হৃদয়ের পরীক্ষক, যিহোবার অন্বেষণ করুন
হৃদয়ের পরীক্ষক, যিহোবার অন্বেষণ করুন
“আমার অন্বেষণ কর, তাহাতে বাঁচিবে।”—আমোষ ৫:৪.
১, ২. শাস্ত্র যখন বলে যে যিহোবা “অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টি করেন,” তখন এর অর্থ কী?
যিহোবা ঈশ্বর ভাববাদী শমূয়েলকে বলেছিলেন: “মনুষ্য প্রত্যক্ষ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি করে, কিন্তু সদাপ্রভু অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টি করেন।” (১ শমূয়েল ১৬:৭) এটা কীভাবে হতে পারে যে, যিহোবা হৃদয় বা “অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টি করেন”?
২ শাস্ত্রে, হৃদয় কথাটি প্রায়ই একজন ব্যক্তি ভিতরে কেমন—তার আকাঙ্ক্ষা, চিন্তা, আবেগ এবং অনুরাগ—সেটার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই, বাইবেল যখন বলে যে, ঈশ্বর হৃদয়ের প্রতি দৃষ্টি করেন, তখন এর অর্থ হল তিনি বাহ্যিক চেহারার চেয়ে আরও বেশি কিছু দেখেন এবং একজন ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে কেমন, সেটার প্রতি মনোযোগ দেন।
ঈশ্বর ইস্রায়েলের পরীক্ষা করেন
৩, ৪. আমোষ ৬:৪-৬ পদ অনুসারে, ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যে কোন অবস্থা বিরাজ করছিল?
৩ আমোষের দিনে, হৃদয়ের পরীক্ষক যখন ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছিলেন, তখন তিনি কী দেখেছিলেন? আমোষ ৬:৪-৬ পদ সেই লোকেদের বিষয় বলে, যারা ‘হস্তিদন্তের শয্যায় শয়ন করিয়াছিল, খট্টার উপরে আপন আপন গাত্র লম্বা করিয়াছিল।’ তারা “পালের মধ্য হইতে মেষশাবকদিগকে, ও গোষ্ঠের মধ্য হইতে গোবৎসদিগকে আনিয়া ভোজন” করছিল। এই লোকেরা “আপনাদের নিমিত্ত নানা বাদ্যযন্ত্রের উদ্ভাবন” করেছিল এবং “বড় বড় ভাণ্ডে দ্রাক্ষারস পান” করছিল।
৪ এক ঝলক তাকিয়ে প্রথমে এটাকে হয়তো মনোরম এক দৃশ্য বলে মনে হতে পারে। ধনীরা তাদের বিলাসবহুল বাড়িতে আরাম-আয়েশে সর্বোত্তম খাদ্য ও পানীয় উপভোগ করত এবং সর্বাধুনিক বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আমোদপ্রমোদ করত। এ ছাড়া, তাদের ‘হস্তিদন্তের শয্যা’ ছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদরা ইস্রায়েল রাজ্যের রাজধানী শমরিয়াতে প্রচুর পরিমাণে অপূর্বভাবে খোদাই করা হাতির দাঁত পেয়েছে। (১ রাজাবলি ১০:২২) যার মধ্যে অনেকগুলো খুব সম্ভবত আসবাবপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত এবং দেওয়ালে সাজানো কাঠের তক্তার মধ্যে খচিত ছিল।
৫. আমোষের দিনের ইস্রায়েলীয়দের প্রতি ঈশ্বর কেন অসন্তুষ্ট ছিলেন?
৫ ইস্রায়েলীয়রা আরাম-আয়েশে ছিল, সুস্বাদু খাবার খাচ্ছিল, উত্তম দ্রাক্ষারস পান করছিল এবং অপূর্ব সংগীত শুনছিল বলে কি যিহোবা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন? অবশ্যই না! বস্তুতপক্ষে, মানুষের আনন্দের জন্য তিনি এই সমস্তকিছু প্রচুর পরিমাণে জোগান। (১ তীমথিয় ৬:১৭) কিন্তু, যে-বিষয়গুলো যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করেছিল তা হল, লোকেদের মন্দ আকাঙ্ক্ষা, তাদের হৃদয়ের দুষ্ট অবস্থা, ঈশ্বরের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাহীন মনোভাব এবং সহইস্রায়েলীয়দের প্রতি তাদের ভালবাসার অভাব।
৬. আমোষের সময়ে ইস্রায়েলের আধ্যাত্মিক অবস্থা কেমন ছিল?
৬ যারা ‘খট্টার উপরে আপন আপন গাত্র লম্বা করিয়াছিল, এবং পালের মধ্য হইতে মেষশাবকদিগকে ভোজন করিয়াছিল, দ্রাক্ষারস পান করিয়াছিল, এবং নানা বাদ্যযন্ত্রের উদ্ভাবন করিয়াছিল’ তাদের জন্য অবাক হওয়ার মতো এক বিষয় ছিল। সেই লোকেদের উদ্দেশে বলা হয়েছিল: “উহারা অমঙ্গলের দিনকে আপনাদের হইতে দূরে রাখিতেছে।” ইস্রায়েলে বিরাজমান অবস্থাগুলোর কারণে তাদের প্রচুর দুঃখ করা উচিত ছিল কিন্তু “তাহারা যোষেফের দুর্দ্দশায় দুঃখিত হয় না।” (আমোষ ৬:৩-৬) সেই জাতির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ছাড়িয়ে যিহোবা লক্ষ করেছিলেন যে, যোষেফের—বা ইস্রায়েলের—আধ্যাত্মিক অবস্থা ছিল ধ্বংসাত্মক। তা সত্ত্বেও, লোকেরা তাদের রোজকার কাজকর্মের ব্যাপারে নির্বিকার ছিল। আজকে অনেক লোকের একইরকম মনোভাব রয়েছে। তারা হয়তো স্বীকার করতে পারে যে, আমরা কঠিন সময়ে বাস করছি কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, ততক্ষণ তারা অন্যদের অবস্থা নিয়ে চিন্তা করে না বা আধ্যাত্মিক বিষয়ে কোনো আগ্রহই প্রকাশ করে না।
ইস্রায়েল—এক অধঃপতিত জাতি
৭. ইস্রায়েলের লোকেরা যদি ঐশিক সতর্কবাণীতে মনোযোগ না দেয়, তা হলে কী ঘটবে?
৭ এর বাহ্যিক চেহারা সমৃদ্ধশালী বলে মনে হলেও আমোষের বইটি এক অধঃপতিত জাতির চিত্র তুলে ধরে। ঈশ্বরের সতর্কবাণীর প্রতি মনোযোগ না দেওয়ায় ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সংশোধন না করায়, যিহোবা তাদেরকে তাদের শত্রুদের হাতে ছেড়ে দেবেন। অশূরীয়রা এসে তাদেরকে তাদের জমকালো হাতির দাঁতের শয্যা থেকে আঁকড়ে ধরবে এবং টেনেহিঁচড়ে তাদেরকে বন্দিত্বে নিয়ে যাবে। তারা আর আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করতে পারবে না!
৮. কীভাবে ইস্রায়েল এক মন্দ আধ্যাত্মিক অবস্থায় পৌঁছেছিল?
৮ কীভাবে ইস্রায়েলীয়রা এইরকম এক অবস্থায় পৌঁছেছিল? সা.কা.পূ. ৯৯৭ সালে এই পরিস্থিতির সূত্রপাত হয়েছিল, যখন রাজা শলোমনের পুত্র রহবিয়াম তার উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন এবং ইস্রায়েলের দশ বংশ, যিহূদা ও বিন্যামীনের বংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যের প্রথম রাজা ছিলেন “নবাটের পুত্ত্র” যারবিয়াম ১ম। (১ রাজাবলি ১১:২৬) যারবিয়াম তার রাজ্যের লোকেদের মধ্যে এই প্রত্যয় জন্মিয়েছিলেন যে, যিহোবার উপাসনা করার জন্য যিরূশালেমে ভ্রমণ করা তাদের জন্য অনেক কষ্টকর ছিল। কিন্তু, তিনি প্রকৃতপক্ষে লোকেদের মঙ্গলের ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন না। এর পরিবর্তে, তিনি তার নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে চেয়েছিলেন। (১ রাজাবলি ১২:২৬) যারবিয়াম ভয় পেয়েছিলেন যে, ইস্রায়েলীয়রা যদি যিহোবার সম্মানার্থে বাৎসরিক উৎসবগুলোর জন্য সবসময় যিরূশালেম মন্দিরে যায়, তা হলে এক সময় তারা হয়তো আবার যিহূদা রাজ্যের প্রতি অনুগত হয়ে যাবে। এই বিষয়টাকে রোধ করার চেষ্টায় যারবিয়াম দুটো সোনার গোবৎস স্থাপন করেছিলেন, একটা দান অঞ্চলে এবং অন্যটা বৈথেলে। এভাবে বাছুর উপাসনা ইস্রায়েলের রাষ্ট্রীয় ধর্মে পরিণত হয়েছিল।—২ বংশাবলি ১১:১৩-১৫.
৯, ১০. (ক) রাজা যারবিয়াম ১ম কোন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন করেছিলেন? (খ) রাজা যারবিয়াম ২য়-র সময়ে ইস্রায়েলে অনুষ্ঠিত উৎসবগুলোকে ঈশ্বর কীভাবে দেখেছিলেন?
৯ যারবিয়াম এই নতুন ধর্মকে নির্ভরযোগ্য বলে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন, যেগুলো কিছুটা যিরূশালেমে অনুষ্ঠিত উৎসবগুলোর মতোই ছিল। ১ রাজাবলি ১২:৩২ পদে আমরা পড়ি: “যারবিয়াম অষ্টম মাসে, মাসের পঞ্চদশ দিনে যিহূদাস্থ উৎসবের সদৃশ এক উৎসব নিরূপণ করিলেন, এবং যজ্ঞবেদির কাছে উঠিয়া গেলেন; তিনি বৈথেলে এইরূপ করিলেন।”
১০ যিহোবা এই মিথ্যা ধর্মীয় উৎসবকে কখনোই অনুমোদন করেননি। তিনি এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর, যারবিয়াম ২য় যিনি প্রায় সা.কা.পূ. ৮৪৪ সালে ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যের রাজা হয়েছিলেন, তার রাজত্বকালে আমোষের মাধ্যমে তা নিশ্চিতভাবে স্পষ্ট করেছিলেন। (আমোষ ১:১) আমোষ ৫:২১-২৪ পদ অনুসারে ঈশ্বর বলেছিলেন: “আমি তোমাদের উৎসব সকল ঘৃণা করি, অগ্রাহ্য করি, আমি তোমাদের পর্ব্বদিনের আঘ্রাণ লইব না। তোমরা আমার নিকটে হোম ও নৈবেদ্য উৎসর্গ করিলে আমি তাহা গ্রাহ্য করিব না, এবং তোমাদের পুষ্ট পশুর মঙ্গলার্থক বলিদানেও দৃক্পাত করিব না। আমার নিকট হইতে তোমার গানের গোল দূর কর, আমি তোমার নেবল-যন্ত্রের বাদ্য শুনিব না। কিন্তু বিচার জলবৎ প্রবাহিত হউক, ধার্ম্মিকতা চিরপ্রবহমাণ স্রোতের ন্যায় বহুক।”
বর্তমান দিনের সাদৃশ্যগুলো
১১, ১২. প্রাচীন ইস্রায়েল এবং খ্রিস্টীয়জগতের উপাসনার মধ্যে কোন সাদৃশ্যগুলো দেখা যায়?
১১ এটা স্পষ্ট যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের হৃদয়ের পরীক্ষা করেছিলেন, যারা ইস্রায়েলের উৎসবগুলোতে রত ছিল আর তিনি তাদের আচার-অনুষ্ঠানগুলোকে ও উৎসর্গকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। একইভাবে, আজকে ঈশ্বর খ্রিস্টীয়জগতের পৌত্তলিক উদ্যাপনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেন, যেমন বড়দিন ও ইস্টার। যিহোবার উপাসকদের জন্য ধার্মিকতা ও অধার্মিকতার মধ্যে কোনো সহযোগিতা, দীপ্তি ও অন্ধকারের মধ্যে কোনো সহভাগিতা থাকতে পারে না।—২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৬.
১২ বাছুর উপাসনাকারী ইস্রায়েলীয়রা যেভাবে উপাসনা করত এবং খ্রিস্টীয়জগৎ যেভাবে করে থাকে, তার মধ্যে অন্যান্য বিষয়েও সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। নিজেদের খ্রিস্টান বলে দাবি করে এমন কিছু ব্যক্তি যদিও ঈশ্বরের বাক্যের সত্যকে মেনে নেয় কিন্তু খ্রিস্টীয়জগতের উপাসনা ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত প্রেমের দ্বারা চালিত হয়ে করা হয় না। যদি তা-ই হতো, তা হলে খ্রিস্টীয়জগৎ যিহোবাকে “আত্মায় ও সত্যে” উপাসনা করে যেত কারণ সেই ধরনের উপাসনাই তাঁকে সন্তুষ্ট করে। (যোহন ৪:২৪) এ ছাড়া, খ্রিস্টীয়জগৎ এর আচরণের ক্ষেত্রে ‘বিচার জলবৎ প্রবাহিত হইতে, ধার্ম্মিকতাকে চিরপ্রবহমাণ স্রোতের ন্যায় বহিতে’ দেয় না। পরিবর্তে, সে ক্রমাগত ঈশ্বরের নৈতিক চাহিদাগুলোকে হালকা করে দেখে। সে ব্যভিচার এবং অন্যান্য জঘন্য পাপগুলোকে প্রশ্রয় দেয় এবং এতটা চরমে যায় যে, এমনকি সমকামী বিবাহগুলোকে পর্যন্ত অনুমোদন করে থাকে!
“উত্তমকে ভালবাস”
১৩. কেন আমাদের আমোষ ৫:১৫ পদের কথাগুলো মেনে চলতে হবে?
১৩ যারা গ্রহণযোগ্য উপায়ে যিহোবাকে উপাসনা করতে আকুল আকাঙ্ক্ষী, তাদের সকলকে তিনি এই কথা বলেন: “মন্দকে ঘৃণা কর ও উত্তমকে ভালবাস।” (আমোষ ৫:১৫) ভালবাসা ও ঘৃণা হল জোরালো অনুভূতি, যা রূপক হৃদয় থেকে উদ্ভূত হয়। যেহেতু হৃদয় বঞ্চক, তাই এটাকে রক্ষা করার জন্য আমাদের অবশ্যই যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। (হিতোপদেশ ৪:২৩; যিরমিয় ১৭:৯) আমরা যদি আমাদের হৃদয়ে মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো পুষে রাখার সুযোগ দিই, তা হলে আমরা হয়তো এমন কিছুকে ভালবাসতে শুরু করব যা মন্দ এবং সেই বিষয়কে ঘৃণা করতে শুরু করব যা উত্তম। আর আমরা যদি পাপ করে চলার দ্বারা এই ধরনের আকাঙ্ক্ষাগুলো পোষণ করি, তা হলে এই জগতে আমাদের সমস্ত উদ্যোগও আমাদের প্রতি ঈশ্বরের অনুগ্রহকে ফিরিয়ে আনবে না। তাই, আসুন আমরা ‘মন্দকে ঘৃণা করিতে ও উত্তমকে ভালবাসিতে’ ঈশ্বরের সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করি।
১৪, ১৫. (ক) ইস্রায়েলে উত্তম কার্যকারী ব্যক্তিদের মধ্যে কারা ছিল কিন্তু তাদের কারও কারও সঙ্গে কীরকম আচরণ করা হয়েছিল? (খ) যারা আজকে পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় রয়েছে, তাদেরকে আমরা কীভাবে উৎসাহিত করতে পারি?
১৪ সব ইস্রায়েলীয়ই যিহোবার চোখে যা মন্দ, তা করছিল না। উদাহরণস্বরূপ, হোশেয় এবং আমোষ ‘উত্তমকে ভালবাসিয়াছিল’ এবং ভাববাদী হিসেবে বিশ্বস্তভাবে সেবা করেছিল। অন্যেরা নাসরীয় হিসেবে শপথ নিয়েছিল। নাসরীয় হিসেবে পৃথকস্থিতি বা জীবনযাপন করার সময় তারা দ্রাক্ষাফল দিয়ে প্রস্তুত কোনো দ্রব্য, বিশেষ করে দ্রাক্ষারস খাওয়া থেকে বিরত ছিল। (গননাপুস্তক ৬:১-৪) অন্য ইস্রায়েলীয়রা এই উত্তম কার্যকারী ব্যক্তিদের আত্মত্যাগের মনোভাবকে কীভাবে দেখেছিল? সেই প্রশ্নের শোচনীয় উত্তর, সেই জাতির আধ্যাত্মিক অধঃপতন কতটা ব্যাপক তা প্রকাশ করে। আমোষ ২:১২ পদ বলে: “তোমরা সেই নাসরীয়দিগকে দ্রাক্ষারস পান করাইতে, এবং সেই ভাববাদীদিগকে আদেশ করিতে, ভাববাণী বলিও না।”
১৫ নাসরীয় এবং ভাববাদীদের বিশ্বস্ত উদাহরণ দেখে, সেই ইস্রায়েলীয়দের লজ্জিত হওয়া উচিত ছিল এবং তাদের পথ পরিবর্তন করতে পরিচালিত হওয়া উচিত ছিল। তা না করে, তারা নির্দয়ভাবে অনুগত ব্যক্তিদের ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করতে চেষ্টা করেছিল। আসুন আমরা যেন কখনও অগ্রগামী, মিশনারি, ভ্রমণ অধ্যক্ষ বা বেথেল পরিবারের সদস্যদের তাদের পূর্ণসময়ের পরিচর্যা বন্ধ করে দিয়ে তথাকথিত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পরামর্শ না দিই। এর পরিবর্তে, আসুন আমরা তাদের উত্তম কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করি!
১৬. আমোষের দিনের চেয়ে মোশির দিনে ইস্রায়েলীয়রা কেন আরও ভাল অবস্থায় ছিল?
১৬ যদিও অনেক ইস্রায়েলীয় আমোষের দিনে বস্তুগতভাবে পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন উপভোগ করছিল কিন্তু তারা ‘ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্ ছিল না।’ (লূক ১২:১৩-২১) তাদের পূর্বপুরুষরা প্রান্তরে ৪০ বছর ধরে কেবল মান্না খেয়েছিল। তারা পুষ্ট গরুর মাংস খায়নি বা হাতির দাঁতের তৈরি শয্যায় আরামে শয়ন করেনি। কিন্তু, মোশি সঠিকভাবেই তাদের বলেছিলেন: “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার হস্তের সমস্ত কর্ম্মে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন। . . . এই চল্লিশ বৎসর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী আছেন; তোমার কিছুরই অভাব হয় নাই।” (দ্বিতীয় বিবরণ ২:৭) হ্যাঁ, প্রান্তরে ইস্রায়েলীয়দের সত্যিকারের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সবসময়ই ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তারা যিহোবার প্রেম, সুরক্ষা এবং আশীর্বাদ উপভোগ করেছিল!
১৭. কেন যিহোবা প্রাথমকি ইস্রায়েলীয়দের প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন?
১৭ আমোষের সমসাময়িক ব্যক্তিদের যিহোবা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে এসেছিলেন এবং তাদের সমস্ত শত্রুকে দূর করতে তাদেরকে সাহায্য করেছিলেন। (আমোষ ২:৯, ১০) কিন্তু কেন ঈশ্বর সেই প্রাথমিক ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে বের করে এনেছিলেন ও প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন? এইজন্য যে তারা যেন আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করতে পারে ও তাদের সৃষ্টিকর্তাকে প্রত্যাখ্যান করে? না! বরং, তিনি তা করেছিলেন যাতে তারা স্বাধীন এবং আধ্যাত্মিকভাবে শুচি লোক হিসেবে যিহোবাকে উপাসনা করতে পারে। কিন্তু, ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যের অধিবাসীরা মন্দকে ঘৃণা করেনি ও উত্তমকে ভালবাসেনি। এর পরিবর্তে, তারা ক্ষোদিত প্রতিমাকে তাদের গৌরব প্রদান করছিল, যিহোবাকে নয়। কতটা নির্লজ্জ কাজ!
যিহোবা নিকাশ নেন
১৮. কেন যিহোবা আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে স্বাধীন করেছেন?
১৮ ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের লজ্জাজনক আচরণকে উপেক্ষা করছিলেন না। তিনি তাঁর অবস্থানকে স্পষ্ট করেছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন: “তোমাদের সমস্ত অপরাধ ধরিয়া তোমাদিগকে প্রতিফল দিব” বা তোমাদের নিকাশ নেব। (আমোষ ৩:২) এই কথাগুলোর আধুনিক দিনের মিশর, অর্থাৎ আমাদের এই বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পরিচালিত করা উচিত। যিহোবা এইজন্য আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে স্বাধীন করেননি যেন আমরা স্বার্থপর লক্ষ্যগুলোর পিছনে ছুটতে পারি। পরিবর্তে, তিনি আমাদের স্বাধীন করেছেন, যাতে আমরা বিশুদ্ধ উপাসনায় রত স্বাধীন লোক হিসেবে আন্তরিকভাবে তাঁর প্রশংসা করতে পারি। আর আমাদের ঈশ্বরদত্ত স্বাধীনতাকে আমরা কীভাবে ব্যবহার করছি, সেই বিষয়ে আমাদের প্রত্যেককে নিকাশ দিতে হবে।—রোমীয় ১৪:১২.
১৯. আমোষ ৪:৪, ৫ পদ অনুসারে, অধিকাংশ ইস্রায়েলীয় কোন বিষয় ভালবাসতে শুরু করেছিল?
১৯ দুঃখের বিষয় হল যে, আমোষের জোরালো বার্তায় ইস্রায়েলের বেশির ভাগ অধিবাসীই মনোযোগ দেয়নি। আমোষ ৪:৪, ৫ পদে লিপিবদ্ধ এই কথাগুলোর দ্বারা ভাববাদী তাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে অসুস্থ হৃদয়ের অবস্থা প্রকাশ করে দিয়েছিলেন: “তোমরা বৈথেলে গিয়া অধর্ম্ম কর, গিল্গলে গিয়া অধর্ম্মের বৃদ্ধি কর, . . . কেননা, হে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, তোমরা এই প্রকার করিতেই ভালবাস।” ইস্রায়েলীয়রা সঠিক আকাঙ্ক্ষাগুলো গড়ে তোলেনি। তারা তাদের হৃদয়কে রক্ষা করেনি। ফলে, তাদের অধিকাংশই যা মন্দ সেটাকে ভালবাসতে ও যা উত্তম সেটাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছিল। সেই একগুঁয়ে বাছুর উপাসকরা পরিবর্তিত হয়নি। যিহোবা তাদের নিকাশ নেবেন এবং পাপেই তাদের মারা যেতে হবে!
২০. কীভাবে একজন ব্যক্তি আমোষ ৫:৪ পদের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ পথে চলতে পারেন?
২০ সেই সময়ে ইস্রায়েলে বসবাসরত যেকারও পক্ষে বিশ্বস্তভাবে যিহোবাকে সেবা করে যাওয়া নিশ্চয়ই সহজ ছিল না। চলতি প্রবণতার বিরুদ্ধে যাওয়া এত সহজ নয়, যা আজকে খ্রিস্টান হিসেবে যুবক ও বৃদ্ধ সকলেই খুব ভালভাবে জানে। তবুও, ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা এবং তাঁকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষা কিছু ইস্রায়েলীয়কে সত্য উপাসনা করে যেতে প্রেরণা দিয়েছিল। যিহোবা তাদের প্রতি আমোষ ৫:৪ পদে লিপিবদ্ধ উষ্ণ আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন: “তোমরা আমার অন্বেষণ কর, তাহাতে বাঁচিবে।” আজকে, একইভাবে ঈশ্বর সেই ব্যক্তিদের প্রতি করুণা দেখান, যারা তাঁর বাক্য সম্বন্ধে জেনে বা সঠিক জ্ঞান নিয়ে অনুতপ্ত হয় ও তাঁর অন্বেষণ করে এবং পরে তাঁর ইচ্ছা পালন করে। এই পথে চলা সহজ নয় কিন্তু তা করা অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করে।—যোহন ১৭:৩.
আধ্যাত্মিক দুর্ভিক্ষ সত্ত্বেও সমৃদ্ধি
২১. যারা সত্য উপাসনা করে চলে না, তাদের ওপর কোন দুর্ভিক্ষ আসে?
২১ যারা সত্য উপাসনাকে সমর্থন করেনি, তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছিল? সবচেয়ে খারাপ ধরনের দুর্ভিক্ষ—আধ্যাত্মিক দুর্ভিক্ষ! “এমন দিন আসিতেছে,” সার্বভৌম প্রভু যিহোবা বলেছিলেন, “যে দিনে আমি এই দেশে দুর্ভিক্ষ প্রেরণ করিব; তাহা অন্নের দুর্ভিক্ষ কিম্বা জলের পিপাসা নয়, কিন্তু সদাপ্রভুর বাক্য শ্রবণের।” (আমোষ ৮:১১) খ্রিস্টীয়জগৎ এইরকম আধ্যাত্মিক দুর্ভিক্ষ যন্ত্রণার সঙ্গে ভোগ করছে। কিন্তু, তাদের মধ্যে যে-সৎহৃদয়ের লোকেরা আছে তারা ঈশ্বরের লোকেদের আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি দেখতে পায় এবং তারা যিহোবার সংগঠনে একত্রিত হচ্ছে। খ্রিস্টীয়জগৎ এবং ঈশ্বরের সেবকদের মাঝে বিরাজমান অবস্থার মধ্যে পার্থক্য যিহোবার এই কথাগুলোর দ্বারা যথাযথভাবেই তুলে ধরা হয়: “দেখ, আমার দাসেরা ভোজন করিবে, কিন্তু তোমরা ক্ষুধার্ত্ত থাকিবে; দেখ, আমার দাসেরা পান করিবে, কিন্তু তোমরা তৃষ্ণার্ত্ত থাকিবে; দেখ, আমার দাসেরা আনন্দ করিবে, কিন্তু তোমরা লজ্জিত হইবে।”—যিশাইয় ৬৫:১৩.
২২. কেন আমাদের আনন্দ করার কারণ রয়েছে?
২২ যিহোবার সেবক হিসেবে যে-আধ্যাত্মিক সরবরাহ ও আশীর্বাদ আমাদের রয়েছে, আমরা কি তা ব্যক্তিগতভাবে উপলব্ধি করি? যখন আমরা বাইবেল ও খ্রিস্টীয় প্রকাশনাগুলো অধ্যয়ন করি এবং আমাদের সভা ও সম্মেলনগুলোতে যোগ দিই, তখন আমরা বাস্তবিকই হৃদয়ের উত্তম অবস্থার জন্য আনন্দ করি। ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে আমাদের স্পষ্ট বোধগম্যতা আছে বলে আমরা আনন্দ করি, যেটার অন্তর্ভুক্ত ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত আমোষের ভবিষ্যদ্বাণীও।
২৩. যারা ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করে, তারা কী উপভোগ করে?
২৩ যারা ঈশ্বরকে ভালবাসে ও তাঁকে গৌরব প্রদান করতে চায়, তাদের জন্য আমোষের ভবিষ্যদ্বাণীতে আশার এক বার্তা রয়েছে। আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যা-ই হোক বা এই সমস্যাপূর্ণ জগতে যে-পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখিই আমাদের হতে হোক না কেন, আমরা যারা ঈশ্বরকে ভালবাসি তারা ঐশিক আশীর্বাদগুলো ও সর্বোত্তম আধ্যাত্মিক খাদ্য উপভোগ করছি। (হিতোপদেশ ১০:২২; মথি ২৪:৪৫-৪৭) তাই, সমস্ত গৌরব ঈশ্বরের কাছে যায়, যিনি আমাদের উপকারের জন্য সমস্তকিছু প্রচুর পরিমাণে জোগান। তাই, আমরা সকলে যেন তাঁকে চিরকাল আন্তরিকভাবে প্রশংসা করে চলতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। হৃদয়ের পরীক্ষক যিহোবাকে যদি আমরা অন্বেষণ করি, তা হলে সেটা আমাদের জন্য এক আনন্দপূর্ণ বিশেষ সুযোগ হবে।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• আমোষের দিনে ইস্রায়েলে কোনো অবস্থা বিরাজ করছিল?
• ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যের অবস্থার সঙ্গে বর্তমান দিনে কোন সাদৃশ্যগুলো রয়েছে?
• ভবিষ্যদ্বাণীকৃত কোন দুর্ভিক্ষ এখন বিরাজ করছে কিন্তু এটার দ্বারা কারা প্রভাবিত হয় না?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
অনেক ইস্রায়েলীয় আরাম-আয়েশে বাস করত কিন্তু আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি উপভোগ করেনি
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
পূর্ণসময়ের সেবকদের তাদের উত্তম কাজ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করুন
[২৪, ২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যিহোবার সুখী লোকেদের মাঝে কোনো আধ্যাত্মিক দুর্ভিক্ষ নেই