আমাট মেক্সিকোর প্যাপিরাস
আমাট মেক্সিকোর প্যাপিরাস
মেক্সিকোর সচেতন থাক! লেখক কর্তৃক
মেক্সিকোর অধিবাসীদের এক সমৃদ্ধশালী এবং আকর্ষণীয় ইতিহাস রয়েছে। অতীত থেকে উদ্ধারকৃত মূল্যবান সাংস্কৃতিক সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে “প্রামাণিক সাক্ষ্যগুলো”—বর্ণের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত চিত্রের পাণ্ডুলিপি। এই পাণ্ডুলিপিগুলোর মাধ্যমে জ্ঞানের অনেক ক্ষেত্র—ইতিহাস, বিজ্ঞান, ধর্ম, কালনিরূপণবিদ্যা—এবং আজটেক ও মায়া উপজাতিসহ মেজোআমেরিকার উন্নত সভ্যতার রোজকার জীবন সম্বন্ধে তথ্য জানা সম্ভব। উল্লেখযোগ্য ক্ষমতাসম্পন্ন ট্লাকুইলোস অথবা লেখকরা বিভিন্ন বস্তুর ওপর তাদের ইতিহাস বর্ণনা করেছে।
যদিও কিছু কিছু পাণ্ডুলিপি কাপড়, হরিণের চামড়া বা মাগে উদ্ভিদের কাগজের তৈরি ছিল কিন্তু ব্যবহৃত প্রধান উপাদানটা ছিল আমাট। আমাট নামটা নেওয়া হয়েছে নাওয়াটাল শব্দ আমাটাল থেকে, যেটার অর্থ হচ্ছে কাগজ। আমাট সংগ্রহ করা হতো মোরেস গোত্রের ফিকাস বা ডুমুর গাছের বাকল থেকে। এনসাইক্লোপিডিয়া ডি মেক্সিকো অনুসারে, “এর কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফলকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা না করা পর্যন্ত অনেক প্রজাতির ফিকাসকে পার্থক্য করা কঠিন।” ফিকাস হতে পারে সাদা আমাট, সাদা বৃক্ষময় আমাট বা গাঢ় বাদামি আমাট।
এর উৎপাদন
ষোড়শ শতাব্দীতে স্প্যানিশদের বিজয় অভিযান আমাট উৎপাদনের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কেন? বিজেতাদের মতে, আমাট প্রাক-হিসপানিক যুগের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল, যেটাকে ক্যাথলিক গির্জা নিন্দা করেছিল। ইসটোরিয়া ডি লাস ইনদিয়াস ডি নুয়েভা ইসপানিয়া ই ইসলাস ডি লা টিয়েরা ফার্মা (নিউ স্পেন ইন্ডিস এবং টেরা ফার্মা দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাস) বইয়ে স্প্যানিশ ফ্রিয়ার দিয়েগো ডুরান উল্লেখ করেছিলেন যে, অধিবাসীরা “তাদের পূর্বপুরুষদের অতি বিস্তৃত ইতিহাস রচনা করেছিল। অজ্ঞানতাপূর্ণ উদ্যোগের কারণে তারা সেগুলো ধ্বংস না করে ফেললে এখান থেকে আমরা অনেক তথ্য জানতে পারতাম। সেখানে কিছু অজ্ঞ লোক ছিল, যারা এগুলোকে মূর্তি বা প্রতিমা বলে মনে করে পুড়িয়ে ফেলেছিল কিন্তু এগুলো আসলে স্মরণ করার যোগ্য ইতিহাস ছিল।”
যাই হোক, আমাট কাগজ তৈরির ঐতিহ্যকে নির্মূল করে দেওয়ার প্রচেষ্টাগুলো সফল হয়নি এবং আনন্দের বিষয় যে, এটা আজ পর্যন্ত টিকে আছে। পুয়েব্লা রাজ্যের উত্তর সিয়েরা পর্বতে আজও পাওয়াট্লান মিউনিসিপ্যালটির সান পাব্লিটোর মতো জায়গাগুলোতে কাগজ তৈরি করা হয়। রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের রাজচিকিৎসক ফ্রানথিসকো আরনাডেথের দ্বারা রেকর্ডকৃত তথ্য উদ্ধৃতি করে, আরকেয়োলখিয়া মিহিকেনে (মেক্সিকোর প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা) পত্রিকা বলে যে, “কাগজ প্রস্তুতকারীরা অঙ্কুর বা কচি ডালপালাগুলো বাদ দিয়ে কেবলমাত্র গাছের মোটা ডালপালা কেটে নিত। এরপর শাখাগুলোকে নরম করার জন্য সারারাত কাছাকাছি নদী বা খালের মধ্যে ফেলে রাখা হতো। পরদিন ডাল থেকে বাকল বা ছাল টেনে তুলে নেওয়া হতো এবং ভিতরের বাকল থেকে বাইরের বাকলকে আলাদা করা হতো আর এরপর শুধু ভিতরের বাকলকেই নেওয়া হতো।” বাকল পরিষ্কার করার পর, আঁশের অংশগুলোকে সমতল জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হতো এবং সেগুলোকে পাথরের হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হতো।
বর্তমানে, আঁশগুলোকে নরম ও একইসঙ্গে সেগুলো থেকে নির্দিষ্ট কিছু পদার্থ দূর করার জন্য বড় বড় কেটলিতে সিদ্ধ করা হয়, যেটাতে ছাই এবং চুনও মেশানো হয়। এই প্রক্রিয়া ছয় ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এরপর আঁশগুলোকে জলে আলতোভাবে ধোয়া হয় এবং জলেই রেখে দেওয়া হয়। কারিগররা আঁশের সুতাগুলোকে একটা একটা করে সমতল কাঠের তলের ওপর রাখে, যাতে একটা চেকারবোর্ডের আকার গঠন করতে পারে। পরে, যতক্ষণ না এগুলো পরস্পর যুক্ত হয় এবং কাগজের একটা খণ্ডের আকার ধারণ করে ততক্ষণ পর্যন্ত একটা পাথরের হাতুড়ি দিয়ে এগুলোকে পেটানো হয়। পরে, কাগজের প্রান্তগুলোকে ভিতরের দিকে ভাঁজ করা হয়, যাতে কিনারাগুলোকে মজবুত করা যায় এবং এরপর কাগজকে রোদে শুকানোর জন্য রেখে দেওয়া হয়।
আমাটের বেশ কয়েকটা রং রয়েছে। ঐতিহ্যগত রং হচ্ছে বাদামি কিন্তু এটা সাদা বা হাতির দাঁতের রং হয়, বাদামি ও সাদা বর্ণে চিত্রবিচিত্র এবং হলুদ, নীল, গোলাপি ও সবুজ হয়।
আমাটের আধুনিক ব্যবহার
আমাট কাগজ দিয়ে মেক্সিকোর সুন্দর সুন্দর হস্তশিল্প পণ্য তৈরি করা হয়। যদিও এই কাগজে করা কিছু চিত্রাঙ্কনের ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে কিন্তু অন্যগুলো বিভিন্ন ধাঁচের পশু ও সেইসঙ্গে উৎসবের প্রতিনিধিত্ব করে এবং দৃশ্যগুলো মেক্সিকোর লোকেদের আনন্দপূর্ণ জীবনকে তুলে ধরে। বিভিন্ন রংয়ের সুন্দর সুন্দর ছবি ছাড়াও আমাট দিয়ে কার্ড, বুকমার্ক এবং অন্যান্য হস্তশিল্প পণ্য প্রস্তুত করা হয়। এই পণ্যগুলো স্থানীয় অধিবাসী ও বিদেশি উভয়কে আকৃষ্ট করে, যারা সাজানোর সামগ্রী হিসেবে সেগুলো কিনে থাকে। এই শিল্পকলা মেক্সিকো ছাড়িয়ে অন্যান্য জায়গায় গিয়েও পৌঁছেছে, বিশ্বের বেশ কয়েকটা জায়গায় রপ্তানি করা হচ্ছে। প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলোর প্রতিলিপি তৈরি করা হচ্ছে। স্প্যানিশদের জন্য প্রথম বারের মতো এই শিল্পকলাটি দেখা কতই না আগ্রহের বিষয় ছিল! বস্তুতপক্ষে, আগে উল্লেখিত ডমিনিকান সন্ন্যাসী দিয়েগো ডুরান মন্তব্য করেছিলেন যে, অধিবাসীরা “সমস্তকিছু লিখে রাখত এবং বই ও লম্বা লম্বা কাগজের টুকরোয় রং দিয়ে ছবি এঁকে রাখত, কখন সেগুলো হয়েছে সেই বছর, মাস, দিন হিসেব করে লিখে রাখত। এই চিত্রাঙ্কনগুলোতে তাদের আইন ও আদেশ, তাদের আদমশুমারি তালিকা ইত্যাদি লেখা হতো, সমস্তকিছুই অনেক পরিচ্ছন্ন ও সংগতিপূর্ণভাবে।”
এটা কতই না চমৎকার বিষয় যে, আমাট তৈরির ঐতিহ্য এবং সেইসঙ্গে মেক্সিকোর ঐতিহ্যের সৌন্দর্য আমাদের সময় পর্যন্ত টিকে আছে। প্রাচীনকালের ট্লাকুইলোস বা লেখকদের মতো, আধুনিক সময়ের সাধারণ কারিগররা আমাটের বিস্ময় উপভোগ করে, যেটাকে উপযুক্তভাবে মেক্সিকোর প্যাপিরাস বলা যায়। (g০৪ ৩/৮)
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
আঁশগুলোকে পেটানো