যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য
কেন আমার কোনো বন্ধুবান্ধব নেই?
তুমি অনলাইনে সম্প্রতি হওয়া একটা পার্টির ছবি দেখছ। তোমার বন্ধুদের মধ্যে সবাই সেই ছবিতে আছে আর তারা সেখানে দারুণ সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু তুমি দেখছ, ছবিগুলোতে তুমি কোথাও নেই!
তুমি হয়তো অবাক হয়ে ভাবছ, ‘ওরা আমাকে কেন ডাকেনি?’
তোমার খুবই মেজাজ খারাপ হতে শুরু হয়। ওদের উপর এখন তুমি আর বিশ্বাস করতে পারছ না! মনে হচ্ছে যেন, সমস্ত সম্পর্ক এক নিমেষেই তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়েছে। একাকিত্বের অনুভূতি তোমাকে চেপে ধরতে শুরু করে আর তুমি ভাবতে থাক যে, ‘কেন আমার কোনো বন্ধুবান্ধব নেই?’
একাকিত্ব সম্বন্ধে কুইজ
ঠিক না কি ভুল
১. অনেক বন্ধু থাকলে, তোমার কখনোই একা লাগবে না।
২. কোনো সোশ্যাল নেট-ওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকলে, তোমার কখনোই একা লাগবে না।
৩. যত খুশি তত টেক্সট ম্যাসেজ পাঠালে, তোমার কখনোই একা লাগবে না।
৪. অন্যদের জন্য কিছু করতে থাকলে, তোমার কখনোই একা লাগবে না।
উপরে দেওয়া চারটে ধারণাই ভুল।
কেন?
বন্ধুত্ব এবং একাকিত্ব সম্বন্ধে আসল কথা
অনেক বন্ধু থাকলেই যে তোমার কখনো একা লাগবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
“আমি আমার বন্ধুদের জন্য চিন্তা করি, তবে মাঝে মাঝে মনে হয় যে, ওরা আমার জন্য কোনো চিন্তা করে না। তোমার চারপাশে অনেক বন্ধু থাকার পরেও যখন মনে হয় যে, তারা তোমাকে ভালোবাসে না বা তোমাকে তাদের আর দরকার নেই, তখন যে-একাকিত্বের অনুভূতি হয়, এর চেয়ে খারাপ আর কিছু নেই।”—অ্যান।
সোশ্যাল নেট-ওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকলেই যে তোমার কখনো একা লাগবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
“কেউ কেউ যেভাবে পুতুল সংগ্রহ করে ঘর সাজায়, ঠিক সেভাবেই অনেকে বন্ধু বানায়। কিন্তু ঘর ভরতি পুতুল থাকলেও, সেগুলোর কাছ থেকে কখনোই ভালোবাসা পাওয়া যায় না। তাই, অনলাইনে থাকা বন্ধুরাও ঠিক সেই প্রাণহীন পুতুলগুলোর মতোই হবে, যদি তাদের সঙ্গে তোমার সত্যিকারের সম্পর্ক না থাকে।”—এলেন।
যত খুশি তত টেক্সট ম্যাসেজ পাঠালেই যে তোমার কখনো একা লাগবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
“কখনো কখনো তুমি যখন একাকী অনুভব করো, তখন বার বার তুমি তোমার ফোন দেখতে থাক যে, কোনো বন্ধু ম্যাসেজ করেছে কি না। আর যদি দেখো, কেউ তোমাকে কিছু লেখেনি, তা হলে তোমার নিজেকে আগের চেয়ে আরও বেশি একা বলে মনে হতে পারে।”—সেরিনা।
অন্যদের জন্য কিছু করতে থাকলেই যে তোমার কখনো একা লাগবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
“আমি সবসময় আমার বন্ধুদের কিছু সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি দেখেছি যে, ওরা আমার জন্য তেমনটা করে না। আমি ওদের জন্য এত কিছু করলেও, তাতে আমার কোনো আপশোস নেই। তবে, এটা ভেবে আমার একটু অবাক লাগে যে, প্রতিদানে ওরা আমার জন্য কখনো কিছুই করেনি।”—রিচার্ড।
মূল বিষয়টা হল: একাকিত্বের অনুভূতিটা আসলে, সম্পূর্ণ নিজস্ব এক চিন্তাধারা। জেনেট নামের এক যুবতী বলে, “এই অনুভূতিটা একজন ব্যক্তির ভিতর থেকে আসে, বাইরে থেকে নয়।”
তোমার যদি কোনো বন্ধু না থাকে আর নিজেকে খুব একা লাগে, তা হলে তুমি কী করতে পারো?
একাকিত্বের সঙ্গে লড়াইয়ে জয়ী হওয়া
আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে চলো।
“নিজেকে গুটিয়ে রাখার প্রবণতা থেকে, একাকিত্ব অনুভব করা শুরু হতে পারে। তুমি যদি মনে কর, অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার মত যোগ্যতা তোমার নেই, তা হলে নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করা তোমার জন্য বেশ কঠিন হবে।”—জেনেট।
বাইবেল বলে: “তুমি তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসবে।” (গালাতীয় ৫:১৪) ভালো বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে চাইলে, নিজেকেও ভালোবাসতে হবে ঠিকই, তবে তা করতে গিয়ে আমরা যেন নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড়ো করে দেখতে শুরু না করি।—গালাতীয় ৬:৩, ৪.
‘আমি কোনো কাজের নই,’ এটা ভেবে নিজেকে ছোটো করে দেখো না।
“একাকিত্বের অনুভূতি হল, চোরাবালির মত। তুমি এর মধ্যে যত বেশি নড়াচড়া করবে, সেখান থেকে বের হয়ে আসা তোমার জন্য তত বেশি কঠিন হবে। তুমি যদি একাকিত্বের অনুভূতির মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখ, তা হলে তোমার মনে হবে, তুমি কোনো কাজের নও। আর এমনটা ভেবে তুমি নিজেকে ছোটো করে দেখতে শুরু করবে আর তখন কেউই তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইবে না।”—এরিন।
বাইবেল বলে: “প্রেম … স্বার্থ চেষ্টা করে না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫) সত্যি কথা বলতে, আমরা যদি নিজেদের উপর অতিরিক্ত মনোযোগ দিই, তখন অন্যদের প্রতি চিন্তা দেখাতে ব্যর্থ হব এবং অন্যেরাও আমাদের কাছে আর এগিয়ে আসতে চাইবে না। (২ করিন্থীয় ১২:১৫) আসল বিষয়টা হল: তুমি কতটা সুখী হবে, সেটা যদি অন্যদের আচরণের উপর নির্ভর করে, তা হলে তুমি কখনোই খুশি থাকতে পারবে না! যেমন, তুমি যদি বলতে থাক, “কেউ আমাকে ডাকে না” অথবা “কেউ, আমাকে কোথাও আমন্ত্রণ জানায় না,” তা হলে এমন হবে যেন, তুমি তোমার আনন্দে থাকাটা অন্যদের হাতে তুলে দিচ্ছ। এমনটা করলে কি মনে হবে না যে, তুমি তাদের হাতে একটু বেশিই ক্ষমতা তুলে দিচ্ছ?
যে-কারো সঙ্গেই বন্ধুত্ব করে নিও না।
“একাকী লোকেরা মনোযোগ পেতে চায় এবং তারা এমন অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে যে, সেই মনোযোগ কার কাছ থেকে আসছে, তাতে তার কিছু যায় আসে না। তারা শুধুমাত্র এটাই চায় যে, তার প্রতি কেউ মনোযোগ দিক। তবে, কেউ কেউ প্রথমে তোমাকে দেখাবে যে, তারা তোমার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে আর এরপর নিজেদের স্বার্থে তোমাকে ব্যবহার করবে। আর পরে যখন তুমি বুঝতে পারবে যে, তারা তোমার সুযোগ নিচ্ছে, তখন তুমি আগের চেয়ে আরও একা হয়ে পড়বে।”—ব্রিয়ান।
বাইবেল বলে: “যে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে চলে, সে বিজ্ঞ হয়ে উঠবে, কিন্তু যে মূর্খ ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করে, তার ক্ষতি হবে।” (হিতোপদেশ ১৩:২০) অনেক দিন ধরে খায়নি এমন একজন লোক, যেটা পায় সেটাই খেয়ে নেয়। ঠিক তেমনই, যাদের কোন বন্ধু নেই, তারাও ভুলভাল জায়গায় বন্ধুত্ব শুরু করে আর এর সুযোগ নিয়ে স্বার্থপর লোকেরা নিজেদের স্বার্থে তাদের কাজে লাগায়। এই ধরনের একাকী ব্যক্তি আসলে খুব সহজেই ধূর্ত লোকদের পাল্লায় পড়ে যায়, যাদেরকে সে বন্ধু বলে মনে করে।
উপসংহার: প্রত্যেকেই কোনো-না-কোনো সময় একাকিত্ব অনুভব করে, কেউ বেশি আর কেউ কম। একাকিত্বের এই অনুভূতি খুবই ক্ষতিকর, তবে এটা শুধুমাত্র এক অনুভূতি। আসলে, আমাদের অনুভূতিগুলো সাধারণত আমরা যেভাবে চিন্তা করি, সেটার উপর নির্ভর করে। আর চাইলে, আমরা যেভাবে চিন্তা করি, তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
অন্যদের কাছ থেকে তুমি কতটুকু আশা করছ, সেটা নিয়েও চিন্তা করো। জেনেট, যার কথা আগেও বলা হয়েছিল, সে বলে, “সবাই যে সারাজীবন ধরে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে থাকবে, এমন নয়। তবে, তুমি এমন লোকদের খুঁজে পেতে পারো, যারা তোমার জন্য চিন্তা করে আর চিন্তা দেখানোটাই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তুমি যখন জানবে যে, তোমার এমন কেউ আছে, যারা তোমার কথা চিন্তা করে, তখন তোমার নিজেকে আর একা বলে মনে হবে না।”
আরও সাহায্য দরকার? তা হলে এটা পড়ো, “ বন্ধুত্ব করার বিষয়ে ভয় কাটিয়ে ওঠা।” এ ছাড়া, “Working Through Loneliness,” এই PDF ডাউনলোড করো।