সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“প্রত্যেক দিনই তোমরা একে অন্যকে উৎসাহ দাও”

“প্রত্যেক দিনই তোমরা একে অন্যকে উৎসাহ দাও”

“লোকেদের উৎসাহ দেবার জন্য যদি কোন কথা থাকে তবে বলুন।” —প্রেরিত ১৩:১৫, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

গান সংখ্যা: ৫২, ২২

১, ২. কেন অন্যদের উৎসাহিত করা গুরুত্বপূর্ণ?

 ক্রিস্টিনা নামে ১৮ বছর বয়সি এক মেয়ে বলে: “আমার বাবা-মা বলতে গেলে কখনোই আমাকে উৎসাহিত করেন না, তবে তারা আমার সমালোচনা করতে ছাড়েন না। তাদের কথাবার্তা আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। তারা বলেন, আমি বাচ্চাদের মতো আচরণ করি, আমি কখনোই কিছু শিখতে পারব না আর আমি মোটা। তাই আমি প্রায়ই কাঁদি আর তাদের সঙ্গে কথা বলতে আমার ভালো লাগে না। নিজেকে আমার অযোগ্য বলে মনে হয়।” [১] অন্যেরা যদি আমাদের উৎসাহিত না করে, তা হলে আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে!

অন্যদিকে, আমরা যখন অন্যদের উৎসাহিত করি, তখন তাদের কতটা সাহায্য করতে পারি, সেই বিষয়ে একটু চিন্তা করুন। রুবেন বলেন: “বহু বছর ধরে আমি অযোগ্যতার অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করেছি। কিন্তু একবার, আমি একজন প্রাচীনের সঙ্গে প্রচার করছিলাম আর তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, আমার মনটা খারাপ। আমি যখন নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছিলাম, তখন তিনি সমবেদনা দেখিয়ে তা শুনেছিলেন। তারপর, তিনি আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, আমি কোন ভালো বিষয়গুলো সম্পাদন করছি। এ ছাড়া, তিনি আমাকে যিশুর এই বাক্যও স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, আমরা প্রত্যেকে অনেক চড়াই পাখির চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আমি প্রায়ই সেই শাস্ত্রপদ স্মরণ করি আর তা এখনও আমার হৃদয়কে স্পর্শ করে। সেই প্রাচীনের কথা আমার মধ্যে বিরাট পরিবর্তন এনে দিয়েছে।”—মথি ১০:৩১.

৩. (ক) অন্যদের উৎসাহিত করার বিষয়ে প্রেরিত পৌল কী বলেছিলেন? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?

বাইবেল বলে, আমাদের নিয়মিতভাবে একে অন্যকে উৎসাহিত করতে হবে। প্রেরিত পৌল ইব্রীয় খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লিখেছিলেন: “ভাইয়েরা, সাবধান! তোমাদের মধ্যে কারও মন যেন মন্দ ও অবিশ্বাসী না হয়। এই রকম মন জীবন্ত ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। এর চেয়ে . . . প্রত্যেক দিনই তোমরা একে অন্যকে উৎসাহ দাও।” কেন তা দিতে হবে, সেই বিষয়ে পৌল এভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “যাতে তোমাদের কারও মন পাপের ছলনায় পড়ে কঠিন না হয়।” (ইব্রীয় ৩:১২, ১৩, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) কেউ যখন আপনাকে উৎসাহিত করেছিল, তখন আপনার কতটা ভালো লেগেছিল, সেই বিষয়ে একটু মনে করে দেখুন। তাহলে, কোন কারণগুলোর জন্য আমাদের ভাই-বোনদেরকে উৎসাহিত করতে হবে? যিহোবা, যিশু ও পৌল যেভাবে অন্যদের উৎসাহিত করেছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আর আমরা কোন কোন উপায়ে একে অন্যকে উৎসাহিত করতে পারি? আসুন, আমরা এই প্রশ্নগুলো আলোচনা করি।

আমাদের সকলেরই উৎসাহ প্রয়োজন

৪. কাদের উৎসাহ প্রয়োজন আর কেন বর্তমানে অধিকাংশ লোক অন্যদের উৎসাহিত করে না?

আমাদের সকলেরই উৎসাহ প্রয়োজন। আর বিশেষ করে বাবা-মায়েদেরকে তাদের সন্তানদের উৎসাহিত করতে হবে। টিমোথি ইভান্স নামে একজন শিক্ষক বলেছিলেন, সন্তানদের “উৎসাহ প্রয়োজন, ঠিক যেমন চারাগাছের জন্য জল প্রয়োজন।” তিনি আরও বলেন: “উৎসাহ পেলে, একজন সন্তান নিজেকে সার্থক ও প্রশংসার যোগ্য বলে মনে করে।” তবে আমরা যেহেতু “শেষ কালে” বাস করছি, তাই অধিকাংশ লোক স্বার্থপর আর একে অন্যের প্রতি তাদের সামান্যই ‘স্নেহ’ রয়েছে। (২ তীম. ৩:১-৫) কোনো কোনো বাবা-মা তাদের সন্তানদের উৎসাহিত করেন না কারণ তারা নিজেরা কখনো তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে উৎসাহ পাননি। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদেরও উৎসাহ প্রয়োজন, তবে প্রায় সময়ই তারা সেটা লাভ করে না। যেমন, অনেকেই এইরকম অভিযোগ করে থাকে, তাদের কাজের জন্য তাদের কখনোই প্রশংসা করা হয় না।

৫. কীভাবে আমরা অন্যদের উৎসাহিত করতে পারি?

অন্যেরা যখন কোনো ভালো কাজ করে, তখন সেটার জন্য প্রশংসা করার মাধ্যমে আমরা তাদের উৎসাহিত করতে পারি। এ ছাড়া, তাদের মধ্যে যে-ভালো গুণগুলো রয়েছে, সেই বিষয়ে বলার মাধ্যমে এবং তারা যখন দুঃখিত বা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে, তখন তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার মাধ্যমে আমরা তাদের উৎসাহিত করতে পারি। (১ থিষল. ৫:১৪) যেহেতু আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিতভাবে দেখা হয়, তাই তাদেরকে উৎসাহজনক কিছু বলার অনেক সুযোগ আমরা পাই। (পড়ুন, উপদেশক ৪:৯, ১০.) তাই, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘কেন আমি অন্যদের সম্মান করি ও ভালোবাসি, সেটা কি আমি তাদের বলি? যখনই সম্ভব হয়, তখনই কি তা বলি?’ বাইবেলের এই কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করুন: “যথাকালে কথিত বাক্য কেমন উত্তম।”—হিতো. ১৫:২৩.

৬. কেন শয়তান ঈশ্বরের লোকেদের নিরুৎসাহিত করতে চায়? আর সে কীভাবে তা করার চেষ্টা করে, সেটার একটা উদাহরণ দিন।

হিতোপদেশ ২৪:১০ পদ বলে: “সঙ্কটের দিনে যদি অবসন্ন হও, তবে তোমার শক্তি সঙ্কুচিত।” শয়তান জানে, সে যদি আমাদের অবসন্ন বা নিরুৎসাহিত করে ফেলতে পারে, তা হলে সে যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দুর্বল করে ফেলতে পারবে। সে চরম দুর্দশা নিয়ে আসার মাধ্যমে ইয়োবকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শয়তানের সেই নিষ্ঠুর পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল। ইয়োব যিহোবার প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেছিলেন। (ইয়োব ২:৩; ২২:৩; ২৭:৫) আমরাও শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি এবং তাকে ব্যর্থ বলে প্রমাণ করতে পারি। আমরা যদি আমাদের পরিবারের সদস্যদের ও মণ্ডলীতে আমাদের ভাই-বোনদের সবসময় উৎসাহিত করি, তা হলে আমরা একে অন্যকে আনন্দিত করতে এবং যিহোবার নিকটবর্তী থাকতে সাহায্য করতে পারি।

আমরা যে-উদাহরণগুলো অনুকরণ করতে পারি

৭, ৮. (ক) কীভাবে যিহোবা লোকেদের উৎসাহিত করেছেন? (খ) কীভাবে বাবা-মায়েরা যিহোবার উদাহরণ অনুকরণ করতে পারে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

যিহোবা লোকেদের উৎসাহিত করেন। গীতরচক লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী, তিনি চূর্ণমনাদের পরিত্রাণ করেন।” (গীত. ৩৪:১৮) ভাববাদী যিরমিয় যখন ভয় পেয়েছিলেন ও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন, তখন যিহোবা তাকে সাহায্য করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। (যির. ১:৬-১০) আর বৃদ্ধ ভাববাদী দানিয়েলকে সবল করার জন্য যিহোবা তার কাছে একজন স্বর্গদূতকে পাঠিয়েছিলেন। সেই স্বর্গদূত দানিয়েলকে “মহাপ্রীতি-পাত্র” বলে সম্বোধন করেছিলেন। (দানি. ১০:৮, ১১, ১৮, ১৯) আপনিও কি একইভাবে মণ্ডলীতে আপনার ভাই-বোনদের, অগ্রগামীদের ও সেইসঙ্গে আগের মতো আর কাজ করতে পারেন না এমন বয়স্ক ব্যক্তিদের উৎসাহিত করতে পারেন?

যিহোবা এবং যিশু যদিও বহু বছর ধরে একসঙ্গে ছিলেন, কিন্তু যিহোবা জানতেন, যিশু পৃথিবীতে থাকার সময় তাঁর কাছ থেকে যিশুর উৎসাহ প্রয়োজন হবে। যিশু প্রচার কাজ শুরু করার সময় এবং পৃথিবীতে থাকাকালীন শেষ বছরে, তাঁর পিতাকে স্বর্গ থেকে কথা বলতে শুনেছিলেন। যিহোবা দু-বার বলেছিলেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইঁহাতেই আমি প্রীত।” (মথি ৩:১৭; ১৭:৫) যিশু যখন তাঁর পিতাকে বলতে শুনেছিলেন, তিনি তাঁকে ভালোবাসেন ও তাঁকে নিয়ে তিনি গর্বিত, তখন নিশ্চিতভাবেই যিশু অনেক উৎসাহিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, মৃত্যুর আগের রাতে যিশু অত্যন্ত উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। যিহোবা তখন তাঁকে সবল করার জন্য একজন স্বর্গদূত পাঠিয়েছিলেন ও সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। (লূক ২২:৪৩) বাবা-মায়েরা, আপনাদের সন্তানদের নিয়মিতভাবে উৎসাহিত করার মাধ্যমে আপনারা যিহোবার উদাহরণ অনুকরণ করতে পারেন। তারা যখন কোনো ভালো কাজ করে, তখন তাদের প্রশংসা করুন। আর স্কুলে তারা যখন বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়, তখন তাদের সবল করার জন্য ও সেই পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য করুন।

৯. যিশু যেভাবে তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

যিশুও উত্তম উদাহরণস্থাপন করেছিলেন, যা আমরা অনুকরণ করতে পারি। মৃত্যুর আগের রাতে, যিশু তাঁর প্রেরিতদের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন এবং নম্র হওয়া যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিষয়ে তাদের বলেছিলেন। কিন্তু, তারা গর্বিত হয়ে উঠেছিলেন ও তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ সেই বিষয়টা নিয়ে তর্কবিতর্ক করেছিলেন এবং পিতর বড়াই করে বলেছিলেন, তিনি কখনো যিশুকে পরিত্যাগ করবেন না। (লূক ২২:২৪, ৩৩, ৩৪) তা সত্ত্বেও, যিশু তাদের ভুলত্রুটির প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেননি। এর পরিবর্তে, তাঁর প্রতি অনুগত থেকেছেন বলে তিনি তাদের প্রশংসা করেছিলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তারা তাঁর চেয়েও বড়ো বড়ো কাজ করবে এবং তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, যিহোবা তাদের ভালোবাসেন। (লূক ২২:২৮; যোহন ১৪:১২; ১৬:২৭) আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমি কি যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করি এবং অন্যদের ভুলত্রুটির প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে তাদের ভালো গুণগুলোর জন্য প্রশংসা করি?’

১০, ১১. কীভাবে পৌল তার ভাই-বোনদের উৎসাহিত করেছিলেন আর তিনি কী করার জন্য ইচ্ছুক ছিলেন?

১০ প্রেরিত পৌল প্রায়ই তার ভাইদের সম্বন্ধে ভালো মন্তব্য করেছিলেন। তাদের মধ্যে কারো কারো সঙ্গে তিনি বহু বছর ধরে ভ্রমণ কাজ করেছিলেন ও তাদের সম্বন্ধে খুব ভালোভাবে জানতেন। কিন্তু তিনি তাদের ভুলত্রুটি সম্বন্ধে লেখেননি। এর পরিবর্তে, তিনি তাদের প্রশংসা করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পৌল তীমথিয়কে “প্রভুতে আমার প্রিয় ও বিশ্বস্ত বৎস” বলে উল্লেখ করেছিলেন আর তার এই আস্থা ছিল, তীমথিয় ভালোভাবে অন্যদের যত্ন নিতে পারবেন। (১ করি. ৪:১৭; ফিলি. ২:১৯, ২০) এ ছাড়া, পৌল তীতের প্রশংসা করে করিন্থের খ্রিস্টানদের বলেছিলেন, তিনি “আমার সহভাগী ও তোমাদের পক্ষে আমার সহকারী।” (২ করি. ৮:২৩) তীমথিয় ও তীত যখন জানতে পেরেছিলেন, পৌল তাদের সম্বন্ধে কেমন চিন্তা করেন, তখন তারা নিশ্চয়ই উৎসাহিত হয়েছিলেন!

১১ পৌল ও তার সঙ্গী বার্ণবা, ভাই-বোনদের উৎসাহিত করার জন্য নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তারা দু-জনেই জানতেন, লুস্ত্রা নগরের অনেক লোক তাদের হত্যা করতে চায়। তা সত্ত্বেও, লুস্ত্রার নতুন শিষ্যদের উৎসাহিত করার জন্য ও যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে তাদের সাহায্য করার জন্য তারা সেখানে গিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৪:১৯-২২) পরে, ইফিষে পৌল এক ক্রুদ্ধ জনতার মুখোমুখি হয়েছিলেন, কিন্তু তারপরও তিনি তার ভাই-বোনদের উৎসাহিত করার জন্য যথেষ্ট সময় ধরে সেখানে থেকেছিলেন। প্রেরিত ২০:১, ২ পদ বলে: “পৌল শিষ্যগণকে ডাকিয়া পাঠাইলেন, এবং আশ্বাস দিলেন, ও মঙ্গলবাদপূর্ব্বক বিদায় গ্রহণ করিয়া মাকিদনিয়াতে যাইবার নিমিত্ত প্রস্থান করিলেন। পরে সেই অঞ্চল দিয়া গমন করিতে করিতে অনেক কথা দ্বারা শিষ্যদিগকে আশ্বাস দিয়া গ্রীস দেশে উপস্থিত হইলেন।”

একে অন্যকে উৎসাহিত করুন

১২. কেন সভাতে যাওয়া আমাদের জন্য উপকারজনক?

১২ যিহোবা আমাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয়টা চান। তাই, তিনি আমাদের নিয়মিতভাবে মিলিত হতে বলেন। সভাতে আমরা তাঁর সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করি ও একে অন্যকে উৎসাহিত করি। (১ করি. ১৪:৩১; পড়ুন, ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.) প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখিত ক্রিস্টিনা বলে: “সভাতে গিয়ে যে-বিষয়টা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তা হল, আমি সেখানে অন্যদের কাছ থেকে ভালোবাসা ও উৎসাহ পাই। আমি যখন কিংডম হলে যাই, তখন মাঝে মাঝে আমার মন খুব খারাপ থাকে। কিন্তু বোনেরা তখন আমার দিকে এগিয়ে আসেন, আমাকে জড়িয়ে ধরেন আর বলেন, আমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। তারা বলেন, তারা আমাকে ভালোবাসেন ও আমার আধ্যাত্মিক উন্নতি দেখে তারা খুব খুশি। তাদের উৎসাহ পেয়ে আমার মন অনেকটাই ভালো হয়ে যায়!” আমাদের প্রত্যেকের জন্য অন্যদের উৎসাহিত করার বিষয়টা মনে রাখা কতই-না গুরুত্বপূর্ণ!—রোমীয় ১:১১, ১২.

১৩. এমনকী যারা বহু বছর ধরে যিহোবার সেবা করছে, তাদেরও কেন উৎসাহ প্রয়োজন?

১৩ এমনকী যারা বহু বছর ধরে যিহোবার সেবা করছে, তাদেরও উৎসাহ প্রয়োজন। যিহোশূয়ের কথা চিন্তা করুন। ইস্রায়েলীয়রা যখন প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল, তখন তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যিহোবা যিহোশূয়কে মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু, যিহোবা মোশিকে বলেছিলেন, যেন তিনি যিহোশূয়কে উৎসাহিত করেন, যদিও যিহোশূয় বহু বছর ধরে যিহোবার সেবা করে যাচ্ছিলেন। যিহোবা বলেছিলেন: “তুমি যিহোশূয়কে আজ্ঞা কর, তাহাকে আশ্বাস দেও, এবং তাহাকে বীর্য্যবান্‌ কর, কেননা সে এই লোকদের অগ্রগামী হইয়া পার হইবে, আর যে দেশ তুমি দেখিবে, সেই দেশ সে তাহাদিগকে অধিকার করাইবে।” (দ্বিতীয়. ৩:২৭, ২৮) যিহোশূয়ের আশ্বাস বা উৎসাহ প্রয়োজন ছিল কারণ পরবর্তী সময়ে সেই জাতিকে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছিল আর সেগুলোর মধ্যে অন্ততপক্ষে একটা যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়েছিল। (যিহো. ৭:১-৯) বর্তমানে, আমরা প্রাচীনদের ও সীমা অধ্যক্ষদের উৎসাহিত করতে পারি, যারা ঈশ্বরের লোকেদের যত্ন নেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন। (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:১২, ১৩.) একজন সীমা অধ্যক্ষ বলেছিলেন: “মাঝে মাঝে ভাই-বোনেরা আমাদের পরিদর্শন কতটা উপভোগ করেছে, সেই বিষয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি লেখে। আমরা এই চিঠিগুলো রেখে দিই আর যখন আমাদের মন খারাপ হয়, তখন সেগুলো খুলে পড়ি। এগুলো সত্যিই আমাদের জন্য উৎসাহের এক উৎস।”

আমরা যখন আমাদের সন্তানদের আন্তরিকভাবে উৎসাহিত করি, তখন আমরা তাদেরকে যিহোবার নিকটবর্তী হতে সাহায্য করি (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, অন্যদের পরামর্শ দেওয়ার সময় তাদের প্রশংসা করা ভালো?

১৪ একবার, প্রেরিত পৌলকে করিন্থীয়দের উদ্দেশে পরামর্শ দিতে হয়েছিল। তারা যখন সেই পরামর্শ কাজে লাগিয়েছিল, তখন পৌল তাদের প্রশংসা করেছিলেন। (২ করি. ৭:৮-১১) নিশ্চিতভাবেই, তার কথাগুলো তাদেরকে যা সঠিক, তা করে চলার জন্য উৎসাহিত করেছিল। বর্তমানে, প্রাচীনরা ও বাবা-মায়েরা পৌলের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারেন। আন্দ্রেয়াস, যার দু-জন সন্তান রয়েছে, তিনি বলেন: “উৎসাহ সন্তানদের আধ্যাত্মিকভাবে ও আবেগগতভাবে উন্নতি করতে সাহায্য করে। আপনি উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের হৃদয়ে পরামর্শ গেঁথে দিতে পারেন। আমাদের সন্তানরা যদিও জানে কোন বিষয়টা সঠিক, কিন্তু আমরা সবসময় তাদের উৎসাহ দিই বলে সঠিক বিষয়টা করা তাদের জীবনের পথ হয়ে ওঠে।”

অন্যদের উৎসাহিত করার জন্য কোন বিষয়গুলো আপনাকে সাহায্য করতে পারে?

১৫. অন্যদের উৎসাহিত করার একটা উপায় কী?

১৫ আপনার ভাই-বোনদের প্রচেষ্টা ও ভালো গুণগুলোকে আপনি কতটা মূল্যবান বলে গণ্য করেন, সেটা তাদের বলুন। (২ বংশা. ১৬:৯; ইয়োব ১:৮) আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা যিহোবা ও যিশুকে অনুকরণ করি। তাঁরা আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন, এমনকী তাঁদের জন্য আমরা যতটা করতে চাই, ততটা করতে না পারলেও। (পড়ুন, লূক ২১:১-৪; ২ করিন্থীয় ৮:১২.) উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের প্রিয় বয়স্ক ভাই-বোনেরা নিয়মিতভাবে সভাতে আসার জন্য ও প্রচারে যাওয়ার জন্য কতটা প্রচেষ্টা করেন, তা আমরা জানি। তারা যা-কিছু করেন, সেটার জন্য আমরা কি তাদের উৎসাহ দিই ও প্রশংসা করি?

১৬. কখন আমরা অন্যদের উৎসাহিত করতে পারি?

১৬ যখনই সম্ভব হয়, অন্যদের উৎসাহিত করুন। যখনই আপনি কোনো ব্যক্তির মধ্যে ভালো কিছু লক্ষ করেন, তখনই তার প্রশংসা করুন। পৌল ও বার্ণবা যখন পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়াতে ছিলেন, তখন সমাজগৃহের অধ্যক্ষরা তাদের বলেছিলেন: “ভাইয়েরা, লোকেদের উৎসাহ দেবার জন্য যদি কোন কথা থাকে তবে বলুন।” পৌল লোকেদের উৎসাহিত করার জন্য সেই সুযোগটার সদ্‌ব্যবহার করেছিলেন। (প্রেরিত ১৩:১৩-১৬, ৪২-৪৪) আমরা যদি অন্যদের উৎসাহিত করি, তা হলে তারাও সম্ভবত আমাদের উৎসাহিত করবে।—লূক ৬:৩৮.

১৭. অন্যদের প্রশংসা করার সবচেয়ে ভালো উপায় কী?

১৭ সুনির্দিষ্টভাবে প্রশংসা করুন। যিশু যখন থুয়াতীরার খ্রিস্টানদের প্রশংসা করেছিলেন, তখন তাদের কোন বিষয়টা ভালো ছিল, তা তিনি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ২:১৮, ১৯.) কীভাবে আমরা তাঁকে অনুকরণ করতে পারি? কোনো একক মা তার কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও সন্তানদের যেভাবে মানুষ করছেন, সেটার জন্য আমরা হয়তো তার প্রশংসা করতে পারি। কিংবা আপনি যদি একজন বাবা অথবা মা হয়ে থাকেন, তা হলে আপনার সন্তানরা যিহোবার সেবা করে চলার জন্য প্রচেষ্টা করছে বলে, আপনি তাদের প্রশংসা করতে পারেন। তাদের কোন ভালো বিষয়গুলো আপনি লক্ষ করেছেন, সেগুলো তাদের বলুন। আমরা যদি সুনির্দিষ্টভাবে অন্যদের উৎসাহিত করি, তা হলে তারা বুঝতে পারবে, আমরা যা বলি, সেটা আমরা সত্যিই উপলব্ধি করি।

১৮, ১৯. কীভাবে আমরা একে অন্যকে যিহোবার নিকটবর্তী থাকতে সাহায্য করতে পারি?

১৮ যিহোবা মোশিকে বলেছিলেন যেন তিনি যিহোশূয়কে উৎসাহিত ও সবল করেন। অবশ্য, বর্তমানে যিহোবা আমাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে কাউকে উৎসাহিত করতে বলেন না। কিন্তু, আমরা যখন অন্যদের উৎসাহিত করার জন্য প্রচেষ্টা করি, তখন তিনি তা লক্ষ করে খুশি হন। (হিতো. ১৯:১৭; ইব্রীয় ১২:১২) উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের মণ্ডলীতে কোনো ভাই যখন জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতা দেন, তখন তার বক্তৃতার কোন বিষয়টা আমাদের ভালো লেগেছে, তা আমরা তাকে বলতে পারি। তিনি যা বলেছেন, সেটা হয়তো আমাদের কোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে অথবা কোনো শাস্ত্রপদের অর্থ ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে। একজন বোন এমন একজন ভাইয়ের কাছে চিঠি লিখেছিলেন, যিনি তার মণ্ডলীতে একটা বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “যদিও আমরা মাত্র কয়েক মিনিট কথা বলেছিলাম, কিন্তু আপনি আমার দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় দেখতে পেয়েছিলেন আর আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন ও উৎসাহিত করেছিলেন। আমি আপনাকে জানাতে চাই, আপনি যখন প্ল্যাটফর্ম থেকে ও সরাসরি আমার সঙ্গে সদয়ভাবে কথা বলেছিলেন, তখন আমার মনে হয়েছে, সেটা যিহোবার কাছ থেকে এক দান।”

১৯ আমরা একে অন্যকে যিহোবার নিকটবর্তী থাকতে সাহায্য করতে পারব, যদি আমরা পৌলের এই পরামর্শ অনুসরণ করি: “যেমন তোমরা করিয়াও থাক, তেমনি তোমরা পরস্পরকে আশ্বাস দেও, এবং এক জন অন্যকে গাঁথিয়া তুল।” (১ থিষল. ৫:১১) আমরা যদি “প্রত্যেক দিনই . . . একে অন্যকে উৎসাহ” দিই, তা হলে আমরা যিহোবাকে অনেক খুশি করব!

^ [১] (১ অনুচ্ছেদ) কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।