অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৩
কীভাবে যিহোবা আমাদের রক্ষা করবেন?
“প্রভু বিশ্বস্ত আর তিনি তোমাদের শক্তিশালী করবেন এবং শয়তানের হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করবেন।”—২ থিষল. ৩:৩.
গান সংখ্যা ১৮ ঈশ্বরের অনুগত প্রেম
সারাংশ a
১. যিশু তাঁর পিতাকে কী বলেছিলেন এবং কেন?
যিশু খ্রিস্ট মারা যাওয়ার আগের রাতে, তাঁর শিষ্যদের সম্বন্ধে চিন্তা করছিলেন যে, তারা কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। যেহেতু তিনি তাঁর শিষ্যদের খুব ভালোবাসতেন, তাই তিনি তাঁর পিতাকে বলেছিলেন: “তাদের শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করো।” (যোহন ১৭:১৪, ১৫) কেন? কারণ যিশু জানতেন, স্বর্গে ফিরে যাওয়ার পর শয়তান দিয়াবল তাঁর শিষ্যদের উপর আর সেইসঙ্গে যারা যিহোবার সেবা করতে চায়, তাদের উপর সমস্যা ও চরম দুঃখকষ্ট নিয়ে আসবে। তাই, তাদের যিহোবার কাছ থেকে সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
২. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শুনবেন?
২ যিহোবা যিশুর প্রার্থনা শুনেছিলেন কারণ তিনি তাঁর পুত্রকে খুব ভালোবাসতেন। আমরা যদি যিশুর মতো যিহোবাকে খুশি করার চেষ্টা করি, তা হলে তিনি আমাদেরও ভালোবাসবেন। আর আমরা যখন তাঁর কাছে নিজেদের সুরক্ষা ও সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করব, তখন তিনি আমাদের কথা শুনবেন। যিহোবা একজন প্রেমময় পিতা এবং তিনি সবসময় তাঁর সন্তানদের যত্ন নিয়ে থাকেন। তিনি যদি তা না করেন, তা হলে তাঁর নামের উপর দুর্নাম আসতে পারে।
৩. কেন আজ আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি যিহোবার সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে?
৩ আজ আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি যিহোবার সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। শয়তানকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে আর সে “প্রচণ্ড রেগে আছে।” (প্রকা. ১২:১২) আর শয়তান কিছু ব্যক্তিকে আমাদের সম্বন্ধে এভাবে চিন্তা করতে পরিচালিত করেছে যে, তারা যখন আমাদের উপর তাড়না নিয়ে আসে, তখন তারা আসলে “ঈশ্বরকে পবিত্র সেবা প্রদান করছে।” (যোহন ১৬:২) অন্যেরা আবার ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে না, কিন্তু তারা আমাদের উপর তাড়না নিয়ে আসে কারণ আমরা জগতের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি না। তারা যে-কারণেই আমাদের উপর তাড়না নিয়ে আসুক না কেন আমাদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। কেন? কারণ ঈশ্বরের বাক্য জানায়: “প্রভু বিশ্বস্ত আর তিনি তোমাদের শক্তিশালী করবেন এবং শয়তানের হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করবেন।” (২ থিষল. ৩:৩) কীভাবে যিহোবা আমাদের রক্ষা করেন? আসুন, দুটো উপায় নিয়ে বিবেচনা করে দেখি।
যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত যুদ্ধসজ্জা
৪. ইফিষীয় ৬:১৩-১৭ পদ অনুযায়ী যিহোবা আমাদের রক্ষা করার জন্য কী দিয়েছেন?
৪ যিহোবা আমাদের এক যুদ্ধসজ্জা দিয়েছেন, যেটা শয়তানের আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। (পড়ুন, ইফিষীয় ৬:১৩-১৭.) কিন্তু, আমরা যদি যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত এই যুদ্ধসজ্জা থেকে উপকার লাভ করতে চাই, তা হলে আমাদের এটার প্রতিটা অংশ ভালোভাবে পরিধান করতে হবে। এখন আসুন দেখি যে, যুদ্ধসজ্জার প্রতিটা অংশের অর্থ কী।
৫. সত্যের বেল্ট কী আর কেন আমাদের অবশ্যই এটা পরতে হবে?
৫ সত্যের বেল্ট: এটা হল ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলে পাওয়া সত্য। কেন আমাদের অবশ্যই এই বেল্ট পরতে হবে? কারণ শয়তান “মিথ্যার পিতা।” (যোহন ৮:৪৪) সে হাজার হাজার বছর ধরে মিথ্যা কথা বলে “পৃথিবীতে বসবাসকারী সমস্ত লোককে” ভ্রান্ত করে আসছে। (প্রকা. ১২:৯) কিন্তু, আমরা যদি ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলে পাওয়া সত্য সম্বন্ধে জানি, তা হলে আমরা শয়তানের দ্বারা প্রতারিত হওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকব। কীভাবে আমরা এই রূপক বেল্ট পরতে পারি? যিহোবা সম্বন্ধে সত্য শেখার, “পবিত্র শক্তির পরিচালনায় এবং সত্যের সঙ্গে মিল রেখে” তাঁর উপাসনা করার আর সমস্ত বিষয়ে সৎভাবে জীবনযাপন করার মাধ্যমে আমরা তা পরতে পারি।—যোহন ৪:২৪; ইফি. ৪:২৫; ইব্রীয় ১৩:১৮.
৬. ধার্মিকতার বুকপাটা কী আর কেন আমাদের অবশ্যই এটা পরতে হবে?
৬ ধার্মিকতার বুকপাটা: এটা হল যিহোবার ধার্মিক মান। কেন আমাদের অবশ্যই এই বুকপাটা পরতে হবে? একজন সৈন্য যখন যুদ্ধে যান, তখন বুকপাটা তার আক্ষরিক হৃদয়কে রক্ষা করে। ঠিক তেমনই, ধার্মিকতার বুকপাটা জগতের কলুষিত প্রভাব থেকে আমাদের রূপক হৃদয় বা ভিতরের ব্যক্তিত্বকে রক্ষা করে। (হিতো. ৪:২৩) যিহোবা আশা করেন, আমরা যেন তাঁকে সমস্ত হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি এবং তাঁর সেবা করি। (মথি ২২:৩৬, ৩৭) কিন্তু, শয়তান চায় না, আমরা আমাদের সমস্ত হৃদয় দিয়ে যিহোবার সেবা করি। তাই, সে চেষ্টা করে থাকে যেন আমরা জগতের বিষয়গুলোর প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলি আর সেইসঙ্গে দৈনন্দিন জীবনে এমন কাজ করে চলি, যেগুলো যিহোবা ঘৃণা করেন। (যাকোব ৪:৪; ১ যোহন ২:১৫, ১৬) আর যদি তার এই পদ্ধতি সফল না হয়, তা হলে সে আমাদের ভয় দেখায় ও হুমকি দেয়, যাতে আমরা যিহোবার মানের বিরুদ্ধে আপোশ করে ফেলি।
৭. কীভাবে আমরা ধার্মিকতার বুকপাটা পরে থাকি?
৭ আমরা যখন সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি, তখন আমরা ধার্মিকতার বুকপাটা পরে থাকি। (গীত. ৯৭:১০) কেউ কেউ হয়তো মনে করতে পারে, ঈশ্বরের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করলে এটা আমাদের স্বাধীনতাকে কেড়ে নেবে। কিন্তু, আমরা যদি আমাদের জীবনে বাইবেলের নীতি কাজে লাগানো বন্ধ করে দিই, তা হলে আমরা এমন একজন সৈন্যের মতো হব, যিনি যুদ্ধ চলাকালীন তার বুকপাটা খুলে ফেলে দেন, কারণ এটা তার কাছে ভারী বোঝাস্বরূপ মনে হয়। এইরকম করা কতই-না বোকামির কাজ হবে! যারা যিহোবাকে ভালোবাসে, তাদের কাছে তাঁর আজ্ঞাগুলো “বোঝাস্বরূপ নয়” বরং তারা জানে, যিহোবার আজ্ঞাগুলো পালন করলে নিজেদের জীবনই রক্ষা পাবে।—১ যোহন ৫:৩.
৮. পায়ে শান্তির সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য প্রস্তুত থাকার জুতো পরার অর্থ কী?
৮ পৌল আমাদের পায়ে শান্তির সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য প্রস্তুত থাকার জুতো পরে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে জোরালো পরামর্শও দিয়েছিলেন। এর অর্থ হল, রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকা। আর কাউকে বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে জানানোর ফলে আমাদের বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হয়। তাই, যখন আমরা কোনো সুযোগ পাই, তখন সাক্ষ্য দিয়ে থাকি। যেমন, কাজের জায়গায়, স্কুলে, ব্যাবসায়িক এলাকায় আর ঘরে ঘরে প্রচার করার সময়, কেনাকাটা করার সময়, ন-সাক্ষি আত্মীয়স্বজন বা কোনো পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় কিংবা আমরা যখন কোনো কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারি না। কিন্তু, আমরা যদি ভয় পেয়ে প্রচারে যাওয়া বন্ধ করে দিই, তা হলে আমরা এমন একজন সৈন্যের মতো হব, যিনি যুদ্ধ চলাকালীন নিজের জুতো খুলে ফেলে দেন। এইরকম করার পরিণতি কী হতে পারে? সহজেই তার পায়ে আঘাত লাগতে পারে, শত্রুদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা তার পক্ষে কঠিন হতে পারে আর তিনি তার সেনাপতির আদেশ অনুসরণ করতে ব্যর্থ হতে পারেন।
৯. কেন আমাদের অবশ্যই বিশ্বাসের বড়ো ঢাল নিতে হবে?
৯ বিশ্বাসের বড়ো ঢাল: এটা হল যিহোবা ও তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর আমাদের বিশ্বাস। কেন আমাদের অবশ্যই বিশ্বাসের বড়ো ঢাল নিতে হবে? কারণ এটা “শয়তানের সমস্ত জ্বলন্ত তির নিভিয়ে ফেলতে” আমাদের সাহায্য করে। এ ছাড়া, এই বড়ো ঢাল আমাদের ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের শিক্ষা থেকে রক্ষা করে। আর আমাদের বিশ্বাসের কারণে লোকেরা যখন আমাদের উপহাস করে, তখন আমরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি না। এটা আমাদের সঠিক কাজ করতে সাহস জোগায়। যেমন, আমরা কাজের জায়গায় অথবা স্কুলে নিজেদের বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করতে পারি। (১ পিতর ৩:১৫) আর আমরা এমন চাকরি প্রত্যাখ্যান করতে পারি, যেটা থেকে মোটা বেতন লাভ করা যেত ঠিকই, কিন্তু সেটার কারণে আমরা হয়তো সভায় ও প্রচারে যাওয়ার জন্য সময় বের করতে পারতাম না। (ইব্রীয় ১৩:৫, ৬) শুধু তা-ই নয়, কেউ আমাদের বিরোধিতা করলে আমরা যিহোবার সেবা চালিয়ে যাই। এভাবে, আমরা যখন প্রতি বার সঠিক সিদ্ধান্ত নিই এবং ভালো কাজ করি, তখন বিশ্বাস আমাদের রক্ষা করে।—১ থিষল. ২:২.
১০. পরিত্রাণের হেলমেট কী আর কেন আমাদের অবশ্যই এটা পরতে হবে?
১০ পরিত্রাণের হেলমেট: এটা হল যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া অনন্তজীবনের প্রত্যাশা। এটা তিনি তাঁর বিশ্বস্ত লোকদের পুরস্কার হিসেবে দান করবেন এবং তারা যদি মারাও যায়, তা হলে তিনি তাদের জীবন ফিরিয়ে দেবেন। (১ থিষল. ৫:৮, পাদটীকা; ১ তীম. ৪:১০; তীত ১:১, ২) ঠিক যেমন আক্ষরিক হেলমেট একজন সৈন্যের মাথা রক্ষা করে, একইভাবে প্রত্যাশা আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতাকে রক্ষা করে। কীভাবে? এই প্রত্যাশার কারণে আমরা নিজেদের সমস্যা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করি না। এর বিপরীতে, আমরা যিহোবার প্রতিজ্ঞার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখি। কীভাবে আমরা এই হেলমেট পরতে পারি? ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার সঙ্গে নিজেদের চিন্তাধারার মিল রাখার মাধ্যমে আমরা তা পরতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা নশ্বর ধনের উপর নির্ভর করি না বরং ঈশ্বরের উপর নির্ভর করি।—গীত. ২৬:২; ১০৪:৩৪; ১ তীম. ৬:১৭.
১১. পবিত্র শক্তির খড়্গ কী আর কেন আমাদের এটি ব্যবহার করতে হবে?
১১ পবিত্র শক্তির খড়্গ: এটি হল ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল। এটিতে এতটাই ক্ষমতা রয়েছে যে, এটি যেকোনো মিথ্যাকে প্রকাশ করে দিতে পারে। এ ছাড়া, এটি আমাদের মিথ্যা শিক্ষা ও মন্দ অভ্যাস থেকে মুক্ত করতে পারে। (২ করি. ১০:৪, ৫; ২ তীম. ৩:১৬, ১৭; ইব্রীয় ৪:১২) ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার এবং সংগঠনের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করার মাধ্যমে আমরা এই খড়্গ ভালোভাবে ব্যবহার করতে শিখি। (২ তীম. ২:১৫) এই যুদ্ধসজ্জা ছাড়া যিহোবা আরেকটা উপায়ে আমাদের রক্ষা করে থাকেন। সেটা কী? আসুন, তা লক্ষ করি।
এই যুদ্ধে আমরা একা নই
১২. যিহোবা আমাদের আর কী দিয়েছেন এবং কেন?
১২ একজন সৈন্যের যতই অভিজ্ঞতা থাকুক না কেন, তিনি একা বিশাল সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবেন না; তার অন্য সৈন্যদের কাছ থেকে সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। ঠিক একইভাবে, আমরা শয়তান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে একা যুদ্ধ করতে পারব না। আমাদের ভাই-বোনদের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। তাই, যিহোবা আমাদের বিশ্বব্যাপী এক ‘ভ্রাতৃসমাজ’ দিয়েছেন, যারা আমাদের বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করে থাকে।—১ পিতর ২:১৭.
১৩. ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫ পদ অনুযায়ী সভায় যাওয়ার ফলে আমরা কোন কোন উপকার লাভ করি?
১৩ আমরা যখন নিয়মিত সভায় যাই, তখন আমরা ভাই-বোনদের সাহায্য লাভ করি। (পড়ুন, ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.) এটা ঠিক যে, আমরা সবাই কখনো-না-কখনো নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি। কিন্তু, সভায় যাওয়ার ফলে আমরা সতেজতা অনুভব করি। ভাই-বোনদের আন্তরিক মন্তব্য শোনার দ্বারা আমাদের বিশ্বাস আরও মজবুত হয়। বাইবেলভিত্তিক বক্তৃতা ও নমুনা আমাদের উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, যাতে আমরা যিহোবার সেবা চালিয়ে যেতে পারি। সভার আগে ও পরে আমাদের গঠনমূলক কথাবার্তা ভাই-বোনদের অনেক উৎসাহিত করে। (১ থিষল. ৫:১৪) শুধু তা-ই নয়, সভায় যাওয়ার ফলে আমরা বিভিন্ন উপায়ে ভাই-বোনদের সাহায্য করার সুযোগ লাভ করি আর এটা আমাদের অনেক আনন্দিত করে। (প্রেরিত ২০:৩৫; রোমীয় ১:১১, ১২) সভায় যাওয়ার আরও অনেক উপকার আছে। আমরা প্রচার করার দক্ষতা বাড়াতে পারি। যেমন, আমাদের শিক্ষাদানের হাতিয়ার বাক্স থেকে বিভিন্ন প্রকাশনা ভালোভাবে ব্যবহার করতে শিখি। তাই, আমাদের ভালোভাবে সভার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। সভা চলাকালীন কী বলা হচ্ছে, তা মন দিয়ে শুনতে হবে আর যে-বিষয়গুলো আমরা শিখি, সেগুলো আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে হবে। এভাবে আমরা “খ্রিস্ট যিশুর একজন উত্তম সৈন্য” হয়ে উঠতে পারব।—২ তীম. ২:৩.
১৪. যিহোবা আর কোন উপায়ে আমাদের সাহায্য করে থাকেন?
১৪ আমাদের সঙ্গে কোটি কোটি শক্তিশালী স্বর্গদূতও রয়েছে। একটু চিন্তা করে দেখুন, শুধুমাত্র একজন স্বর্গদূত কী করেছিলেন। (যিশা. ৩৭:৩৬) একজন স্বর্গদূত যদি এত কিছু করতে পারেন, তা হলে ভেবে দেখুন যে, পুরো স্বর্গীয় সৈন্যবাহিনী কী করতে পারে। কোনো মানুষ বা মন্দদূত ঈশ্বরের শক্তিশালী সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না। (বিচার. ৬:১৬) যিহোবা খুবই শক্তিশালী। তাই, যিহোবা যদি আমাদের সঙ্গে থাকেন, তা হলে আমাদের শত্রুদের সংখ্যা অধিক হলেও আমাদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। যখন কোনো সহকর্মী, সহপাঠী অথবা ন-সাক্ষি আত্মীয় আমাদের উপহাস করে, তখন আমাদের নিরুৎসাহিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, এই যুদ্ধে আমরা একা নই। আমরা যদি যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করে চলি, তা হলে তিনি সবসময় আমাদের সাহায্য করবেন।
যিহোবা আমাদের ক্রমাগত রক্ষা করবেন
১৫. যিশাইয় ৫৪:১৫, ১৭ পদ অনুযায়ী কেন শয়তান ও তার অনুসারীরা রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করাকে বন্ধ করতে পারেনি?
১৫ শয়তানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই জগৎ বিভিন্ন কারণে আমাদের ঘৃণা করে। আমরা রাজনৈতিক ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকি, কারো বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করি না এবং আমরা ঈশ্বরের ধার্মিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি। আমরা লোকদের কাছে ঈশ্বরের নাম সম্বন্ধে ঘোষণা করে থাকি। আর তাঁর রাজ্যের বিষয়ে জানিয়ে থাকি যে, একমাত্র এটার মাধ্যমেই পুরো পৃথিবীতে শান্তি আসবে। এ ছাড়া, আমরা এও জানিয়ে থাকি, শয়তান একজন খুনি এবং মিথ্যার পিতা। (যোহন ৮:৪৪) আর এই শয়তানের জগৎ খুব শীঘ্রই ধ্বংস হয়ে যাবে। আসলে, এই কারণেই শয়তান ও তার অনুসারীরা আমাদের বিরোধিতা করে। কিন্তু, আমরা যিহোবার গৌরব করে চলার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। শয়তান শক্তিশালী ঠিকই, কিন্তু সে পুরো পৃথিবীতে রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করাকে বন্ধ করতে পারেনি। কেন? কারণ যিহোবা আমাদের রক্ষা করছেন।—পড়ুন, যিশাইয় ৫৪:১৫, ১৭.
১৬. কীভাবে যিহোবা মহাক্লেশের সময় তাঁর লোকদের রক্ষা করবেন?
১৬ খুব শীঘ্রই কী ঘটবে? মহাক্লেশের সময়, যিহোবা দুটো অসাধারণ উপায়ে আমাদের রক্ষা করবেন। প্রথমত, যখন পৃথিবীর রাজারা মহতী বাবিল অর্থাৎ সমস্ত মিথ্যা ধর্মের সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করবে, তখন যিহোবা তাঁর অনুগত দাসদের রক্ষা করবেন। (প্রকা. ১৭:১৬-১৮; ১৮:২, ৪) দ্বিতীয়ত, যখন যিহোবা শয়তানের জগতের বাকি অংশ আরমাগিদোনে ধ্বংস করবেন, তখন তিনি তাঁর লোকদের রক্ষা করবেন।—প্রকা. ৭:৯, ১০; ১৬:১৪, ১৬, পাদটীকা।
১৭. কেন যিহোবার নিকটে থাকা গুরুত্বপূর্ণ?
১৭ আমরা যদি যিহোবার নিকটে থাকি, তা হলে শয়তান আমাদের কোনো স্থায়ী ক্ষতি করতে পারবে না। সত্যি বলতে কী, শয়তানকেই চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেওয়া হবে। (রোমীয় ১৬:২০) তাই আসুন, ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত যুদ্ধসজ্জার প্রতিটা অংশ পরিধান করি এবং সেগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করে চলি। শয়তানের ও তার জগতের বিরুদ্ধে একা যুদ্ধ করার চেষ্টা করবেন না। এর পরিবর্তে, ভাই-বোনদের কাছ থেকে সাহায্য নিন এবং তাদেরও সাহায্য করুন। আর সেইসঙ্গে যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করে চলুন। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি যে, আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা আমাদের শক্তিশালী করবেন এবং রক্ষা করবেন।—যিশা. ৪১:১০.
গান সংখ্যা ১৩২ বিজয় সংগীত
a বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে যে, যিহোবা আমাদের শক্তিশালী করবেন এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে রক্ষা করার পাশাপাশি অন্য যেকোনো ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন। এই প্রবন্ধে, আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে পারব: কেন আমাদের সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে? কীভাবে যিহোবা আমাদের রক্ষা করেন? আর যিহোবার কাছ থেকে সুরক্ষা লাভ করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?