সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩

কীভাবে আপনি আপনার হৃদয়কে রক্ষা করতে পারেন?

কীভাবে আপনি আপনার হৃদয়কে রক্ষা করতে পারেন?

“সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর।”—হিতো. ৪:২৩.

গান সংখ্যা ৫২ তোমার হৃদয়কে রক্ষা করো

সারাংশ a

১-৩. (ক) কেন যিহোবা শলোমনকে ভালোবেসেছিলেন এবং শলোমন কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর পাব?

 শলোমন যখন ইস্রায়েলের রাজা হয়েছিলেন, তখন তিনি একজন অল্পবয়সি ছিলেন। তার রাজত্বের শুরুর দিকে যিহোবা তাকে একটা স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বলেছিলেন: “যাচ্ঞা কর, আমি তোমাকে কি দিব?” উত্তরে শলোমন বলেছিলেন: “আমি ক্ষুদ্র বালকমাত্র, বাহিরে যাইতে ও ভিতরে আসিতে জানি না। . . . অতএব তোমার প্রজাদের বিচার করিতে . . . তোমার এই দাসকে বুঝিবার চিত্ত [“বাধ্য হৃদয়,” NW] প্রদান কর।” (১ রাজা. ৩:৫-১০) শলোমন এক “বাধ্য হৃদয়” চেয়েছিলেন আর এটা দেখায় যে, তিনি কতটা নম্র ছিলেন! এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি, কেন যিহোবা শলোমনকে ভালোবাসতেন! (২ শমূ. ১২:২৪) আমাদের ঈশ্বর সেই অল্পবয়সি রাজার উত্তরে এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে, তিনি শলোমনকে এক “জ্ঞানশালী ও বুঝিবার চিত্ত” বা হৃদয় দিয়েছিলেন।—১ রাজা. ৩:১২.

শলোমন যতদিন পর্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন, ততদিন পর্যন্ত তিনি যিহোবার কাছ থেকে অনেক আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন। তিনি “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে” মন্দির নির্মাণ করার সম্মান লাভ করেছিলেন। (১ রাজা. ৮:২০) তিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া প্রজ্ঞার কারণে সুপরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। আর সেইসঙ্গে তিনি ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যা-কিছু বলেছিলেন, সেগুলো বাইবেলের তিনটে বইয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এই বইগুলোর মধ্যে একটা হল হিতোপদেশ।

নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেলের হিতোপদেশ বইয়ে হৃদয় শব্দটা প্রায় ১০০ বার পাওয়া যায়। উদাহরণ স্বরূপ, হিতোপদেশ ৪:২৩ পদে আমরা পড়ি: “সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর।” এই শাস্ত্রপদে, “হৃদয়” শব্দের দ্বারা কী বোঝাতে চাওয়া হয়েছে? এই প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর পাব। এ ছাড়া, এই প্রবন্ধে আমরা আরও দুটো প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিবেচনা করব: কীভাবে শয়তান আমাদের হৃদয়কে কলুষিত করার চেষ্টা করে? আর আমরা আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করার জন্য কী করতে পারি? ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর বুঝতে হবে।

“তোমার হৃদয়” অভিব্যক্তির দ্বারা কী বোঝাতে চাওয়া হয়েছে?

৪-৫. (ক) বাইবেলে “হৃদয়” শব্দের দ্বারা কী বোঝাতে চাওয়া হয়েছে? (খ) আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্ব কেমন, সেই বিষয়টার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা কেন গুরুত্বপূর্ণ? উদাহরণের সাহায্য ব্যাখ্যা করুন।

হিতোপদেশ ৪:২৩ পদে ব্যবহৃত “হৃদয়” শব্দটা আমাদের ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, মনোভাব ও আকাঙ্ক্ষাকে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এটা কেবল আমাদের বাইরের ব্যক্তিত্বকে নয় কিন্তু সেইসঙ্গে ভিতরের ব্যক্তিত্বকেও বোঝায়।

আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্ব কেমন, সেই বিষয়টার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা কেন গুরুত্বপূর্ণ? এটা বোঝার জন্য আমাদের শরীরের কথা চিন্তা করুন। প্রথমত, আমরা যদি শারীরিকভাবে ভিতর থেকে সুস্থ থাকতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া বেছে নিতে হবে এবং নিয়মিতভাবে শরীরচর্চা করতে হবে। একইভাবে, আমাদের রূপক হৃদয়কে স্বাস্থ্যবান রাখার জন্য আমাদের অবশ্যই নিয়মিতভাবে বাইবেল ও বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা পড়তে হবে এবং নিয়মিতভাবে যিহোবার প্রতি আমাদের বিশ্বাস দেখাতে হবে। আর যিহোবার প্রতি আমাদের বিশ্বাস দেখানোর জন্য আমরা যা-শিখি, তা কাজে লাগাতে হবে এবং আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে অন্যদের বলতে হবে। (রোমীয় ১০:৮-১০; যাকোব ২:২৬) দ্বিতীয়ত, আমরা হয়তো বাইরে থেকে নিজেদের দেখে স্বাস্থ্যবান বলে মনে করতে পারি যদিও আমাদের ভিতরে কোনো রোগ রয়েছে। একইভাবে, আমরা হয়তো ঈশ্বরের সেবায় নিজেদের ব্যস্ত দেখে বিশ্বাসে দৃঢ় আছি বলে মনে করতে পারি কিন্তু মন্দ আকাঙ্ক্ষা আমাদের ভিতরে বৃদ্ধি পেতে পারে। (১ করি. ১০:১২; যাকোব ১:১৪, ১৫) আমাদের অবশ্যই এটা মনে রাখতে হবে, শয়তান তার চিন্তাভাবনার দ্বারা আমাদের কলুষিত করতে চায়। কীভাবে সে হয়তো এমনটা করার চেষ্টা করে? আর কীভাবে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি?

কীভাবে শয়তান আমাদের হৃদয়কে কলুষিত করার চেষ্টা করে?

৬. শয়তানের লক্ষ্য কী আর সে কীভাবে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করে?

শয়তান আমাদের তার মতো বিদ্রোহী বানাতে চায়। সে চায় যেন আমরা যিহোবার মানগুলো উপেক্ষা করি এবং স্বার্থপর মনোভাবের দ্বারা পরিচালিত হই। তবে, শয়তান আমাদের তার মতো করে যুক্তি করার ও কাজ করার জন্য জোর করতে পারে না। তাই, সে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অন্যান্য উপায় বেছে নেয়। উদাহরণ স্বরূপ, সে আমাদের এমন লোকেদের মাঝে রাখে, যারা ইতিমধ্যেই তার দ্বারা কলুষিত হয়ে গিয়েছে। (১ যোহন ৫:১৯) সে আশা করে যে, আমরা সেই লোকেদের সঙ্গে সময় কাটানো বেছে নেব আর তা এমনকী এটা জানা সত্ত্বেও যে, কুসংসর্গ আমাদের চিন্তাভাবনা ও কাজকর্মকে “নষ্ট” বা কলুষিত করে দেবে। (১ করি. ১৫:৩৩) এই কৌশল রাজা শলোমনের ক্ষেত্রে কাজ করেছিল। তিনি এমন অনেক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন, যারা পৌত্তলিক উপাসনা করত। আর তারা পরিশেষে শলোমনের উপর এক জোরালো প্রভাব ফেলেছিল এবং ধীরে ধীরে “তাঁহার হৃদয়কে” যিহোবার কাছ থেকে ‘বিপথগামী করিয়াছিল।’—১ রাজা. ১১:৩.

কীভাবে আপনি আপনার হৃদয়কে শয়তানের চিন্তাভাবনার দ্বারা কলুষিত হওয়ার হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন? (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন) c

৭. শয়তান তার চিন্তাভাবনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আর কোন উপায় ব্যবহার করে এবং কেন আমাদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে?

শয়তান তার চিন্তাভাবনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সিনেমা ও টিভি প্রোগ্রামগুলো ব্যবহার করে। সে এটা বোঝে যে, গল্প মনোরঞ্জনের চেয়ে আরও বেশি কিছু সম্পাদন করে; এটা আমাদের শেখায়, কীভাবে চিন্তা করতে হয়, কেমন অনুভব করতে হয় ও কীভাবে কাজ করতে হয়। যিশু শিক্ষাদানের এই পদ্ধতিটা খুব ভালোভাবে ব্যবহার করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, তাঁর বলা প্রতিবেশীসুলভ শমরীয় ও অপব্যয়ী পুত্রের নীতিগল্পগুলো বিবেচনা করতে পারেন। (মথি ১৩:৩৪; লূক ১০:২৯-৩৭; ১৫:১১-৩২) যাইহোক, যারা শয়তানের চিন্তাভাবনার দ্বারা কলুষিত হয়ে গিয়েছে, তারা আমাদের কলুষিত করার জন্য গল্প ব্যবহার করতে পারে। আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে। সিনেমা ও টিভি প্রোগ্রামগুলো আমাদের চিন্তাভাবনাকে কলুষিত না করেও আনন্দ ও শিক্ষা প্রদান করতে পারে। কিন্তু, আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। আমরা যখন আমোদপ্রমোদ বাছাই করি, তখন নিজেদের এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘এই সিনেমা অথবা টিভি প্রোগ্রাম কি আমাকে এটা শেখাচ্ছে যে, মাংসিক আকাঙ্ক্ষার কাছে নতিস্বীকার করা ভুল নয়?’ (গালা. ৫:১৯-২১; ইফি. ২:১-৩) আপনি যদি বুঝতে পারেন যে, কোনো প্রোগ্রাম শয়তানের চিন্তাভাবনাকে তুলে ধরছে, তা হলে আপনার কী করা উচিত? সেটাকে এড়িয়ে চলুন, ঠিক যেমনটা আপনি কোনো ছোঁয়াচে রোগের ক্ষেত্রে করবেন!

৮. কীভাবে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সাহায্য করতে পারেন, যাতে তারা নিজেদের হৃদয় রক্ষা করতে পারে?

বাবা-মায়েরা, আপনাদের বিশেষ দায়িত্ব হল আপনাদের সন্তানদের হৃদয়কে শয়তানের চিন্তাভাবনার দ্বারা কলুষিত হওয়ার হাত থেকে সুরক্ষিত রাখা। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনারা আপনাদের সন্তানদের রোগের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য যথাসাধ্য করেন। আপনারা আপনাদের বাড়ি পরিষ্কার রাখেন এবং এমন যেকোনো বিষয় ফেলে দেন, যেগুলোর কারণে হয়তো আপনারা অথবা আপনাদের সন্তানরা অসুস্থ হতে পারে। একইভাবে, আপনাদের সন্তানদের এমন সিনেমা, টিভি প্রোগ্রাম, ইলেকট্রনিক গেমস্‌ অথবা ওয়েবসাইটগুলো থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে, যেগুলো হয়তো শয়তানের চিন্তাভাবনার দ্বারা তাদের কলুষিত করতে পারে। যিহোবা আপনাদের এই দায়িত্ব দিয়েছেন যেন আপনারা আপনাদের সন্তানদের যিহোবার বন্ধু হয়ে উঠতে সাহায্য করেন। (হিতো. ১:৮; ইফি. ৬:১, ৪) তাই, আপনাদের পরিবারের জন্য বাইবেলের মান অনুযায়ী নিয়ম স্থির করার ক্ষেত্রে ভয় পাবেন না। আপনাদের অল্পবয়সি সন্তানদের বলুন যে, তারা কোন বিষয়গুলো দেখতে পারে আর কোন বিষয়গুলো দেখতে পারে না এবং তাদের বুঝতে সাহায্য করুন, কেন আপনারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। (মথি ৫:৩৭) আপনাদের সন্তানরা যখন ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে ওঠে, তখন তাদের এটা বোঝার জন্য অভ্যাস করান বা প্রশিক্ষণ দিন যে, যিহোবার মান অনুযায়ী কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল। (ইব্রীয় ৫:১৪) আর মনে রাখবেন, আপনারা যা বলেন, সেটা থেকে সন্তানরা অনেক কিছু শিখবে। তবে, আপনারা যা করেন, সেটা থেকে তারা আরও বেশি শিখতে পারবে।—দ্বিতীয়. ৬:৬, ৭; রোমীয় ২:২১.

৯. শয়তানের দ্বারা তুলে ধরা একটা ধারণা কী এবং কেন এটা বিপদজনক?

শয়তান আরেকটা উপায়ে আমাদের হৃদয়কে কলুষিত করার চেষ্টা করে। সে চায় যেন আমরা যিহোবার চিন্তাভাবনা বিপরীতে মানুষের প্রজ্ঞার উপর আস্থা রাখি। (কল. ২:৮) শয়তানের তুলে ধরা কেবল একটা ধারণা বিবেচনা করুন। সে বলে থাকে, ধনী হওয়াই যেন আমাদের জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়। যারা এভাবে চিন্তা করে, তারা ধনী হতে পারে অথবা নাও হতে পারে। তবে, উভয় ক্ষেত্রেই তারা বিপদের মুখে রয়েছে। কেন? কারণ তারা হয়তো সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য টাকাপয়সা উপার্জন করার উপর এতটাই মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে যে, তারা তাদের স্বাস্থ্য, পারিবারিক সম্পর্ক আর এমনকী ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বও ঝুঁকির মুখে ফেলে। (১ তীম. ৬:১০) আমরা কৃতজ্ঞ যে, আমাদের বিজ্ঞ স্বর্গীয় পিতা টাকাপয়সা সম্বন্ধে আমাদের এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করেন।—উপ. ৭:১২; লূক ১২:১৫.

কীভাবে আমরা আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করতে পারি?

অতীতের সময়ের প্রহরী ও দ্বাররক্ষকদের মতো সতর্ক থাকুন এবং কাজ করুন, যাতে মন্দ বিষয়গুলো আপনার হৃদয়ে প্রবেশ করতে না পারে (১০-১১ অনুচ্ছেদ দেখুন) d

১০-১১. (ক) আমাদের নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে? (খ) প্রাচীন কালে প্রহরীরা কী করত এবং কীভাবে আমাদের বিবেক আমাদের প্রহরী হিসেবে কাজ করতে পারে?

১০ আমরা যদি আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করতে চাই, তা হলে প্রথমে আমাদের বিপদগুলোকে শনাক্ত করতে হবে এবং তারপর, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। হিতোপদেশ ৪:২৩ পদে “রক্ষা কর” হিসেবে অনুবাদিত অভিব্যক্তিটা আমাদের একজন প্রহরীর কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। রাজা শলোমনের দিনে, একজন প্রহরী একটা নগরের প্রাচীরের উপরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিতেন এবং কোনো বিপদ দেখতে পেলে শব্দ করে সংকেত দিতেন। এই বিষয়টা নিয়ে কল্পনা করা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, শয়তান যাতে আমাদের চিন্তাভাবনাকে কলুষিত করতে না পারে, সেইজন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে।

১১ প্রাচীন কালে প্রহরীরা ও দ্বারী বা দ্বাররক্ষকেরা একটা দল হিসেবে কাজ করত। (২ শমূ. ১৮:২৪-২৬) কোনো শত্রু নগরের কাছাকাছি চলে এলে প্রহরীরা দ্বাররক্ষককে সংকেত দিত এবং দ্বাররক্ষক নগরের দরজা বন্ধ করে দিত আর এভাবে তারা একত্রে নগরকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করত। (নহি. ৭:১-৩) আমাদের বাইবেল প্রশিক্ষিত বিবেক b আমাদের প্রহরী হিসেবে কাজ করতে পারে এবং শয়তান যখন আমাদের হৃদয়কে আক্রমণ করার চেষ্টা করে অর্থাৎ আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, মনোভাব অথবা আকাঙ্ক্ষাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, তখন আমাদের বাইবেল প্রশিক্ষিত বিবেক আমাদের বিপদসংকেত দিতে পারে। আর আমাদের বিবেক যখন আমাদের বিপদসংকেত দেয়, তখন আমাদের সেটার কথা শুনতে হবে এবং আমাদের হৃদয়ের দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।

১২-১৩. আমরা কী করার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারি কিন্তু আমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?

১২ কীভাবে আমরা শয়তানের চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার হাত থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারি, সেই বিষয়ে একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। যিহোবা আমাদের শিখিয়েছেন যেন “বেশ্যাগমনের ও সর্ব্বপ্রকার অশুদ্ধতার . . . নামও যেন [আমাদের] মধ্যে না” থাকে। (ইফি. ৫:৩) কিন্তু, আমাদের কাজের জায়গায় সহকর্মীরা অথবা স্কুলে সহপাঠীরা যদি অনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করে, তা হলে আমরা কী করব? আমরা জানি যে, আমাদের “ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার” করা উচিত। (তীত ২:১২) আমাদের প্রহরী অর্থাৎ সংবেদ বা বিবেক হয়তো আমাদের বিপদসংকেত দিতে পারে। (রোমীয় ২:১৫) কিন্তু, আমরা কি এটার কথা শোনা বেছে নেব? আমরা হয়তো আমাদের সহকর্মী অথবা সহপাঠীদের কথা শোনার কিংবা তারা যে-ছবিগুলো একে অপরকে দেখাচ্ছে, সেগুলো দেখার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারি। কিন্তু, এটাই সেই সময়, যখন নগরের দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। অন্যভাবে বললে, আমাদের কথাবার্তা পরিবর্তন করতে হবে অথবা সেখান থেকে চলে যেতে হবে।

১৩ আমাদের সহকর্মী অথবা সহপাঠীরা যখন মন্দ বিষয় নিয়ে চিন্তা করার অথবা মন্দ কাজ করার জন্য আমাদের চাপ দেয়, তখন তা প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের সাহসের প্রয়োজন হয়। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের প্রচেষ্টা লক্ষ করেন এবং তিনি আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তি ও প্রজ্ঞা দেবেন, যাতে আমরা শয়তানের চিন্তাভাবনা প্রত্যাখ্যান করতে পারি। (২ বংশা. ১৬:৯; যিশা. ৪০:২৯; যাকোব ১:৫) তা হলে, আমরা আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করার জন্য আর কী করতে পারি?

সতর্ক থাকুন

১৪-১৫. (ক) কখন আমাদের হৃদয়ের দরজা খুলতে হবে এবং কীভাবে আমরা তা করতে পারি? (খ) কীভাবে হিতোপদেশ ৪:২০-২২ পদ আমাদের বাইবেল পাঠ থেকে আরও বেশি উপকার লাভ করতে সাহায্য করে? (এ ছাড়া, “ যেভাবে ধ্যান করা যায়” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)

১৪ আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করার জন্য কেবল মন্দ বিষয় দেখা দিলে হৃদয়ের দরজা বন্ধ করলেই চলবে না কিন্তু সেইসঙ্গে ইতিবাচক বিষয় দেখা দিলে এটাকে খুলতেও হবে। সেই প্রাচীরবেষ্টিত নগরের দৃষ্টান্তটা নিয়ে আবারও চিন্তা করুন। দ্বাররক্ষক কোনো শত্রুর আক্রমণের হাত থেকে নগরকে সুরক্ষিত রাখার জন্য দরজাগুলো বন্ধ করে দেন, তবে অন্যান্য সময়ে তিনি দরজাগুলো খুলে দেন, যাতে খাবার ও সেইসঙ্গে অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ভিতরে আনা যেতে পারে। দরজাগুলো যদি কখনো খোলা না হয়, তা হলে নগরের লোকেরা না খেতে পেয়ে মারা যাবে। একইভাবে, ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার জন্য আমাদের নিয়মিতভাবে নিজেদের হৃদয়ের দরজাকে খুলতে হবে।

১৫ বাইবেলে যিহোবার চিন্তাভাবনা লিপিবদ্ধ রয়েছে আর আমরা যখন প্রতি বার এটি পড়ি, তখন আমরা যিহোবার চিন্তাভাবনাকে আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি ও কাজের উপর প্রভাব ফেলার সুযোগ করে দিই। কীভাবে আমরা আমাদের বাইবেল পাঠ থেকে আরও বেশি উপকার লাভ করতে পারি? প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ। একজন খ্রিস্টান বোন বলেন: “বাইবেল পড়ার আগে আমি যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করি, যেন তিনি আমাকে তাঁর বাক্য থেকে ‘আশ্চর্য্য আশ্চর্য্য বিষয় দেখিতে’ সাহায্য করেন।” (গীত. ১১৯:১৮) এ ছাড়া, আমরা যা-কিছু পড়ি, সেগুলো নিয়ে ধ্যান করতে হবে। আমরা যখন প্রার্থনা করি, পড়ি ও ধ্যান করি, তখন ঈশ্বরের বাক্য আমাদের “হৃদয়মধ্যে” প্রবেশ করে এবং আমরা যিহোবার চিন্তাভাবনাকে ভালোবাসতে শিখি।—পড়ুন, হিতোপদেশ ৪:২০-২২; গীত. ১১৯:৯৭.

১৬. কীভাবে JW ব্রডকাস্টিং আমাদের উপকৃত করে? একটা উদাহরণ দিন।

১৬ আরেকটা যে-উপায়ে আমরা ঈশ্বরের চিন্তাভাবনাকে আমাদের হৃদয়ে প্রভাব ফেলতে দিই, সেটা হল JW ব্রডকাস্টিং-এ পাওয়া বিষয়বস্তু দেখার মাধ্যমে। এক বিবাহিত দম্পতি বলেন: “মাসিক কার্যক্রমগুলো সত্যিই আমাদের প্রার্থনার এক উত্তর! আমরা যখন দুঃখের মধ্যে থাকি অথবা একাকিত্ব বোধ করি, তখন এই কার্যক্রমগুলো আমাদের শক্তিশালী ও উৎসাহিত করে। আর আমরা প্রায়ই বাড়িতে ব্রডকাস্টিং-এর গানগুলো শুনে থাকি। আমরা রান্না করার, পরিষ্কার করার অথবা চা খাওয়ার সময়ে এই গানগুলো শুনে থাকি।” এই কার্যক্রমগুলো আমাদের নিজেদের হৃদয়কে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এগুলো আমাদের যিহোবার মতো করে চিন্তা করতে এবং শয়তানের চিন্তাভাবনা গ্রহণ করার চাপকে প্রতিরোধ করতে শেখায়।

১৭-১৮. (ক) ১ রাজাবলি ৮:৬১ পদে যেমন দেখানো হয়েছে, যিহোবার কাছ থেকে শেখা বিষয়গুলো কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা কী প্রমাণ করি? (খ) রাজা হিষ্কিয়ের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (গ) গীতসংহিতা ১৩৯:২৩, ২৪ পদে পাওয়া দায়ূদের প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কীসের জন্য আমরা প্রার্থনা করতে পারি?

১৭ প্রতি বার আমরা যখন যা সঠিক, তা করার উপকারগুলো দেখি, তখন আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়। (যাকোব ১:২, ৩) আমাদের ভালো লাগে কারণ যিহোবা আমাদের তাঁর সন্তান বলতে পেরে গর্ব বোধ করেন আর এর ফলে, তাঁকে খুশি করার বিষয়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষা আরও দৃঢ় হয়। (হিতো. ২৭:১১) প্রতিটা পরীক্ষা এটা দেখানোর সুযোগ করে দেয় যে, আমরা আমাদের যত্নশীল পিতার সেবা করার বিষয়ে দ্বিমনা নই। (গীত. ১১৯:১১৩) এর পরিবর্তে, আমরা প্রমাণ করি যে, আমরা একাগ্র অন্তঃকরণে বা হৃদয়ে যিহোবাকে ভালোবাসি অর্থাৎ আমরা এই বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ যে, আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতে তাঁর আজ্ঞার বাধ্য হব এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করব।—পড়ুন, ১ রাজাবলি ৮:৬১.

১৮ আমরা কি ভুল করে ফেলতে পারি? হ্যাঁ, পারি। কারণ আমরা অসিদ্ধ। আমরা যদি ভুল করে ফেলি, তা হলে আমরা রাজা হিষ্কিয়ের উদাহরণ স্মরণ করতে পারি। তিনি ভুল করেছিলেন। কিন্তু, তিনি অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং “একাগ্র চিত্তে” বা হৃদয়ে যিহোবার সেবা করে গিয়েছিলেন। (যিশা. ৩৮:৩-৬; ২ বংশা. ২৯:১, ২; ৩২:২৫, ২৬) তাই আসুন, শয়তান যখন তার চিন্তাভাবনার দ্বারা আমাদের কলুষিত করার চেষ্টা করে, তখন আমরা যেন সেটাকে প্রত্যাখ্যান করি। আমরা যেন এক “বাধ্য হৃদয়” গড়ে তোলার বিষয়ে প্রার্থনা করি। (১ রাজা. ৩:৯; পড়ুন, গীতসংহিতা ১৩৯:২৩, ২৪.) আমরা যদি সমস্ত কিছুর উর্ধ্বে আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করি, তা হলে আমরা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারব।

গান সংখ্যা ৩২ সুস্থির হও, নিশ্চল হও!

a আমরা কি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকব, না কি শয়তানকে সুযোগ দেব, যাতে সে আমাদের যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা কতটা চরমভাবে পরীক্ষিত হচ্ছি, সেটার উপর নয় বরং আমরা কতটা ভালোভাবে আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করছি, সেটার উপর নির্ভর করে। “হৃদয়” শব্দের দ্বারা কী বোঝাতে চাওয়া হয়েছে? কীভাবে শয়তান আমাদের হৃদয়কে কলুষিত করার চেষ্টা করে? আর কীভাবে আমরা এটাকে রক্ষা করতে পারি? এই প্রবন্ধ আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে সাহায্য করবে।

b এর অর্থ কী?: যিহোবা আমাদের নিজেদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি ও কাজকে পরীক্ষা করে দেখার আর তারপর নিজেদের বিচার করার ক্ষমতা দিয়েছেন। বাইবেল এই ক্ষমতাকে সংবেদ বা বিবেক বলে। (রোমীয় ২:১৫; ৯:১) বাইবেল প্রশিক্ষিত বিবেক, বাইবেলে পাওয়া যিহোবার মানের উপর ভিত্তি করে বিচার করতে পারে যে, আমাদের চিন্তাভাবনা, কথা ও কাজ সঠিক, না কি ভুল।

c ছবি সম্বন্ধে: একজন বাপ্তাইজিত ভাই টিভি দেখছেন এবং একটা অনৈতিক দৃশ্য টিভির স্ক্রিনে চলে আসে। তাকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তিনি কী করবেন।

d ছবি সম্বন্ধে: প্রাচীন কালের একজন প্রহরী নগরের বাইরে কোনো বিপদ দেখতে পান। তিনি উচ্চস্বরে নীচে দ্বাররক্ষকদের তা জানান এবং তারা নগরের দরজাগুলো বন্ধ করার ও সেগুলো ভিতর থেকে আটকে দেওয়ার মাধ্যমে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখান।