সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অন্যদের দোষত্রুটির কারণে আপনি যেন বিঘ্ন না পান

অন্যদের দোষত্রুটির কারণে আপনি যেন বিঘ্ন না পান

“পরস্পর ক্ষমা কর।”—কল. ৩:১৩.

গান সংখ্যা: ৫৩, ২৮

১, ২. যিহোবার লোকেদের বৃদ্ধি সম্বন্ধে বাইবেল কী ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল?

 পৃথিবীতে একটা সংগঠন রয়েছে, যেটা এমন লোকেদের নিয়ে গঠিত, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে এবং তাঁর সেবা করতে চায়। যিহোবার সাক্ষিরা হল সেই লোক। যদিও তাদের বিভিন্ন দোষত্রুটি রয়েছে এবং তারা ভুল করে, কিন্তু যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মা দ্বারা তাঁর লোকেদের নির্দেশনা দেন। আসুন আমরা দেখি, তিনি কোন কোন উপায়ে তাদের আশীর্বাদ করে এসেছেন।

উনিশ-শো চোদ্দো সালে খুব অল্প লোকই যিহোবার উপাসনা করত। কিন্তু যিহোবা তাদের প্রচার কাজের উপর আশীর্বাদ করেছেন। ফল স্বরূপ, লক্ষ লক্ষ লোক বাইবেলের সত্য জানতে পেরেছে এবং তাঁর সাক্ষি হয়েছে। যিহোবা এই অসাধারণ বৃদ্ধি সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন, যখন তিনি এই কথা বলেছিলেন: “যে ছোট, সে সহস্র হইয়া উঠিবে, যে ক্ষুদ্র, সে বলবান্‌ জাতি হইয়া উঠিবে; আমি সদাপ্রভু যথাকালে ইহা সম্পন্ন করিতে সত্বর হইব।” (যিশা. ৬০:২২) এই ভবিষ্যদ্‌বাণী আমরা এখন স্পষ্টভাবে পরিপূর্ণ হতে দেখছি। যিহোবার লোকেরা হচ্ছে একটা বিরাট জাতির মতো। আসলে, সারা পৃথিবীতে এমন অনেক জাতি রয়েছে, যাদের জনসংখ্যা যিহোবার লোকেদের মোট সংখ্যার চেয়ে কম।

৩. ঈশ্বরের দাসেরা কীভাবে প্রেম প্রকাশ করেছে?

এ ছাড়া, এই শেষকালে যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে তাঁর প্রধান গুণ অর্থাৎ প্রেম আরও বেশি করে গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করছেন। (১ যোহন ৪:৮) যিশু তাঁর অনুসারীদের ‘পরস্পর প্রেম করিবার’ আজ্ঞা দিয়েছিলেন। তিনি তাদের এটাও বলেছিলেন: “তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) ইতিহাস দেখায়, এমনকী বিভিন্ন জাতি যখন পরস্পর যুদ্ধ করেছে, তখন যিহোবার দাসেরা পরস্পর প্রেম প্রকাশ করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি লোক নিহত হয়েছে। কিন্তু, সেই যুদ্ধে যিহোবার লোকেরা কাউকে হত্যা করেনি। (পড়ুন, মীখা ৪:১, .) এর ফলে তারা “সকলের রক্তের দায় হইতে . . . শুচি” থাকতে পেরেছে।—প্রেরিত ২০:২৬.

৪. কেন যিহোবার লোকেদের বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য?

ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে যদিও এক শক্তিশালী শত্রু রয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই শত্রু হল শয়তান। সে হল “এই যুগের দেব।” (২ করি. ৪:৪) শয়তান এই জগতের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও সেইসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সুসমাচার প্রচার কাজ বন্ধ করার জন্য সে এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে। কিন্তু সে এই কাজ থামাতে পারবে না। তবে শয়তান যেহেতু জানে, তার হাতে খুব অল্পসময় বাকি আছে, তাই সে ক্রমাগত চেষ্টা করে, যেন আমরা যিহোবার উপাসনা করা বন্ধ করে দিই।—প্রকা. ১২:১২.

অন্যেরা যখন ভুল করে, তখন আপনি কি অনুগত থাকবেন?

৫. কেন অন্যেরা কখনো কখনো আমাদের অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

ঈশ্বরের দাসেরা জানে, ঈশ্বর ও অন্য লোকেদের প্রতি প্রেম প্রকাশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যিশু বলেছিলেন: “‘তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে,’ এইটী মহৎ ও প্রথম আজ্ঞা। আর দ্বিতীয়টী ইহার তুল্য; ‘তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।’” (মথি ২২:৩৫-৩৯) কিন্তু, বাইবেল এটাও তুলে ধরে, আদমের পাপের কারণে সমস্ত মানুষ অসিদ্ধতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। (পড়ুন, রোমীয় ৫:১২, ১৯.) তাই, কখনো কখনো মণ্ডলীর কেউ কেউ হয়তো এমন কিছু বলতে অথবা করতে পারে, যা আমাদের অনুভূতিতে আঘাত দেয়। এমন কিছু ঘটলে আমরা কী করব? সেই সময়ে যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম কি দৃঢ় থাকবে? আমরা কি তাঁর প্রতি এবং তাঁর লোকেদের প্রতি অনুগত থাকব? বাইবেল আমাদেরকে ঈশ্বরের কয়েক জন দাসের বিষয়ে জানায়, যারা এমন কিছু বলেছিলেন অথবা করেছিলেন, যা অন্যদের আঘাত দিয়েছিল। তাদের প্রতি যা ঘটেছিল, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি, আসুন এখন আমরা তা লক্ষ করি।

আপনি যদি এলি ও তার ছেলেদের সময়ে ইস্রায়েলে বেঁচে থাকতেন, তা হলে আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতেন? (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৬. কোন অর্থে এলি তার ছেলেদের শাসন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন?

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এলি ইস্রায়েলের মহাযাজক ছিলেন, কিন্তু তার দুই ছেলে যিহোবার আইনের অবাধ্য হয়েছিলেন। বাইবেল বলে: “এলির দুই পুত্ত্র পাষণ্ড ছিল, তাহারা সদাপ্রভুকে জানিত না [“মানতো না,” ইজি-টু-রিড ভারশন]।” (১ শমূ. ২:১২) এলি জানতেন, তার ছেলেরা খুব খারাপ কাজ করছে। তা সত্ত্বেও, তিনি তাদের যথেষ্ট শাসন করেননি। একটা সময়ে, এলি ও তার দুই ছেলেকে যিহোবা শাস্তি দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, এলির কোনো বংশধর আর মহাযাজক হিসেবে সেবা করতে পারেনি। (১ শমূ. ৩:১০-১৪) আপনি যদি এলির সময়ে বেঁচে থাকতেন আর এটা জানতেন, এলি তার ছেলেদের জঘন্য কাজকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, তা হলে আপনি কি বিঘ্ন পেতেন? এই পরিস্থিতির কারণে যিহোবার প্রতি আপনার বিশ্বাস কি দুর্বল হয়ে যেত আর এর ফল স্বরূপ আপনি কি তাঁর সেবা করা বন্ধ করে দিতেন?

৭. দায়ূদ কোন গুরুতর পাপ করেছিলেন আর ঈশ্বর এক্ষেত্রে কী করেছিলেন?

দায়ূদের বিভিন্ন চমৎকার গুণ ছিল আর তাই যিহোবা তাকে খুব ভালোবাসতেন। (১ শমূ. ১৩:১৩, ১৪; প্রেরিত ১৩:২২) তা সত্ত্বেও, দায়ূদ অত্যন্ত মন্দ এক কাজ করেছিলেন। ঊরিয় যখন তার বাড়ি থেকে দূরে একটা যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন, তখন তার স্ত্রী বৎশেবার সঙ্গে দায়ূদ যৌন সম্পর্ক করেছিলেন। এর ফলে বৎশেবা গর্ভবতী হয়েছিলেন। দায়ূদ চাননি, তার এই কাজ সম্বন্ধে অন্যেরা জানুক। তাই তিনি ঊরিয়কে তার সঙ্গে দেখা করার আদেশ দিয়েছিলেন আর এরপর ঊরিয়কে নিজের বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিলেন। দায়ূদ আশা করেছিলেন, ঊরিয় বৎশেবার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করবেন আর এর ফলে লোকেরা মনে করব, ঊরিয়ই বৎশেবার গর্ভে থাকা সন্তানের বাবা। কিন্তু, ঊরিয় নিজের বাড়িতে যাননি। তাই দায়ূদ এমন ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে ঊরিয় যুদ্ধে নিহত হন। দায়ূদের গুরুতর পাপের কারণে, তিনি ও তার পরিবার করুণ পরিণতি ভোগ করেছিলেন। (২ শমূ. ১২:৯-১২) কিন্তু, যিহোবা করুণা দেখিয়েছিলেন এবং তাকে ক্ষমা করেছিলেন। তিনি জানতেন, সব দিক বিবেচনা করলে, দায়ূদ সবসময় যা সঠিক, সেটাই করতে চেয়েছিলেন। (১ রাজা. ৯:৪) আপনি যদি সেই সময়ে বেঁচে থাকতেন, তা হলে দায়ূদের কাজ দেখে আপনার কেমন লাগত? আপনি কি যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দিতেন?

৮. (ক) কীভাবে প্রেরিত পিতর নিজের কথা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন? (খ) পিতর ভুল করার পরও কেন যিহোবা ক্রমাগত পিতরকে ব্যবহার করেছিলেন?

বাইবেলে উল্লেখিত আরেকটা উদাহরণ হল প্রেরিত পিতর। যিশু তাকে একজন প্রেরিত হওয়ার জন্য মনোনীত করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, পিতর কখনো কখনো এমন বিষয় বলেছিলেন অথবা করেছিলেন, যা সঠিক ছিল না। উদাহরণ স্বরূপ, পিতর বলেছিলেন, অন্য সবাই যদি যিশুকে পরিত্যাগ করে চলেও যায়, তিনি কখনো তাঁকে পরিত্যাগ করবেন না। (মার্ক ১৪:২৭-৩১, ৫০) কিন্তু, যিশুকে গ্রেপ্তার করার পর প্রেরিতরা সকলে যিশুকে পরিত্যাগ করেছিলেন আর তাদের মধ্যে পিতরও ছিলেন। এরপর, পিতর তিন বার এই কথা বলেছিলেন, তিনি যিশুকে চেনেন না। (মার্ক ১৪:৫৩, ৫৪, ৬৬-৭২) তবে পিতর তার কাজের জন্য অত্যন্ত দুঃখিত হয়েছিলেন। তাই, যিহোবা তাকে ক্ষমা করেছিলেন এবং ক্রমাগত তাকে ব্যবহার করেছিলেন। আপনি যদি সেই সময়ে শিষ্যদের মধ্যে একজন হতেন আর পিতর যা করেছেন, সেই বিষয়ে জানতেন, তা হলে আপনি কি ক্রমাগত যিহোবার উপর আস্থা রাখতেন?

৯. ঈশ্বর যে সবসময় ন্যায্য কাজ করেন, সেই বিষয়ে কেন আপনার আস্থা রয়েছে?

এই উদাহরণগুলো থেকে আমরা দেখেছি, যিহোবার দাসদের মধ্যে কেউ কেউ মন্দ কাজ করেছিলেন এবং অন্যদের অনুভূতিতে অনেক আঘাত দিয়েছিলেন। বর্তমানে যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে, তা হলে আপনি কী করবেন? আপনি কি সভাতে যাওয়া বন্ধ করে দেবেন আর এমনকী যিহোবা ও তাঁর লোকেদের পুরোপুরি ত্যাগ করবেন? না কি আপনি এটা উপলব্ধি করবেন, যিহোবা হলেন করুণাময় আর একজন অন্যায়কারী অনুতপ্ত হবেন, তিনি হয়তো সেই অপেক্ষায় আছেন? কিন্তু, কখনো কখনো এমনটা হতে পারে, গুরুতর পাপ করেছেন এমন একজন ব্যক্তি হয়তো তার কাজের জন্য দুঃখিত হন না। তখন কি আপনার এই আস্থা থাকবে যে, যিহোবা সেই পরিস্থিতি জানেন এবং উপযুক্ত সময়ে তিনি এই বিষয়ে কিছু করবেন? যদি প্রয়োজন হয়, তা হলে তিনি হয়তো সেই ব্যক্তিকে মণ্ডলী থেকে সরিয়ে দেবেন। আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন, যিহোবা সবসময় যা সঠিক ও ন্যায্য, সেটাই করবেন?

অনুগত থাকুন

১০. ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা এবং পিতর ভুল করা সত্ত্বেও যিশু কী বুঝতে পেরেছিলেন?

১০ বাইবেলে আমরা এমন অনেক ব্যক্তি সম্বন্ধে পড়ি, যাদের আশেপাশের লোকেরা গুরুতর ভুল করা সত্ত্বেও, তারা যিহোবা ও তাঁর লোকেদের প্রতি অনুগত ছিলেন। যিশু হলেন এর সর্বোত্তম উদাহরণ। তাঁর পিতার কাছে সাহায্য চেয়ে সারারাত প্রার্থনা করার পর, তিনি ১২ জন প্রেরিতকে মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন অর্থাৎ ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা পরে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। এ ছাড়া, প্রেরিত পিতর বলেছিলেন, তিনি যিশুকে চেনেন না। (লূক ৬:১২-১৬; ২২:২-৬, ৩১, ৩২) শিষ্যদের মধ্যে কেউ কেউ যখন যিশুকে হতাশ করেছিলেন, তখন তিনি যিহোবাকে কিংবা অন্য শিষ্যদের দোষ দেননি। এর পরিবর্তে, যিশু তাঁর পিতার নিকটবর্তী ছিলেন এবং অনুগতভাবে তাঁর সেবা করেছিলেন। ফল স্বরূপ, যিহোবা তাঁকে পুনরুত্থিত করার মাধ্যমে এবং পরে স্বর্গীয় রাজ্যের রাজা হিসেবে নিযুক্ত করার মাধ্যমে পুরস্কৃত করেছিলেন।—মথি ২৮:৭, ১৮-২০.

১১. শেষকালে যিহোবার দাসেরা কী করবে বলে বাইবেল ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল?

১১ যিশুর উদাহরণ আমাদেরকে যিহোবা ও তাঁর লোকেদের প্রতি অনুগত থাকতে শিক্ষা দেয়। আর তা করার পিছনে আমাদের উত্তম কারণ রয়েছে। আমরা বুঝতে পারি, এই শেষকালে যিহোবা তাঁর দাসদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী সত্য প্রচার করার ক্ষেত্রে তিনি তাদের সাহায্য করছেন আর পৃথিবীতে কেবল তারাই এই কাজ করছে। এ ছাড়া, যিহোবা তাদের যা-কিছু শিক্ষা দিচ্ছেন, সেগুলোর কারণে তারা সত্যিই একতাবদ্ধ এবং সুখী লোক। যিহোবা এই বিষয়ে বর্ণনা করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “দেখ, আমার দাসেরা চিত্তের সুখে আনন্দরব করিবে।”—যিশা. ৬৫:১৪.

১২. অন্যদের দোষত্রুটি সম্বন্ধে আমাদের কেমন দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত?

১২ আমরা সত্যিই সুখী কারণ যিহোবা আমাদের নির্দেশনা দেন এবং বিভিন্ন উত্তম বিষয় করার জন্য আমাদের সাহায্য করেন। এর বিপরীতে, শয়তানের জগতের লোকেরা সুখী নয় এবং ভবিষ্যতের জন্য তাদের প্রকৃত কোনো আশাই নেই। তাই, মণ্ডলীতে কেউ যদি এমন কিছু বলে অথবা করে, যা সঠিক নয়, তা হলে সেই কারণে যিহোবা ও তাঁর লোকেদের ত্যাগ করা কতই-না মূর্খতাপূর্ণ ও অন্যায্য এক কাজ হবে! এর পরিবর্তে, আমাদের যিহোবা ও তাঁর নির্দেশনার প্রতি অনুগত থাকতে হবে। এ ছাড়া, অন্যদের দোষত্রুটিকে আমরা কীভাবে দেখব ও সেগুলোর প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাব, সেই বিষয়েও আমাদের শিখতে হবে।

আপনার কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?

১৩, ১৪. (ক) কেন আমাদের পরস্পরের প্রতি ধৈর্য দেখাতে হবে? (খ) আমরা কোন প্রতিজ্ঞা মনে রাখতে চাই?

১৩ কোনো ভাই যদি এমন কিছু বলেন অথবা করেন, যা আপনার অনুভূতিতে আঘাত দেয়, তা হলে আপনার কী করা উচিত? বাইবেল আমাদের এই পরামর্শ দেয়: “তোমার আত্মাকে সত্বর বিরক্ত হইতে দিও না, কেননা হীনবুদ্ধি লোকদেরই বক্ষঃ বিরক্তির আশ্রয়।” (উপ. ৭:৯) আমরা সবাই অসিদ্ধ এবং আমরা ভুল করি। তাই, আমরা কখনো এটা আশা করতে পারি না, আমাদের ভাই-বোনেরা সবসময় সঠিক বিষয় বলবে অথবা সঠিক কাজ করবে। আর তাদের ভুলগুলো নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। আমরা যদি তা করি, তা হলে যিহোবার সেবায় আমরা হয়তো আনন্দ হারিয়ে ফেলব। এর চেয়েও খারাপ বিষয়টা হল, তাঁর প্রতি আমাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়বে এবং আমরা হয়তো যিহোবার সংগঠন ছেড়ে চলে যাব। তখন আমরা আর যিহোবার সেবা করতে পারব না কিংবা নতুন জগতে বেঁচে থাকার আশাও আমাদের থাকবে না।

১৪ তা হলে, অন্যেরা যখন এমন কিছু করে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়, তখন যিহোবার সেবায় আনন্দ বজায় রাখার জন্য কী আপনাকে সাহায্য করতে পারে? সবসময় তাঁর এই সান্ত্বনাদায়ক প্রতিজ্ঞা মনে রাখুন: “দেখ, আমি নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর সৃষ্টি করি; এবং পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না।” (যিশা. ৬৫:১৭; ২ পিতর ৩:১৩) আপনি যদি যিহোবার প্রতি অনুগত থাকেন, তা হলে তিনি আপনাকে এই আশীর্বাদ প্রদান করবেন।

১৫. অন্যেরা যখন ভুল করে, তখন আমাদের কী করা উচিত বলে যিশু উল্লেখ করেছিলেন?

১৫ অবশ্য, আমরা এখনও নতুন জগতে প্রবেশ করিনি। তাই, কেউ যদি আমাদের অনুভূতিতে আঘাত দেয়, তা হলে আমরা কী করব বলে যিহোবা চান, তা নিয়ে আমাদের ধ্যান করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, যিশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি লোকের অপরাধ ক্ষমা কর, তবে তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তোমাদিগকেও ক্ষমা করিবেন। কিন্তু তোমরা যদি লোকদিগকে ক্ষমা না কর, তবে তোমাদের পিতা তোমাদেরও অপরাধ ক্ষমা করিবেন না।” আর পিতর যখন যিশুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমাদের “সাত বার পর্য্যন্ত” ক্ষমা করা উচিত কি না, তখন যিশু উত্তর দিয়েছিলেন: “তোমাকে বলিতেছি না, সাত বার পর্য্যন্ত, কিন্তু সত্তর গুণ সাত বার পর্য্যন্ত।” যিশু আমাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন, অন্যদের ক্ষমা করার ব্যাপারে আমাদের সবসময় ইচ্ছুক থাকতে হবে।—মথি ৬:১৪, ১৫; ১৮:২১, ২২.

১৬. যোষেফ কোন উত্তম উদাহরণস্থাপন করেছিলেন?

১৬ যোষেফের উদাহরণ আমাদের শিক্ষা দেয়, অন্যেরা যখন আমাদের হতাশ করে, তখন আমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত। যাকোব এবং রাহেলের ঘরে যোষেফ ও তার ছোটো ভাই ছাড়া আর কোনো সন্তান ছিল না। যদিও অন্যান্য স্ত্রীর ঘরে যাকোবের আরও দশ জন ছেলে ছিল, কিন্তু তিনি তাদের মধ্যে যোষেফকে বেশি ভালোবাসতেন। এর ফলে, যোষেফের ভাইয়েরা তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছিলেন। আসলে, তারা যোষেফকে এতটাই ঘৃণা করতেন যে, তারা তাকে একজন দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিলেন আর তাকে মিশরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই ঘটনার অনেক বছর পর, মিশরের রাজা যোষেফকে সেই দেশে দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন কারণ তিনি যোষেফের ভালো কাজ দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, একটা দুর্ভিক্ষের কারণে যোষেফের ভাইয়েরা খাদ্য কেনার জন্য মিশরে এসেছিলেন। তারা যখন যোষেফকে দেখেছিলেন, তখন তাকে চিনতে পারেননি, কিন্তু যোষেফ তাদের চিনতে পেরেছিলেন। যদিও আগে তারা যোষেফের সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করেছিলেন, কিন্তু তারপরও তিনি তাদের শাস্তি দেননি। এর পরিবর্তে, তাদের মনোভাব সত্যিই পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা বোঝার জন্য তিনি তাদের পরীক্ষা করেছিলেন। যোষেফ যখন বুঝতে পেরেছিলেন, তাদের মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে, তখন তিনি নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। আর এরপর তিনি তাদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন: “তোমরা . . . ভীত হইও না, আমিই তোমাদিগকে ও তোমাদের বালক বালিকাগণকে প্রতিপালন করিব।”—আদি. ৫০:২১.

১৭. অন্যেরা যখন ভুল করে, তখন আপনি কেমন মনোভাব দেখাতে চান?

১৭ মনে রাখবেন, যেহেতু সকলেরই দোষত্রুটি রয়েছে, তাই আপনিও অন্যদের অসন্তুষ্ট করতে পারেন। আপনি যদি বুঝতে পারেন, আপনার কারণে কেউ বিরক্ত হয়েছে, তা হলে বাইবেলের পরামর্শ অনুসরণ করুন। তার কাছে ক্ষমা চান এবং তার সঙ্গে শান্তিস্থাপন করার চেষ্টা করুন। (পড়ুন, মথি ৫:২৩, ২৪.) অন্যেরা যখন আমাদের ক্ষমা করে, তখন আমরা খুশি হই। তাই, আমাদেরও তাদের প্রতি একইরকম আচরণ দেখাতে হবে। কলসীয় ৩:১৩ পদ আমাদের জানায়: “পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর; প্রভু যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরাও তেমনি কর।” আমরা যদি আমাদের ভাই-বোনদের সত্যিই ভালোবাসি, তা হলে তাদের অতীতের কোনো কাজের কারণে আমরা বিরক্তি পুষে রাখব না। (১ করি. ১৩:৫) আর আমরা যদি অন্যদের ক্ষমা করি, তা হলে যিহোবাও আমাদের ক্ষমা করবেন। তাই, অন্যেরা যখন ভুল করে, তখন আমরা যেন তাদের প্রতি করুণাময় হই, ঠিক যেমন আমাদের পিতা যিহোবা আমাদের প্রতি করুণাময়।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৩:১২-১৪.