সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪২

যিহোবার বিশ্বস্ত লোকেরা আনন্দে থাকে!

যিহোবার বিশ্বস্ত লোকেরা আনন্দে থাকে!

“তোমার সাধুগণ [“বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা,” NW] আনন্দগান করুক।”—গীত. ১৩২:৯.

গান ১৮ ঈশ্বরের অনুগত প্রেম

সারাংশ a

আমাদের কিছু ভাই-বোনকে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার কারণে জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েক জন এখনও জেলে আছে। আমাদের এই ভাই-বোনেরা সত্যিই অনেক সাহসের পরিচয় দিয়েছে! (১-২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১-২. (ক) কিছু সরকার কী করেছে, তারপরও যিহোবার লোকেরা কী করে? (খ) আমাদের যদি তাড়না করা হয়, তারপরও কীভাবে আমরা আনন্দে থাকতে পারি? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটাও দেখুন।)

 বর্তমানে, ৩০টারও বেশি দেশে ও এলাকায় আমাদের কাজের উপর বিধি-নিষেধ রয়েছে কিংবা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু দেশের কর্তৃপক্ষেরা আমাদের ভাই-বোনদের জেলে বন্দি করে রেখেছে। তাদের অপরাধ কী? যিহোবার চোখে তারা ভুল কিছু করেনি। তারা বাইবেল পড়ত এবং তা নিয়ে অধ্যয়ন করত, প্রচারে যেত এবং সভাগুলোর জন্য একত্রিত হত আর তারা রাজনৈতিক বিষয়ে কারো পক্ষ নিত না। কেবল এই বিষয়গুলোর জন্যই তাদের জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তবে, এই ভাই-বোনদের বিরোধিতা করার পরও তাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়েনি। তারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছে। এই কারণেই তারা আজ আনন্দে রয়েছে।

সত্যিই, এই ভাই-বোনেরা অনেক সাহসের পরিচয় দিয়েছে। আপনি হয়তো তাদের মধ্যে কিছু জনের ছবি দেখেছেন এবং খেয়াল করেছেন যে, তাদের মুখে সবসময় হাসি রয়েছে। কেন তারা এত আনন্দে থাকে? কারণ তারা জানে, যিহোবা এটা দেখে খুব খুশি যে, তারা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত রয়েছে। (১ বংশা. ২৯:১৭) যিশু বলেছিলেন: ‘সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা সঠিক কাজ করার জন্য তাড়িত হয়, তোমরা আনন্দ কোরো এবং উল্লসিত হোয়ো, কারণ তোমাদের পুরস্কার প্রচুর।’—মথি ৫:১০-১২.

প্রেরিতদের মতো যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন

পিতর ও যোহনের মতো আজও খ্রিস্টানেরা সাহসের সঙ্গে আদালতে সবার সামনে বলে যে, তারা কী বিশ্বাস করে (৩-৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৩. প্রেরিতদের যখন বিরোধিতা করা হয়েছিল, তখন তারা কী করেছিলেন আর কেন? (প্রেরিত ৪:১৯, ২০)

বর্তমানে আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি যা-কিছু ঘটছে, সেগুলো নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রথম শতাব্দীতেও প্রেরিতদের প্রতি এইরকমই কিছু ঘটেছিল। তারা যখন যিশুর বিষয়ে প্রচার করেছিলেন, তখন তাদের উপরও অনেক অত্যাচার করা হয়েছিল। মহাসভার কর্তৃপক্ষেরা বার বার চেষ্টা করেছিল, যাতে প্রচার কাজ বন্ধ হয়ে যাক। তারা প্রেরিতদের আদেশ দিয়েছিল যেন ‘তারা যিশুর নামে আর কিছু না বলে।’ (প্রেরিত ৪:১৮; ৫:২৭, ২৮, ৪০) তবে, প্রেরিতেরা কি তাদের কথা শুনেছিলেন? (পড়ুন, প্রেরিত ৪:১৯, ২০.) তারা জানতেন যে, কেউ একজন রয়েছেন, যাঁর এই কর্তৃপক্ষদের চেয়েও বেশি ক্ষমতা রয়েছে আর তিনি তাদের আজ্ঞা দিয়েছেন, যেন তারা খ্রিস্টের বিষয়ে ‘লোকদের কাছে প্রচার করে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য’ দেয়। (প্রেরিত ১০:৪২) তাই, সমস্ত প্রেরিতের পক্ষ থেকে পিতর ও যোহন সাহসের সঙ্গে সেই কর্তৃপক্ষদের বলেছিলেন, তারা তাদের দেওয়া আজ্ঞা পালন করার পরিবর্তে ঈশ্বরের দেওয়া আজ্ঞা পালন করবেন এবং যিশুর বিষয়ে বলা কখনো বন্ধ করবেন না। তারা যেন বলছিলেন, ‘তোমাদের কী মনে হয়, তোমরা কি এতটাই বড়ো হয়ে গিয়েছে যে, আমরা ঈশ্বরের কথা না শুনে বরং তোমাদের কথা শুনব?’

৪. প্রেরিত ৫:২৭-২৯ পদ অনুযায়ী প্রেরিতেরা কী করেছিলেন এবং কীভাবে আমরা তাদের মতো হতে পারি?

প্রেরিতেরা ‘মানুষের প্রতি নয় বরং শাসক হিসেবে ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হয়েছিলেন।’ সেইসময় থেকে এখনও পর্যন্ত খ্রিস্টানেরা এমনটা করার চেষ্টা করছে। (পড়ুন, প্রেরিত ৫:২৭-২৯, পাদটীকা) তবে, প্রেরিতেরা যখন কর্তৃপক্ষের কথা না শুনে বরং যিশুর বিষয়ে প্রচার করে গিয়েছিলেন, তখন তাদের অনেক মারধর করা হয়েছিল। সেইসময়ে, এই প্রেরিতেরা কি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন কিংবা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন? না। “তখন তারা আনন্দ করতে করতে মহাসভার সামনে থেকে চলে গেলেন, কারণ যিশুর নামে অপমানিত হওয়ার জন্য ঈশ্বর তাদের যোগ্য বলে মনে করেছিলেন।” তারা হাল ছেড়ে দেননি বরং উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করে গিয়েছিলেন।—প্রেরিত ৫:৪০-৪২.

৫. আমাদের মনে কোন কোন প্রশ্ন আসতে পারে?

বিরোধিতা আসার সময় প্রেরিতেরা যা করেছিলেন, তা নিয়ে চিন্তা করলে আমাদের মনে কিছু প্রশ্ন আসতে পারে। আজ আমরা জানি যে, খ্রিস্টানদের “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বশীভূত” থাকা উচিত। (রোমীয় ১৩:১) তবে, প্রেরিতেরা যখন সেই কর্তৃপক্ষদের পরিবর্তে ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন কি তারা সঠিক কাজ করেছিলেন? আজ আমরা “সরকারের ও কর্তৃপক্ষের বশীভূত” হওয়ার পাশাপাশি কীভাবে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি?—তীত ৩:১.

‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’

৬. (ক) রোমীয় ১৩:১ পদে যাদের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলা হয়েছে, তারা কারা আর তাদের সঙ্গে আমাদের কেমন আচরণ করা উচিত? (খ) তাদের কাছে যে-ক্ষমতা রয়েছে, সেটার বিষয়ে আমরা কী বলতে পারি?

রোমীয় ১৩:১ পদ পড়ুন। এই পদে ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ হল তারা, যাদের কাছে অন্যদের উপর কিছু অধিকার বা ক্ষমতা আছে। তারা এই বিষয়ে খেয়াল রাখে যেন সবাই নিয়মকানুন মেনে চলে এবং সমস্ত কিছু সুশৃঙ্খলভাবে হয়। আর কখনো কখনো তারা যিহোবার লোকদেরও সুরক্ষা জোগায়। (প্রকা. ১২:১৬) সমস্ত খ্রিস্টানের এই কর্তৃপক্ষদের বশীভূত হওয়া উচিত। বাইবেল আমাদের জানায় যেন আমরা সরকারকে ট্যাক্স দিই এবং তাদের সম্মান ও সমাদর করি। (রোমীয় ১৩:৭) এই সরকারগুলোর কাছে যে-ক্ষমতা আছে, সেটা যিহোবাই তাদের দিয়েছেন। আর লক্ষ করুন, একবার যিশু কী বলেছিলেন। যখন রোমীয় রাজ্যপাল পন্তীয় পীলাত যিশুকে বলেছিলেন, তাঁর জীবন ও মৃত্যু তার হাতে রয়েছে, তখন যিশু বলেছিলেন, “ঈশ্বর যদি তোমাকে ক্ষমতা না দিতেন, তা হলে আমার উপর তোমার কোনো ক্ষমতা থাকত না।” (যোহন ১৯:১১) পীলাতের মতো আজকের কর্তৃপক্ষ ও নেতাদের কাছেও কেবল সীমিত ক্ষমতা রয়েছে।

৭. (ক) কখন আমাদের কর্তৃপক্ষদের কথা শোনা উচিত নয়? (খ) যে-কর্তৃপক্ষেরা যিশুর শিষ্যদের বিরোধিতা করে, তাদের কী হবে?

খ্রিস্টানেরা সেই সমস্ত আইনকানুন মেনে চলে, যেগুলো যিহোবার নীতিগুলোর বিরুদ্ধে নয়। তবে, সরকারগুলো যখন আমাদের এমন কিছু করতে বলে, যেটা যিহোবা করতে বারণ করেছেন অথবা তারা যখন আমাদের এমন কিছু করতে বারণ করে, যেটা যিহোবা করতে বলেছেন, তখন আমাদের তাদের কথা শোনা উচিত নয়। যেমন, তারা একটা আইন তৈরি করে বলতে পারে, একটা নির্দিষ্ট বয়স পার করার পর লোকদের সেনাবাহিনীতে ভরতি হতেই হবে। b অথবা তারা নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেল এবং অন্য প্রকাশনাগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। কিংবা তারা আমাদের প্রচার করতে এবং একসঙ্গে মিলিত হতে বারণ করতে পারে। অনেক সরকার এবং কর্তৃপক্ষ এমনটাই করে। তারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং যিশুর শিষ্যদের বিরোধিতা করে কিংবা তাদের উপর অত্যাচার করে। কিন্তু, এই সমস্ত কিছু যিহোবার কাছে লুকোনো নেই, তিনি এই কর্তৃপক্ষদের দেখছেন এবং যিহোবার কাছে তাদের কাজের জন্য নিকাশ দিতে হবে।—উপ. ৫:৮.

৮. যিহোবা এবং ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষদের’ মধ্যে কোন পার্থক্য রয়েছে?

“ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের” অর্থ হল এমন একজন ব্যক্তি, যিনি কোনো উচ্চ বা বড়ো পদে রয়েছেন। তবে এর অর্থ এই নয়, তিনিই সবচেয়ে উচ্চ বা সবচেয়ে বড়ো পদে রয়েছেন। বাইবেলে মানবসরকারগুলোকে ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলা হয়েছে, কিন্তু তাদের উপরেও কেউ একজন রয়েছেন, যাঁর কাছে তাদের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতা রয়েছে। তিনি হলেন যিহোবা ঈশ্বর, যাঁকে বাইবেলে অনেক বার ‘পরাৎপর [“সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী,” NW]’ বলা হয়েছে।—দানি. ৭:১৮, ২২, ২৫, ২৭.

“সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী”

৯. দানিয়েল দর্শনে কী দেখেছিলেন?

ভাববাদী দানিয়েল এমন কিছু দর্শন দেখেছিলেন, যেগুলো থেকে বোঝা যায়, সমস্ত কর্তৃপক্ষের চেয়ে যিহোবার কাছে অনেক বেশি ক্ষমতা রয়েছে। প্রথমে তিনি দর্শনে চারটে বড়ো বড়ো পশু দেখেছিলেন, যেগুলো আলাদা আলাদা বিশ্বশক্তিকে বোঝায়—ব্যাবিলন, মাদীয়-পারস্য, গ্রিস ও রোম আর রোম থেকেই বের হয়ে আসা অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি, যেটা এখন শাসন করছে। (দানি. ৭:১-৩, ১৭) এরপর দানিয়েল দেখেছিলেন, স্বর্গে যিহোবা তাঁর সিংহাসনে বসে আছেন এবং তাঁর সামনে বিচার শুরু হয়। (দানি. ৭:৯, ১০) এই সমস্ত কিছু দেখার পর দানিয়েলকে দর্শনে এমন কিছু দেখানো হয়, যেটা থেকে বোঝা যায় যে, বর্তমানের সরকারগুলোর কী দশা হবে।

১০. দানিয়েল ৭:১৩, ১৪, ২৭ পদ অনুযায়ী যিহোবা কাদের পৃথিবীতে শাসন করার ক্ষমতা দেবেন আর এখান থেকে কী বোঝা যায়?

১০ দানিয়েল ৭:১৩, ১৪, ২৭ পদ পড়ুন। ঈশ্বর মানবসরকারগুলোর কাছ থেকে শাসন করার ক্ষমতা কেড়ে নেবেন এবং তাদের দিয়ে দেবেন, যারা এদের চেয়ে বেশি যোগ্য ও শক্তিশালী। যিহোবা কাদের সেই ক্ষমতা দেবেন? “মনুষ্য-পুত্ত্রের ন্যায় এক পুরুষ” অর্থাৎ যিশু খ্রিস্টকে আর “পরাৎপরের পবিত্র প্রজাদিগকে” অর্থাৎ ১,৪৪,০০০ জনকে। তারা “যুগে যুগে চিরকাল” রাজত্ব করবে। (দানি. ৭:১৮) একমাত্র যিহোবাই মানবসরকারগুলোর কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারেন এবং অন্য কাউকে দিতে পারেন। সত্যিই, তিনি হলেন “সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।”

১১. যিহোবার কাছেই যে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা রয়েছে, সেই বিষয়টা আমরা দানিয়েল বইয়ে লেখা কোন কথাগুলো থেকে বুঝতে পারি?

১১ দানিয়েল ৭ অধ্যায়ে বলা দর্শন ছাড়াও দানিয়েল আগেও এমন কিছু লিখেছিলেন, যেটা থেকে বোঝা যায় যে, যিহোবা কারো কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতেও পারেন এবং কাউকে তা দিতেও পারেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘স্বর্গের ঈশ্বর রাজাদিগকে পদভ্রষ্ট করেন, ও রাজাদিগকে পদস্থ করেন।’ তিনি আরও লিখেছিলেন, “মনুষ্যদের রাজ্যে পরাৎপর কর্ত্তৃত্ব করেন, যাহাকে তাহা দিতে ইচ্ছা করেন, তাহাকে তাহা দেন।” (দানি. ২:১৯-২১; ৪:১৭) আপনার কি বাইবেলের এমন কোনো ঘটনার কথা মনে আছে, যখন যিহোবা কোনো রাজাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন কিংবা অন্য কাউকে নিযুক্ত করেছিলেন?

যিহোবা বেল্‌শৎসরের রাজ্য মাদীয় ও পারস্যদের দিয়ে দিয়েছিলেন (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২. এমন কোনো ঘটনার কথা বলুন, যখন যিহোবা কোনো রাজাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। (ছবি দেখুন।)

১২ বাইবেলে এমন অনেক ঘটনার কথা রয়েছে, যেগুলো থেকে বোঝা যায়, যিহোবার কাছে ‘ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষদের’ চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতা রয়েছে। আসুন, সেগুলোর মধ্যে তিনটে উদাহরণের উপর মনোযোগ দিই। মিশরের রাজা ফরৌণ ঈশ্বরের লোকদের দাস হিসেবে বন্দি করে রেখেছিলেন। যিহোবা মোশির মাধ্যমে তাকে অনেক বার বলেছিলেন, তিনি যেন তাদের ছেড়ে দেন। কিন্তু, ফরৌণ স্পষ্টভাবে বারণ করে দিয়েছিলেন। অবশেষে, যিহোবা তাঁর লোকদের রক্ষা করেছিলেন এবং ফরৌণকে লোহিত সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। (যাত্রা. ১৪:২৬-২৮; গীত. ১৩৬:১৫) এই ঘটনার কয়েক বছর পর, একদিন ব্যাবিলনের রাজা বেল্‌শৎসর একটা বড়ো ভোজের আয়োজন করেছিলেন এবং স্বর্গের প্রভুর বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেকে “উচ্চ” করেছিলেন। তিনি যিহোবার পরিবর্তে সেই দেবতাদের প্রশংসা করেছিলেন, যারা “রৌপ্যময়, সুবর্ণময়” ছিল। (দানি. ৫:২২, ২৩) কিন্তু, যিহোবা এই গর্বিত রাজাকে নত করেছিলেন। ‘সেই রাতেই’ বেল্‌শৎসরকে হত্যা করা হয়েছিল এবং তার রাজ্য মাদীয় ও পারস্যদের দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। (দানি. ৫:২৮, ৩০, ৩১) অনেক বছর পর, প্যালেস্টাইনের রাজা হেরোদ আগ্রিপ্প ১ম প্রেরিত যাকোবকে হত্যা করিয়েছিলেন এবং পিতরকে গ্রেপ্তার করেছিলেন, যাতে তিনি তাকেও হত্যা করতে পারেন। কিন্তু, যিহোবা এমনটা হতে দেননি। তিনি তাঁর একজন স্বর্গদূতের মাধ্যমে হেরোদকে শাস্তি দিয়েছিলেন এবং কিছুসময় পর হেরোদ মারা গিয়েছিলেন।—প্রেরিত ১২:১-৫, ২১-২৩.

১৩. যখন অনেক রাজা মিলে যিহোবার লোকদের উপর আক্রমণ করেছিল, তখনও যিহোবা কী প্রমাণ করেছিলেন? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

১৩ কখনো কখনো এমনও হয়েছে যে, অনেক রাজা একসঙ্গে মিলে যিহোবার লোকদের উপর আক্রমণ করেছিল। তখনও যিহোবা প্রমাণ করেছিলেন, তিনি হলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইজরায়েলীয়েরা যখন প্রতিজ্ঞাত দেশ দখল করতে যাচ্ছিল, তখন কনানের ৩১ জন রাজা একসঙ্গে মিলে তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সেইসময় যিহোবা ইজরায়েলীয়দের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন এবং সেই সমস্ত রাজাকে পরাজিত করেছিলেন। (যিহো. ১১:৪-৬, ২০; ১২:১, ৭, ২৪) আরেক বার, সিরিয়ার রাজা বিন্‌হদদ যখন ৩২ জন রাজার সঙ্গে মিলে ইজরায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছিল, তখন যিহোবা তাদেরও পুরোপুরিভাবে বিনষ্ট করেছিলেন।—১ রাজা. ২০:১, ২৬-২৯.

১৪-১৫. (ক) রাজা নবূখদ্‌নিৎসর এবং রাজা দারিয়াবস যিহোবার ক্ষমতার বিষয়ে কী বলেছিলেন? (খ) একজন গীতরচক যিহোবা এবং তাঁর লোকদের বিষয়ে কী বলেছিলেন?

১৪ যিহোবা অনেক বার প্রমাণ করেছিলেন, তিনিই হলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। আর এই বিষয়টা কিছু রাজাও স্বীকার করেছিল। একবার, ব্যাবিলনের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর নিজের উপর খুবই গর্ব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি তার পুরো রাজ্য নিজের ক্ষমতাতেই দাঁড় করিয়েছেন এবং তিনিই হলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। এইজন্য, যিহোবা তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন এবং রাজা নবূখদ্‌নিৎসর পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। তবে, তিনি যখন ঠিক হয়ে গিয়েছিলেন এবং চেতনা ফিরে পেয়েছিলেন, তখন তিনি এটা স্বীকার করেছিলেন যে, যিহোবাই হলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। তিনি “অনন্তজীবী ঈশ্বরের প্রশংসা” করেছিলেন আর বলেছিলেন, যিহোবার রাজ্য “পুরুষানুক্রমে স্থায়ী।” তিনি এও বলেছিলেন, কেউই যিহোবাকে তাঁর ইচ্ছা পূরণ করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারবে না। (দানি. ৪:৩০, ৩৩-৩৫) একটু মনে করে দেখুন, দানিয়েলকে যখন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার কারণে সিংহের গর্তে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, তখন কী হয়েছিল। যিহোবা দানিয়েলকে রক্ষা করেছিলেন আর রাজা দারিয়াবস যখন এটা দেখেছিলেন, তখন তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “আমার রাজ্যের অধীন সর্ব্বস্থানে লোকেরা দানিয়েলের ঈশ্বরের সাক্ষাতে কম্পমান হউক ও ভয় করুক; কেননা তিনি জীবন্ত ঈশ্বর ও অনন্তকালস্থায়ী, এবং তাঁহার রাজ্য অবিনাশ্য, ও তাঁহার কর্ত্তৃত্ব শেষ পর্য্যন্ত থাকিবে।”—দানি. ৬:৭-১০, ১৯-২২, ২৬, ২৭.

১৫ একজন গীতরচক বলেছিলেন: “সদাপ্রভু জাতিগণের মন্ত্রণা ব্যর্থ করেন, তিনি লোকবৃন্দের সঙ্কল্প সকল বিফল করেন।” তিনি এও বলেছিলেন: “ধন্য সেই জাতি, যাহার ঈশ্বর সদাপ্রভু, সেই লোকসমাজ, যাহাকে তিনি নিজ অধিকারার্থে মনোনীত করিয়াছেন।” (গীত. ৩৩:১০, ১২) সত্যি বলতে কী, যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকলে এতে আমাদেরই মঙ্গল হবে।

কে জয়ী হবে?

যিহোবা এবং তাঁর স্বর্গীয়বাহিনীর সামনে সমস্ত জাতির জোট কিছুই নয়! (১৬-১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬. “মহাক্লেশ” চলাকালীন যিহোবা কী করবেন আর কেন আমরা সেই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি? (ছবি দেখুন।)

১৬ এখন পর্যন্ত আমরা বাইবেলের এমন অনেক ঘটনার বিষয়ে লক্ষ করেছি, যেগুলো থেকে বোঝা যায়, যিহোবার কাছেই সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা রয়েছে। আর যখন তাঁর লোকদের উপর আক্রমণ করা হয়েছিল, তখন তিনি তাদের রক্ষা করেছিলেন। খুব শীঘ্রই, “মহাক্লেশ” চলাকালীন অনেক জাতি একে অন্যের সঙ্গে জোট গঠন করে পুরো পৃথিবীতে থাকা ঈশ্বরের লোকদের উপর জোরদার আক্রমণ করবে। (মথি ২৪:২১) বাইবেলে সমস্ত জাতির এই জোটকে মাগোগ দেশীয় গোগ বলা হয়েছে। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা সেই সময়েও তাঁর বিশ্বস্ত লোকদের রক্ষা করবেন, ঠিক যেমন তিনি অতীতে করেছিলেন। (দানি. ১২:১) সেই জাতির জোটে যদি ইউনাইটেড নেশন্‌স-এর ১৯৩টা সদস্যও থাকে, তারপরও সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর যিহোবা এবং তাঁর স্বর্গীয়বাহিনীর সামনে তারা কিছুই নয়। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন: “আমি আপনার মহত্ত্ব ও পবিত্রতা প্রকাশ করিব, বহুসংখ্যক জাতির সাক্ষাতে আপনার পরিচয় দিব; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু।”—যিহি. ৩৮:১৪-১৬, ২৩; গীত. ৪৬:১০.

১৭. ভবিষ্যতে পৃথিবীর রাজাদের এবং যিহোবার বিশ্বস্ত লোকদের কী হবে?

১৭ মাগোগ দেশীয় গোগ যখন যিহোবার লোকদের উপর আক্রমণ করবে, তখন যিহোবা তাঁর লোকদের রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নেবেন আর সেইসময়ই আরমাগিদোনের যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। এই যুদ্ধে যিহোবা “পুরো পৃথিবীর রাজাদের” ধ্বংস করে দেবেন। (প্রকা. ১৬:১৪, ১৬; ১৯:১৯-২১) কিন্তু, যিহোবা ‘আপন সাধুবর্গের [“বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের,” NW] প্রাণ রক্ষা করবেন’ আর তারপর কেবল তারাই এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে।—গীত. ৯৭:১০.

যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন

১৮. যিহোবার অনেক উপাসক কী করেছিল আর কেন? (দানিয়েল ৩:২৮)

১৮ যিহোবার এমন অনেক উপাসক ছিল, যারা যেকোনো পরিস্থিতিতে তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। তারা এইরকম চিন্তা করে ভয় পায়নি যে, তাদের বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হবে কিংবা তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। আজও এইরকম অনেক বিশ্বস্ত ভাই-বোন রয়েছে। কেন তারা বিশ্বস্ত থাকতে পেরেছে? কারণ তারা যিহোবাকে খুব ভালোবাসে এবং স্বীকার করে, একমাত্র যিহোবারই পুরো পৃথিবীর উপর শাসন করার অধিকার আছে। তারা সেই তিন জন ইব্রীয় যুবকের মতো, যারা যেকোনো পরিস্থিতিতে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে চেয়েছিলেন এবং অগ্নিকুণ্ডে যাওয়ার জন্যও প্রস্তুত ছিলেন।—পড়ুন, দানিয়েল ৩:২৮.

১৯. (ক) যিহোবা কীসের উপর ভিত্তি করে তাঁর লোকদের বিচার করবেন? (খ) আজ আমাদের কী করতে হবে?

১৯ একজন গীতরচক বলেছিলেন, যিহোবা যখন তাঁর লোকদের বিচার করবেন, তখন তিনি দেখবেন, কারা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত রয়েছে। সেইসময় যিহোবা বলবেন, “আমার সাধুদিগকে [“বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের,” NW] আমার কাছে একত্র কর।” (গীত. ৫০:৪, ৫) দায়ূদও লিখেছিলেন, “সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসেন; তিনি আপন সাধুগণকে [“বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের,” NW] পরিত্যাগ করেন না; তাহারা চিরকাল রক্ষিত হয়।” (গীত. ৩৭:২৮) এখান থেকে বোঝা যায়, যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকা কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ। এতে আমাদেরই মঙ্গল হয়। তাই আসুন ভাই-বোনেরা এবং বন্ধুরা, আমাদের জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, আমরা যেন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকি। তখন আমরাও গীতরচকের মতো ‘আনন্দগান করব।’—গীত. ১৩২:৯.

গান ৩২ সুস্থির হও, নিশ্চল হও!

a বাইবেলে খ্রিস্টানদের আজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তারা যেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষদের অর্থাৎ জগতের সরকারগুলোর বশীভূত থাকে। তবে, কিছু সরকার যিহোবা এবং তাঁর লোকদের বিরোধিতা করে। এইরকম সময়ে কীভাবে আমরা সরকারগুলোর বশীভূত থাকার পাশাপাশি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি?

b প্রহরীদুর্গ পত্রিকার এই সংখ্যায় দেওয়া “ইজরায়েলীয়েরা যদি যুদ্ধ করতে পারে, তা হলে আমরা কেন যুদ্ধ করতে পারি না?” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।