সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিশ্বাস দেখিয়ে চলুন​—⁠বিজ্ঞতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিন!

বিশ্বাস দেখিয়ে চলুন​—⁠বিজ্ঞতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিন!

‘কিছু সন্দেহ না করিয়া বিশ্বাসপূর্ব্বক যাচ্ঞা করুন।’—যাকোব ১:৬.

গান সংখ্যা: ৫৪, ৪২

১. কী কয়িনকে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পরিচালিত করেছিল এবং এর ফল কী হয়েছিল?

 কয়িন এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হন। তিনি তার পাপপূর্ণ অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করা বেছে নেবেন, না কি সেই অনুভূতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে কাজ করবেন? তার এই সিদ্ধান্ত হয় উত্তম ফল নিয়ে আসবে নতুবা মন্দ পরিণতি নিয়ে আসবে। বাইবেল আমাদের জানায়, কয়িন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর তার এই সিদ্ধান্তের ফলে তার ভাই হেবলের মৃত্যু হয়েছিল এবং সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে কয়িনের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।—আদি. ৪:৩-১৬.

২. কেন উত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ?

একইভাবে আমাদের সবাইকে জীবনে বিভিন্ন বাছাই করতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিছু সিদ্ধান্ত খুবই গুরুতর, আবার অন্যান্য সিদ্ধান্ত ততটা গুরুতর নয়। কিন্তু, আমাদের এমন অনেক সিদ্ধান্ত রয়েছে, যেগুলো আমাদের জীবনে বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা যখন উত্তম সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমরা হয়তো কম সমস্যা ভোগ করি ও সেইসঙ্গে আরও শান্তিপূর্ণ এক জীবন উপভোগ করি। কিন্তু, আমরা যখন মন্দ সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমাদের জীবন হয়তো সমস্যায় জর্জরিত হয়ে যায় এবং আমরা হতাশ হয়ে পড়ি।—হিতো. ১৪:৮.

৩. (ক) বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমাদের কার উপর এবং কীসের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে? (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

কী আমাদের বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে? আমাদের ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে ও সেইসঙ্গে তিনি যে আমাদের সাহায্য করতে চান এবং আমাদের উত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান বা প্রজ্ঞা দান করবেন, সেই বিষয়ে আস্থা রাখতে হবে। এ ছাড়া, আমাদের তাঁর বাক্যের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে এবং তাঁর পরামর্শের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। (পড়ুন, যাকোব ১:৫-৮.) আমরা যখন যিহোবার নিকটবর্তী হব এবং তাঁর বাক্যের প্রতি আরও ভালোবাসা বৃদ্ধি করব, তখন আমরা এই নির্ভরতা গড়ে তুলতে পারব যে, আমাদের জন্য কোনটা সর্বোত্তম, তা তিনি সবচেয়ে ভালো জানেন। এর ফলে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা তাঁর বাক্য পরীক্ষা করে দেখার জন্য অনুপ্রাণিত হব। কিন্তু, কীভাবে আমরা উত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের ক্ষমতা আরও বাড়াতে পারি? আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমাদের কি তা কখনো পরিবর্তন করা উচিত? এই প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বিবেচনা করব।

আমাদের সবাইকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়

৪. আদমকে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল এবং এর পরিণতি কী হয়েছিল?

মানব ইতিহাসের একেবারে শুরু থেকে মানুষকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। প্রথম মানুষ আদমকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল যে, তিনি তার সৃষ্টিকর্তা যিহোবার কথা শুনবেন, না কি তার স্ত্রী হবার কথা শুনবেন। আদম তার স্ত্রী হবার কথা শোনা বেছে নিয়েছিলেন, যিনি তাকে অতি মন্দ এক সিদ্ধান্ত নিতে পরিচালিত করেছিলেন। ফল স্বরূপ, যিহোবা আদমকে এদন বাগান থেকে বের করে দিয়েছিলেন এবং পরে তিনি মারা গিয়েছিলেন। বর্তমানে, আমরাও আদমের মন্দ সিদ্ধান্তের পরিণতি ভোগ করছি।

৫. সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বকে আমাদের কোন দৃষ্টিতে দেখা উচিত?

কেউ কেউ হয়তো মনে করে, তাদের যদি একেবারেই সিদ্ধান্ত নিতে না হয়, তা হলে তাদের জীবন আরও সহজ হয়ে উঠবে। আপনিও হয়তো একইরকম চিন্তা করেন। কিন্তু, এটা মনে রাখা ভালো যে, যিহোবা মানুষকে রোবোট হিসেবে সৃষ্টি করেননি, যেগুলো চিন্তা করতে অথবা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তিনি আমাদের তাঁর বাক্য দিয়েছেন আর এই বাক্য আমাদের বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষা দেয়। যিহোবা চান যেন আমরা সিদ্ধান্ত নিই আর এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। পরবর্তী উদাহরণগুলো নিয়ে চিন্তা করুন।

৬, ৭. ইস্রায়েলীয়দের কোন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল এবং কেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া তাদের পক্ষে কঠিন ছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

ইস্রায়েলীয়রা যখন প্রতিজ্ঞাত দেশে বাস করছিল, তখন তাদের বেছে নিতে হয়েছিল যে, তারা যিহোবার উপাসনা করবে, না কি অন্য দেব-দেবীর সেবা করবে। (পড়ুন, যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৫.) এটাকে হয়তো এক সহজ সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু, তাদের সেই বাছাইয়ের সঙ্গে জীবন অথবা মৃত্যু যুক্ত ছিল। বিচারকদের সময় ইস্রায়েলীয়রা বার বার মন্দ বাছাই করেছিল। তারা যিহোবাকে উপাসনা করা বন্ধ করে দিয়ে মিথ্যা দেব-দেবীর উপাসনা করতে শুরু করেছিল। (বিচার. ২:৩, ১১-২৩) পরে, ভাববাদী এলিয়ের সময় ঈশ্বরের লোকেদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল, তারা যিহোবার সেবা করবে, না কি মিথ্যা দেবতা বালের সেবা করবে। (১ রাজা. ১৮:২১) আপনি হয়তো চিন্তা করছেন, এটা এক সহজ বাছাই কারণ যিহোবার সেবা করা সবসময়ই উত্তম। একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি কখনো এক নিষ্প্রাণ দেবতার সেবা করতে চাইবেন না। কিন্তু, লোকেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। বাইবেল জানায়, ইস্রায়েলীয়রা “দুই নৌকায় পা দিয়া” ছিল। এলিয় বিজ্ঞতার সঙ্গে লোকেদের উৎসাহিত করেছিলেন, যেন তারা সত্য ঈশ্বর যিহোবার উপাসনা করা বেছে নেয়।

কেন সেই ইস্রায়েলীয়দের পক্ষে এক বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল? প্রথমত, তারা যিহোবার উপর বিশ্বাস রাখেনি এবং তাঁর কথা শোনেনি। তারা যিহোবার উপর আস্থা রাখেনি এবং তাঁর সম্বন্ধে ও তাঁর প্রজ্ঞা সম্বন্ধে জানার জন্য সময় ব্যয় করেনি। তারা যদি সময় ব্যয় করে জানার চেষ্টা করত, তা হলে সেই জ্ঞান তাদের বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করত। (গীত. ২৫:১২) দ্বিতীয়ত, ইস্রায়েলীয়রা অন্যান্য জাতির লোকেদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। সেই বিদেশিরা ইস্রায়েলীয়দের চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করেছিল আর এমনকী তাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ফল স্বরূপ, ইস্রায়েলীয়রা সেই বিদেশিদের অনুসরণ করতে শুরু করেছিল এবং তাদের মিথ্যা দেব-দেবীর উপাসনা করেছিল। এই বিষয়ে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের বহু বছর আগে সাবধান করে দিয়েছিলেন।—যাত্রা. ২৩:২.

আমাদের সিদ্ধান্ত কি অন্যদের নেওয়া উচিত?

৮. ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে আমরা কোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি?

ইস্রায়েলীয়দের উদাহরণ আমাদের শিক্ষা দেয়, আমরা যদি বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে চাই, তা হলে আমাদের ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করতে হবে। গালাতীয় ৬:৫ পদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজ নিজ বাছাইয়ের ভার নিজেকেই বহন করতে হবে। স্পষ্টতই, আমাদের সিদ্ধান্ত অন্যদের নিতে দেওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে কোনটা সঠিক, তা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের জানতে হবে এবং এরপর সেই অনুযায়ী কাজ করা বেছে নিতে হবে।

৯. কেন আমাদের সিদ্ধান্ত অন্যদের নিতে দেওয়া বিপদজনক?

কীভাবে আমরা হয়তো আমাদের সিদ্ধান্ত অন্যদের নিতে দিই? যখন অন্যদের চাপের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমরা মন্দ বাছাই করি। (হিতো. ১:১০, ১৫) এটা খুবই বিপদজনক। আমাদের দায়িত্ব হল, নিজেদের বাইবেল প্রশিক্ষিত বিবেক অনুযায়ী কাজ করা। আমরা যদি আমাদের সিদ্ধান্ত অন্যদের নিতে দিই, তা হলে আমরা আসলে তাদের অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিই। এই বাছাই আমাদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

১০. পৌল গালাতীয়দের কোন সাবধানবাণী দিয়েছিলেন?

১০ প্রেরিত পৌল গালাতীয়দের সাবধান করেছিলেন, যেন তারা তাদের সিদ্ধান্ত অন্যদের নিতে না দেয়। (পড়ুন, গালাতীয় ৪:১৭.) a গালাতীয় মণ্ডলীতে ভাইদের মধ্যে কেউ কেউ অন্যদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল? সেই স্বার্থপর ব্যক্তিরা চেয়েছিল, যেন ভাইয়েরা প্রেরিতদের প্রতি আগ্রহী না হয়ে বরং তাদের প্রতি আগ্রহী হয় এবং তাদের অনুসরণ করে। তারা নম্র ছিল না ও সেইসঙ্গে তারা নিজ নিজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে তাদের ভাইদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখায়নি।

১১. অন্যদের যখন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন কীভাবে আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি?

১১ প্রেরিত পৌলের উত্তম উদাহরণ থেকে আমরা সকলে শিক্ষা লাভ করতে পারি। তিনি জানতেন, তার ভাইদের নিজ নিজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে আর তাই তিনি সেই অধিকারের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১:২৪.) বর্তমানে, প্রাচীনরাও যখন এমন কোনো বিষয়ে পরামর্শ দেন, যেটার সঙ্গে ব্যক্তিগত বাছাইয়ের বিষয়টা যুক্ত রয়েছে, তখন তারা এই উদাহরণ অনুসরণ করতে পারেন। তারা আনন্দের সঙ্গে ভাই-বোনদের ঈশ্বরের বাক্যের উপর ভিত্তি করে তথ্য জানিয়ে থাকেন। তবে, তারা সতর্ক থাকেন যেন প্রত্যেক খ্রিস্টান নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেয়, কারণ সেই সিদ্ধান্তের ভালো বা মন্দ ফল সেই ব্যক্তিকেই ভোগ করতে হবে। এখান থেকে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি: আমরা অন্যদের বাইবেলের এমন পরামর্শগুলো বোঝার জন্য সাহায্য করতে পারি, যেগুলো তাদের পরিস্থিতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে, আমাদের ভাই-বোনদের নিজ নিজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ও দায়িত্ব তাদের নিজেদেরই। তারা যখন নিজেদের জন্য বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তারা উপকৃত হয়। স্পষ্টতই, আমাদের কখনো এইরকম চিন্তা করা উচিত নয় যে, ভাই-বোনেরা কী করবে, সেই ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে।

প্রেমময় প্রাচীনরা অন্যদের সাহায্য করেন, যেন তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেওয়া শিখতে পারে (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

অনুভূতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন না

১২, ১৩. আমরা যখন রাগান্বিত অবস্থায় থাকি অথবা বিষণ্ণ হয়ে থাকি, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া কেন বিপদজনক?

১২ বর্তমানে, অনেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নিজেদের হৃদয়ের কথা শুনে থাকে। কিন্তু, এটা বিপদজনক হতে পারে। বাইবেল আমাদের সতর্ক করে, যেন আমরা আমাদের অসিদ্ধ হৃদয় অথবা অনুভূতির দ্বারা পরিচালিত হয়ে সিদ্ধান্ত না নিই। (হিতো. ২৮:২৬) আমরা আমাদের হৃদয়ের উপর আস্থা রাখতে পারি না কারণ “অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য।” (যির. ১৭:৯) বাইবেলে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেগুলো অসিদ্ধ হৃদয়ের উপর নির্ভর করার দুঃখজনক পরিণতি সম্বন্ধে তুলে ধরে। (১ রাজা. ১১:৯; যির. ৩:১৭; ১৩:১০) তাই, আমরা যদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের হৃদয়ের কথা শুনি, তা হলে কী হতে পারে?

১৩ যিহোবা আমাদের আদেশ দিয়েছেন, যেন আমরা তাঁকে আমাদের সমস্ত হৃদয় দিয়ে প্রেম করি এবং আমাদের প্রতিবেশীকে নিজেদের মতো প্রেম করি। (মথি ২২:৩৭-৩৯) কিন্তু, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আগের অনুচ্ছেদের শাস্ত্রপদগুলো দেখায়, আমাদের অনুভূতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে চিন্তা করা ও কাজ করা বিপদজনক। উদাহরণ স্বরূপ, রাগান্বিত অবস্থায় একজন ব্যক্তির পক্ষে উত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। (হিতো. ১৪:১৭; ২৯:২২) এ ছাড়া, একজন অবসন্ন বা বিষণ্ণ ব্যক্তির পক্ষেও বিজ্ঞ বাছাই করা কঠিন। (গণনা. ৩২:৬-১২; হিতো. ২৪:১০) আমাদের সবসময় ঈশ্বরের ব্যবস্থার দ্বারা পরিচালিত হয়ে চিন্তা করা উচিত। (রোমীয় ৭:২৫) আমরা যখন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমরা যেন আমাদের অনুভূতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে কাজ না করি।

যখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা প্রয়োজন

১৪. কীভাবে আমরা বলতে পারি যে, কোনো কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা উপযুক্ত?

১৪ এটা ঠিক যে, আমাদের সবসময় বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে, একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি জানেন, কখনো কখনো তাকে হয়তো তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে দেখতে এবং দরকার হলে সেটা পরিবর্তন করতে হবে। এক্ষেত্রে, যিহোবা ঈশ্বর আমাদের জন্য নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন। লক্ষ করুন, যোনার দিনে নীনবীর লোকেদের প্রতি যিহোবা কী করেছিলেন: “ঈশ্বর তাহাদের ক্রিয়া, তাহারা যে আপন আপন কুপথ হইতে বিমুখ হইল, তাহা দেখিলেন, আর তাহাদের যে অমঙ্গল করিবেন বলিয়াছিলেন, তদ্বিষয়ে অনুশোচনা করিলেন; তাহা করিলেন না।” (যোনা ৩:১০) যিহোবা যখন দেখেছিলেন যে, নীনবীর লোকেরা পরিবর্তিত হয়েছে এবং মন্দ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, তখন তিনি অনুশোচনা করেছিলেন বা তাঁর মন পরিবর্তন করেছিলেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তে রদবদল করেছিলেন। এটা দেখিয়েছিল, তিনি হলেন যুক্তিবাদী, বিনয়ী এবং সমবেদনাময় ঈশ্বর। বিভিন্ন মানুষের মতো যিহোবা চিন্তা না করেই সিদ্ধান্ত নেন না, এমনকী তিনি যখন রাগান্বিত অবস্থায়ও থাকেন।

১৫. কোন কারণগুলোর জন্য আমাদের হয়তো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে?

১৫ কখনো কখনো—হতে পারে যখন আমাদের পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়—কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা আমাদের জন্য হয়তো উত্তম হবে। মনে করে দেখুন, যিহোবাও কখনো কখনো তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। (১ রাজা. ২১:২০, ২১, ২৭-২৯; ২ রাজা. ২০:১-৫) আবার সেই সময়ও হয়তো আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে রদবদল করতে পারি, যখন আমরা কোনো নতুন তথ্য জানতে পারি। রাজা দায়ূদের উদাহরণ বিবেচনা করুন। ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে তিনি শৌলের নাতি মফীবোশতের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু, পরে দায়ূদ যখন সঠিক তথ্য জানতে পেরেছিলেন, তখন তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিলেন। (২ শমূ. ১৯:২৪-২৯) মাঝে মাঝে আমাদের জন্যও তা-ই করা হয়তো বিজ্ঞতার কাজ হবে।

১৬. (ক) সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কোন পরামর্শগুলো সাহায্যকারী হতে পারে? (খ) কেন আমাদের সিদ্ধান্তগুলো পুনর্বিবেচনা করা উচিত এবং কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

১৬ বাইবেল জানায়, আমাদের কখনোই হঠকারিতার সঙ্গে বা কোনো কিছু না ভেবে তাড়াহুড়ো করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। (হিতো. ২১:৫) আমাদের সময় নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে সমস্ত দিক বিবেচনা করতে হবে, যাতে আমরা বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে পারি। (১ থিষল. ৫:২১) কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরিবারের একজন মস্তকের বাইবেল ও বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাদি গবেষণা করার জন্য সময় করে নেওয়া উচিত। এ ছাড়া, পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মতামত শোনা অথবা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করাও উত্তম হবে। মনে করে দেখুন, ঈশ্বর অব্রাহামকে তার স্ত্রীর কথা শুনতে বলেছিলেন। (আদি. ২১:৯-১২) প্রাচীনদেরও গবেষণা করার জন্য সময় করে নেওয়া উচিত। নতুন তথ্য জানার পর তারা যখন বুঝতে পারেন, তাদের কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা প্রয়োজন, তখন তারা অন্যদের সম্মান হারিয়ে ফেলার ভয়ে তা পরিবর্তন করা বাদ দেন না। যুক্তিবাদী ও বিনয়ী প্রাচীনদের সবসময়ই প্রস্তুত থাকা উচিত, যেন তারা প্রয়োজন অনুসারে তাদের চিন্তাভাবনায় ও সিদ্ধান্তে রদবদল করতে পারেন। আর তাদের উদাহরণ অনুসরণ করা আমাদের সকলের জন্য উত্তম। এই বিষয়টা মণ্ডলীতে শান্তি ও একতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।—প্রেরিত ৬:১-৪.

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করুন

১৭. কী আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে সফল হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৭ কিছু সিদ্ধান্ত রয়েছে, যেগুলো অন্যান্য সিদ্ধান্তের চেয়ে আরও গুরুতর। উদাহরণ স্বরূপ, একজন ব্যক্তি বিয়ে করবেন কি না কিংবা কাকে বিয়ে করবেন, তা খুবই গুরুতর সিদ্ধান্ত। আরেকটা গুরুতর সিদ্ধান্ত হল, একজন ব্যক্তি কখন পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করবেন। এইরকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের সমস্ত পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করতে হবে এবং প্রার্থনায় যিহোবার কাছে সাহায্য চাইতে হবে। এর জন্য হয়তো সময়ের প্রয়োজন, কিন্তু আমরা যদি বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই যিহোবার উপর আস্থা রাখতে হবে, তাঁর নির্দেশনা শুনতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। (হিতো. ১:৫) যিহোবা তাঁর বাক্যে আমাদের জন্য সর্বোত্তম পরামর্শ জুগিয়েছেন। তাই, আমরা যদি যিহোবার নির্দেশনা লাভ করতে চাই, তা হলে আমাদের জন্য গবেষণা এবং প্রার্থনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিনি আমাদের প্রয়োজনীয় গুণাবলি প্রদান করবেন। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবসময় নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘এই সিদ্ধান্ত কি দেখাবে যে, আমি যিহোবাকে ভালোবাসি? এটা কি আমার পরিবারের জন্য আনন্দ ও শান্তি নিয়ে আসবে? আর এটা কি দেখাবে যে, আমি ধৈর্যশীল ও সদয়?’

১৮. কেন যিহোবা চান যেন আমরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিই?

১৮ যিহোবা আমাদের তাঁর প্রতি প্রেম দেখানোর জন্য এবং তাঁকে সেবা করার জন্য জোর করেন না। এর পরিবর্তে, এই ব্যাপারে তিনি আমাদের বাছাই করার স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমরা তাঁকে সেবা করব কি না, তা বাছাই করার বিষয়ে আমাদের দায়িত্ব ও অধিকারের প্রতি তিনি সম্মান দেখান। (যিহো. ২৪:১৫; উপ. ৫:৪) কিন্তু, তিনি চান যেন আমরা তাঁর বাক্যের উপর ভিত্তি করে যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেই অনুযায়ী কাজ করি। আমরা যখন যিহোবার নির্দেশনার উপর আস্থা রাখব এবং তাঁর দেওয়া নীতিগুলো কাজে লাগাব, তখন আমরা বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে পারব। আর এভাবে আমরা দেখাতে পারব যে, আমরা আমাদের সমস্ত পথে অটল।—যাকোব ১:৫-৮; ৪:৮.

a গালাতীয় ৪:১৭ (বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন): “সেই অন্য লোকেরা তোমাদের জন্য আগ্রহী হয়েছে, কিন্তু সেটা কোন ভাল উদ্দেশ্যের জন্য নয়। তারা আমার দিক থেকে তোমাদের ফিরাতে চায়, যেন তোমরা তাদের প্রতি আগ্রহী হও।”