সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কেন আমাদের ‘জাগিয়া থাকিতে’ হবে?

কেন আমাদের ‘জাগিয়া থাকিতে’ হবে?

“তোমাদের প্রভু কোন্‌ দিন আসিবেন, তাহা তোমরা জান না।”—মথি ২৪:৪২.

গান সংখ্যা: ১৬, ৫৪

১. কেন সময় সম্বন্ধে এবং আমাদের আশেপাশে যা হচ্ছে, সেই সম্বন্ধে সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ, তা উদাহরণের সাহায্যে তুলে ধরুন। (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

 সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে। সভাপতি মঞ্চে উঠে আসেন এবং সবাইকে অভ্যর্থনা জানান। এখন যন্ত্রসংগীত শুরু হতে যাচ্ছে। শ্রোতারা বুঝতে পারে, তাদের আসনে বসার সময় হয়ে গিয়েছে। তারা অপূর্ব যন্ত্রসংগীত শুনছে এবং যে-বক্তৃতাগুলো তুলে ধরা হবে, সেগুলো শোনার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু, শ্রোতাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো সভাপতির প্রতি অথবা যে-যন্ত্রসংগীত বাজানো হচ্ছে, সেটার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে না। তাই তারা এটা বুঝতে পারছে না, সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে। তারা এখনও এদিক-ওদিক হাঁটাচলা করছে অথবা তাদের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলছে। এই পরিস্থিতি তুলে ধরে যে, আমরা যদি সময় সম্বন্ধে অথবা আমাদের আশেপাশে যা হচ্ছে, সেই সম্বন্ধে সতর্ক না থাকি, তা হলে কী ঘটতে পারে। এটা আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয় কারণ খুব শীঘ্র এর চেয়েও বড়ো একটা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে আর সেই ঘটনার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সেটা কী?

২. কেন যিশু তাঁর শিষ্যদের ‘জাগিয়া থাকিতে’ বলেছিলেন?

যিশু খ্রিস্ট তাঁর শিষ্যদের সাবধান করেছিলেন, তাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং “যুগান্তের” জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি তাদের বলেছিলেন: “সাবধান, তোমরা জাগিয়া থাকিও ও প্রার্থনা করিও; কেননা সে সময় কবে হইবে, তাহা জান না।” এরপর, তিনি আরও কয়েক বার তাদের বলেছিলেন: “জাগিয়া থাকিও।” (মথি ২৪:৩; পড়ুন, মার্ক ১৩:৩২-৩৭.) এ ছাড়া, যিশু যে এই বিষয়ে তাঁর শিষ্যদের সাবধান করেছিলেন, তা মথির সুসমাচারেও তুলে ধরা হয়েছে। যিশু তাদের বলেছিলেন: “অতএব জাগিয়া থাক, কেননা তোমাদের প্রভু কোন্‌ দিন আসিবেন, তাহা তোমরা জান না।” পরে তিনি আবার তাদের সাবধান করেছিলেন: ‘তোমরা প্রস্তুত থাক, কেননা যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্ত্র আসিবেন।’ এরপর, তিনি আবারও বলেছিলেন: “অতএব জাগিয়া থাক; কেননা তোমরা সেই দিন বা সেই দণ্ড জান না।”—মথি ২৪:৪২-৪৪; ২৫:১৩.

৩. কেন আমরা যিশুর সাবধানবাণীর প্রতি মনোযোগ দিই?

যিহোবার সাক্ষিরা যিশুর সাবধানবাণীর প্রতি মনোযোগ দেয়। আমরা জানি, এখন আমরা ‘শেষকালে’ বাস করছি এবং খুব শীঘ্র “মহাক্লেশ” শুরু হবে! (দানি. ১২:৪; মথি ২৪:২১) যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী, যিহোবার লোকেরা সারা পৃথিবীতে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করছে। একইসময়ে, আমরা অনেক জায়গায় যুদ্ধ, রোগব্যাধি, ভূমিকম্প ও দুর্ভিক্ষ দেখতে পাচ্ছি। এ ছাড়া, বিভিন্ন ধর্মীয় বিভ্রান্তি রয়েছে আর আগের চেয়ে আরও বেশি অপরাধ ও দৌরাত্ম্যমূলক কাজ হচ্ছে। (মথি ২৪:৭, ১১, ১২, ১৪; লূক ২১:১১) আমরা এখন সেই সময়ের জন্য উৎসুকভাবে অপেক্ষা করে আছি, যখন যিশু আসবেন এবং তাঁর পিতার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন।—মার্ক ১৩:২৬, ২৭.

সেই দিন এগিয়ে আসছে!

৪. (ক) কেন আমরা বিশ্বাস করতে পারি, আরমাগিদোন কখন শুরু হবে, সেই বিষয়ে যিশু এখন জানেন? (খ) মহাক্লেশ কখন শুরু হবে, সেই বিষয়ে যদিও আমরা জানি না, কিন্তু আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?

আমরা যখন কোনো সম্মেলনে যোগ দিই, তখন প্রতিটা অধিবেশন কখন শুরু হবে, তা আমরা আগে থেকে জানি। কিন্তু, মহাক্লেশ ঠিক কখন শুরু হবে, তা জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। পৃথিবীতে থাকার সময় যিশু বলেছিলেন: “সেই দিনের ও সেই দণ্ডের তত্ত্ব কেহই জানে না, স্বর্গে দূতগণও জানেন না, পুত্ত্রও জানেন না, কেবল পিতা জানেন।” (মথি ২৪:৩৬) অবশ্য, যিশুই যেহেতু আরমাগিদোন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন, তাই সেই যুদ্ধ কখন শুরু হবে তা খুব সম্ভবত যিশু এখন জানেন। (প্রকা. ১৯:১১-১৬) কিন্তু, শেষ কখন আসবে, সেই দিনক্ষণ আমরা এখনও জানি না। তাই আমাদের জন্য জেগে থাকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মহাক্লেশ ঠিক কখন শুরু হবে, সেই বিষয়ে যিহোবা ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর সেই সময়টা দিন দিন আরও এগিয়ে আসছে। তা “যথাকালে বিলম্ব করিবে না।” (পড়ুন, হবক্‌কূক ২:১-৩.) কেন আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?

৫. যিহোবার ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো যে সবসময় সঠিক সময়ে পরিপূর্ণ হয়, সেটার একটা উদাহরণ দিন।

যিহোবার ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো সবসময় সঠিক সময়ে পরিপূর্ণ হয়েছে! উদাহরণ স্বরূপ, তাঁর লোকেরা যে-দিন মিশর থেকে মুক্ত হয়েছিল, সেই দিনের বিষয়ে চিন্তা করে দেখুন। সেই দিনটা ছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৫১৩ সালের ১৪ নিশান। সেই দিন সম্বন্ধে মোশি পরে লিখেছিলেন: “সেই চারি শত ত্রিশ বৎসরের শেষে, ঐ দিনে, সদাপ্রভুর সমস্ত বাহিনী মিসর দেশ হইতে বাহির হইল।” (যাত্রা. ১২:৪০-৪২) ইস্রায়েলীয়রা যে-দিন মুক্ত হয়েছিল, সেই দিন থেকে ঠিক ৪৩০ বছর আগে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ১৯৪৩ সালের ১৪ নিশান, যিহোবা অব্রাহামের কাছে তার বংশধরদের আশীর্বাদ করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। (গালা. ৩:১৭, ১৮) এর অল্পসময় পর যিহোবা অব্রাহামকে এই কথা বলেছিলেন: “নিশ্চয় জানিও, তোমার সন্তানগণ পরদেশে প্রবাসী থাকিবে, এবং বিদেশী লোকদের দাস্যকর্ম্ম করিবে, ও লোকে তাহাদিগকে দুঃখ দিবে—চারি শত বৎসর পর্য্যন্ত।” (আদি. ১৫:১৩; প্রেরিত ৭:৬) এই ৪০০ বছর শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৯১৩ সালে, যখন ইশ্মায়েল ইস্‌হাকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে শুরু করেছিলেন। আর এই ৪০০ বছর শেষ হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৫১৩ সালে, যখন যিহোবা ইস্রায়েল জাতিকে মিশর থেকে মুক্ত করেছিলেন। (আদি. ২১:৮-১০; গালা. ৪:২২-২৯) হ্যাঁ, শত শত বছর আগেই যিহোবা তাঁর লোকেদের মুক্ত করার সঠিক সময় নির্ধারণ করে রেখেছিলেন!

৬. কেন আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা তাঁর লোকেদের রক্ষা করবেন?

যে-ইস্রায়েলীয়রা মিশর থেকে মুক্ত হয়েছিল, তাদের মধ্যে যিহোশূয় ছিলেন একজন। এর অনেক বছর পর, তিনি লোকেদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “তোমরা সমস্ত অন্তঃকরণে ও সমস্ত প্রাণে ইহা জ্ঞাত হও যে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে যত মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটীও বিফল হয় নাই; তোমাদের পক্ষে সকলই সফল হইয়াছে, তাহার একটীও বিফল হয় নাই।” (যিহো. ২৩:২, ১৪) যিহোবা তাঁর লোকেদের মহাক্লেশ থেকে উদ্ধার করার এবং নতুন জগতে অনন্তজীবন প্রদান করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। আর আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, সেই প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হবে। তাই, আমরা যদি নতুন জগতে থাকতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই জেগে থাকতে হবে।

রক্ষা পাওয়ার জন্য জেগে থাকুন

৭, ৮. (ক) প্রাচীন কালে একজন প্রহরীর কী ভূমিকা ছিল আর এটা আমাদের কী শিক্ষা দেয়? (খ) প্রহরীরা কাজ করার সময় ঘুমিয়ে গেলে কী ঘটতে পারত, সেটার একটা উদাহরণ তুলে ধরুন।

প্রাচীন কালে যে-প্রহরীরা বিভিন্ন নগর পাহারা দিত, তাদের কাছ থেকে আমরা একটা শিক্ষা লাভ করতে পারি। সেই সময়ে যিরূশালেম-সহ অনেক নগরের চারিদিকে উঁচু প্রাচীর ছিল, যাতে শত্রুরা নগরের ভিতরে ঢুকতে না পারে। কিছু প্রহরী এই প্রাচীরের উপর দাঁড়িয়ে থাকত আর সেখান থেকে তারা নগরের চারপাশ দেখতে পেত। আবার অন্য প্রহরীরা নগরদ্বারে দাঁড়িয়ে থাকত। এই ব্যক্তিদের দিন-রাত জেগে থাকতে হতো আর কোনো শত্রুকে আসতে দেখলে নগরের লোকেদের সেই বিষয়ে সতর্ক করতে হতো। (যিশা. ৬২:৬) জেগে থাকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তারা জানত এবং আশেপাশে যা ঘটত, সেই বিষয়ে তারা সতর্ক দৃষ্টি রাখত। তারা যদি সেটা না করত, তা হলে অনেক লোকের জীবন হারানোর ঝুঁকি থাকত।—যিহি. ৩৩:৬.

রোমীয়রা কীভাবে ৭০ খ্রিস্টাব্দে যিরূশালেমে ঢুকতে পেরেছিল, সেই বিষয়ে যিহুদি ইতিহাসবেত্তা জোসিফাস ব্যাখ্যা করেছিলেন। যিরূশালেমের এক অংশে পাহারা দিতে থাকা প্রহরীরা তখন ঘুমিয়ে পড়েছিল। ফল স্বরূপ, রোমীয় সৈন্যরা নগরের ভিতরে ঢুকতে পেরেছিল। তারা মন্দিরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল এবং যিরূশালেমের অন্যান্য অংশ ধ্বংস করেছিল। এটাই ছিল যিহুদি জাতির জন্য সবচেয়ে বড়ো ক্লেশের সময়, এর আগে তাদের কখনো এমন অভিজ্ঞতা হয়নি।

৯. বর্তমানে অধিকাংশ লোক কী বুঝতে পারে না?

বর্তমানে অধিকাংশ সরকার তাদের দেশের সীমান্ত পাহারা দেওয়ার জন্য সৈন্যদের নিযুক্ত করে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এই সরকারগুলো তাদের দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ এমন যেকোনো ব্যক্তি অথবা যেকোনো কিছুর ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখে। কিন্তু, তারা বুঝতে পারে না, স্বর্গে খ্রিস্ট যিশুর দ্বারা শাসিত আরও ক্ষমতাবান এক সরকার রয়েছে। খুব শীঘ্র সেই সরকার পৃথিবীর সমস্ত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। (যিশা. ৯:৬, ৭; ৫৬:১০; দানি. ২:৪৪) আমরা সেই দিন আসার জন্য উৎসুকভাবে অপেক্ষা করি এবং সেই দিনের জন্য প্রস্তুত থাকতে চাই। তাই, আমরা বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর প্রতি মনোযোগ দিই এবং বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করি।—গীত. ১৩০:৬.

বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বেন না

১০, ১১. (ক) আমাদের কোন বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং কেন? (খ) শয়তান যে বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণী উপেক্ষা করার জন্য লোকেদের প্ররোচিত করে, তা আপনি কীভাবে বুঝতে পারেন?

১০ এমন একজন প্রহরীর কথা চিন্তা করুন, যিনি সারারাত ধরে জেগে আছেন। পাহারা দেওয়ার সময়, শেষ কয়েকটা ঘণ্টা তার পক্ষে জেগে থাকা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে কারণ তিনি খুব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন। একইভাবে, আমরা এই জগতের শেষকালে বাস করছি। আর শেষ যতই এগিয়ে আসবে, আমাদের জন্য জেগে থাকা ততই কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা যদি জেগে না থাকি, তা হলে সেটা কত দুঃখজনকই-না হবে! আসুন আমরা এখন এমন তিনটে বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, যেগুলো জেগে থাকার ক্ষেত্রে আমাদের বাধা দিতে পারে।

১১ দিয়াবল লোকেদের প্রতারিত করে। সে হল “এ জগতের অধিপতি।” মৃত্যুর অল্পসময় আগে যিশু তাঁর শিষ্যদের তিন বার এই বিষয়ে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। (যোহন ১২:৩১; ১৪:৩০; ১৬:১১) দিয়াবল মিথ্যা ধর্ম ব্যবহার করে লোকেদের প্রতারিত করে। তাই, বর্তমানে অনেক লোক বাইবেলের এমন ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো উপেক্ষা করে থাকে, যেগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরে, এই জগতের শেষ খুব নিকটে। (সফ. ১:১৪) স্পষ্টতই, শয়তান “অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে।” (২ করি. ৪:৩-৬) ফল স্বরূপ, আমরা যখন লোকেদের কাছে এটা বলার চেষ্টা করি, এই জগতের শেষ নিকটে এবং খ্রিস্ট এখন শাসন করছেন, তখন তাদের মধ্যে অনেকে বেশি আগ্রহ দেখায় না। তারা প্রায়ই বলে থাকে, “আমি এই ব্যাপারে আগ্রহী নই।”

১২. কেন আমরা দিয়াবলের দ্বারা নিজেদের প্রতারিত হতে দেব না?

১২ অনেকে যদিও বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোর বিষয়ে আগ্রহ দেখায় না, কিন্তু তাদের মনোভাবের কারণে আমরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ব না। জেগে থাকা কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা আমরা জানি। পৌল তার ভাইদের উদ্দেশে বলেছিলেন: “তোমরা আপনারা বিলক্ষণ জান, রাত্রিকালে যেমন চোর, তেমনি প্রভুর দিন আসিতেছে।” (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:১-৬.) যিশু আমাদের সাবধান করেছিলেন: “প্রস্তুত থাক; কেননা যে দণ্ড মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্র আসিবেন।” (লূক ১২:৩৯, ৪০) শীঘ্রই, শয়তান লোকেদের এইরকম চিন্তা করতে প্ররোচিত করবে, জগতে “শান্তি ও অভয়” রয়েছে আর এভাবে সে তাদের প্রতারিত করবে। তারপর, যিহোবার দিন হঠাৎ উপস্থিত হবে আর তখন তারা হতবাক হয়ে যাবে। আমাদের বিষয়ে কী বলা যায়? আমরা যদি সেই দিনের জন্য প্রস্তুত থাকতে চাই এবং অন্য সকলের মতো প্রতারিত হতে না চাই, তা হলে আমাদের ‘জাগিয়া থাকিতে ও মিতাচারী হইতে’ হবে। তাই, আমাদের প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য পড়তে হবে এবং যিহোবা আমাদের যা বলেন, তা নিয়ে ধ্যান করতে হবে।

১৩. কীভাবে জগতের আত্মা লোকেদের উপর প্রভাব ফেলছে আর কীভাবে আমরা এই বিপদজনক প্রভাব এড়িয়ে চলতে পারি?

১৩ জগতের আত্মা লোকেদের চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলে। বর্তমানে অনেকে মনে করে, ঈশ্বর সম্বন্ধে তাদের জানার প্রয়োজন নেই। (মথি ৫:৩) এর পরিবর্তে, এই জগৎ দিতে চায় এমন বিষয়গুলো পাওয়ার জন্য তারা নিজেদের বেশিরভাগ সময় ও শক্তি ব্যবহার করে থাকে। (১ যোহন ২:১৬) এ ছাড়া, আগের চেয়ে এখন আরও বেশি বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। এসব বিনোদন লোকেদের আকৃষ্ট করে এবং তাদেরকে ভোগবিলাসিতা ভালোবাসতে ও নিজেদের যেকোনো আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে উৎসাহিত করে। (২ তীম. ৩:৪) এগুলো লোকেদেরকে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে বিক্ষিপ্ত করে আর তারা ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিষয়ে চিন্তা করে না। তাই, পৌল খ্রিস্টানদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, নিজেদের অভিলাষ চরিতার্থ করার প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত না করে তাদেরকে ‘নিদ্রা হইতে জাগিতে’ হবে।—রোমীয় ১৩:১১-১৪.

১৪. লূক ২১:৩৪, ৩৫ পদে কোন সাবধানবাণী রয়েছে?

১৪ আমরা চাই, যেন জগতের আত্মা নয় বরং ঈশ্বরের আত্মা আমাদের চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলে। সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে, সেই বিষয়ে যিহোবা তাঁর আত্মার মাধ্যমে আমাদের স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করেছেন। (১ করি. ২:১২) [১] কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এমনকী জীবনের সাধারণ বিষয়গুলোও আমাদেরকে যিহোবার সেবা থেকে বিক্ষিপ্ত করতে পারে। (পড়ুন, লূক ২১:৩৪, ৩৫.) এ ছাড়া, আমরা এই জগতের শেষকালে বাস করছি, তা বিশ্বাস করি বলে অন্যেরা হয়তো আমাদের উপহাস করে। (২ পিতর ৩:৩-৭) তবে, তাদের কারণে আমরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ব না। শেষ যে নিকটে, সেটার স্পষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। আমরা যদি চাই, ঈশ্বরের আত্মা আমাদের উপর প্রভাব ফেলুক, তা হলে আমাদের নিয়মিতভাবে ভাই-বোনদের সঙ্গে সভাতে যোগ দিতে হবে।

আপনি কি ‘জাগিয়া থাকিবার’ জন্য যথাসাধ্য করছেন? (১১-১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫. পিতর, যাকোব ও যোহনের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল আর আমাদের ক্ষেত্রেও হয়তো কী ঘটতে পারে?

১৫ নিজেদের দুর্বলতার কারণে আমাদের জন্য সতর্ক থাকা কঠিন হয়ে ওঠে। যিশু বুঝতে পেরেছিলেন, মানুষেরা অসিদ্ধ ও তাদের দুর্বলতা রয়েছে। তিনি মারা যাওয়ার আগের রাতে যা ঘটেছিল, তা চিন্তা করুন। যদিও যিশু সিদ্ধ ছিলেন কিন্তু তিনি জানতেন, বিশ্বস্ত থাকার জন্য তাঁকে তাঁর পিতার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করতে হবে। যিশু প্রার্থনা করার সময় প্রেরিত পিতর, যাকোব ও যোহনকে জেগে থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু প্রেরিতরা বুঝতে পারেননি, তাদের জন্য জেগে থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা ক্লান্ত ছিলেন এবং ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। যিশুও ক্লান্ত ছিলেন, তবে তিনি জেগে ছিলেন ও তাঁর পিতার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। প্রেরিতদেরও সেই একই সময়ে প্রার্থনা করা উচিত ছিল।—মার্ক ১৪:৩২-৪১.

১৬. লূক ২১:৩৬ পদ অনুসারে যিশু কীভাবে আমাদের ‘জাগিয়া থাকার’ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন?

১৬ কোন বিষয়টা আমাদের ‘জাগিয়া থাকিতে’ এবং যিহোবার দিনের জন্য প্রস্তুত থাকতে সাহায্য করবে? যা সঠিক, তা করে চলার জন্য আমাদের দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে। তবে সেটাই যথেষ্ট নয়। যিশু মৃত্যুর কিছু দিন আগে তাঁর শিষ্যদের এই কথা বলেছিলেন, সাহায্য লাভের জন্য তাদেরকে যিহোবার কাছে ক্রমাগত প্রার্থনা করতে হবে। (পড়ুন, লূক ২১:৩৬.) এই শেষকালে সতর্ক থাকার জন্য আমাদেরও সবসময় যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে হবে।—১ পিতর ৪:৭.

জেগে থাকুন

১৭. নিকট ভবিষ্যতে যা আসতে যাচ্ছে, সেটার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি কি না, সেই বিষয়ে আমরা কীভাবে নিশ্চিত হতে পারি?

১৭ যিশু বলেছিলেন, “যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে” শেষ আসবে। (মথি ২৪:৪৪) তাই, আমাদের সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। যে-ধরনের জীবনযাপন সুখ নিয়ে আসবে বলে শয়তানের জগৎ দাবি করে, এখন সেই ধরনের জীবনযাপন উপভোগ করার সময় নয়। এভাবে সুখ লাভ করা হচ্ছে কেবল একটা স্বপ্ন। এর পরিবর্তে, বাইবেলের মাধ্যমে যিহোবা এবং যিশু আমাদের জানিয়েছেন, কীভাবে আমাদের জেগে থাকা উচিত। তাই আসুন, আমরা বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোর প্রতি ও সেগুলো কীভাবে পরিপূর্ণ হবে, সেই বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিই। আর আমরা যেন ক্রমাগত যিহোবার নিকটবর্তী হই এবং তাঁর রাজ্যকে আমাদের জীবনে প্রথমে রাখি। তা হলে, যখন শেষ আসবে, তখন আমরা প্রস্তুত থাকতে পারব। (প্রকা. ২২:২০) সেটার উপরই আমাদের জীবন নির্ভর করছে!

^ [১] (১৪ অনুচ্ছেদ) ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করছে! (ইংরেজি) বইয়ের ২১ অধ্যায় এবং ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “আমাদিগকে বলুন দেখি, এই সকল ঘটনা কখন্‌ হইবে?” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।