আপনি বাইবেল পড়াকে উপভোগ করবেন আর যিহোবা সম্বন্ধে আরও জানতে চাইবেন।

১২. কেন আমাদের যিশুর জীবন এবং তাঁর সেবার বিষয়ে অধ্যয়ন করা উচিত?

১২ এই বিষয়ে ক্রমাগত চিন্তা করুন, কীভাবে যিশু জীবনযাপন করেছিলেন এবং সেবা করেছিলেন। আমরা যখন যিশুর পদচিহ্ন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করব, তখনই যিহোবার সেবা করতে পারব, বিশেষভাবে এই কঠিন সময়ে। (১ পিতর ২:২১) যিশু তাঁর শিষ্যদের স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, তাদের উপর বিভিন্ন সমস্যা আসবে। (লূক ১৪:২৭, ২৮) কিন্তু, তাঁর এই বিষয়েও আস্থা ছিল, তারা সেই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবে, ঠিক যেমনটা তিনি নিজে কাটিয়ে উঠেছিলেন। (যোহন ১৬:৩৩) তাই, যিশুর জীবনের আলাদা আলাদা ঘটনাগুলোর বিষয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করুন আর চিন্তা করুন, কীভাবে আপনি প্রতিদিন তাঁকে অনুকরণ করতে পারেন।

১৩. কোন বিষয়ের জন্য আপনার যিহোবার কাছে অনুরোধ করে চলা উচিত আর কেন?

১৩ জ্ঞান নেওয়া ভালো বিষয়, কিন্তু সেটার পিছনে উদ্দেশ্য হওয়া উচিত যেন আমরা যিহোবাকে আরও ভালোভাবে জানি, তাঁকে ভালোবাসি এবং তাঁর উপর বিশ্বাস করি আর সেইসঙ্গে অন্যান্য গুণ গড়ে তুলি। তখনই সেই জ্ঞান থেকে আমরা উপকার পাব। (১ করি. ৮:১-৩) তাই, আপনি যখন যিহোবাকে জানতে শুরু করেন, তখন তাঁর কাছে অনুরোধ করুন যেন তিনি আপনার বিশ্বাস আরও দৃঢ় করেন। (লূক ১৭:৫) তিনি নিশ্চয়ই এইরকম প্রার্থনা শুনবেন। আপনি যখন সঠিক জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে যিহোবার উপর বিশ্বাস করবেন, তখন আপনি উন্নতি করতে পারবেন।—যাকোব ২:২৬.

আপনি যা শেখেন, সেই অনুযায়ী কাজও করুন

জলপ্লাবন আসার আগে নোহ এবং তার পরিবারকে যা বলা হয়েছিল, সেই অনুযায়ী তারা কাজও করেছিলেন (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. পিতর কীভাবে বলেছিলেন, আমরা যা শিখি, সেই অনুযায়ী কাজও করা গুরুত্বপূর্ণ? (ছবিও দেখুন।)

১৪ প্রেরিত পিতর বলেছিলেন, যিশুর শিষ্যেরা যা শেখে, সেই অনুযায়ী কাজ করাও গুরুত্বপূর্ণ। এটা বোঝানোর জন্য তিনি নোহের বিবরণ উল্লেখ করেছিলেন। যিহোবা নোহকে বলেছিলেন, তিনি এক জলপ্লাবন নিয়ে আসবেন এবং সমস্ত দুষ্ট ব্যক্তিকে সেই জলপ্লাবনে ধ্বংস করে দেবেন। তবে, শুধু জলপ্লাবন আসবে এটা জানার মাধ্যমে নোহ এবং তার পরিবার রক্ষা পেয়ে যেত না। লক্ষ করুন, পিতর জলপ্লাবনের বিষয়ে নয় বরং সেটার আগের সময়কালের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, “যখন জাহাজ নির্মাণ করা হচ্ছিল।” (১ পিতর ৩:২০) এখান থেকে বোঝা যায়, যিহোবা নোহকে যা বলেছিলেন, সেই অনুযায়ী নোহ এবং তার পরিবার কাজ করেছিলেন। তারা একটা বিশাল জাহাজ নির্মাণ করেছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৭) নোহ যা করেছিলেন, সেটার তুলনা পিতর বাপ্তিস্মের সঙ্গে করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “এই ঘটনার প্রতিরূপ হল বাপ্তিস্ম, যা এখন . . . তোমাদের রক্ষা করছে।” (১ পিতর ৩:২১) তাই আমরা বলতে পারি, আজ আপনি বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য যে-প্রস্তুতি নেন, সেটা অনেকটা সেইরকমই, যেমনটা নোহ এবং তার পরিবার জাহাজ নির্মাণ করার জন্য অনেক বছর ধরে পরিশ্রম করেছিলেন। তাই, বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য কীভাবে আপনি প্রস্তুতি নিতে পারেন?

১৫. মন থেকে অনুতপ্ত হওয়ার মানে কী?

১৫ সবচেয়ে প্রথমে আমাদের নিজেদের ভুলের জন্য মন থেকে অনুতপ্ত হতে হবে। (প্রেরিত ২:৩৭, ৩৮) আমরা যখন মন থেকে অনুতপ্ত হব, তখন আমরা নিজেদের পরিবর্তনও করব। যেমন কিছু লোক হয়তো অনৈতিকভাবে জীবনযাপন করে, তামাক সেবন কিংবা গালিগালাজ করে। আপনার যদি এইরকম কিছু করার অভ্যাস ছিল, তা হলে আপনি কি যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করার জন্য এগুলো ছেড়ে দিয়েছেন? (১ করি. ৬:৯, ১০; ২ করি. ৭:১; ইফি. ৪:২৯) আপনি যদি এখনও পর্যন্ত এগুলো ছাড়তে না পারেন, তা হলে হাল ছেড়ে দেবেন না। এগুলো ছাড়ার চেষ্টা চালিয়ে যান। আপনাকে যিনি বাইবেল অধ্যয়ন করান, আপনি তার সঙ্গে কিংবা মণ্ডলীর প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আর তোমার বয়স যদি কম হয়, তা হলে তুমি তোমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে পারো, যাতে তুমি মন্দ অভ্যাসগুলো ছাড়তে পার এবং বাপ্তিস্মের জন্য প্রস্তুতি নিতে পার।

১৬. কীভাবে আমরা উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজে ব্যস্ত থাকতে পারি?

১৬ উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজে ব্যস্ত থাকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেমন ক্রমাগত সভাগুলোতে যাওয়া এবং তাতে অংশ নেওয়া। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আর আপনি যদি প্রচারে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে থাকেন, তা হলে প্রচার কাজেও ক্রমাগত অংশ নিন। যত বেশি আপনি লোকদের কাছে সাক্ষ্য দেবেন, তত বেশি আপনি এই কাজ উপভোগ করবেন। (২ তীম. ৪:৫) আর তোমার বয়স যদি কম হয়, তা হলে নিজেকে জিজ্ঞেস করো: ‘সভাগুলোতে ও প্রচারে যাওয়ার জন্য প্রতি বারই কি আমার বাবা-মা আমাকে মনে করিয়ে দেয়, না কি আমি নিজেই এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখি?’ যখন তুমি নিজে এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখ, তখন এটা থেকে বোঝা যায়, তুমি যিহোবাকে ভালোবাস, তাঁর উপর বিশ্বাস কর এবং যিহোবা তোমার জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর জন্য তুমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। এগুলো সবই ‘ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ কাজ’ এবং এমন বলিদান, যা তুমি যিহোবার জন্য উৎসর্গ করে থাক। (২ পিতর ৩:১১; ইব্রীয় ১৩:১৫) আমরা যখন নিজেদের ইচ্ছায় যিহোবার জন্য কিছু করি, তখন তিনি খুশি হন। (তুলনা করুন, ২ করিন্থীয় ৯:৭.) আমরা এই ধরনের কাজ করি কারণ যিহোবাকে সবচেয়ে উত্তম বলিদান উৎসর্গ করার মাধ্যমে আমরা অনেক খুশি হই।

যিহোবার প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করে চলুন

১৭-১৮. কোন বিশেষ গুণ থাকলে আপনি বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে পারবেন আর কেন? (হিতোপদেশ ৩:৩-৬)

১৭ বাপ্তিস্মের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ে আপনার সামনে কিছু সমস্যাও আসবে। হতে পারে আপনি যা বিশ্বাস করেন, সেটার কারণে লোকেরা আপনাকে নিয়ে ঠাট্টা কিংবা উপহাস করবে, আপনার বিরোধিতা করবে এবং তাড়নাও করবে। (২ তীম. ৩:১২) অথবা আপনি যদি কোনো মন্দ অভ্যাস ছাড়ার জন্য চেষ্টা করেন, তা হলে আপনি হয়তো আবারও সেই একই ভুল করে ফেলবেন। অনেক বার আপনি হয়তো এটা চিন্তা করে উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়বেন, ‘কী জানি, আমি কখনো বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে পারব কি না!’ এইরকম সময়ে কোন বিষয়টা আপনাকে সাহায্য করবে, যাতে আপনি হাল ছেড়ে না দেন? যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা।

১৮ আপনার মধ্যে যে-ভালো বিষয় এবং গুণাবলি রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিশেষ হল যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৩:৩-৬.) যিহোবার প্রতি গভীর ভালোবাসা আপনাকে সমস্যার মধ্যেও স্থির থাকতে সাহস জোগাতে পারে। বাইবেলে অনেকসময় বলা হয়েছে, যিহোবা তাঁর লোকদের প্রতি অটল প্রেম দেখান। এর মানে হল, তিনি কখনো তাঁর লোকদের একা ছেড়ে দেন না এবং সবসময় তাদের প্রতি সেই প্রেম দেখান। (গীত. ১০০:৫) আপনাকেও যিহোবার প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে। (আদি. ১:২৬) তাই, আপনি কীভাবে এই ধরনের ভালোবাসা দেখাতে পারেন?

আপনি প্রতিদিন যিহোবাকে ধন্যবাদ দিতে পারেন (১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন) b

১৯. যিহোবা আপনার জন্য যা-কিছু করেছেন, সেটার জন্য কীভাবে আপনি কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারেন? (গালাতীয় ২:২০)

১৯ সবচেয়ে প্রথমে, কৃতজ্ঞ হতে শিখুন। (১ থিষল. ৫:১৮) প্রতিদিন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আজ যিহোবা কীভাবে দেখিয়েছেন, তিনি আমাকে ভালোবাসেন?’ এরপর, আপনি যখন প্রার্থনা করবেন, তখন বিশেষভাবে সেই বিষয়গুলোর জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ দিন। প্রেরিত পৌলের মতো এটা দেখার চেষ্টা করুন যে, যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন, তাই তিনি বিশেষভাবে আপনার জন্য কী কী করেছেন। (পড়ুন, গালাতীয় ২:২০.) তাই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কি এর বিনিময়ে যিহোবার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে চাই?’ যিহোবার প্রতি ভালোবাসা আপনাকে খারাপ কাজগুলো থেকে দূরে থাকতে এবং সমস্যার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করতে সাহস জোগাবে। এর ফলে, আপনার উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজে ব্যস্ত থাকতে ইচ্ছা করবে আর এভাবে প্রতিদিন দেখাবেন যে, আপনি আপনার পিতা যিহোবাকে কতটা ভালোবাসেন।

২০. (ক) যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার জন্য আপনাকে কী করতে হবে? (খ) এই সিদ্ধান্ত কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

২০ কিছুসময় পর যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা আপনাকে পরিচালিত করবে যেন আপনি এক বিশেষ প্রার্থনা করে তাঁর কাছে আপনার জীবন উৎসর্গ করেন। এমনটা করার মাধ্যমে আপনি এক অপূর্ব আশীর্বাদ লাভ করবেন। সেটা হল: আপনি চিরকালের জন্য যিহোবার হতে পারেন। উৎসর্গ করে আপনি যেন শপথ করছেন, জীবনে যতই উত্থান-পতন আসুক না কেন, আপনি চিরকাল যিহোবার সেবা করে চলবেন। এটা এমন এক শপথ, যেটা বার বার করার প্রয়োজন হয় না। যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করা হল এক বড়ো সিদ্ধান্ত। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে আপনি জীবনে যত ভালো সিদ্ধান্ত নেবেন, সেগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হবে। (গীত. ৫০:১৪) শয়তান চেষ্টা করবে, যিহোবার প্রতি যেন আপনার ভালোবাসা কমে যায় এবং আপনি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত না থাকেন। কিন্তু, শয়তানকে কখনোই সফল হতে দেবেন না! (ইয়োব ২৭:৫) যখন আপনার হৃদয়ে যিহোবার প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকবে, তখন আপনি যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনার করা প্রতিজ্ঞা পূরণ করবেন এবং ক্রমাগত তাঁর নিকটবর্তী হবেন।

২১. কেন আমরা বলতে পারি, বাপ্তিস্ম কেবল একটা শুরু?

২১ যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার পর আপনার মণ্ডলীর প্রাচীনদের বলুন যে, আপনি বাপ্তিস্ম নিতে চান। কিন্তু মনে রাখবেন, বাপ্তিস্ম নেওয়ার মাধ্যমে আপনার খ্রিস্টীয় জীবনযাত্রা শেষ হয়ে যায় না। এটা যাত্রার কেবল একটা শুরু। এই যাত্রায় বের হলে আপনি চিরকাল যিহোবার সেবা করে চলতে পারবেন। তাই, এখন থেকেই যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা বৃদ্ধি করুন। ছোটো ছোটো লক্ষ্য স্থাপন করুন, যাতে দিনের পর দিন যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা গভীর হয়। এভাবে আপনি বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য যোগ্য হয়ে উঠবেন। আর যে-দিন আপনি বাপ্তিস্ম নেবেন, সেই দিনটা কতই-না আনন্দের হবে! কিন্তু আবারও মনে রাখবেন, এটা কেবল একটা শুরু। এরপর, যিহোবা আপনাকে প্রচুর আশীর্বাদ করবেন। আমরা প্রার্থনা করি, যেন যিহোবা এবং তাঁর পুত্রের প্রতি আপনার ভালোবাসা দিন দিন বৃদ্ধি পায়!

গান ১৩৫ যিহোবার আন্তরিক অনুরোধ: প্রিয় সন্তান, জ্ঞানবান হও

a বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য যোগ্য হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে আমাদের সঠিক মনোভাব রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, এর পাশাপাশি আমাদের আরও কিছু করতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা ইথিওপিয়ার একজন রাজকর্মচারীর কাছ থেকে শিখব যে, একজন বাইবেল ছাত্রকে বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য কী কী করতে হবে।

b ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন যুবতী বোন এই বিষয়ের জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি কত কিছু দিয়েছেন।