সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

যিহোবার সাক্ষিরা কেন কিছু উদ্‌যাপন পালন করে না?

যিহোবার সাক্ষিরা কেন কিছু উদ্‌যাপন পালন করে না?

 কীভাবে যিহোবার সাক্ষিরা এটা নির্ধারণ করে যে এই উদ্‌যাপনটা ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না?

 যিহোবার সাক্ষিরা কোনো উদ্‌যাপন পালন করবে কি করবে না তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাইবেল সেই বিষয়ে কী বলে তা জানার চেষ্টা করে। কিছু উদ্‌যাপন রয়েছে যেগুলো সরাসরি বাইবেলের নীতির বিরুদ্ধে। এই ক্ষেত্রগুলোতে যিহোবার সাক্ষিরা সেই উদ্‌যাপনগুলোতে অংশ নেয় না। অন্যান্য কোনো উদ্‌যাপনগুলো যিহোবার সাক্ষিরা পালন করবে কি না তা প্রত্যেক যিহোবার সাক্ষিকে ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আর তারা প্রাণপণ চেষ্টা করে থাকে যাতে “ঈশ্বরের এবং লোকদের সামনে এক শুদ্ধ বিবেক বজায়” রাখতে পারে।—প্রেরিত ২৪:১৬.

 যিহোবার সাক্ষিরা নির্দিষ্ট কোনো উদ্‌যাপন পালন করবে কি না সেই বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেদের এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করে থাকে। a

  •   এই উদ্‌যাপন কি বাইবেলের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে?

     বাইবেলের নীতি: “‘অতএব, তাদের মধ্য থেকে বের হয়ে এসো এবং নিজেদের আলাদা করো এবং অশুচি জিনিস আর স্পর্শ কোরো না’।”—২ করিন্থীয় ৬:১৫-১৭.

     আধ্যাত্মিকভাবে অশুচি অর্থাৎ এমন যে কোন উদ্‌যাপন যা বাইবেলের শিক্ষার বিরুদ্ধে সেগুলো থেকে নিজেদের সম্পূর্ণরূপে আলাদা রাখার জন্য যিহোবার সাক্ষিরা সেই উদ্‌যাপনগুলো পালন করে না, যার মধ্যে এই বিষয়গুলো রয়েছে।

     উদ্‌যাপন যা অন্ধবিশ্বাস এবং অন্যান্য দেবতাদের উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যিশু বলেছিলেন: “তোমার ঈশ্বর যিহোবাকেই উপাসনা করবে এবং একমাত্র তাঁকেই পবিত্র সেবা প্রদান করবে।” (মথি ৪:১০) যিশুর এই কথাগুলো মনে রেখে যিহোবার সাক্ষিরা বড়োদিন ইস্টার এবং মে দিবস পালন করে না কারণ এই উদ্‌যাপনগুলোতে যিহোবার পরিবর্তে অন্যান্য দেবতাদের উপাসনা করা হয়। সেইসঙ্গে তারা এই উদ্‌যাপনগুলোতেও অংশ নেয় না।

    •  কোয়ানজা। এই শব্দটা “সহেলি শব্দ মাটুন্ডা ইয়া কোয়ানজা থেকে এসেছে। যেটার অর্থ হল ‘প্রথম ফসল’। আর এটা আফ্রিকান ইতিহাসের প্রথম ফসল কাটার যে উদ্‌যাপন সেটাকে বোঝায়।” যদিও কিছু লোক মনে করে কোয়ানজা এমন একটা উদ্‌যাপন যার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই কিন্তু এনসাইক্লোপিডিয়া অফ আফ্রিকান রিলিজিয়ান এটাকে ফসল কাটার উৎসব হিসেবে তুলে ধরে। এই আফ্রিকান উৎসব লোকেরা তাদের দেবতা এবং পূর্বপুরুষদের ধন্যবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে উদ্‌যাপন করে থাকে। আর এর উপর ভিত্তি করেই আফ্রিকান আমেরিকান উদ্‌যাপন কোয়ানজা পালন করা হয়ে থাকে।

      কোয়ানজা

    •  সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে পালিত হওয়া একটা উদ্‌যাপন। এই উদ্‌যাপনের মাধ্যমে চন্দ্র দেবতাকে সম্মান জানানো হয়। (হলিডেস, সেলিব্রেশন, ফেস্টিবেল অফ ওয়াল্ড ডিক্সনারি) এই উদ্‌যাপনের সময় বাড়ির সমস্ত মহিলা দেবতাদের সামনে প্রণিপাত করে থাকে।—রিলিজিয়াস অফ দ্যা ওয়ার্ড —এ কম্প্রিহেন্সিভ এনসাইক্লোপিডিয়া অফ বিলিভ্‌স অ্যন্ড প্যাক্টিসেস।

    •  নওরুজ। “এই উদ্‌যাপনটা জোরোয়েসট্রিয়েনিজম ধর্ম থেকে এসেছে আর জোরোয়েসট্রিয়েনিজম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এটি হল একটি পবিত্রতম দিন। জোরোয়েসট্রিয়েনিজম প্রথা অনুযায়ী এটা বিশ্বাস করা হয় যে, শীতকালের মাসগুলোতে স্পিরিট অফ্‌ উইনটার স্পিরিট অফ নুনকে (রেপটউইন) চেপে রাখে আর সেই নওরুজের দিনে দুপুর বেলা তাকে আবার স্বাগত জানানো হয়।”— ইউনাইটেড নেশান অ্যান্ড এডুকেশনাল, সাইন্টিফিক এবং ক্যালচারাল অরগানাইজেশন।

    •  সব-ই ইয়ালদা। সুফিসম ইন দ্যা সিক্রের্ট হিস্ট্রি অফ পারশিয়া বই অনুযায়ী এই দিনটা বছরের সেই দিন পালন করা হয় যে দিনটা উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে ছোটো দিন হয়। এটা ডিসেম্বর মাসে উদ্‌যাপন করা হয়, “যেটা মিত্রার উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত” আর যাকে আলোর ঈশ্বর বলে মনে করা হয়। এমনকি এটাও মনে করা হয় যে, এই উদ্‌যাপনটা রোমিও এবং গ্রিক সূর্য দেবতার উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। b

    •  ধন্যবাদ জানানো। কোয়ানজার মত এটাও একটা প্রাচীন ফসল কাটার উৎসব যা বিভিন্ন দেবদেবীকে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে উদ্‌যাপন করা হয়ে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খ্রিস্টীয় গির্জাগুলো এই প্রাচীন উদ্‌যাপনটা গ্রহণ করেছে।

     উদ্‌যাপনগুলো যেগুলো কুসংস্কার এবং ভাগ্যের সঙ্গে জড়িত। বাইবেল বলে, যারা ‘ভাগ্য [দেবের] জন্য মেজ সাজাইয়া থাকে’ তারা “সদাপ্রভুকে ত্যাগ” করেছে। (যিশাইয় ৬৫:১১) সেইজন্য যিহোবার সাক্ষিরা এই উদ্‌যাপনগুলো পালন করে না।

    •  ইভান কুপালা। এ টু জেড অফ বেলারুশ বইটা বলে, “লোকেরা মনে করে ইভান কুপালার দিনে প্রকৃতি থেকে অতিপ্রাকৃতিক শক্তি অথবা জাদুকরি শক্তি পাওয়া যায়। আর আপনি যদি সাহসী এবং ভাগ্যবান হন তাহলে আপনি তা পেতে পারেন।” ইভান কুপালা হল একটা পৌত্তলিক উৎসব যা উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে বড়ো দিনে উদ্‌যাপন করা হয় আর এটা জুন মাসে হয়। দ্যা এনসাইক্লোপিডিয়া অফ কনটেম্পোরারি রাশিয়ান কালচার বলে, যে ব্যক্তিরা মূর্তি পূজা করত তারা যখন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিল তখন তাদের উদ্‌যাপনের সঙ্গে গির্জার উদ্‌যাপন মিশে যায় [যোহন বাপ্তাইজকের “সাধু দিবস”] এবং গির্জাগুলো তাদের উদ্‌যাপনগুলো পালন করতে থাকে।

    •  লুনার নতুন বছর (চাইনিজ অথবা কোরিয়ান নতুন বছর)। “বছরের এই সময়ে পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের মূল উদ্দেশ্য থাকে তাদের পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব সেই সমস্ত কিছু করবে, যাতে তাদের জীবনে আগামী বছর ভালো কিছু ঘটে। আর সেইসঙ্গে তাদের সমস্ত ঈশ্বর এবং অদৃশ্য শক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং তাদের ভাগ্য যাতে ভালো হয় তার জন্য প্রার্থনা করে।” (মুনকেকস অ্যান্ড হাংরি ঘোষ্ট—ফেস্টিবেল অফ চাইনা) একইভাবে কোরিয়ান নতুন বছরও পালন করা হয়ে থাকে। “তারাও পূর্বপুরুষদের উপাসনা করে এবং মন্দ আত্মাদের তাড়ানোর জন্য আর আগামী বছর যাতে তাদের জীবনে ভালো কিছু ঘটে সেইজন্য বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান করে থাকে।”—এনসাইক্লোপিডিয়া অফ নিউইয়ার হলিডে ওয়ার্ডওয়াইড।

      চাইনিজ নতুন বছর

     উদ্‌যাপন যেগুলো অমর আত্মার শিক্ষার উপর ভিত্তি করে। বাইবেল আমাদের কোনো অমর আত্মার শিক্ষা দেয় না। (যিহিষ্কেল ১৮:৪) সেইজন্য যিহোবার সাক্ষিরা এই উদ্‌যাপনগুলো পালন করে না যেগুলোর সঙ্গে অমর আত্মার শিক্ষা জড়িত:

    •  অল স্যোল ডে (মৃত লোকের পর্বের দিন)। দ্যা নিউক্যাথলিক এনস্লাইকোপিডিয়া অনুযায়ী এই দিনে “সমস্ত মৃত লোকদের স্মরণ করা হয় অথবা তাদের সম্মান জানানো হয়।” নিউ ক্যাথলিক এনস্লাইকোপিডিয়া অনুযায়ী “৫০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এটা বিশ্বাস করা হত, যে ব্যক্তিরা মারা গিয়েছে তারা এই দিনে সেই ব্যক্তিদের কাছে ভুত, ডাইনি ও বিভিন্ন পশুপাখি হিসেবে আবির্ভূত হয় যারা তাদের সঙ্গে খারাপ কিছু করেছিল যখন তারা বেঁচে ছিল।”

    •  চিংমিং উৎসব এবং হাংরি ঘোস্ট উৎসব। এই দুটো উৎসব মূলত পূর্বপুরুষদের সম্মান জানানোর জন্য উদ্‌যাপন করা হয়ে থাকে। সেলিব্রেটিং লাইফ কাস্টম অ্যারাউন্ড দ্যা ওয়ার্ড—ফর্ম বেবি শাওয়ার টু ফিউনেরিয়াল বইটি বলে, চিংমিং উৎসবের সময়, “খাবার, পানীয় এবং টাকা পুড়িয়ে এটা নিশ্চিত করা হয় যে ব্যক্তি মারা গিয়েছে তার যেন কোনোরকম খাবার, পানীয় এবং টাকার সমস্যা না হয়। হাংরি ঘোস্ট মাসে বিশেষ করে পূর্ণিমার রাতে জীবিত ব্যক্তিদের সঙ্গে মৃত ব্যক্তিদের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। তাই সেই রাতে মৃত ব্যক্তিদের শান্ত রাখা এবং পূর্বপুরুষদের সম্মান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

    •  চিউসুক। দ্যা কোরিয়ান ট্র্যাডিশন অফ রিলিজিয়ান সোসাইটি অ্যান্ড ইথনিক বলে, এই উদ্‌যাপনের অন্তর্ভুক্ত হল, মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে খাবার ও মদ পরিবেশন করা। এটা করা হয় কারণ তারা বিশ্বাস করে যে, “একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পরও তার আত্মা বেঁচে থাকে।”

     উদ্‌যাপনগুলো যেগুলো অতিপ্রাকৃতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বাইবেল বলে, “যে মন্ত্র ব্যবহার করে, বা গণক, বা মোহক, বা মায়াবী, বা ঐন্দ্রজালিক, বা ভূতড়িয়া, বা গুণী বা প্রেতসাধক। ... সদাপ্রভু এই সকল কার্য্যকারীকে ঘৃণা করেন।”(দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১১-১২) যে কোনো অতিপ্রাকৃতিকশক্তি থেকে দূরে থাকার জন্য যার মধ্যে জ্যোতিষ বিদ্যা রয়েছে (এক ধরনের মন্ত্র বা গণক) যিহোবার সাক্ষিরা হ্যালোইন অথবা এই ধরনের উদ্‌যাপনগুলো পালন করে না।

    •  সিংহলি এবং তামিল নতুন বছর। “জ্যোতিষবিদ্যা দ্বারা একটা সময় নির্ধারণ করা হয় আর নির্দিষ্ট কিছু কাজ করা হয় এবং মনে করা হয় সেই সময় এই কাজগুলো করলে তাদের ভবিষ্যৎ বা ভাগ্য ভালো হবে।”—এনসাইক্লোপিডিয়া অফ শ্রীলঙ্কা

    •  সংক্রান। এই এশিয়ান উদ্‌যাপনের নামটা “সংস্কৃত শব্দ থেকে এসেছে যেটার অর্থ হল, ‘পরিবর্তন কারা।’ যেদিন সূর্য মেষ রাশিতে প্রবেশ করে সেই দিন এই উদযাপন শুরু হয়।”—ফুড, ফিস্ট অ্যান্ড ফেত—অ্যান এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ফুড কালচার ইন ওয়ার্ড রিলিজিয়ান।

     উদ্‌যাপনগুলো যেগুলো মোশির ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আর যিশু খ্রিস্টের বলিদানের ভিত্তিতে শেষ হয়ে গিয়েছে। বাইবেল বলে, “খ্রিস্টের মাধ্যমেই ব্যবস্থার শেষ হয়েছে।” (রোমীয় ১০:৪) প্রাচীন ইজরায়েলেকে দেওয়া মোশির ব্যবস্থার নীতি থেকে বর্তমানে খ্রিস্টানরা উপকার লাভ করতে পারে। কিন্তু তারা এই উদ্‌যাপনগুলো পালন করে না। বিশেষ করে সেই উদ্‌যাপনগুলো যেগুলো মোশিহ আসার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেগুলো ইতিমধ্যেই পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। বাইবেল বলে, “এগুলো আসন্ন বিষয়ের ছায়া মাত্র, কিন্তু সেই ছায়ার বাস্তবতা হলেন খ্রিস্ট।” (কলসীয় ২:১৭) যেহেতু এই উদ্‌যাপনগুলো ইতিমধ্যেই তার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করে ফেলেছে সেইজন্য যিহোবার সাক্ষিরা আর এগুলো পালন করে না। সেইসঙ্গে কিছু উদ্‌যাপন রয়েছে যেগুলো বাইবেলের বিরুদ্ধে সেগুলোও তারা পালন করে না।

    •  হানুকাহ্‌। জেরুসালেমে যিহুদিদের মন্দির পুনরায় উৎসর্গ করা হয়েছিল। আর এটা স্মরণ করার উদ্দেশ্যে এই উদ্‌যাপন পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু বাইবেল বলে যিশু, মহাযাজক হিসেবে “মহৎ এবং আরও নিখুঁত তাঁবুর মধ্যে প্রবেশ করেন, যেটা মানুষের হাতে তৈরি নয় এবং যেটা এই পৃথিবীর নয়।” (ইব্রীয় ৯:১১) খ্রিস্টানদের জন্য এই আধ্যাত্মিক মন্দির জেরুসালেমের আক্ষরিক মন্দিরের পরিবর্তে এসেছে।

    •  রোশ হাশনা। এটা যিহুদি বছরের প্রথম দিন। প্রাচীনকালে উদ্‌যাপনের সময় ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে এক বিশেষ বলিদান দেওয়া হত। (গণনাপুস্তক ২৯:১-৬) কিন্তু যিশু খ্রিস্ট মশীহ হিসেবে “যজ্ঞ ও নৈবেদ্য” সকল বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আর এগুলো ঈশ্বরের চোখে বাতিল হয়ে গিয়েছে।—দানিয়েল ৯:২৬, ২৭.

  •   উদ্‌যাপনগুলো কি সব ধর্মকে সমান হিসেবে তুলে ধরে?

     বাইবেলের নীতি: “খ্রিস্টের একজন অনুসারীর সঙ্গে খ্রিস্টের অনুসারী নয় এমন ব্যক্তিরই-বা কী মিল রয়েছে? আর ঈশ্বরের মন্দিরে প্রতিমাদেরই-বা কী কাজ রয়েছে?”—২ করিন্থীয় ৬:১৫-১৭.

     যিহোবার সাক্ষিরা প্রত্যেক মানুষের সাথে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করে এবং প্রত্যেকের যে বিশ্বাস রয়েছে তা সম্মান করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা সেই সমস্ত উদ্‌যাপনগুলো পালন করা এড়িয়ে চলে যেগুলো সব ধর্মকে সমান হিসেবে তুলে ধরে।

     কোনো ধর্মীয় উৎসবকে উদযাপন করা যেখানে আলাদা আলাদা ধর্মের ব্যক্তিরা একত্রিত হয়ে উপাসনা করাকে উৎসাহিত করে। প্রাচীনকালে ঈশ্বর তাঁর লোকদের যখন একটা নতুন জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে লোকেরা অন্যান্য দেবতার উপাসনা করত তখন তিনি তাদের বলেছিলেন: “তাহাদের সহিত কিম্বা তাহাদের দেবগণের সহিত কোন নিয়ম স্থির করিবে না। তাহারা তোমার দেশে বাস করিবে না, পাছে তাহারা আমার বিরুদ্ধে তোমাকে পাপ করায়; কেননা তুমি যদি তাহাদের দেবগণের সেবা কর, তবে তাহা অবশ্য তোমার ফাঁদস্বরূপ হইবে।” (যাত্রাপুস্তক ২৩:৩২, ৩৩) সেইজন্য যিহোবার সাক্ষিরা এই উদ্‌যাপনগুলো পালন করে না।

    •  লয় ক্রার্থাং। এই থাই উৎসবের সময় “লোকেরা পাতা দিয়ে একটা বোল তৈরী করে এবং তার মধ্যে ধূপ ও মোমবাতি জ্বালিয়ে সেটা জলে ভাসিয়ে দেয়। তারা এইরকম মনে করে যে, সেই বোলটা ভেসে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাছ থেকে খারাপ ভাগ্য ভেসে চলে যাবে। সাধারণত এই উদ্‌যাপনটি বুদ্ধের রেখে যাওয়া পবিত্র পদচিহ্নকে অনুসরণ করে করা হয়।”—এনসাইক্লোপিডিয়া অফ বুদ্ধিজম।

    •  জাতীয় অনুতাপ দিবস। পাপুয়া নিউগিনির জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের একজন সরকারি আধিকারিক এটা জানিয়েছেন যে, যারা এই উদ্‌যাপনটি পালন করে “তারা বেশিরভাগ খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী।” তিনি বলেন, এই উদ্‌যাপনটি “সারাদেশে খ্রিস্টধর্মের নীতিগুলো ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।”

    •  বুদ্ধ পূর্ণিমা। “এটা বৌদ্ধদের সবচেয়ে পবিত্রতম দিন, যা বুদ্ধের জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে বুদ্ধের জন্ম, জ্ঞানলাভ, মৃত্যু স্মরণ করা হয়।”—হলিডেস, ফেস্টিবেল অ্যান্ড সেলিব্রেশন অফ দ্যা ওয়ার্লড ডিক্সনারি।

      বুদ্ধ পূর্ণিমা

     উদ্‌যাপনগুলো যেগুলো বাইবেলের নীতির উপর নয় বরং ধর্মীয় রীতিনীতির উপর ভিত্তি করে পালন করা হয়ে থাকে। যিশু ধর্মীয় নেতাদের বলেছিলেন: “তোমরা আপনাদের পরম্পরাগত বিধির জন্য ঈশ্বরের বাক্য নিষ্ফল করিয়াছ।” তিনি তাদের আরও বলেছিলেন যে, তাদের উপাসনা মূল্যহীন হয়ে গিয়েছে কারণ তারা “মনুষ্যদের আদেশ ধর্ম্মসূত্র বলিয়া শিক্ষা দেয়।” (মথি ১৫:৬,) যেহেতু যিহোবার সাক্ষিরা যিশুর বলা সতর্কবাণীর প্রতি মনোযোগ দিতে চায় তাই তারা বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করে না।

    •  এপিফ্যানি। (থ্রি কিংস ডে, টিমকার্ট অথবা লস রেস মেগোস) যারা এই উদ্‌যাপন পালন করে তারা সেই দিনটা স্মরণ করে যে-দিন জ্যোতিষীরা যিশুকে দেখতে এসেছিল অথবা যিশু যে-দিন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। এই উৎসব “একটা বসন্তকালীন পৌত্তলিক উৎস থেকে এসেছে যা খ্রিস্ট ধর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আর এই উদ্‌যাপনের মাধ্যমে নদী ও স্রোতের দেবতাকে সম্মান জানানো হয়ে থাকে।” টিমকার্ট হল এইরকম একটা উদযাপন যা “এই রীতিনীতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত রয়েছে।”—এনসাইক্লোপিডিয়া অফ সোশায়টি এন্ড ক্যালচার ইন দ্যা অ্যনসেন্ট ওয়ার্ড।

    •  কুমারী মরিয়মের স্বর্গে যাওয়ার উৎসব। লোকেরা এটা বিশ্বাস করে এই উদ্‌যাপন পালন করে যে, যিশুর মা কুমারী মরিয়ম মাংসিক দেহ নিয়ে স্বর্গে গিয়েছেন। রিলিজিয়ান অ্যন্ড স্যোসাইটি—এনসাইক্লোপিডিয়া এটা বলে, “প্রাথমিক খ্রিস্টানদের কাছে এটা পরিচিত ছিল না এবং বাইবেলে এই বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই।”

    •  পবিত্রতা ধারণার উৎসব।মরিয়ম গর্ভবতী হওয়ার সময় তার সমস্ত পাপ মুছে গিয়েছিল এই শিক্ষা বাইবেলের শিক্ষা নয় ... এটা গির্জার শিক্ষা।”—নিউ ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া।

    •  ল্যেন্ট অর্থাৎ খ্রিস্টানদের ৪০ দিন ধরে করা উপবাস। নিউ ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া অনুযায়ী অনুতাপ এবং উপবাসের দিন হিসেবে এই উৎসব উদ্‌যাপন করা হয়। আর এটা বাইবেল লেখা শেষ হওয়ার প্রায় ২০০ বছর পর অর্থাৎ “প্রায় চতুর্থ শতাব্দীতে” শুরু হয়েছিল। এই একই এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে: এই উৎসব উদ্‌যাপনের প্রথম দিনে ভষ্ম বুধবার পালন করা হয় এবং পাদ্রিরা লোকদের কপালে ছাই দিয়ে ক্রস আঁকে এবং তাদের মনে করিয়ে দেয় যে তাদের অনুশোচনা বা অনুতাপ করা উচিত। ১০৯১ সালে এই প্রথা সমস্ত ক্যাথলিক চার্চ গ্রহণ করেছিল।

    •  মেসকেল। এনসাইক্লোপিডিয়া অফ সোসাইটি অ্যান্ড কালচার ইন দা মেডিভ্যাল ওয়ার্ল্ড বলে, ইথিওপিয়ানরা এই উদ্‌যাপনটা একটা ক্রুশ অর্থাৎ যে ক্রুশে যিশু মারা গিয়েছিল সেটাকে আগুন জ্বালিয়ে সেটার আশেপাশে তারা নাচ করে। এভাবে তারা এই উদ্‌যাপন পালন করে থাকে। কিন্তু যিহোবার সাক্ষিরা তাদের উপাসনায় ক্রুস ব্যবহার করে না

  •   এমন উদ্‌যাপনগুলো যেখানে কোনো মানুষ, কোনো সংগঠন এবং জাতীয় কোনো চিহ্ন অথবা প্রতীককে অতিরিক্ত সম্মান দেওয়া হয়।

     বাইবেলের নীতি: “সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে ব্যক্তি মনুষ্যে নির্ভর করে, মাংসকে আপনার বাহু জ্ঞান করে, ও যাহার অন্তঃকরণ সদাপ্রভু হইতে সরিয়া যায়, সে শাপগ্রস্ত।”—যিরমিয় ১৭:৫.

     যিহোবার সাক্ষিরা যদিও তাদের সহমানবদের প্রতি সম্মান দেখায় এবং তাদের জন্য প্রার্থনা করে কিন্তু তারা এই উদ্‌যাপনগুলো পালন করে না:

     উদ্‌যাপনগুলো যেখানে কোন শাসক অথবা বিশিষ্ট বা বিখ্যাত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত সম্মান দেওয়া হয়। বাইবেল বলে, “তোমরা মনুষ্যের আশ্রয় ছাড়িয়া যাও, যাহার নাসাগ্রে প্রাণবায়ু; ফলে সে কিসের মধ্যে গণ্য?”—যিশাইয় ২:২২. সেইজন্য যিহোবার সাক্ষিরা কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির জন্মদিন পালন করে না।

     জাতীয় পতাকা দিবস। যিহোবার সাক্ষিরা জাতীয় পতাকা দিবস উদ্‌যাপন করে না। কেন? তার কারণ হল বাইবেল বলে, “তোমরা প্রতিমাদের কাছ থেকে নিজেদের রক্ষা করো।” (১ যোহন ৫:২১) বর্তমানে কিছু লোক পতাকাকে মূর্তি অথবা উপাসনার কোনো বস্তু হিসেবে দেখেন না কিন্তু ইতিহাসবেত্তা কাল্টন জে. এইচ. হেজ লিখেছিলেন: “জাতীয়তাবাদী বিশ্বাসের প্রধান প্রতীক এবং উপাসনার প্রধান বস্তু হল এই পতাকা।”

     এমন উদ্‌যাপনগুলো যেখানে সাধু অথবা সন্তদের অতিরিক্ত সম্মান দেওয়া হয়। একজন ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি যখন পিতরের সামনে ঝুঁকে প্রণাম করতে গিয়েছিল তখন কী হয়েছিল? বাইবেল বলে: “পিতর তাকে উঠিয়ে বললেন: “উঠুন; আমিও আপনার মতো একজন মানুষ।” (প্রেরিত ১০:২৫, ২৬) যেহেতু পিতর এবং অন্যান্য প্রেরিতরা অতিরিক্ত সম্মান গ্রহণ করতে চায়নি তাই যিহোবার সাক্ষিরা এমন কোন উদ্‌যাপনে অংশ নেয় না যেখানে সাধু অথবা সন্তদের অতিরিক্ত সম্মান দেওয়া হয়।

    •  সমস্ত সাধু-সাধ্বীর দিবস। “সমস্ত সাধুদের সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে এই উৎসব উদ্‌যাপন করা হয় ... তবে এটা কোথা থেকে এসেছে বা কীভাবে শুরু হয়েছে, তা কেউ জানে না।”—নিউ ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া।

    •  গডেলাপ্পা মায়ের উৎসব। ম্যাক্সিকোতে রক্ষাকারী সন্তুদের সম্মানের উদ্দেশ্যে এই উদ্‌যাপন পালন করা হয় আর কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে তিনি হলেন যিশুর মা মরিয়ম। এমনকী এটাও প্রচলিত রয়েছে যে, ১৫৩১ সালে তিনি একজন কৃষকের কাছে অলৌকিক ভাবে এসেছিলেন।

      গডেলাপ্পা মায়ের উৎসব

    •  নামকরণ দিবস। সেলিব্রেটিং লাইভ কাস্টম অ্যারাউন্ড দ্যা ওয়াল্ড বইটি বলে, “একজন শিশু যখন বাপ্তিস্ম নেয় অথবা কোনো ব্যক্তি যখন গির্জার কোনো অনুষ্ঠানে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করে তখন একজন সাধুর নাম অনুসারে তার নামকরণ করা হয় আর এটিকে নামকরণ দিবস বলা হয়। এই দিনে তারা বিভিন্ন ধর্মীয় কাজকর্ম করে থাকে।”

     কোনো রাজনৈতিক অথবা সামাজিক উদ্‌যাপন। বাইবেল বলে, “মনুষ্যে নির্ভর করণাপেক্ষা সদাপ্রভুর শরণ লওয়া উত্তম।” (গীতসংহিতা ১১৮:৮, ৯) যিহোবার সাক্ষিরা এই জগতের সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষের পরিবর্তে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে। তাই তারা যুব দিবস এবং নারী দিবসের মতো উদ্‌যাপনে অংশ নেয় না যেগুলো রাজনৈতিক অথবা সামাজিক অভিযানকে সমর্থন করে থাকে। এই একই কারণে তারা ইমানস্যাপেসন ডের মতো উদ্‌যাপনগুলোতেও অংশ নেয় না। এর পরিবর্তে তারা সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ঈশ্বরের রাজ্যের উপর নির্ভর করে থাকে।

  •   উদ্‌যাপনগুলো যা কোনো জাতি অথবা কোনো দেশকে অন্যদের থেকে শ্রেষ্ঠ করে তোলে।

     বাইবেলের নীতি: “ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করেন না, কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্য থেকে যে-কেউ তাঁকে ভয় করে এবং সঠিক কাজ করে, তাকে ঈশ্বর গ্রহণ করেন।”—প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫

     যদিও বেশিরভাগ যিহোবার সাক্ষী তাদের দেশকে ভালোবাসে তবুও তারা এমন উদ্‌যাপনগুলো পালন করা এড়িয়ে চলে যেগুলো কোনো একটা দেশ অথবা জাতিকে অন্যের চেয়ে বেশি শ্রেষ্ঠ করে তোলে।

     এমন অনুষ্ঠান যা দেশের সৈনিকেদের সম্মানের উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে। যিশু কখনোই যুদ্ধকে সমর্থন করেননি এর পরিবর্তে তিনি তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন, “তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, এবং যাহারা তোমাদিগকে তাড়না করে তাহাদের জন্য প্রার্থনা করিও;” (মথি ৫:৪৪) সেইজন্য যিহোবার সাক্ষিরা এমন উদ্‌যাপনগুলো পালন করে না যা সৈনিকদের সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে। সেইসঙ্গে তারা এই উদ্‌যাপনগুলো পালন করে না:

    •  অ্যানজাক দিবস। অ্যানজাক হল, “অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের সেনাবাহিনী” এবং ”ধীরে ধীরে এই অ্যানজাক দিবসটা একটা স্মরণ দিবসে পরিণত হয়েছে যে দিনটাতে সেনাবাহিনীর মধ্যে থেকে যারা যুদ্ধে মারা যায় তাদের স্মরণ করার উদ্দেশ্যে উদ্‌যাপন করা হয়ে থাকে।”—হিস্টোরিক্যাল ডিক্সনারি অফ অস্ট্রেলিয়া।

    •  ভেটারন্স ডে। (স্মরণীয় দিন, স্মরণীয় রবিবার) এই উদ্‌যাপন যারা সেনাবাহিনীতে কাজ করেছে এবং যারা “দেশের জন্য যুদ্ধে মারা গিয়েছে” তাদের সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে পালন করা হয়।

     উদ্‌যাপনগুলো যা কোনো দেশের ইতিহাস এবং স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যিশু তার অনুসারীদের বলেছিলেন, “তারা এই জগতের অংশ নয়, যেমন আমিও এই জগতের অংশ নই।” (যোহন ১৭:১৬) যিহোবার সাক্ষিরা যদিও দেশের ইতিহাস জানতে পেরে খুশি হয় তবে তারা এই ধরনের উদ্‌যাপনগুলো থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখে।

    •  অস্ট্রেলিয়া দিবস। ওয়াল্ডমার্ক এনসাইক্লোপিডিয়া অফ কালচার অ্যান্ড ডেইলি লাইফ অনুযায়ী “১৭৮৮ সালে যে দিনে ইংরেজ সৈন্যরা পতাকা উত্তোলন করেছিল এবং অস্ট্রেলিয়াকে একটা নতুন উপনিবেশ হিসেবে ঘোষণা করেছিল” সেই দিনটা স্মরণ করার জন্য এই উদ্‌যাপন পালন করা হয়।

    •  গায় ফক্স ডে। ১৬০৫ সালে গায় ফক্স এবং ক্যাথলিক ধর্মের সমর্থকরা রাজা প্রথম জেমস্‌ এবং ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টের সদস্যদের মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছিল। তাই সেই দিনটা স্মরণ করার উদ্দেশ্যে গায় ফক্স ডে উদ্‌যাপন করা হয়।—অ্যা ডিক্সনারি অফ্‌ ইংলিশ ফোকলরা।

    •  স্বাধীনতা দিবস। “এই দিনে এক দেশের নাগরিকরা অন্য দেশের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছিল বলে উদ্‌যাপন করে থাকে।”—মেরিয়াম ওয়েবস্টার অ্যানব্রীজ ডিক্সনারি

  •   উদ্‌যাপনগুলো যার মধ্যে অশ্লীল আচরণ এবং অনৈতিকতা রয়েছে

     বাইবেলের নীতি: “ন-যিহুদিদের মতো তোমরাও আগে নির্লজ্জভাবে পাপ কাজ, চরম কামনাবাসনা পূরণ, মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান, উচ্ছৃঙ্খলতাপূর্ণ আনন্দোৎসব, মদ্যপানের প্রতিযোগিতা এবং ঘৃণ্য প্রতিমাপূজা করার পিছনে অনেক সময় ব্যয় করতে।”—১ পিতর ৪:৩

     এই নীতি মাথায় রেখে যিহোবার সাক্ষিরা এমন উদ্‌যাপনে অংশগ্রহণ করে না যার মধ্যে মাত্রা অতিরিক্ত মদ্যপান এবং উশৃংখলতাপূর্ণ আনন্দ উৎসব রয়েছে। যিহোবার সাক্ষিরা তাদের বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করতে ভালবাসে এবং তারা হয়তো পরিমিত মাত্রায় মদ্যপান করে থাকে। তবে তারা বাইবেলের এই পরামর্শ কাজে লাগানোর জন্য তাদের সর্বোত্তমটা করে থাকে, যেখানে বলে: “তোমরা খাওয়া-দাওয়া কর বা অন্য যা-কিছুই কর, সমস্ত কিছু ঈশ্বরের গৌরবের জন্যই কোরো।”—১ করিন্থীয় ১০:৩১.

     সেইজন্য যিহোবার সাক্ষিরা কোনো কার্নিভাল অথবা এই ধরনের কোনো উদ্‌যাপনে অংশ নেয় না যা বাইবেলের নীতির বিরুদ্ধে অথবা যেগুলো যিহোবাকে দুঃখ দেয়। এগুলোর মধ্যে একটা হল, পুরিম উৎসব। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে যিহুদিরা নির্বাসন থেকে মুক্তি পেয়েছিল বলে তারা এই পুরিম উৎসব পালন করে। এসেনশিয়াল জুডিশম বই বলে, কিন্তু বর্তমানে এটি মার্ডিগাস অথবা কার্নিভালের পরিণত হয়েছে। এই উদ্‌যাপনে ছেলেরা মেয়েদের ড্রেস পরে, খারাপ আচরণ করে, অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খায় এবং প্রচুর চেঁচামেচি করে।

 যিহোবার সাক্ষিরা যদিও কিছু উদ্‌যাপন পালন করে না তারপরও কি তারা তাদের পরিবারকে ভালোবাসে?

 হ্যাঁ, তারা তাদের পরিবারকে ভালোবাসে। বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, তাদের পরিবারের বিশ্বাস যাইহোক না কেন তারা যেন তাদের পরিবারকে ভালোবাসে এবং সম্মান করে। (১ পিতর ৩:১, ২,) তবে একজন যিহোবার সাক্ষি যখন কিছু উদ্‌যাপনে অংশ নেন না তখন হয়তো তার পরিবারের সদস্যরা দুঃখ পেতে পারে এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক নাও রাখতে পারে। সেইজন্য যিহোবার সাক্ষিরা যে তাদের পরিবারের লোকদের ভালোবাসে তা বোঝানোর জন্য তারা কঠোর প্রচেষ্টা করে। তারা কৌশলতার সঙ্গে তার পরিবারের লোকদের এটা বোঝানোর চেষ্টা করে যে, কেন তারা সেই উদ্‌যাপনে অংশগ্রহণ করবে না আর অন্যান্য সময় তাদের পরিবারের লোকদের সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করে।

 যিহোবার সাক্ষিরা কি অন্যদের উদ্‌যাপনগুলো পালন করতে নিষেধ করে?

 না, কারণ তাঁরা এটা বিশ্বাস করে যে প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকে নিতে হবে। (যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৫) যিহোবার সাক্ষিরা “সকলকে সমাদর করে” তা তাদের বিশ্বাস যাই হোক না কেন।—১ পিতর ২:১৭.

a এই প্রবন্ধে সেই সমস্ত উদ্‌যাপন সম্বন্ধে লেখা নেই যা যিহোবার সাক্ষিরা পালন করে না এবং সেই সমস্ত বাইবেলের নীতি দেওয়া নেই যা তারা কাজে লাগায়।

b মিত্রা, মিত্রাইজম, বড়োদিন, এবং ইয়ালদা—কে. ই. অ্যাডুল্জি, পৃষ্ঠা ৩১-৩৩