প্রচ্ছদ বিষয়
কেন যিশু কষ্টভোগ করেছিলেন ও মারা গিয়েছিলেন?
“এক মনুষ্য [আদম] দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল।”—রোমীয় ৫:১২
আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, “আপনি কি চিরকাল বেঁচে থাকতে চান?”, তা হলে আপনি কী বলবেন? অনেকেই হয়তো বলবে, তারা চায় কিন্তু তারা মনে করে, এটা কখনোই সম্ভব নয়। তারা বলে, “জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে।”
কিন্তু ধরুন, এই প্রশ্নটাকেই যদি ঘুরিয়ে বলা হয়, “আপনি কি মারা যেতে চান?” স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অধিকাংশ লোকই বলবে, না। এটা কী দেখায়? বিভিন্ন সমস্যা ভোগ করা সত্ত্বেও স্বাভাবিকভাবেই আমরা বেঁচে থাকতে চাই। বাইবেল দেখায়, ঈশ্বর মানুষকে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এটি বলে, ‘তিনি তাহাদের হৃদয়মধ্যে চিরকাল রাখিয়াছেন।’—উপদেশক ৩:১১.
তবে বাস্তব বিষয়টা হল, মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকে না। প্রশ্ন হল কেন? আর এই পরিস্থিতি পালটানোর জন্য ঈশ্বর কি কিছু করেছেন? এই বিষয়ে বাইবেল যা উত্তর দেয়, তা খুবই উৎসাহজনক আর সেটার সঙ্গে যিশুর কষ্টভোগ করার ও মারা যাওয়ার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
সমস্যার সূত্রপাত
বাইবেলের আদিপুস্তক বইয়ের প্রথম তিনটে অধ্যায় জানায়, ঈশ্বর প্রথম মানবদম্পতিকে অর্থাৎ আদম ও হবাকে অনন্তজীবন লাভ করার সুযোগ দিয়েছিলেন আর এর জন্য তাদের কী করতে হবে, সেটাও জানিয়েছিলেন। সেই বিবরণ আরও জানায়, কীভাবে তারা ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিলেন এবং সেই সুযোগ হারিয়েছিলেন। এই ঘটনাটা এত সরলভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে, কেউ কেউ এটাকে রূপকথার কাহিনি বলে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু, সুসমাচারের বইগুলোর মতো আদিপুস্তক বইয়েও সেই সমস্ত প্রমাণ রয়েছে, যেগুলো দেখায়, এটার বিবরণ সত্য ও ঐতিহাসিকভাবে সঠিক।
আদমের অবাধ্যতার পরিণতি কী হয়েছে? বাইবেল এভাবে উত্তর দেয়: “এক মনুষ্য [আদম] দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।” (রোমীয় ৫:১২) ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়ার মাধ্যমে আদম পাপ করেছিলেন। তাই, তিনি অনন্তজীবন লাভ করার সুযোগ হারিয়েছিলেন এবং পরিশেষে মারা গিয়েছিলেন। তার বংশধর হিসেবে আমরাও উত্তরাধিকারসূত্রে পাপ পেয়েছি। এর ফলে, আমরা অসুস্থ হই, বৃদ্ধ হই ও মারা যাই। এটা অনেকটা বংশগতভাবে পাওয়া চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মতো, যা সন্তানেরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। কিন্তু, এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করার জন্য ঈশ্বর কি কিছু করেছেন?
ঈশ্বর যা করেছেন
ঈশ্বর এমন এক ব্যবস্থা করেছেন, যাতে আদম তার বংশধরদের জন্য যা হারিয়েছিলেন, সেই অনন্তজীবনের সুযোগ পুনরুদ্ধার বা পুনরায় ক্রয় করা যায়। সেই ব্যবস্থা কী?
রোমীয় ৬:২৩ পদে বাইবেল বলে, “পাপের বেতন মৃত্যু।” এটার অর্থ, মৃত্যুর কারণ হল পাপ। আদম পাপ করেছিলেন আর তাই তিনি মারা গিয়েছিলেন। একইভাবে, আমরাও পাপী আর তাই আমাদেরও পাপের বেতন মৃত্যু ভোগ করতে হয়। কিন্তু আমরা যে এই পাপপূর্ণ অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছি, সেটার জন্য আমরা নিজেরা দায়ী নই। তাই, ঈশ্বর প্রেম দেখিয়ে আমাদের হয়ে “পাপের বেতন” গ্রহণ করার জন্য তাঁর পুত্রকে পাঠিয়েছিলেন। এই ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে?
যেহেতু এক জন সিদ্ধ ব্যক্তি আদম অবাধ্য হওয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে পাপ ও মৃত্যুর দাসত্বে বিক্রি করেছিলেন, তাই সেই দাসত্ব থেকে মুক্ত করার জন্য এমন এক জন সিদ্ধ ব্যক্তির প্রয়োজন ছিল, যিনি মৃত্যু পর্যন্ত বাধ্য থাকবেন। এই বিষয়টাকে বাইবেল এভাবে বর্ণনা করে: “যেমন সেই এক মনুষ্যের অনাজ্ঞাবহতা দ্বারা অনেককে পাপী বলিয়া ধরা হইল, তেমনি সেই আর এক ব্যক্তির আজ্ঞাবহতা দ্বারা অনেককে ধার্ম্মিক বলিয়া ধরা হইবে।” (রোমীয় ৫:১৯) এই পদে উল্লেখিত সেই ‘আর এক ব্যক্তি’ হলেন যিশু। তিনি স্বর্গ ত্যাগ করে সিদ্ধ ব্যক্তি * হিসেবে পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং আমাদের জন্য মারা গিয়েছিলেন। এর ফলে, বর্তমানে আমরা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধার্মিক হতে পারি এবং ভবিষ্যতে অনন্তজীবন লাভ করার আশা রাখতে পারি।
যে-কারণে যিশু কষ্টভোগ করেছিলেন ও মারা গিয়েছিলেন
কিন্তু, এই বিষয়টা সম্পাদন করার জন্য কেন যিশুকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল? সর্বশক্তিমান ঈশ্বর কি শুধুমাত্র একটা আদেশ জারি করতে পারতেন না যে, আদমের বংশধরদের চিরকাল বেঁচে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে? এটা ঠিক যে, তাঁর তা করার অধিকার ছিল। কিন্তু, তা করা হলে, তিনি নিজে যে-আইন স্থাপন করেছিলেন, সেটাকে লঙ্ঘন করা হতো, যা বলে পাপের বেতন মৃত্যু। এটা কোনো সাধারণ আইন ছিল না, যা ইচ্ছামতো বাতিল বা পরিবর্তন করা যেতে পারে। এই আইন হল প্রকৃত ন্যায়বিচারের ভিত্তি।—গীতসংহিতা ৩৭:২৮.
এই ক্ষেত্রে ঈশ্বর যদি ন্যায়বিচার না করতেন, তা হলে লোকেরা হয়তো ন্যায়বিচারক হিসেবে ঈশ্বরের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে
ফেলত। উদাহরণ স্বরূপ, আদমের বংশধরদের মধ্যে কারা অনন্তজীবন পাওয়ার যোগ্য, তা নির্ধারণ করার সময় তিনি কি ন্যায়বিচার করতে পারতেন? তিনি যে তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ করবেন, সেই ব্যাপারে কি তাঁর উপর আস্থা রাখা যেত? আমাদের পরিত্রাণের ব্যবস্থা করার সময়ও ঈশ্বর যে ন্যায়বিচার ত্যাগ করেননি, এই বিষয়টা আমাদের আস্থা দেয়, তিনি সব সময় যা সঠিক তা-ই করবেন।যিশুর বলিদানমূলক মৃত্যুর দ্বারা ঈশ্বর পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবন লাভ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। যোহন ৩:১৬ পদে লিখিত যিশুর এই কথাগুলো লক্ষ করুন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” তাই, যিশুর মৃত্যু যে শুধুমাত্র ঈশ্বরের ন্যায়বিচারকে প্রকাশ করে, তা-ই নয়, এটা মানুষের প্রতি তাঁর মহান প্রেমকেও প্রকাশ করে।
তাহলে, কেন যিশুকে এতটা কষ্ট ও যন্ত্রণাভোগ করে মারা যেতে হয়েছিল, যেমনটা সুসমাচারের বইগুলোতে লেখা রয়েছে? আসলে, দিয়াবল দাবি করেছিল, পরীক্ষার মধ্যে মানুষ ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখবে না। (ইয়োব ২:৪, ৫) কিন্তু, চরম পরীক্ষার মধ্যেও বিশ্বস্ততা বজায় রাখার মাধ্যমে যিশু দিয়াবলের এই দাবিকে চিরকালের জন্য মিথ্যা বলে প্রমাণিত করেছিলেন। এই দাবিকে হয়তো সেইসময় সত্য বলে মনে হয়েছিল, যখন শয়তান আদমকে পাপ করতে প্ররোচিত করেছিল। কিন্তু যিশু, যিনি একেবারে আদমের সমরূপ ছিলেন, তিনি প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যেও বাধ্য ছিলেন। (১ করিন্থীয় ১৫:৪৫) এভাবে তিনি প্রমাণ করেছিলেন, আদম যদি চাইতেন, তা হলে তিনিও ঈশ্বরের বাধ্য হতে পারতেন। পরীক্ষার মধ্যেও ধৈর্য ধরার মাধ্যমে যিশু আমাদের জন্য একটা আদর্শ রেখে গিয়েছেন। (১ পিতর ২:২১) স্বর্গে যিশুকে অমর জীবন দিয়ে ঈশ্বর তাঁর পুত্রের নিখুঁত বাধ্যতাকে পুরস্কৃত করেছিলেন।
আপনি যেভাবে উপকৃত হতে পারেন
যিশু সত্যি মারা গিয়েছিলেন। আমাদের সামনে অনন্তজীবন লাভ করার পথ খোলা রয়েছে। আপনি কি চিরকাল বেঁচে থাকতে চান? আমাদের কী করতে হবে, তা যিশু এভাবে বলেছিলেন: “ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।”—যোহন ১৭:৩.
এই পত্রিকার প্রকাশকরা আপনাকে সত্য ঈশ্বর যিহোবা এবং তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে জানার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আপনার এলাকার যিহোবার সাক্ষিরা আপনাকে সাহায্য করতে পেরে খুশি হবে। আপনি আমাদের ওয়েবসাইট www.jw.org দেখার মাধ্যমেও সাহায্যকারী তথ্য পেতে পারেন। ▪ (w16-E No.2)