অধ্যায় সাত
তিনি “সদাপ্রভুর সাক্ষাতে বাড়িয়া উঠিতে লাগিলেন”
১, ২. শমূয়েল যখন ইস্রায়েলের লোকেদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন পরিস্থিতি কেমন ছিল আর কেন তাদেরকে অনুতপ্ত হতে পরিচালিত করার প্রয়োজন হয়েছিল?
শমূয়েল তার লোকেদের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। সেই জাতি গিল্গল নগরে সমবেত হয়েছিল, যাদেরকে এই বিশ্বস্ত ব্যক্তি আহ্বান করেছিলেন, যিনি দশকের পর দশক ধরে ভাববাদী ও বিচারকর্তা হিসেবে সেবা করে আসছেন। সময়টা ছিল আমাদের আধুনিক ক্যালেন্ডারের মে অথবা জুন মাস; ইতিমধ্যে শুষ্ক মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। জমির গমও পেকে গিয়েছে। জনতার মাঝে নিরবতা ছড়িয়ে পড়েছে। কীভাবে শমূয়েল তাদের হৃদয়ে পৌঁছাতে পারেন?
২ লোকেরা বুঝতে পারেনি যে, তাদের পরিস্থিতি কতটা গুরুতর ছিল। তাদের ওপর শাসন করার জন্য একজন মানবরাজা থাকার জন্য তারা জোরাজুরি করেছিল। তারা উপলব্ধি করতে পারেনি যে, তারা তাদের ঈশ্বর যিহোবা ও তাঁর ভাববাদীর প্রতি চরম অসম্মান দেখাচ্ছে। আসলে, তারা যিহোবাকে তাদের রাজা হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিল! অনুতপ্ত হওয়ার জন্য শমূয়েল কীভাবে তাদেরকে পরিচালিত করতে পারেন?
মন্দ প্রভাব সত্ত্বেও যিহোবার ওপর বিশ্বাস গড়ে তোলার বিষয়ে শমূয়েলের ছোটোবেলার উদাহরণ আমাদেরকে অনেক কিছু শেখাতে পারে
৩, ৪. (ক) কেন শমূয়েল তার বাল্যকালের বিষয়ে বলেছিলেন? (খ) শমূয়েলের বিশ্বাসের উদাহরণ কেন আজকে আমাদের জন্য ব্যবহারিক?
৩ শমূয়েল কথা বলতে শুরু করেছিলেন। তিনি সেই জনতাকে বলেছিলেন, “আমি বৃদ্ধ ও পক্বকেশ হইয়াছি।” তার পক্বকেশ এই কথার গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। এরপর তিনি বলেছিলেন: “আমি বাল্যকাল অবধি অদ্য পর্য্যন্ত তোমাদের সম্মুখে গমনাগমন করিয়া আসিতেছি।” (১ শমূ. ১১:১৪, ১৫; ১২:২) যদিও শমূয়েল বৃদ্ধ ছিলেন কিন্তু তিনি তার বাল্যকালকে ভুলে যাননি। তার ছোটোবেলার স্মৃতি তখনও স্পষ্ট ছিল। বড়ো হয়ে ওঠার সময় তিনি যে-সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিলেন, সেগুলো তাকে তার ঈশ্বর যিহোবার প্রতি বিশ্বাস ও ভক্তিপূর্ণ এক জীবনের দিকে পরিচালিত করেছিল।
৪ শমূয়েলকে বিশ্বাস গড়ে তুলতে ও তা বজায় রাখতে হয়েছিল, যদিও তার চারপাশের লোকেরা বার বার অবিশ্বস্ত ও আনুগত্যহীন হয়ে পড়েছিল। ঠিক একইভাবে আজকেও, বিশ্বাস গড়ে তোলা কঠিন, যেহেতু আমরা এক অবিশ্বস্ত ও কলুষিত জগতে বাস করছি। (পড়ুন, লূক ১৮:৮.) তাই আসুন আমরা বিবেচনা করে দেখি যে, একেবারে ছেলেবেলা থেকে শমূয়েল যে-উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি।
‘বালক শমূয়েল সদাপ্রভুর সম্মুখে পরিচর্য্যা করিতেন’
৫, ৬. শমূয়েলের ছেলেবেলা কোন দিক দিয়ে আলাদা ছিল অথচ তার যে যত্ন নেওয়া হবে এই বিষয়ে তার বাবা-মা কেন নিশ্চিত ছিলেন?
৫ শমূয়েলের ছেলেবেলাটা ছিল কিছুটা আলাদা। স্তন্যপান ত্যাগ করার অল্পদিন পরেই, সম্ভবত তিন বছর বা একটু বেশি বয়সে, তিনি রামাতে তার বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটারের বেশি দূরে শীলোতে যিহোবার পবিত্র আবাসে সেবা করার এক জীবন শুরু করেছিলেন। তার বাবা-মা, ইল্কানা ও হান্না তাদের ছেলেকে সারাজীবনের জন্য একজন নাসরীয় হিসেবে যিহোবার কাছে এক বিশেষ ধরনের সেবার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। a এর মানে কি এই যে, শমূয়েলকে পরিত্যাগ করা হয়েছিল ও তার বাবা-মা তাকে ভালোবাসত না?
৬ না, তা নয়! তারা জানত যে, শীলোতে তাদের ছেলের যত্ন নেওয়া হবে। নিঃসন্দেহে, মহাযাজক এলি বিভিন্ন বিষয় তত্ত্বাবধান করেছিলেন কারণ শমূয়েল তার সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন। এ ছাড়া, বেশ কিছু মহিলা ছিলেন, যারা স্পষ্টতই সংগঠিতভাবে আবাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিছু বিষয়ে কাজ করতেন।—যাত্রা. ৩৮:৮; বিচার. ১১:৩৪-৪০.
৭, ৮. (ক) বছরের পর বছর ধরে, শমূয়েলের বাবা-মা কীভাবে তাকে প্রেমময় উৎসাহ জুগিয়েছেন? (খ) শমূয়েলের বাবা-মার কাছ থেকে আজকে বাবা-মারা কী শিখতে পারে?
৭ আসলে, হান্না ও ইল্কানা কখনোই তাদের প্রিয় প্রথম সন্তানকে ভুলে যাননি, যার জন্মই ছিল একটা প্রার্থনার উত্তর। হান্না ঈশ্বরের কাছে একটা ছেলের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন ও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি সেই ছেলেকে পবিত্র সেবার এক জীবনের জন্য ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করবেন। শমূয়েল আবাসে সেবা করত বলে প্রত্যেক বছর হান্না শমূয়েলের জন্য একটা নতুন হাতকাটা জামা বানিয়ে নিয়ে আসতেন। নিশ্চিতভাবেই, এই ছোট্ট ছেলেটি সেই পরিদর্শনগুলোকে মূল্যবান বলে মনে করত। সেই অদ্বিতীয় স্থানে যিহোবাকে সেবা করা যে কী এক বিশেষ সুযোগ, সেই বিষয়ে তার বাবা-মার কাছ থেকে শিক্ষা পাওয়ার সময়, নিঃসন্দেহে তিনি তাদের প্রেমময় উৎসাহ ও নির্দেশনা থেকে উন্নতি লাভ করেছিলেন।
৮ হান্না ও ইল্কানার কাছ থেকে আজকে বাবা-মারা অনেক কিছু শিখতে পারে। সন্তান প্রতিপালন করার ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক প্রয়োজনকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র বস্তুগত বিষয়ের ওপর তাদের সমস্ত প্রচেষ্টাকে কেন্দ্রীভূত করা বাবা-মাদের জন্য সাধারণ বিষয়। কিন্তু, শমূয়েলের বাবা-মা আধ্যাত্মিক বিষয়কে প্রথম স্থান দিয়েছিল আর তা তাদের ছেলে যে-ধরনের ব্যক্তি হিসেবে বড়ো হয়ে উঠেছিল, সেটার ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছিল।—পড়ুন, হিতোপদেশ ২২:৬.
৯, ১০. (ক) আবাসের বর্ণনা দিন এবং সেই পবিত্র স্থানের প্রতি ছোট্ট শমূয়েলের অনুভূতির কথা বর্ণনা করুন। (এ ছাড়া, পাদটীকা দেখুন।) (খ) শমূয়েলকে হয়তো কোন কোন দায়িত্ব পালন করতে হতো আর আজকে অল্পবয়সিরা কীভাবে তাকে অনুকরণ করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
৯ আমরা কল্পনা করতে পারি যে, ছেলেটি ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে উঠছে আর শীলোর চারদিকে অবস্থিত পাহাড়গুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নীচে নগর এবং এর একদিকে বিস্তৃত উপত্যকার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার সময়, যিহোবার আবাস দেখে তার হৃদয় আনন্দ ও গর্বে ভরে উঠছে। সেই আবাস বাস্তবিকই এক পবিত্র স্থান ছিল। b প্রায় ৪০০ বছর আগে স্বয়ং মোশির নির্দেশনায় নির্মিত এই আবাস, সমস্ত পৃথিবীতে যিহোবার বিশুদ্ধ উপাসনার জন্য একমাত্র কেন্দ্রস্থল ছিল।
১০ আবাসের প্রতি ছোট্ট শমূয়েলের ভালোবাসা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। পরে তিনি যে-বিবরণ লিখেছিলেন, সেখানে আমরা পড়ি: “বালক শমূয়েল মসীনা-সূত্রের এফোদ পরিহিত হইয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে পরিচর্য্যা করিতেন।” (১ শমূ. ২:১৮) সেই সাধারণ হাতকাটা জামা স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, শমূয়েল আবাসে যাজকদের সাহায্য করতেন। যদিও শমূয়েল যাজক শ্রেণীর সদস্য ছিলেন না, তবুও তিনি সেই কাজগুলো করতেন, যেগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল সকালে আবাস প্রাঙ্গণের দরজাগুলো খোলা ও বয়স্ক এলির পরিচর্যা করা। তবে, একদিকে যেমন তিনি নিজের বিশেষ সুযোগগুলো উপভোগ করতে থাকেন, অন্যদিকে তার সহজসরল হৃদয় তেমনই উদ্বিগ্ন হতে থাকে। যিহোবার গৃহে এমন কিছু ঘটছিল যা অত্যন্ত অন্যায় ছিল।
কলুষতার মুখোমুখি হওয়ার সময় শুদ্ধ থাকা
১১, ১২. (ক) হফ্নি ও পীনহস কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছিলেন? (খ) আবাসের মধ্যে হফ্নি ও পীনহস কোন ধরনের দুষ্টতা ও কলুষতার কাজগুলো করতেন? (এ ছাড়া, পাদটীকা দেখুন।)
১১ অল্প বয়সেই, শমূয়েল প্রকৃত দুষ্টতা ও কলুষতা দেখেছিলেন। হফ্নি ও পীনহস নামে এলির দুই ছেলে ছিল। শমূয়েলের বিবরণ জানায়: “এলির দুই পুত্ত্র পাষণ্ড ছিল, তাহারা সদাপ্রভুকে জানিত না।” (১ শমূ. ২:১২) এই পদে ধারণা দুটো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই পদে “পাষণ্ড” বলে অনুবাদিত শব্দটিকে মূল ইব্রীয় ভাষায় আক্ষরিকভাবে “অপদার্থ সন্তান” হিসেবেও অনুবাদ করা যেতে পারে। আর এটা হফ্নি ও পীনহস সম্বন্ধে এক উপযুক্ত বর্ণনা কারণ যিহোবার প্রতি তাদের কোনো সম্মানই ছিল না। তারা তাঁর ধার্মিক মান এবং চাহিদাগুলো সম্বন্ধে কোনোরকম চিন্তাই করতেন না। সেটাই ছিল তাদের অন্য সমস্ত পাপের কারণ।
১২ ঈশ্বরের ব্যবস্থা সুনির্দিষ্টভাবে যাজকদের কাজকর্ম এবং তাঁর আবাসে তাদেরকে যেভাবে বলি উৎসর্গ করতে হতো, সেই সম্বন্ধে জানিয়েছিল। তা দেওয়ার উপযুক্ত কারণ ছিল! সেই বলিদানগুলো পাপ ক্ষমা করার জন্য ঈশ্বর যে-ব্যবস্থা করেছেন সেটাকে প্রতিনিধিত্ব করত, যাতে লোকেরা তাঁর দৃষ্টিতে শুদ্ধ থাকতে, তাঁর আশীর্বাদ ও নির্দেশনা লাভের জন্য উপযোগী হতে পারে। কিন্তু, হফ্নি ও পীনহসের কারণে সহযাজকরাও সেই উৎসর্গগুলোকে অত্যন্ত অসম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। c
১৩, ১৪. (ক) আবাসে ঘটে চলা দুষ্টতার কারণে আন্তরিক লোকেরা কীভাবে প্রভাবিত হয়েছিল? (খ) এলি কীভাবে একজন বাবা ও একজন মহাযাজক, উভয় ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছিলেন?
১৩ কল্পনা করুন যে, ছোট্ট শমূয়েল অবাক চোখে এই ধরনের গুরুতর অন্যায় কাজগুলো ঘটতে দেখছে, যেগুলো কেউ সংশোধন করছে না। কিছুটা আধ্যাত্মিক সান্ত্বনা ও শক্তি খুঁজে পাওয়ার আশায় পবিত্র আবাসে এসেছে এমন কতজন দরিদ্র, নিরীহ, নিপীড়িত ব্যক্তিকে সে হতাশ হয়ে, আঘাত পেয়ে অথবা অপমানিত হয়ে ফিরে যেতে দেখেছে? আর যখন সে জানতে পেরেছিল যে, হফ্নি ও পীনহসও আবাসে সেবারত কিছু স্ত্রীলোকের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক গড়ে তোলার দ্বারা যৌন নৈতিকতা সম্বন্ধীয় যিহোবার আইনগুলোকে অসম্মান করেছিল, তখন সে কেমন বোধ করেছিল? (১ শমূ. ২:২২) খুব সম্ভবত সে আশা করেছিল যে, এলি এই বিষয়ে কিছু করবেন।
এলির ছেলেদের দুষ্টতা দেখে শমূয়েল নিশ্চয়ই অনেক উদ্বিগ্ন হয়েছিল
১৪ ক্রমশ বেড়ে চলা এই সমস্যাকে সংশোধন করার জন্য এলিই সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ছিলেন। আবাসে যা ঘটছিল, সেটার জন্য মহাযাজক হিসেবে তিনি দায়বদ্ধ ছিলেন। একজন বাবা হিসেবে সন্তানদের সংশোধন করার বাধ্যবাধকতা তার ছিল। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, তারা নিজেদের ও সেইসঙ্গে দেশের অগণিত লোককেও দুঃখ দিয়েছিল। কিন্তু, এলি একজন বাবা ও একজন মহাযাজক হিসেবে, উভয় ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি তার ছেলেদেরকে শুধুমাত্র মৃদু ভর্ৎসনা করেছিলেন। (পড়ুন, ১ শমূয়েল ২:২৩-২৫.) কিন্তু তার ছেলেদের আরও কঠোর শাসনের প্রয়োজন ছিল। তারা মৃত্যুর যোগ্য পাপ করেছিল!
১৫. যিহোবা এলির কাছে কোন জোরালো বার্তা পাঠিয়েছিলেন আর এলির পরিবার এই সাবধানবাণীর প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?
১৫ বিষয়গুলো এতদূর পর্যন্ত গিয়েছিল যে, যিহোবা এলির কাছে বিচারের এক জোরালো বার্তা-সহ “ঈশ্বরের এক জন লোক” অর্থাৎ নাম না জানা একজন ভাববাদীকে পাঠিয়েছিলেন। যিহোবা এলিকে বলেছিলেন: “তুমি . . . আমা অপেক্ষা আপন পুত্ত্রদিগকে অধিক গৌরবান্বিত করিতেছ।” তাই ঈশ্বর ভাববাণী করেছিলেন যে, এলির দুষ্ট ছেলেরা একই দিনে মারা যাবে এবং এলির কুল খুবই কষ্ট ভোগ করবে, এমনকী যাজক শ্রেণীর বিশেষ সুযোগপ্রাপ্ত পদ হারাবে। এই জোরালো সতর্কবাণী কি সেই পরিবারের জন্য কোনো পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল? তাদের হৃদয়ে এই ধরনের কোনো পরিবর্তনের বিষয়ে বিবরণ কিছু জানায় না।—১ শমূ. ২:২৭–৩:১.
১৬. (ক) ছোট্ট শমূয়েলের উন্নতির বিষয়ে আমরা কোন বিবরণ পাই? (খ) আপনার কাছে কি এই বিবরণগুলো হৃদয়গ্রাহী বলে মনে হয়? ব্যাখ্যা করুন।
১৬ কীভাবে এইসমস্ত কলুষতা ছোট্ট শমূয়েলকে প্রভাবিত করেছিল? এই দুঃখজনক বিবরণে, আমরা মাঝে মাঝে কিছুটা আশার আলো দেখতে পাই আর তা হল শমূয়েলের বেড়ে ওঠা ও উন্নতির বিষয়ে সুসংবাদ। স্মরণ করুন, ১ শমূয়েল ২:১৮ পদে আমরা পড়ি যে, বিশ্বস্তভাবে ‘বালক শমূয়েল সদাপ্রভুর সম্মুখে পরিচর্য্যা করিতেন।’ এমনকী সেই ছোটোবেলা থেকেই, শমূয়েল ঈশ্বরের প্রতি সেবায় তার জীবনকে কেন্দ্রীভূত করেছিল। একই অধ্যায়ের ২১ পদে আমরা এমনকী আরও হৃদয়গ্রাহী কিছু পড়ি: “বালক শমূয়েল সদাপ্রভুর সাক্ষাতে বাড়িয়া উঠিতে লাগিলেন।” সে যতই বড়ো হতে থাকে, তার স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে তার বন্ধন ততই দৃঢ় হতে থাকে। যিহোবার সঙ্গে এই ধরনের এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক হল, যেকোনো ধরনের কলুষতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে নিশ্চিত সুরক্ষা।
১৭, ১৮. (ক) কলুষতার মুখোমুখি হলে কোনো অল্পবয়সি খ্রিস্টান কীভাবে শমূয়েলের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারে? (খ) কী দেখায় যে, শমূয়েল সঠিক পথ বেছে নিয়েছিলেন?
১৭ শমূয়েলের জন্য এই বলে যুক্তি করা সহজ হতো, মহাযাজক ও তার ছেলেরা যদি পাপের কাছে নতিস্বীকার করতে পারে, তাহলে সেও হয়তো যা খুশি তা করতে পারে। কিন্তু কর্তৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের এবং অন্যদের কলুষতা, কখনোই পাপ করার এক অজুহাত নয়। আজকে, অল্পবয়সি অনেক খ্রিস্টান শমূয়েলের উদাহরণ অনুসরণ করে এবং ‘সদাপ্রভুর সাক্ষাতে বাড়িয়া উঠে’—এমনকী যখন তাদের চারপাশে থাকা কেউ কেউ উত্তম উদাহরণ স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়।
১৮ কীভাবে এই ধরনের এক জীবনধারা শমূয়েলের জন্য ভালো ফল নিয়ে এসেছিল? আমরা পড়ি: “কিন্তু বালক শমূয়েল উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাইয়া সদাপ্রভুর কাছে ও মনুষ্যদের কাছে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইতেন।” (১ শমূ. ২:২৬) তাই অন্তত এমন কয়েক জন শমূয়েলকে খুব পছন্দ করতেন, যাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তার বিশ্বস্ত জীবনধারার জন্য স্বয়ং যিহোবা এই বালককে মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন। আর নিশ্চিতভাবে শমূয়েল জানত, তার ঈশ্বর শীলোতে বিদ্যমান সমস্ত মন্দতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন, কিন্তু সম্ভবত সে ভাবছিল, কখন। এক রাতে, এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গিয়েছিল।
“বলুন, আপনার দাস শুনিতেছে”
১৯, ২০. (ক) আবাসে এক ভোররাতে শমূয়েলের প্রতি যা ঘটেছিল, তা বর্ণনা করুন। (খ) কে কথা বলছেন সেই সম্বন্ধে শমূয়েল কীভাবে জানতে পেরেছিল আর এলির প্রতি সে কেমন আচরণ করত?
১৯ ভোর হয়ে আসছিল কিন্তু তখনও অন্ধকার; তাঁবুর বড়ো বাতির আলো তখনও টিমটিম করে জ্বলছিল। সেই নিস্তব্ধতায় শমূয়েল এক কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিল, যা তার নাম ধরে ডেকেছিল। সে মনে করেছিল যে, এটা ছিল এলির কণ্ঠস্বর, যিনি তখন খুবই বৃদ্ধ ছিলেন ও চোখে ভালো দেখতে পেতেন না। শমূয়েল উঠে সেই বৃদ্ধ ব্যক্তির কাছে ‘দৌড়িয়া গিয়াছিল।’ আপনি কি আপনার মনের চোখ দিয়ে কল্পনা করতে পারেন যে, ছেলেটি এলির কী প্রয়োজন তা দেখার জন্য খালি পায়ে তার কাছে দৌড়ে যাচ্ছে? এটা দেখা হৃদয়স্পর্শী যে, শমূয়েল সম্মান দেখিয়ে ও সদয়ভাবে এলির সঙ্গে আচরণ করত। তার সমস্ত পাপ সত্ত্বেও, এলি তখনও যিহোবার মহাযাজক ছিলেন।—১ শমূ. ৩:২-৫.
২০ শমূয়েল এই বলে এলিকে জাগিয়ে তুলেছিল: “এই যে আমি; আপনি ত আমাকে ডাকিয়াছেন।” কিন্তু এলি বলেছিলেন যে, তিনি তাকে ডাকেননি আর তাই তিনি ছেলেটিকে আবার শুতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। একই ঘটনা বার বার ঘটেছিল! পরিশেষে, এলি বুঝতে পেরেছিলেন যে, কী ঘটছে। যিহোবা সেই সময়ে তাঁর লোকেদের খুব কমই দর্শন দিতেন অথবা তাদের কাছে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বার্তা পাঠাতেন আর কেন, তা বোঝা কঠিন নয়। কিন্তু এলি বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবা আবারও কথা বলছেন—এবার এই ছেলেটির সঙ্গে! এলি শমূয়েলকে আবারও শুতে যেতে বলেছিলেন আর কীভাবে সঠিক উপায়ে উত্তর দেওয়া যায়, সেই বিষয়ে তাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। শমূয়েল সেটার বাধ্য হয়েছিল। শীঘ্র সে সেই কণ্ঠস্বরের ডাক শুনতে পেয়েছিল: “শমূয়েল, শমূয়েল!” ছেলেটি উত্তর দিয়েছিল: “বলুন, আপনার দাস শুনিতেছে।”—১ শমূ. ৩:১, ৫-১০.
২১. আজকে আমরা কীভাবে ঈশ্বরের কথা শুনতে পারি আর তা করলে কোন ভালো ফল পাওয়া যায়?
২১ অবশেষে, শীলোতে যিহোবা এমন একজন দাসকে পেয়েছিলেন, যে তাঁর কথা শুনেছিল। সেটাই শমূয়েলের অভ্যাস হয়ে উঠেছিল। এটা কি আপনারও অভ্যাস? কোনো অতিপ্রাকৃতিক কণ্ঠস্বর রাতে আমাদের সঙ্গে কথা বলবে, আমাদের সেই অপেক্ষা করতে হয় না। আজকে, এক অর্থে সবসময়ই আমরা ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনতে পাই। তাঁর সম্পূর্ণ বাক্য বাইবেলে তা শুনতে পাওয়া যায়। আমরা যত বেশি ঈশ্বরের কথা শুনব ও সাড়া দেব, আমাদের বিশ্বাস তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। শমূয়েলের ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছিল।
২২, ২৩. (ক) শমূয়েল প্রথমে যে-বার্তা জানাতে ভয় পেয়েছিল, তা কীভাবে পূর্ণ হয়েছিল? (খ) কীভাবে শমূয়েলের সুনাম বৃদ্ধি পেতে থাকে?
২২ শীলোতে সেই রাতটা ছিল শমূয়েলের জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ তখন থেকেই সে যিহোবাকে এক বিশেষ অর্থে জানতে শুরু করেছিল অর্থাৎ সে ঈশ্বরের নিজস্ব ভাববাদী এবং মুখপাত্র হয়েছিল। প্রথমে, ছেলেটি এলির কাছে যিহোবার বার্তা জানাতে ভয় পেয়েছিল কারণ সেই কুলের বিরুদ্ধে বলা ভবিষ্যদ্বাণী যে শীঘ্র পূর্ণ হবে, সেই সম্বন্ধে এটা ছিল শেষ ঘোষণা। কিন্তু শমূয়েল সাহস সঞ্চয় করেছিল—আর এলি নম্রভাবে ঐশিক বিচারকে মেনে নিয়েছিলেন। খুব শীঘ্র, যিহোবা যা-কিছু বলেছিলেন, সমস্তই পূর্ণ হয়েছিল: ইস্রায়েল পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধে গিয়েছিলেন আর হফ্নি ও পীনহস দু-জনে একই দিনে মারা পড়েছিলেন এবং যিহোবার পবিত্র সিন্দুক শত্রুদের হস্তগত হয়েছে এই কথা শুনে এলি মারা গিয়েছিলেন।—১ শমূ. ৩:১০-১৮; ৪:১-১৮.
২৩ একজন বিশ্বস্ত ভাববাদী হিসেবে শমূয়েলের সুনাম বৃদ্ধি পেতেই থাকে। বিবরণ বলে, “সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন” আর তিনি শমূয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর কোনোটাকেই ব্যর্থ হতে দেননি।—পড়ুন, ১ শমূয়েল ৩:১৯.
‘শমূয়েল সদাপ্রভুকে ডাকিলেন’
২৪. একসময় ইস্রায়েলীয়রা কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আর কেন তা গুরুতর পাপ ছিল?
২৪ ইস্রায়েলীয়রা কি শমূয়েলের নেতৃত্বকে মেনে নিয়েছিল এবং আধ্যাত্মিকমনা ও বিশ্বস্ত লোক হয়ে উঠেছিল? না। একসময়, তারা স্থির করেছিল যে, তাদের বিচার করার জন্য তারা সামান্য একজন ভাববাদীকে চায় না। তারা অন্যান্য জাতির মতো হতে চেয়েছিল আর এও চেয়েছিল যে, একজন মানবরাজা যেন তাদের ওপর শাসন করেন। যিহোবার নির্দেশনায় শমূয়েল তাদের সেই অনুরোধ মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের পাপ যে কতখানি গুরুতর ছিল, তা শমূয়েলকে তাদের কাছে প্রকাশ করতে হয়েছিল। তারা সামান্য একজন মানুষকে নয় কিন্তু স্বয়ং যিহোবাকেই প্রত্যাখ্যান করছিল! তাই তিনি লোকেদেরকে গিল্গলে ডেকে পাঠিয়েছিলেন।
২৫, ২৬. কীভাবে গিল্গলে বয়স্ক শমূয়েল তার লোকেদের অবশেষে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে, যিহোবার বিরুদ্ধে তাদের পাপ কতটা গুরুতর ছিল?
২৫ আসুন আমরা গিল্গলে ইস্রায়েলের উদ্দেশে কথা বলার সেই উত্তেজনাকর মুহূর্তে তার সঙ্গে আবারও যোগ দিই। সেখানে বয়স্ক শমূয়েল নীতিনিষ্ঠা সম্বন্ধীয় তার বিশ্বস্ত নথির বিষয়ে ইস্রায়েলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর আমরা পড়ি: ‘শমূয়েল সদাপ্রভুকে ডাকিলেন।’ তিনি যিহোবার কাছে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছিলেন।—১ শমূ. ১২:১৭, ১৮.
২৬ বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি? এই শুষ্ক মরসুমে? এই ধরনের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি! লোকেদের মধ্যে যদি কোনো সন্দেহ অথবা উপহাসের লেশমাত্রও থেকে থাকে, তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। হঠাৎ-ই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছিল। ঝড়ে জমির গম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কানে তালা লাগার মতো শব্দে বজ্রপাত হয়েছিল। এরপর বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছিল। লোকেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? ‘লোকেরা সদাপ্রভু হইতে ও শমূয়েল হইতে অতিশয় ভীত হইয়াছিল।’ অবশেষে তারা বুঝতে পেরেছিল যে, তারা কতটা গুরুতর পাপ করেছিল।—১ শমূ. ১২:১৮, ১৯.
২৭. যারা শমূয়েলের বিশ্বাস অনুকরণ করে, তাদের সম্বন্ধে যিহোবা কেমন বোধ করেন?
২৭ শমূয়েল নন কিন্তু তার ঈশ্বর যিহোবাই তাদের বিদ্রোহী হৃদয়কে স্পর্শ করেছিলেন। বাল্যকাল থেকে তার বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত, শমূয়েল তার ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। আর যিহোবা তাকে পুরস্কৃত করেছিলেন। আজও, যিহোবা পরিবর্তিত হননি। শমূয়েলের বিশ্বাস যারা অনুকরণ করে, তিনি এখনও তাদের সমর্থন করেন।
a নাসরীয়রা এমন একটা মানতের অধীনে ছিল, যেটার মধ্যে মদ্যপান করা এবং তাদের চুল কাটা অথবা দাড়ি কামানোর বিষয়ে এক নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত ছিল। অধিকাংশ নাসরীয়ই কেবল একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই এই মানত করতেন, কিন্তু কয়েক জন যেমন, শিম্শোন, শমূয়েল এবং যোহন বাপ্তাইজক সারাজীবনের জন্য নাসরীয় ছিলেন।
b আবাসটি ছিল আয়তাকার, মূলত কাঠের কাঠামো দিয়ে তৈরি এক বিরাট তাঁবু। কিন্তু, এটা সবচেয়ে সুন্দর সুন্দর জিনিস যেমন, সীলের চামড়া, সুন্দর কারুকার্যবিশিষ্ট কাপড়, রুপো ও সোনায় মোড়া দামি কাঠ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। আবাসটি এক আয়তাকার প্রাঙ্গণের মধ্যে অবস্থিত ছিল, যেটার মধ্যে বলি উৎসর্গ করার জন্য এক বিশাল বেদি ছিল। সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, স্পষ্টতই যাজকদের ব্যবহারের জন্য আবাস সংলগ্ন স্থানগুলোতে অন্যান্য কুঠরি নির্মাণ করা হয়েছিল। মনে হয় যে, শমূয়েল এইরকম একটা কুঠরিতে ঘুমাতেন।
c এই বিবরণ অসম্মান দেখানোর দুটো উদাহরণ তুলে ধরে। একটা বিষয় হল যে, ব্যবস্থা নির্দিষ্টভাবে জানিয়েছিল যে, উৎসর্গীকৃত বলির কোন অংশগুলো যাজকদেরকে খাওয়ার জন্য দিতে হবে। (দ্বিতীয়. ১৮:৩) কিন্তু, আবাসে সেই দুষ্ট যাজকরা একেবারে ভিন্ন এক রীতি স্থাপন করেছিল। তারা তাদের চাকরদের, যে-কড়াইয়ে মাংস সিদ্ধ করা হতো তাতে একটা শূল গেঁথে সেখান থেকে যেকোনো ভালো টুকরো উঠত, সেটা নিতে বলত। আরেকটা বিষয় হল যে, লোকেরা যখন বেদিতে পোড়ানোর জন্য তাদের বলিগুলো নিয়ে আসত, তখন দুষ্ট যাজকদের একজন চাকর সেই উৎসর্গকারীকে ভয় দেখাত আর এমনকী যিহোবার উদ্দেশে সেই মেদ উৎসর্গ করার আগেই কাঁচা মাংস দাবি করত।—লেবীয়. ৩:৩-৫; ১ শমূ. ২:১৩-১৭.