অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১
“অতএব তোমরা গিয়া . . . শিষ্য কর”
২০২০ সালের জন্য আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ: ‘অতএব তোমরা গিয়া শিষ্য কর; তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর।’—মথি ২৮:১৯.
গান সংখ্যা ৭ খ্রিস্টীয় উৎসর্গীকরণ
সারাংশ a
১-২. যিশুর কবরের কাছে সেই মহিলাদের একজন স্বর্গদূত কী বলেন এবং যিশু নিজে তাদের কোন নির্দেশনা দেন?
সময়টা হল ৩৩ খ্রিস্টাব্দের নিশান মাসের ১৬ তারিখ, ভোর বেলা। ঈশ্বরভয়শীল একদল মহিলা অত্যন্ত দুঃখার্ত হৃদয়ে সেই কবরের দিকে যাচ্ছেন, যেখানে ৩৬ ঘণ্টারও বেশি সময় আগে প্রভু যিশু খ্রিস্টকে কবর দেওয়া হয়েছিল। তারা সেখানে তাঁর দেহে সুগন্ধি দ্রব্য ও তেল লাগানোর জন্য যাচ্ছেন। কিন্তু, তারা যখন সেই কবরস্থানে এসে পৌঁছান, তখন তারা কবরটা খালি দেখে খুবই অবাক হয়ে যান! একজন স্বর্গদূত সেই মহিলাদের বলেন, যিশু মৃতদের মধ্য থেকে উঠেছেন এবং “তিনি . . . তোমাদের অগ্রে গালীলে যাইতেছেন, সেইখানে তাঁহাকে দেখিতে পাইবে।”—মথি ২৮:১-৭; লূক ২৩:৫৬; ২৪:১০.
২ সেই মহিলারা কবর থেকে চলে যাওয়ার পর যিশু নিজে তাদের কাছে আসেন এবং এই নির্দেশনা দেন: “তোমরা যাও, আমার ভ্রাতৃগণকে সংবাদ দেও, যেন তাহারা গালীলে যায়; সেইখানে তাহারা আমাকে দেখিতে পাইবে।” (মথি ২৮:১০) যিশু নিশ্চয়ই তাঁর শিষ্যদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো নির্দেশনা দেবেন কারণ তাঁর পুনরুত্থানের পর সবচেয়ে প্রথমে তিনি এই সমাবেশেরই আয়োজন করেন!
যিশু কাদের শিষ্য তৈরি করার আজ্ঞা দিয়েছিলেন?
৩-৪. কেন আমরা বলতে পারি যে, মথি ২৮:১৯, ২০ পদে লিপিবদ্ধ আজ্ঞা কেবল প্রেরিতদেরই দেওয়া হয়নি? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৩ মথি ২৮:১৬-২০ পদ পড়ুন। যিশু যে-সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন, সেখানে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক কাজ সম্বন্ধে বলেছিলেন, যে-কাজ প্রথম শতাব্দীজুড়ে তাঁর শিষ্যরা করবে—সেই একই কাজ, যা বর্তমানে আমরা করে চলছি। যিশু বলেছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; . . . আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।”
৪ যিশু চান যেন তাঁর সমস্ত অনুসারী প্রচার করে। তিনি এই আজ্ঞা যে কেবল ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিতকেই দিয়েছিলেন, এমন নয়। কীভাবে আমরা এই বিষয়ে এতটা নিশ্চিত হতে পারি? গালীলের সেই পর্বতে যখন শিষ্য তৈরি করার আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, সেই সময় সেখানে কি কেবল প্রেরিতরাই উপস্থিত ছিলেন? মনে করে দেখুন, স্বর্গদূত সেই মহিলাদের বলেছিলেন: “[গালীলে] তাঁহাকে দেখিতে পাইবে।” তাই, ওই সমাবেশে নিশ্চয়ই সেই বিশ্বস্ত মহিলারাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু, এরাই সব নয়। প্রেরিত পৌল প্রকাশ করেছিলেন যে, যিশু “একেবারে পাঁচ শতের অধিক ভ্রাতাকে দেখা দিলেন।” (১ করি. ১৫:৬) কোথায়?
৫. কেন আমরা এমনটা ধরে নিই যে, ১ করিন্থীয় ১৫:৬ পদ গালীলের সেই সমাবেশকেই নির্দেশ করে, যেটার বিষয়ে মথি ২৮ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে?
৫ এটা ধরে নেওয়ার উত্তম কারণ আমাদের রয়েছে যে, পৌল সেই সমাবেশের কথাই বলছিলেন, যেটার বিষয়ে মথি ২৮ অধ্যায়ে বর্ণনা করা আছে। কী কী কারণ রয়েছে? প্রথমত, যিশুর বেশিরভাগ শিষ্যই গালীলীয় ছিল। অতএব, এক বিরাটসংখ্যক লোকের সঙ্গে একত্রে মিলিত হওয়ার জন্য যিরূশালেমে কারো বাড়ির চেয়ে বরং গালীলের এক পর্বতই উপযুক্ত স্থান হবে। দ্বিতীয়ত, পুনরুত্থানের পর যিশু যিরূশালেমে একটা বাড়িতে ইতিমধ্যেই তাঁর ১১ জন প্রেরিতের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। যিশু যদি কেবল প্রেরিতদেরই প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার নির্দেশনা দিতে চাইতেন, তা হলে তিনি যিরূশালেমেই সেই নির্দেশনা দিতে পারতেন। তিনি তাদের এবং সেই মহিলাদের আর অন্যান্য ব্যক্তিকে তাঁর সঙ্গে গালীলে দেখা করতে বলতেন না।—লূক ২৪:৩৩, ৩৬.
৬. কীভাবে মথি ২৮:২০ পদ দেখায় যে, শিষ্য তৈরি করার আজ্ঞা বর্তমান সময়ের জন্যও প্রযোজ্য আর এখন লোকেরা কীভাবে সেই আজ্ঞা পালন করছে?
৬ তৃতীয় কারণটা লক্ষ করুন। শিষ্য তৈরি করার বিষয়ে যিশুর আজ্ঞা কেবল প্রথম শতাব্দীতে বসবাসরত খ্রিস্টানদের জন্যই প্রযোজ্য ছিল না। কীভাবে আমরা তা বলতে পারি? যিশু তাঁর নির্দেশনার শেষে তাঁর অনুসারীদের এই কথাগুলো বলেছিলেন: “আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:২০) যিশু যেমনটা বলেছিলেন, ঠিক তেমনই এখন অনেক লোক শিষ্য তৈরি করার কাজ করছে। চিন্তা করে দেখুন! প্রতি বছর প্রায় ৩,০০,০০০ লোক যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তিস্ম নেয় এবং যিশু খ্রিস্টের শিষ্য হয়!
৭. এখন আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব এবং কেন?
৭ যারা বাইবেল অধ্যয়ন করে, তাদের মধ্যে অনেকে উন্নতি করে বাপ্তিস্ম নেয়। কিন্তু, আমাদের সঙ্গে যারা নিয়মিতভাবে অধ্যয়ন করে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ শিষ্য হতে ভয় পায়। তারা তাদের অধ্যয়ন উপভোগ করে ঠিকই, কিন্তু তারা উন্নতি করে বাপ্তিস্ম নেয় না। যদি এমন হয় যে, আপনি কারো সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করছেন, তা হলে আমরা নিশ্চিত, আপনি আপনার ছাত্রকে সাহায্য করতে চান, যেন তিনি যা শেখেন, সেগুলো কাজে লাগান এবং খ্রিস্টের একজন শিষ্য হয়ে ওঠেন। এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে যে, কীভাবে আমরা আমাদের ছাত্রদের যিহোবাকে ভালোবাসার ও সেইসঙ্গে উন্নতি করার জন্য সাহায্য করতে পারি। কেন এই বিষয়টা নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে? কারণ কখনো কখনো আমাদের এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে যে, আমরা অধ্যয়ন চালিয়ে যাব, না কি বন্ধ করে দেব।
আপনার ছাত্রকে যিহোবাকে ভালোবাসতে সাহায্য করার চেষ্টা করুন
৮. আমাদের ছাত্রদের কেন যিহোবাকে ভালোবাসতে সাহায্য করা কখনো কখনো কঠিন হয়?
৮ যিহোবা চান যেন লোকেরা তাঁকে ভালোবাসে বলে তাঁর সেবা করে। তাই, আমাদের লক্ষ হল আমাদের ছাত্রদের এটা বুঝতে সাহায্য করা যে, যিহোবা ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে তাদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন এবং তাদের খুব ভালোবাসেন। আমরা তাদের সাহায্য করতে চাই, যেন তারা যিহোবাকে “পিতৃহীনদের পিতা ও বিধবাদের বিচারকর্ত্তা” হিসেবে দেখে। (গীত. ৬৮:৫) আপনার ছাত্ররা যখন বুঝতে পারবে, ঈশ্বর তাদের কতটা ভালোবাসেন, তখন সম্ভবত তারাও তাঁকে ভালোবাসতে শুরু করবে। কোনো কোনো ছাত্র হয়তো যিহোবাকে একজন প্রেমময় পিতা হিসেবে দেখাকে কঠিন বলে মনে করে কারণ তাদের নিজেদের বাবা তাদের প্রতি প্রেম ও স্নেহ দেখায়নি। (২ তীম. ৩:১, ৩) তাই, আপনি যখন অধ্যয়ন করান, তখন যিহোবার হৃদয়গ্রাহী গুণগুলোর উপর জোর দিন। আপনার ছাত্রদের এটা বুঝতে সাহায্য করুন যে, ঈশ্বর চান যেন তারা অনন্তজীবন লাভ করে আর তিনি তাদের সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সাহায্য করতে প্রস্তুত। আমরা আর কী করতে পারি?
৯-১০. বাইবেল অধ্যয়ন করানোর সময় আমাদের কোন প্রকাশনাগুলো ব্যবহার করা উচিত এবং কেন সেই বইগুলো ব্যবহার করা উচিত?
৯ “বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়?” এবং “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” শিরোনামের বইগুলো ব্যবহার করুন। এই প্রকাশনাগুলো বিশেষভাবে এই উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, যেন আমরা আমাদের ছাত্রদের যিহোবাকে ভালোবাসার জন্য সাহায্য করতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ, শিক্ষা দেয় বইয়ের ১ অধ্যায় এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়: ঈশ্বর কি চিন্তা করেন না আর তাঁর কি সহানুভূতি নেই?, আমরা যে-অবিচারগুলোর মুখোমুখি হই সেই সম্বন্ধে ঈশ্বর কেমন বোধ করেন? এবং আপনি কি যিহোবার নিকটবর্তী হতে পারেন? ‘ঈশ্বরের প্রেম’ বইয়ের বিষয়ে কী বলা যায়? এই প্রকাশনা ছাত্রকে এটা বুঝতে সাহায্য করবে যে, কীভাবে বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগানো তার জীবনকে উন্নত করতে এবং তাকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী করতে পারে। এমনকী আপনি যদি ইতিমধ্যেই এই প্রকাশনাগুলো ব্যবহার করে অন্যদের অধ্যয়ন করিয়েও থাকেন, তারপরও প্রতিটা অধ্যয়নের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন এবং ছাত্রের নির্দিষ্ট প্রয়োজনগুলোর কথা মাথায় রাখুন।
১০ কিন্তু ধরুন, ছাত্র কোনো একটা বিষয়ে আগ্রহী, যে-বিষয়টা নিয়ে এমন কোনো প্রকাশনায় আলোচনা করা হয়েছে, যেটা আমাদের শিক্ষাদানের হাতিয়ার বাক্সের অন্তর্ভুক্ত নয়। আপনি হয়তো সেই প্রকাশনাটা তাকে নিজে নিজে পড়ার জন্য উৎসাহিত করতে পারেন, যাতে সুপারিশকৃত বাইবেল অধ্যয়নের যে-সহায়কগুলোর বিষয়ে সবেমাত্র উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর একটা থেকে আপনি অধ্যয়ন চালিয়ে যেতে পারেন।
১১. কখন আমাদের অধ্যয়নের শুরুতে ও শেষে প্রার্থনা করতে আরম্ভ করা উচিত আর কীভাবে আপনি বিষয়টা তুলে ধরতে পারেন?
১১ প্রার্থনা করে অধ্যয়ন শুরু করুন। সাধারণত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, নিয়মিত অধ্যয়ন শুরু করার প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অধ্যয়নের শুরুতে ও শেষে প্রার্থনা করতে আরম্ভ করা উত্তম। ছাত্রকে এটা উপলব্ধি করার জন্য আমাদের সাহায্য করতে হবে যে, একমাত্র ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যেই আমরা ঈশ্বরের বাক্য বুঝতে পারি। বাইবেল শিক্ষকদের মধ্যে কেউ কেউ যাকোব ১:৫ পদ পড়ার মাধ্যমে প্রার্থনা করার বিষয়টা তুলে ধরেন, যেখানে বলা আছে: “যদি তোমাদের কাহারও জ্ঞানের অভাব হয়, তবে সে ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করুক।” এরপর পরিচালক ছাত্রকে জিজ্ঞেস করেন, “কীভাবে আমরা ঈশ্বরের কাছে জ্ঞান বা প্রজ্ঞা চাইতে পারি?” ছাত্র সম্ভবত এই বিষয়ে একমত হবেন যে, ঈশ্বরের কাছে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত।
১২. একজন ছাত্রকে তার প্রার্থনার গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করার জন্য কীভাবে আপনি গীতসংহিতা ১৩৯:২-৪ পদ ব্যবহার করবেন?
১২ কীভাবে প্রার্থনা করতে হয়, তা আপনার ছাত্রকে শেখান। তাকে এই আশ্বাস দিন, যিহোবা তার আন্তরিক প্রার্থনা শুনতে চান। তাকে বলুন, আমাদের ব্যক্তিগত প্রার্থনায় আমরা সত্যিই যিহোবার সঙ্গে হৃদয় খুলে কথা বলতে পারি—এমন অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারি, যেগুলো হয়তো আমরা কোনো মানুষকে জানাতে দ্বিধা করি। মনে রাখবেন, যিহোবা ইতিমধ্যে আমাদের হৃদয়ের সবচেয়ে গভীর “সঙ্কল্প [“চিন্তা,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]” জানেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৩৯:২-৪.) এ ছাড়া, আমরা আমাদের ছাত্রকে উৎসাহিত করতে পারি, যেন তিনি ভুল চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করার এবং মন্দ অভ্যাস কাটিয়ে ওঠার জন্য ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চান। উদাহরণ স্বরূপ, ধরুন বেশ কিছু সময় ধরে অধ্যয়ন করছেন এমন একজন ব্যক্তি কোনো একটা ছুটির দিন উদ্যাপন করতে ভালোবাসেন, যেটা পৌত্তলিক উৎস থেকে এসেছে। তিনি জানেন, এটা ভুল কিন্তু তিনি আসলে এটার কোনো কোনো বিষয় উপভোগ করেন। তাকে উৎসাহিত করুন, যেন তিনি তার অনুভূতি সম্বন্ধে যিহোবাকে নির্দিষ্টভাবে বলেন আর ঈশ্বর যেটা ভালোবাসেন, কেবল সেটাই ভালোবাসার জন্য তাঁর কাছে সাহায্য চান।—গীত. ৯৭:১০.
১৩. (ক) কেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, আমাদের ছাত্রদের সভায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো উচিত? (খ) কীভাবে আমরা একজন ছাত্রকে কিংডম হলে আরও বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করার জন্য সাহায্য করতে পারি?
১৩ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, আপনার বাইবেল ছাত্রকে সভায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। আপনার ছাত্র খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যা-কিছু শোনেন এবং লক্ষ করেন, সেগুলো তাকে যিহোবার সেবা করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে আর সেইসঙ্গে উন্নতি করার জন্য সাহায্য করতে পারে। কিংডম হলে কী হয়? শিরোনামের ভিডিওটা দেখান এবং আপনার সঙ্গে সভায় যাওয়ার জন্য তাকে আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ জানান। সম্ভব হলে তাকে সভায় যাওয়ার জন্য সাহায্য করার প্রস্তাব দিন। আপনার সঙ্গে অধ্যয়নে যোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকাশককে আমন্ত্রণ জানানো একটা ভালো বিষয়। এভাবে আপনার ছাত্র মণ্ডলীর অন্যদের সঙ্গে পরিচিত হবেন আর তিনি যখন আমাদের সভাগুলোতে আসবেন, তখন আরও বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন।
ছাত্রকে উন্নতি করার জন্য সাহায্য করুন
১৪. কী একজন ছাত্রকে উন্নতি করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারে?
১৪ আমাদের লক্ষ্য হল আমাদের বাইবেল ছাত্রকে উন্নতি করার জন্য সাহায্য করা। (ইফি. ৪:১৩) যখন কেউ বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হন, তখন তিনি হয়তো মূলত এই বিষয়ে আগ্রহী থাকেন যে, সেই অধ্যয়ন ব্যক্তিগতভাবে তাকে কীভাবে উপকৃত করবে। কিন্তু, যিহোবার প্রতি তার প্রেম যখন বৃদ্ধি পায়, তখন তিনি সম্ভবত এটা চিন্তা করতে শুরু করবেন যে, কীভাবে তিনি অন্যদের সাহায্য করতে পারেন, যাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিরাও রয়েছে, যারা ইতিমধ্যে মণ্ডলীর অংশ। (মথি ২২:৩৭-৩৯) যখন উপযুক্ত হয়, তখন রাজ্যের কাজে আর্থিক সাহায্য জোগানোর যে-সুযোগ রয়েছে, সেই বিষয়ে উল্লেখ করতে দ্বিধা করবেন না।
১৫. কোনো সমস্যা দেখা দিলে ভালোভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য কীভাবে আমরা আমাদের বাইবেল ছাত্রকে সাহায্য করতে পারি?
১৫ সমস্যা দেখা দিলে কী করতে হয়, তা আপনার বাইবেল ছাত্রকে শেখান। উদাহরণ স্বরূপ, ধরুন আপনার ছাত্র, একজন অবাপ্তাইজিত প্রকাশক, আপনাকে বললেন যে, তিনি মণ্ডলীর কোনো ব্যক্তির কারণে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। কারো পক্ষ নেওয়ার পরিবর্তে, বাইবেল অনুযায়ী তার কী করা উচিত, সেই বিষয়ে তাকে বলুন না কেন? তিনি সেই ভাইকে ক্ষমা করে দিতে পারেন অথবা তিনি যদি বিষয়টা ভুলতে না পারেন, তা হলে তিনি তার ‘ভ্রাতাকে লাভ করিবার’ উদ্দেশ্য নিয়ে সদয়ভাবে এবং প্রেমের সঙ্গে সেই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। (তুলনা করুন, মথি ১৮:১৫.) আপনার ছাত্র যা বলবেন, তা প্রস্তুত করার জন্য তাকে সাহায্য করুন। সেই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার ব্যাবহারিক উপায় সম্বন্ধে জানার জন্য কীভাবে JW লাইব্রেরি অ্যাপ, যিহোবার সাক্ষিদের জন্য গবেষণা নির্দেশিকা এবং jw.org® ব্যবহার করতে হয়, তা তাকে দেখান। বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে তিনি যত বেশি প্রশিক্ষণ লাভ করবেন, পরবর্তী সময় তিনি মণ্ডলীর অন্যদের সঙ্গে তত বেশি মানিয়ে নিতে পারবেন।
১৬. অন্য প্রকাশকদের আপনার সঙ্গে অধ্যয়নে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো কেন ভালো?
১৬ মণ্ডলীর অন্যদের—এবং সীমা অধ্যক্ষ যখন মণ্ডলী পরিদর্শন করেন, তখন তাকে—আপনার সঙ্গে অধ্যয়নে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। কেন? আগে উল্লেখিত কারণগুলো ছাড়াও, অন্য প্রকাশকরা হয়তো আপনার ছাত্রকে সেইসমস্ত উপায়ে সাহায্য করতে পারবে, যে-উপায়গুলোতে আপনি তাকে সাহায্য করতে পারবেন না। উদাহরণ স্বরূপ, ধরুন আপনার ছাত্র ধূমপান বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু বেশ কয়েক বার ব্যর্থ হয়েছেন। সেই ক্ষেত্রে এমন একজন সাক্ষিকে আপনার সঙ্গে অধ্যয়নে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান, যিনি হয়তো বার বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর অবশেষে এই অভ্যাস কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন। আপনার সহসাক্ষি হয়তো এমন ব্যাবহারিক পরামর্শ দিতে পারেন, যা ছাত্রের জন্য শোনা প্রয়োজন। আপনি যদি কোনো অভিজ্ঞ ভাই অথবা বোনের সামনে অধ্যয়ন করাতে স্বচ্ছন্দ বোধ না করেন, তা হলে সেই সময় সেই ভাই বা বোনকে অধ্যয়ন পরিচালনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। যা-ই হোক না কেন, আপনার ছাত্র অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে উপকার লাভ করতে পারে। মনে রাখবেন, আমাদের লক্ষ্য হল ছাত্রকে উন্নতি করার জন্য সাহায্য করা।
আমার কি অধ্যয়ন বন্ধ করে দেওয়া উচিত?
১৭-১৮. কোনো অধ্যয়ন বন্ধ করা উচিত কি না, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আপনার কী বিবেচনা করা উচিত?
১৭ যদি এমন হয়, আপনার বাইবেল ছাত্র তার জীবনে পরিবর্তন করছেন না, তা হলে একসময় নিজেকে আপনার জিজ্ঞেস করতে হবে, ‘আমার কি অধ্যয়ন বন্ধ করে দেওয়া উচিত?’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, সেই ব্যক্তির ক্ষমতা নিয়ে আপনার চিন্তা করা উচিত। কোনো কোনো ব্যক্তির উন্নতি করার জন্য অন্যদের চেয়ে আরও বেশি সময় লাগে। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমার ছাত্র কি নিজের পরিস্থিতি অনুযায়ী উপযুক্ত গতিতে উন্নতি করছে?’ ‘তিনি যে-বিষয়গুলো শিখছেন, সেগুলো কি তিনি “পালন করিতে” বা কাজে লাগাতে শুরু করেছেন?’ (মথি ২৮:২০) একজন ছাত্র হয়তো ধীরে ধীরে উন্নতি করতে পারেন, তবে সেই উন্নতি যেন নির্দিষ্ট একটা গতিতে হয়।
১৮ কিন্তু কী হবে, যদি বেশ কিছু সময় ধরে অধ্যয়ন করছেন এমন একজন ব্যক্তি অধ্যয়নের প্রতি সামান্য উপলব্ধি দেখান, কিংবা কোনো উপলব্ধিই না দেখান? এই বিষয়টা কল্পনা করুন: আপনার ছাত্র শিক্ষা দেয় বই শেষ করেছেন এবং হতে পারে এমনকী ‘ঈশ্বরের প্রেম’ বই শুরু করেছেন কিন্তু এখনও পর্যন্ত মণ্ডলীর একটা সভাতেও আসেননি—এমনকী স্মরণার্থ সভাতেও না! আর তিনি প্রায়ই তুচ্ছ কারণগুলোর জন্য অধ্যয়ন বাদ দেন। এইরকম ক্ষেত্রে ছাত্রের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা উত্তম হবে। b
১৯. যদি মনে হয়, একজন ব্যক্তি তার বাইবেল অধ্যয়নের প্রতি উপলব্ধি দেখাচ্ছেন না, তা হলে সেই ব্যক্তিকে আপনি কী বলতে পারেন আর আপনাকে কী বিবেচনা করতে হবে?
১৯ আপনি তাকে এই প্রশ্ন করার মাধ্যমে আলোচনা শুরু করতে পারেন, ‘যিহোবার সাক্ষি হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার জন্য কোন বিষয়টা সবচেয়ে বড়ো সমস্যা বলে আপনি মনে করেন?’ ছাত্র হয়তো উত্তর দিতে পারেন, ‘বাইবেল অধ্যয়ন করতে আমার ভালো লাগে, কিন্তু আমি কখনোই যিহোবার সাক্ষি হব না!’ বেশ কিছু সময় ধরে অধ্যয়ন করার পর তার মনোভাব যদি এইরকম থাকে, তা হলে অধ্যয়ন চালিয়ে যাওয়া কি যুক্তিযুক্ত হবে? অন্যদিকে, আপনার ছাত্র হয়তো প্রথম বারের মতো প্রকাশ করতে পারেন যে, কী তাকে বাধা দিচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি হয়তো মনে করেন, তিনি কখনো ঘরে ঘরে প্রচার করতে পারবেন না। তার অনুভূতি জানার পর আপনি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন যে, কীভাবে আপনি তাকে সাহায্য করবেন।
২০. আমরা কার সঙ্গে অধ্যয়ন চালিয়ে যাব, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রেরিত ১৩:৪৮ পদ কীভাবে আমাদের সাহায্য করে?
২০ দুঃখজনক যে, কোনো কোনো ছাত্র যিহিষ্কেলের দিনের ইস্রায়েলীয়দের মতো। তাদের সম্বন্ধে যিহোবা যিহিষ্কেলকে এই কথা বলেছিলেন: “আর দেখ, তাহাদের নিকটে তুমি মধুর স্বরবিশিষ্ট নিপুণ বাদ্যকরের সুচারু সঙ্গীতস্বরূপ; তাহারা তোমার বাক্য শুনে, কিন্তু পালন করে না।” (যিহি. ৩৩:৩২) একজন ব্যক্তিকে এই কথা বলা কঠিন হতে পারে যে, আমরা তার সঙ্গে অধ্যয়ন বন্ধ করে দেব। কিন্তু, “সময় সঙ্কুচিত।” (১ করি. ৭:২৯) উন্নতি করছে না এমন এক অধ্যয়নের পিছনে আর সময় ব্যয় না করে, আমাদের এমন কাউকে খুঁজতে হবে, যিনি প্রমাণ দেন যে, তিনি “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত [“সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন,” NW]।”—পড়ুন, প্রেরিত ১৩:৪৮.
২১. দু-হাজার কুড়ি সালের জন্য আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ কী এবং এটা আমাদের কী করার জন্য সাহায্য করবে?
২১ দু-হাজার কুড়ি সালে, আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ আমাদের সাহায্য করবে, যেন আমরা শিষ্য তৈরি করার যে-কাজ আমাদের রয়েছে, সেটার গুণগত মানকে আরও উন্নত করার উপর মনোযোগ দিই। গালীলের একটা পর্বতে সেই গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশে যিশু যে-কথাগুলো বলেছিলেন, সেগুলোর কয়েকটা এই বার্ষিক শাস্ত্রপদের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে: ‘অতএব তোমরা গিয়া শিষ্য কর; তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর।’—মথি ২৮:১৯.
গান সংখ্যা ৪৪ শস্যচ্ছেদনের কাজে আনন্দের সঙ্গে অংশ নেওয়া
a ২০২০ সালের জন্য আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ, ‘শিষ্য করিবার’ বিষয়ে আমাদের উৎসাহিত করে। এই আজ্ঞা যিহোবার সমস্ত দাসের প্রতি প্রযোজ্য। কীভাবে আমরা আমাদের বাইবেল ছাত্রদের খ্রিস্টের শিষ্য হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারি? এই প্রবন্ধ দেখাবে, কীভাবে আমরা আমাদের বাইবেল ছাত্রদের যিহোবার আরও নিকটবর্তী হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারি। এ ছাড়া, আমরা বিবেচনা করব, কীভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে, একজন ব্যক্তির সঙ্গে আমরা বাইবেল অধ্যয়ন চালিয়ে যাব, না কি বন্ধ করে দেব।
b JW ব্রডকাস্টিং-এ উন্নতি করছে না এমন বাইবেল অধ্যয়ন বন্ধ করে শিরোনামের ভিডিওটা দেখুন।