অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৮
“তোমরা সচেতন থাকো, সতর্ক থাকো!”
“তোমরা সচেতন থাকো, সতর্ক থাকো!”—১ পিতর ৫:৮.
গান ১৪৪ থাকলে স্থির পাবে পুরস্কার
সারাংশ a
১. শেষ কখন আসবে, সেই বিষয়ে যিশু তাঁর শিষ্যদের কী বলেছিলেন আর তিনি তাদের কোন সাবধানবাণী দিয়েছিলেন?
যিশু মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে তাঁর চার জন শিষ্য এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন: “এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময়ের চিহ্ন কী?” (মথি ২৪:৩) সেই শিষ্যেরা হয়তো জানতে চেয়েছিলেন, কীভাবে তারা বুঝতে পারবেন যে, যিহুদি বিধিব্যবস্থা অর্থাৎ জেরুসালেম এবং এর মন্দির ধ্বংস হবে। যিশু তাদের শুধু যিহুদি বিধিব্যবস্থার শেষের বিষয়েই বলেননি বরং তিনি তাদের এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময়ের বিষয়েও বলেছিলেন, যে-সময়ে আজ আমরা বাস করছি। কিন্তু, এই শেষ কখন আসবে, সেই বিষয়ে যিশু বলেছিলেন: “সেই দিন বা সেই সময়ের কথা কেউই জানে না, স্বর্গদূতেরাও জানেন না, পুত্রও জানেন না, কেবল পিতা জানেন।” এরপর, তিনি তাঁর সমস্ত শিষ্যকে এই সাবধানবাণী দিয়েছিলেন, “তোমরা সতর্ক থেকো, সজাগ থেকো।”—মার্ক ১৩:৩২-৩৭.
২. কেন প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের সতর্ক থাকতে হত?
২ প্রথম শতাব্দীতে যিহূদিয়ায় বসবাসরত খ্রিস্টানদের জন্য সতর্ক থাকা খুবই প্রয়োজন ছিল কারণ এর সঙ্গে তাদের জীবন ও মৃত্যু জড়িত ছিল। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, কীভাবে তারা জানতে পারবেন, জেরুসালেম এবং এর মন্দির ধ্বংস হবে। তিনি তাদের বলেছিলেন, “তোমরা যখন জেরুসালেমকে সৈন্যদের দ্বারা বেষ্টিত দেখবে, তখন বুঝবে যে, সেটার ধ্বংস কাছে এসে গিয়েছে।” যখনই এইরকমটা ঘটত, তখনই যিশুর সাবধানবাণীর প্রতি মনোযোগ দিয়ে তাদের “পাহাড়ি এলাকায় পালিয়ে” যেতে হত। (লূক ২১:২০, ২১) যে-ব্যক্তিরা সেই সাবধানবাণীর প্রতি মনোযোগ দিয়েছিল, তারা কীভাবে উপকার পেয়েছিল? রোমীয় সৈন্যেরা যখন জেরুসালেম ধ্বংস করেছিল, তখন সেই ব্যক্তিদের জীবন রক্ষা পেয়েছিল।
৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?
৩ আজ আমরা এই বিধিব্যবস্থার একেবারে শেষ সময়ে বাস করছি। তাই, আমাদেরও সচেতন থাকতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, জগতের ঘটনাগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়ার সময় কীভাবে আমরা সতর্ক থাকতে পারি, কীভাবে আমরা নিজেদের বিষয়ে সাবধান থাকতে পারি আর আমাদের কাছে যতটুকু সময় বাকি রয়েছে, কীভাবে তা সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করতে পারি।
জগতের ঘটনাগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়ার সময়ে কীভাবে সতর্ক থাকতে পারি?
৪. কেন আমরা এই বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই যে, জগতের ঘটনাগুলোর মাধ্যমে বাইবেলের কোনো ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে কি না?
৪ আমরা জানতে চাই, আজ জগতে কী কী ঘটছে আর তা জানা ভুলও নয়। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরিপূর্ণ হচ্ছে। যেমন, যিশু এমন কিছু ঘটনার বিষয়ে বলেছিলেন, যেগুলো থেকে বোঝা যায়, শয়তানের জগতের শেষ খুবই কাছে। (মথি ২৪:৩-১৪) প্রেরিত পিতরও আমাদের উৎসাহিত করেছিলেন, যেন আমরা এই বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিই যে, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো কীভাবে পরিপূর্ণ হচ্ছে কারণ এর ফলে আমাদের বিশ্বাস বাড়বে। (২ পিতর ১:১৯-২১) বাইবেলের শেষ বই প্রকাশিত বাক্যের শুরুতে এইরকমই কিছু লেখা আছে: “যিশু খ্রিস্টের দ্বারা প্রকাশিত বাক্য, যে-বাক্য ঈশ্বর তাঁকে দিয়েছেন, যেন তিনি তাঁর দাসদের সেই বিষয়গুলো দেখান, যেগুলো শীঘ্রই ঘটবে।” (প্রকা. ১:১) তাই, আমরা প্রায়ই এই বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই যে, জগতে কোন কোন ঘটনা ঘটছে। আমরা এটাও চিন্তা করি যে, সেই ঘটনাগুলোর মাধ্যমে বাইবেলের কোনো ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে কি না। আর আমরা উৎসাহিত হই যেন অন্যদেরও সেই ঘটনাগুলো সম্বন্ধে বলি।
৫. আমাদের কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়? (ছবিগুলোও দেখুন।)
৫ আমরা বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে পারি, কিন্তু তা করার সময়ে আমাদের অনুমান করা উচিত নয়। কেন? কারণ এমনটা করলে মণ্ডলীর একতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে আর আমরা কখনোই এমনটা করতে চাই না। যেমন, আমরা হয়তো শুনতে পারি, জগতের নেতারা এই বিষয়ে আলোচনা করছে, কীভাবে তারা কোনো বড়ো সমস্যার সমাধান করবে এবং জগতে শান্তি ও সুরক্ষা নিয়ে আসবে। তাদের কথাগুলো শুনে আমাদের এইরকম অনুমান করা উচিত নয়, ‘এর মানে এই নয় তো, ১ থিষলনীকীয় ৫:৩ পদে লেখা ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে?’ এর পরিবর্তে, আমাদের যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে সাম্প্রতিক তথ্যের বিষয়ে ক্রমাগত জানা উচিত। আমরা যখন সেই তথ্য অনুযায়ী একে অন্যের সঙ্গে কথা বলব, তখন আমরা “চিন্তাধারায় পুরোপুরি একতাবদ্ধ” হব এবং মণ্ডলীতে একতা বজায় থাকবে।—১ করি. ১:১০; ৪:৬.
৬. দ্বিতীয় পিতর ৩:১১-১৩ পদ থেকে আমরা কী শিখি?
৬ দ্বিতীয় পিতর ৩:১১-১৩ পদ পড়ুন। এই পদগুলো থেকে বোঝা যায়, আমরা যখন বাইবেলের কোনো ভবিষ্যদ্বাণীর উপর মনোযোগ দিই, তখন আমাদের খেয়াল রাখা উচিত, আমরা কোন মনোভাব নিয়ে তা করছি। পিতর আমাদের উৎসাহিত করেছেন, আমরা যেন এই বিষয়ে সবসময় মনে রাখি, “যিহোবার দিন” খুব শীঘ্রই আসবে। কেন? এর কারণ এই নয় যে, আমরা “সেই দিন এবং সেই সময়ের” বিষয়ে জানতে চাই, যখন যিহোবা আরমাগিদোন নিয়ে আসবেন। কিন্তু এর কারণ হল, আজ আমাদের কাছে যে-সময় বাকি রয়েছে, সেটা যেন আমরা ‘পবিত্র আচরণ করার এবং ঈশ্বরের প্রতি আমাদের যে-ভক্তি রয়েছে, তা কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করার’ ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি। (মথি ২৪:৩৬; লূক ১২:৪০) অন্যভাবে বললে, আমরা চাই যেন আমাদের আচার-আচরণ যিহোবার মান অনুযায়ী হয় এবং আমরা যিহোবার জন্য যা-কিছু করি, সেগুলো দেখায় যেন আমরা তাঁকে খুব ভালোবাসি। এমনটা করার জন্য আমাদের ‘নিজেদের বিষয়ে সাবধান থাকা’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
‘নিজেদের বিষয়ে সাবধান থাকার’ মানে কী?
৭. কীভাবে আমরা নিজেদের বিষয়ে সাবধান থাকতে পারি? (লূক ২১:৩৪)
৭ যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, তারা যেন কেবল জগতের ঘটনাগুলোর বিষয়ে নয় বরং নিজেদের বিষয়েও সাবধান থাকে। একবার যিশু যখন তাঁর শিষ্যদের সতর্ক করছিলেন, তখন এক অর্থে তিনি তাদের বলেছিলেন: ‘তোমরা নিজেদের বিষয়ে সাবধান থেকো!’ (পড়ুন, লূক ২১:৩৪.) যে-ব্যক্তি নিজের বিষয়ে সাবধান থাকেন, তিনি চিন্তা করেন, কোন বিষয়গুলো যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারে আর তিনি সবসময় সেগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন। এভাবে, তিনি ঈশ্বরের প্রেম থেকে উপকার লাভ করতে পারেন।—হিতো. ২২:৩; যিহূদা ২০, ২১.
৮. প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের কী বলেছিলেন?
৮ প্রেরিত পৌলও খ্রিস্টানদের বলেছিলেন, তারা যেন নিজেদের বিষয়ে সাবধান থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি ইফিষের খ্রিস্টানদের বলেছিলেন, “তোমরা কীভাবে চলছ, তা ভালোভাবে লক্ষ করো। মূর্খ ব্যক্তির মতো না চলে বরং বিজ্ঞ ব্যক্তির মতো চলো।” (ইফি. ৫:১৫, ১৬) শয়তান সবসময় এই চেষ্টা করে, সে যেন যেকোনো উপায়ে হোক যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই, বাইবেল আমাদের পরামর্শ দেয়, আমরা যেন “যিহোবার ইচ্ছা কী, তা সবসময় বোঝার চেষ্টা” করি, যাতে শয়তানের যেকোনো ফাঁদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।—ইফি. ৫:১৭.
৯. কীভাবে আমরা যিহোবার ইচ্ছা জানতে পারি?
৯ বাইবেলে এমন প্রত্যেকটা বিষয় সম্বন্ধে বলা হয়নি, যেগুলো যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। তাই, অনেকসময় আমাদের নিজেদের স্থির করতে হয়, আমরা কী করব আর কী করব না। আমরা যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চাই, তা হলে আমাদের এটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে, “যিহোবার ইচ্ছা কী।” কীভাবে আমরা তা বুঝতে পারি? আমাদের ক্রমাগত বাইবেল অধ্যয়ন করতে হবে এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। আমরা যখন যিহোবার ইচ্ছা জানার এবং “খ্রিস্টের মতো মনোভাব” রাখার প্রচেষ্টা করব, তখন আমরা “বিজ্ঞ ব্যক্তির মতো” চলতে পারব। আমরা সেই ক্ষেত্রগুলোতেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব, যেগুলোর বিষয়ে বাইবেলে সরাসরি কোনো নিয়ম দেওয়া হয়নি। (১ করি. ২:১৪-১৬) যে-বিষয়গুলো যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে, সেগুলোর মধ্যে কিছু বিষয় আমরা সহজে শনাক্ত করতে পারি। আবার এমন কিছু বিষয়ও রয়েছে, যেগুলো আমরা সহজে শনাক্ত করতে পারি না।
১০. কোন বিষয়গুলো থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত?
১০ যে-বিষয়গুলো যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা হল, প্রেমের ভান বা ফ্লার্টিং করা, প্রচুর পরিমাণে মদ খাওয়া, অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া করা, আঘাতদায়ক কথা বলা, মারপিট রয়েছে এমন অনুষ্ঠান কিংবা সিনেমা দেখা এবং নোংরা নোংরা ছবি অথবা ভিডিও দেখা। এই বিষয়গুলো থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত। (গীত. ১০১:৩) আমাদের শত্রু শয়তান দিনরাত এই চেষ্টা করে চলে, যেকোনো উপায়ে হোক যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যেন নষ্ট হয়ে যায়। (১ পিতর ৫:৮) আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে শয়তান আমাদের মনে কিছু বিষাক্ত বীজ বুনে দিতে পারে। যেমন, আমরা হয়তো অন্যদের দেখে ঈর্ষা করতে পারি, মিথ্যা কথা বলতে পারি কিংবা ঠকাতে পারি, লোভ করতে পারি, গর্বিত হয়ে পড়তে পারি, অন্যদের বিরুদ্ধে রাগ পুষে রাখতে পারি কিংবা তাদের ঘৃণা করতে পারি। (গালা. ৫:১৯-২১) একেবারে শুরুতে আমাদের হয়তো মনে হতে পারে, এই বিষয়গুলো ততটাও খারাপ নয়। কিন্তু, আমরা যদি দ্রুত এগুলোকে আমাদের মন ও হৃদয় থেকে উপড়ে না ফেলি, তা হলে এই বিষাক্ত বীজ বৃদ্ধি পেতে থাকবে আর এর ফলে, আমাদের অনেক ক্ষতি হতে পারে।—যাকোব ১:১৪, ১৫.
১১. এমন একটা বিপদ কী, যেটা আমরা হয়তো সহজে শনাক্ত করতে পারি না আর কেন আমাদের এই বিপদ থেকে সাবধান থাকা উচিত?
১১ এমন একটা বিপদের উপর মনোযোগ দিন, যেটা আমরা হয়তো সহজে শনাক্ত করতে পারি না। সেটা হল, খারাপ লোকদের সঙ্গে মেলামেশা করা। চিন্তা করুন, আপনি এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করেন, যিনি যিহোবার সাক্ষি নন। আপনি চান তিনি যেন সাক্ষিদের সম্বন্ধে ভালো চিন্তা করেন। তাই, আপনি প্রায়ই তাকে সাহায্য করেন এবং তার সঙ্গে ভালোভাবে আচরণ করেন। কখনো কখনো আপনি ব্রেকের সময়ে তার সঙ্গে খাবারও খান। কিছুসময় পর, আপনি প্রায়ই সেই ব্যক্তির সঙ্গে খাবার খেতে শুরু করেন। এরপর আপনি দেখেন, সেই ব্যক্তি কখনো কখনো অনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন। প্রথমে আপনি হয়তো সেগুলোর উপর মনোযোগ দেন না। কিন্তু, প্রতিদিন সেই একই কথা শুনতে শুনতে আপনি এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েন যে, সেই কথা এখন আপনার কাছে ততটাও খারাপ লাগে না। এরপর, একদিন কাজের শেষে তিনি আপনাকে মদ খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং আপনি রাজি হয়ে যান। ধীরে ধীরে আপনি তার মতোই চিন্তা করতে শুরু করেন। এখন কি আপনার মনে হয় না, কিছুসময় পর আপনি তার মতো কাজও করতে শুরু করবেন? এটা ঠিক যে, আমাদের অন্যদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে এবং তাদের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। তবে, আমাদের এও মনে রাখতে হবে, আমরা যাদের সঙ্গে সময় কাটাই, আমরা তাদের মতোই হয়ে যাই। (১ করি. ১৫:৩৩) সেইজন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেন আমরা যিশুর কথা মনে রাখি এবং নিজেদের বিষয়ে সাবধান থাকি। তখন আমরা এমন লোকদের সঙ্গে অযথা সময় কাটাব না, যারা যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করে না। কারণ আমরা জানি, এমনটা করা খুবই বিপদজনক হতে পারে।—২ করি. ৬:১৫.
সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করুন
১২. জেরুসালেমের ধ্বংসের জন্য অপেক্ষা করার সময়ে যিশুর শিষ্যদের কী করতে হত?
১২ যিশুর শিষ্যেরা জানতেন, জেরুসালেম ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু, সেই সময় না আসা পর্যন্ত তাদের চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হত না। যিশু তাদের একটা কাজ দিয়েছিলেন। যিশু তাদের আজ্ঞা দিয়েছিলেন, তারা যেন “জেরুসালেমে, সমস্ত যিহূদিয়া ও শমরিয়ায় এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত” সুসমাচার জানায়। (প্রেরিত ১:৬-৮) সেই শিষ্যেরা কতই-না বড়ো দায়িত্ব পেয়েছিলেন! সেই দায়িত্ব মনপ্রাণ দিয়ে পালন করার মাধ্যমে তারা সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করেছিলেন।
১৩. কেন আমাদের সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ? (কলসীয় ৪:৫)
১৩ কলসীয় ৪:৫ পদ পড়ুন। আমরা যখন নিজেদের সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করি, তখন আমরা নিজেদের বিষয়ে সাবধান থাকি। তাই আমাদের চিন্তা করা উচিত, আমরা আমাদের সময়কে কোন কাজে ব্যবহার করছি। কিন্তু, কেন এমনটা করা গুরুত্বপূর্ণ? কারণ যেকোনো সময়ে ‘সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটতে পারে’ আর হঠাৎ আমরা মারাও যেতে পারি।—উপ. ৯:১১.
১৪-১৫. কীভাবে আমরা আমাদের সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করতে পারি? (ইব্রীয় ৬:১১, ১২) (ছবিও দেখুন।)
১৪ আজ আমরা সবাই কীভাবে আমাদের সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করতে পারি? যিহোবার ইচ্ছা পূরণ করার এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বকে মজবুত করার মাধ্যমে। (যোহন ১৪:২১) এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা “দৃঢ় থাকি, সুস্থির থাকি, প্রভুর সেবায় উপচে পড়ি।” (১ করি. ১৫:৫৮) আমরা যখন এমনটা করব, তখন শেষ আসার আগে অথবা আমরা মারা যাওয়ার আগে আমাদের এইরকম চিন্তা করে আপশোস হবে না যে, আমরা যদি আমাদের সময়কে যিহোবার সেবায় আরও ভালোভাবে ব্যয় করতাম, তা হলে কতই-না ভালো হত!—মথি ২৪:১৩; রোমীয় ১৪:৮.
১৫ আজ যিশুর শিষ্যেরা পুরো পৃথিবীতে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করছে এবং যিশু তাদের ক্রমাগত নির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের ভালোভাবে প্রচার করতে শেখাচ্ছেন আর এরজন্য আমাদের যে-সমস্ত প্রকাশনার প্রয়োজন, সেগুলো সবই তিনি দিচ্ছেন। (মথি ২৮:১৮-২০) যিশু তাঁর প্রতিজ্ঞা ভালোভাবে পূরণ করেছেন, কিন্তু তিনি আমাদের কাছ থেকে কী আশা করেন? তিনি আশা করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না যিহোবা এই জগতের শেষ নিয়ে আসছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা যেন লোকদের কাছে প্রচার করি এবং তাদের শেখানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করি আর সতর্ক থাকি। এভাবে আমরা দেখাব, আমরা ইব্রীয় ৬:১১, ১২ পদে দেওয়া পরামর্শ মেনে চলছি এবং আমরা “শেষ পর্যন্ত” সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত যে, আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে।—পড়ুন।
১৬. আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?
১৬ যিহোবা সেই দিন ও সময় স্থির করে রেখেছেন, যখন তিনি শয়তানের জগৎকে ধ্বংস করে দেবেন। এরপর যিহোবা নতুন জগতের বিষয়ে করা সেই সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করবেন, যেগুলো তিনি তাঁর বাক্যে লিখিয়েছিলেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই সময় আসছে, আমাদের হয়তো কখনো কখনো মনে হতে পারে, শেষ আসতে দেরি হচ্ছে। কিন্তু, যিহোবার দিন একেবারে সঠিক সময়ে আসবে, “বিলম্ব” হবে না! (হবক্. ২:৩) তাই আসুন, আমরা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই যে, আমরা ‘সদাপ্রভুর প্রতি দৃষ্টি রাখিব, আমাদের ত্রাণেশ্বরের অপেক্ষা করিব।’—মীখা ৭:৭.
গান ১৩৯ পরমদেশে নিজেকে কল্পনা করো
a এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, জগতের ঘটনাগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়ার সময়ে আমাদের কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয় আর কীভাবে আমরা সতর্ক থাকতে পারি। আমরা এও জানতে পারব, কীভাবে আমরা নিজেদের বিষয়ে সাবধান থাকতে পারি এবং কীভাবে আমরা আমাদের সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করতে পারি।
b ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: (উপরে) এক স্বামী-স্ত্রী নিউজ দেখছেন। সেই নিউজ দেখে তারা যে-অনুমান করেছেন, সেই বিষয় নিয়ে তারা সভার পরে অন্য ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলছেন। (নীচে) এক স্বামী-স্ত্রী পরিচালকগোষ্ঠীর আপডেট দেখছেন, যাতে তারা বাইবেলের বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণীর বিষয়ে সাম্প্রতিক তথ্যগুলো সম্বন্ধে জানতে পারেন। আর তারা বিশ্বস্ত দাসের মাধ্যমে তৈরি প্রকাশনা অন্যদের দিচ্ছেন।