যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য
এই পোশাকটা আমার জন্য কি ভালো হবে?
আমরা যে-ধরনের পোশাক-আশাক পরি, সেটা নিয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত। কেন? কারণ আমাদের পোশাক-আশাক থেকে আমাদের সম্বন্ধে অনেক কিছু বোঝা যায়। তা হলে অন্যেরা যখন তোমার পোশাক-আশাক দেখে, তখন তারা তোমার সম্বন্ধে কী চিন্তা করে?
ফ্যাশন বাছাইয়ে তিনটে বড়ো ভুল আর তা এড়ানোর উপায়
১ম ভুল: মিডিয়া দেখে পোশাক-আশাক বাছাই করা।
টেরেসা নামের একজন কিশোরী বলে, “মাঝে মাঝে এমন হয় যে, কোনো একটা ফ্যাশন নিয়ে আমি এত বেশি অ্যাড দেখি যে, সেই ফ্যাশনটা আমার ভালো লেগে যায়।” সে আরও বলে, “অ্যাডের মধ্যে আমরা যখন বার বার নির্দিষ্ট ফ্যাশনের কোনো পোশাকপরা লোকদের দেখি, তখন সেটা আমাদের মাথায় ঘুরতে থাকে আর পরে আমাদেরও সেই রকমেরই পোশাক পরতে ইচ্ছা করে।”
বিজ্ঞাপন দেখে শুধু মেয়েরাই যে কোনো একটা নির্দিষ্ট ফ্যাশনের প্রতি আকৃষ্ট হয়, এমন নয়। ছেলেরাও তাতে আকৃষ্ট হয়। কিশোর বয়সি ছেলেদের বড়ো করে তোলার জন্য সব ধরনের পরামর্শ (ইংরেজি) বইটা বলে, “মেয়েদের মতো ছেলেরাও জনপ্রিয় ফ্যাশনের দিকে আকৃষ্ট হয়। মার্কেটিং জগৎ এমন এমন বিজ্ঞাপন তৈরি করে, যাতে সেগুলো দিয়ে একদম ছোটোবেলা থেকেই ছেলেদের আকর্ষণ করা যায়।”
তুমি যা করতে পার: বাইবেল বলে, “যে অবোধ, সে সকল কথায় বিশ্বাস করে, কিন্তু সতর্ক লোক নিজ পাদক্ষেপের প্রতি লক্ষ্য রাখে।” (হিতোপদেশ ১৪:১৫) তুমি যখন কোনো বিজ্ঞাপন দেখ, তখন বাইবেলের এই নীতিটা নিয়ে চিন্তা করো আর বোঝার চেষ্টা করো যে, এই বিজ্ঞাপনটা দেখানোর পিছনে কারণটা কী? তুমি যখন কোনো বিজ্ঞাপনে নির্দিষ্ট কোনো স্টাইলের পোশাককে “হট” বা “সেক্সি” বলে তুলে ধরতে দেখ, তখন নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করো:
‘এই স্টাইলের পোশাকটা কিনলে আসলে কাদের বেশি লাভ হবে?’
‘এই ধরনের জামা কাপড় পরলে, আমি কাদের সঙ্গে ওঠা-বসা করি বলে অন্যেরা মনে করবে?’
‘আমি কি সত্যিই তেমন লোকদের সঙ্গে ওঠা-বসা করি আর আমি কি চাই লোকেরা আমার সম্বন্ধে এমনটাই চিন্তা করুক?’
ফ্যাশন বাছাই করার টিপ: এক সপ্তাহের জন্য পোশাক-আশাকের বিজ্ঞাপনগুলো এবং ফ্যাশনের উপর জোর দেয় এমন অনুষ্ঠানগুলো ভালোভাবে লক্ষ করো। তারা আসলে কী বলতে চেষ্টা করছে? তারা কী এমন মনে করাতে চেষ্টা করছে যে, ওই স্টাইলের পোশাকটা তোমার লাগবেই? ক্যারেন নামের একজন কিশোরী বলে, “আমরা সবসময় এমন চাপের মধ্যে থাকি যে, সবার মধ্যে আমাদের যেন সবচেয়ে সুন্দর লাগে আর আমরা যেন সবচেয়ে নতুন ফ্যাশনের পোশাক পরি আর সবাই যেন আমাদের সুন্দর ফিগার দেখতে পায়। যারা বিজ্ঞাপন তৈরি করে তারা জানে যে, অল্পবয়সিরা এই ধরনের চাপের মধ্যে থাকে, তাই তারা এই সুযোগটা কাজে লাগায়।”
২য় ভুল: সবাই এমন পোশাক পরে, তাই আমাকেও পরতে হবে।
ম্যানুয়েল নামের একজন কিশোর বলে, “যখন নির্দিষ্ট কোনো এক ধরনের পোশাকের খুব চল থাকে, তখন সবাই সেটা পরে আর তুমি যদি সেটা না পর, তা হলে অন্যেরা তোমাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে।” ১৯ বছর বয়সি অ্যানা ঠিক তার মতোই চিন্তা করে। সে বলে, “ফ্যাশনের চেয়েও বড়ো বিষয় হল, আমাকে যেন অন্যদের মতোই দেখা যায়।”
তুমি যা করতে পার: বাইবেল বলে, “এই জগতের লোকদের অনুকরণ কোরো না।” (রোমীয় ১২:২) বাইবেলের এই কথাটা মনে রেখে, তোমার আলমারিটা খুলে তোমার জামাকাপড়গুলো দেখো আর নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করো:
‘আমার কাছে যে-ধরনের পোশাক-আশাক রয়েছে, সেগুলো বাছাই করার পিছনে মূল কারণ কী?’
‘কোনো ব্র্যান্ডের কাপড় থাকা আমার কাছে কতটা জরুরি?’
‘আমি কি আমার পোশাক দিয়ে অন্যদের নজর কাড়ার চেষ্টা করি?’
ফ্যাশন বাছাই করার টিপ: জামাকাপড় বাছাই করার সময় শুধু এই দুটো বিষয় নিয়েই চিন্তা কোরো না যে, এটা চলতি ফ্যাশন কি না (সবাই পরে) অথবা এটা পুরোনো হয়ে গিয়েছে কি না (কেউ পরে না)। বরং এটা নিয়েও চিন্তা কোরো যে, এই পোশাকটা পরে তোমার নিজের কেমন লাগছে। এই বিষয়ে তোমার আত্মবিশ্বাস বাড়াও। তুমি যে-জামাকাপড়গুলো পর, সেগুলো নিয়ে যদি তুমি নিশ্চিত থাক যে, মার্জিত পোশাক-আশাক সম্বন্ধে তোমার যে-মান রয়েছে, সেটার সঙ্গে সেগুলো মিলে যায়, তা হলে তুমি তোমার পোশাক-আশাক নিয়ে খুশি থাকবে এবং তোমার পোশাক-আশাক নিয়ে কে কী ভাবছে তা নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করবে না।
৩য় ভুল: এমনটা চিন্তা করা যে, ‘আঁটসাঁট আর সেক্সি মানেই সুন্দর।’
জেনিফার নামের একজন কিশোরী এভাবে বলে, “আসলে, মাঝে মাঝে আমারও আরেকটু বড়ো গলার, আরেকটু খোলামেলা আর টাইট জামাকাপড় পরতে ইচ্ছে করে।”
তুমি যা করতে পার: বাইবেল বলে: ‘তোমরা বাহ্যিক সাজসজ্জাকে প্রাধান্য দিয়ো না, বরং তোমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্বকে সজ্জিত করো। কারণ এই ধরনের সাজসজ্জাই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বহুমূল্য।’ (১ পিতর ৩:৩, ৪) বাইবেলের এই কথাগুলো নিয়ে একটু চিন্তা করো: কোনটা আসল সৌন্দর্য—নতুন ফ্যাশনের পোশাক-আশাক না কি একজনের মধ্যে থাকা সুন্দর গুণাবলি?
ফ্যাশন বাছাই করার টিপ: যে-বিষয়টা একজন ব্যক্তিকে সবচেয়ে সুন্দর করে ‘সাজাতে’ পারে সেটা হল, মার্জিতভাব। এটা ঠিক যে, মার্জিত থাকার বিষয়ে আজকাল লোকেরা বেশি চিন্তা করে না। কিন্তু মার্জিতভাব কেন গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝার জন্য একটু কল্পনা করো:
তুমি এমন একজনের সঙ্গে কথা বলছ, যে খুব বেশি কথা বলে এবং শুধু নিজের সম্বন্ধেই বলতে থাকে। তখন তোমার কেমন লাগবে? তোমার নিশ্চয়ই তার সঙ্গে কথা বলতে আর ভালো লাগবে না। অথচ সে হয়তো ভাবছে, ‘আমার কথা সবার খুব ভালো লাগে।’
একইভাবে, যখন তুমি মার্জিত নয় এমন জামাকাপড় পর, তখন তুমি আসলে সবাইকে বলছ, ‘আমাকে দেখো, আমাকে দেখো’ আর তুমিও হয়তো ভাবছ, ‘আমাকে সবাই খুব পছন্দ করে।’ কিন্তু, আসলে অন্যেরা ভাবছে যে, তুমি শুধু নিজেকে নিয়েই চিন্তা কর আর অন্যদের নজরে আসার জন্য তুমি সবকিছু করবে। এ ছাড়া অমার্জিত পোশাক-আশাক পরলে খারাপ লোকদের চোখও তোমার উপর পড়বে।
তাই, তুমি যদি এই ধরনের লোকদের নজরে পড়তে না চাও, তা হলে মার্জিত জামাকাপড় পরো। মনিকা নামের এক কিশোরী বলে, “মার্জিত জামাকাপড় পরার মানে এই নয় যে, তোমাকে বয়স্কদের মতো জামাকাপড় পরতে হবে বরং এর মানে হল, এমনভাবে জামাকাপড় পরা যা দেখায় যে, তুমি অন্যদের সম্মান কর এবং চাও যেন তারাও তোমাকে সম্মান করে।”