যিহোবা তাঁর লোকেদের নেতৃত্ব দেন
“সদাপ্রভু নিয়ত তোমাকে পথ প্রদর্শন করিবেন।”—যিশা. ৫৮:১১.
১, ২. (ক) কীভাবে যিহোবার সাক্ষিরা অন্যান্য ধর্মের চেয়ে আলাদা? (খ) এই প্রবন্ধে ও পরের প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?
লোকেরা প্রায়ই যিহোবার সাক্ষিদের এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে: “আপনাদের নেতা কে?” তারা এই বিষয়ে চিন্তা করে কারণ বহু ধর্মেই একজন নেতা অথবা নেত্রী থাকেন। কিন্তু, আমরা এই বিষয়টা জানাতে পেরে গর্বিত যে, কোনো অসিদ্ধ মানুষ আমাদের নেতা নন। এর পরিবর্তে, যিশু খ্রিস্ট হলেন আমাদের নেতা! আর তিনি তাঁর পিতা এবং নেতা যিহোবার বাধ্য থাকেন।—মথি ২৩:১০.
২ এ ছাড়া, বর্তমানে এক দল ব্যক্তি, যাদের “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” বলে অভিহিত করা হয়, তারা ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে নেতৃত্ব দেন। (মথি ২৪:৪৫) কিন্তু কীভাবে আমরা জানতে পারি, তাঁর পুত্রের মাধ্যমে আসলে যিহোবাই আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন? এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা তিনটে কারণ বিবেচনা করব। আর এই বিষয়টাও স্পষ্ট হবে, যদিও যিহোবা তাঁর লোকেদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যবহার করে এসেছেন, কিন্তু যিহোবাই তাঁর লোকেদের প্রকৃত পথ প্রদর্শক বা নেতা ছিলেন এবং এখনও আছেন।—যিশা. ৫৮:১১.
পবিত্র আত্মার শক্তিতে তারা কাজ করেছিলেন
৩. ইস্রায়েল জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কী মোশিকে সাহায্য করেছিল?
৩ পবিত্র আত্মার শক্তিতে ঈশ্বরের প্রতিনিধিরা কাজ করেছিলেন। ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের নেতা হওয়ার জন্য মোশিকে মনোনীত করেছিলেন। কী তাকে এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ কার্যভার পালন করার জন্য সাহায্য করেছিল? যিহোবা মোশিকে “আপন পবিত্র আত্মা” দিয়েছিলেন। (পড়ুন, যিশাইয় ৬৩:১১-১৪.) তাই, আসলে যিহোবাই তাঁর লোকেদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কারণ তাঁর পবিত্র আত্মা মোশিকে সাহায্য করেছিল।
৪. মোশির উপর যে ঈশ্বরের আত্মা ছিল, তা কীভাবে প্রমাণিত হয়েছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৪ মোশির উপর যে ঈশ্বরের আত্মা ছিল, তা কি লোকেরা বুঝতে পেরেছিল? হ্যাঁ, তারা বুঝতে পেরেছিল! যিহোবার পবিত্র আত্মার শক্তিতে মোশি অলৌকিক কাজ করতে পেরেছিলেন এবং মিশরের ক্ষমতাবান শাসক ফরৌণের কাছে ঈশ্বরের নাম জানাতে পেরেছিলেন। (যাত্রা. ৭:১-৩) এ ছাড়া, পবিত্র আত্মা মোশিকে একজন প্রেমময় ও ধৈর্যশীল নেতা হতেও সাহায্য করেছিল। তিনি অন্যান্য দেশের কঠোর ও স্বার্থপর নেতাদের চেয়ে অনেক আলাদা ছিলেন! (যাত্রা. ৫:২, ৬-৯) এটা স্পষ্ট যে, যিহোবাই মোশিকে তাঁর লোকেদের নেতা হওয়ার জন্য মনোনীত করেছিলেন।
৫. যিহোবা তাঁর লোকেদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আর কাদের পবিত্র আত্মা দান করেছিলেন?
৫ যিহোবা তাঁর লোকেদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আর কাদের পবিত্র আত্মা দান করেছিলেন? বাইবেল বলে: “নূনের পুত্ত্র যিহোশূয় বিজ্ঞতার আত্মায় পরিপূর্ণ ছিলেন।” (দ্বিতীয়. ৩৪:৯) “সদাপ্রভুর আত্মা গিদিয়োনে আবেশ করিলেন।” (বিচার. ৬:৩৪) আর “সদাপ্রভুর আত্মা দায়ূদের উপরে আসিলেন।” (১ শমূ. ১৬:১৩) এই ব্যক্তিরা এমন কাজ করার জন্য ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যের উপর নির্ভর করেছিলেন, যা তারা নিজেদের শক্তিতে সম্পন্ন করতে পারতেন না। (যিহো. ১১:১৬, ১৭; বিচার. ৭:৭, ২২; ১ শমূ. ১৭:৩৭, ৫০) যেহেতু যিহোবাই বড়ো বড়ো কাজ সম্পন্ন করার জন্য এই ব্যক্তিদের শক্তি দিয়েছিলেন, তাই শুধুমাত্র তাঁরই প্রশংসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
৬. কেন ঈশ্বর চেয়েছিলেন যেন তাঁর লোকেরা ইস্রায়েলের নেতাদের প্রতি সম্মান দেখায়?
৬ ইস্রায়েলীয়রা যখন মোশি, যিহোশূয়, গিদিয়োন ও দায়ূদকে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার শক্তিতে কাজ করতে দেখেছিল, তখন তাদের কী করা উচিত ছিল? সেই ব্যক্তিদের প্রতি তাদের সম্মান দেখানো উচিত ছিল। লোকেরা যখন মোশির বিষয়ে অভিযোগ করেছিল, তখন যিহোবা কী জিজ্ঞেস করেছিলেন, তা লক্ষ করুন: “এই লোকেরা কত কাল আমাকে অবজ্ঞা করিবে?” (গণনা. ১৪:২, ১১) স্পষ্টতই, তাঁর লোকেদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যিহোবাই এই ব্যক্তিদের মনোনীত করেছিলেন। লোকেরা যখন তাদের বাধ্য হয়েছিল, তখন তারা আসলে যিহোবাকে তাদের নেতা হিসেবে অনুসরণ করেছিল।
স্বর্গদূতেরা তাদের সাহায্য করেছিলেন
৭. কীভাবে স্বর্গদূতেরা মোশিকে সাহায্য করেছিলেন?
৭ স্বর্গদূতেরা ঈশ্বরের প্রতিনিধিদের সাহায্য করেছিলেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১:১৪.) ঈশ্বর মোশিকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য স্বর্গদূতদের ব্যবহার করেছিলেন। প্রথমত, একজন স্বর্গদূত “ঝোপে তাঁহাকে [মোশিকে] দর্শন দিয়াছিলেন” এবং তাকে ইস্রায়েল জাতিকে মুক্ত করার ও তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার কার্যভার দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ৭:৩৫) দ্বিতীয়ত, ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য স্বর্গদূতদের মাধ্যমে মোশিকে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন। (গালা. ৩:১৯) তৃতীয়ত, যিহোবা তাকে বলেছিলেন: “আমি যে দেশের বিষয়ে তোমাকে বলিয়াছি, সেই দেশে লোকদিগকে লইয়া যাও; দেখ, আমার দূত তোমার অগ্রে অগ্রে যাইবেন।” (যাত্রা. ৩২:৩৪) ইস্রায়েলীয়রা কোনো স্বর্গদূতকে এই কাজগুলো সম্পন্ন করতে দেখেছিল কি না, সেই বিষয়ে বাইবেল কিছু বলে না। তবে, মোশি যেভাবে লোকেদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন ও পরিচালনা করেছিলেন, তা থেকে এটা স্পষ্ট ছিল, স্বর্গদূতেরা তাকে সাহায্য করেছেন।
৮. কীভাবে স্বর্গদূতেরা যিহোশূয় ও হিষ্কিয়কে সাহায্য করেছিলেন?
৮ স্বর্গদূতেরা আর কাদের সাহায্য করেছিলেন? বাইবেল বলে: “সদাপ্রভুর সৈন্যের অধ্যক্ষ” অর্থাৎ একজন স্বর্গদূত যিহোশূয়কে কনানীয়দের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করেছিলেন। (যিহো. ৫:১৩-১৫; ৬:২, ২১) পরবর্তী সময়ে, রাজা হিষ্কিয় যখন ঈশ্বরের লোকেদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তখন অশূরীয়দের বিশাল সৈন্যবাহিনী যিরূশালেম ধ্বংস করার হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু “সদাপ্রভুর দূত যাত্রা করিয়া” এক রাতের মধ্যে “এক লক্ষ পঁচাশী সহস্র লোককে বধ করিলেন।”—২ রাজা. ১৯:৩৫.
৯. ঈশ্বরের প্রতিনিধিরা যদিও অসিদ্ধ ছিলেন, তবে ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে কী আশা করা হয়েছিল?
গণনা. ২০:১২) গিবিয়োনীয়রা যখন যিহোশূয়ের সঙ্গে একটা চুক্তি করতে এসেছিল, তখন তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছা জানতে চাননি। (যিহো. ৯:১৪, ১৫) হিষ্কিয়ের মন একটা পর্যায়ে গর্বিত হয়ে উঠেছিল। (২ বংশা. ৩২:২৫, ২৬) এই ব্যক্তিরা যদিও অসিদ্ধ ছিলেন, তবে ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে এটা আশা করা হয়েছিল, তারা তাদের নেতৃত্ব অনুসরণ করবে। ইস্রায়েলীয়রা দেখতে পেয়েছিল যে, যিহোবা এই ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য স্বর্গদূতদের ব্যবহার করছেন। তাই এটা স্পষ্ট, যিহোবাই তাঁর লোকেদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
৯ স্বর্গদূতেরা হলেন সিদ্ধ। তবে, তারা যে-ব্যক্তিদের সাহায্য করেছিলেন, সেই ব্যক্তিরা সিদ্ধ ছিলেন না। উদাহরণ স্বরূপ, মোশি একবার যিহোবার প্রতি সম্মান দেখাননি। (ঈশ্বরের বাক্য তাদের নির্দেশনা দিয়েছিল
১০. কীভাবে মোশি ঈশ্বরের ব্যবস্থা দ্বারা নির্দেশিত হয়েছিলেন?
১০ ঈশ্বরের বাক্য তাঁর প্রতিনিধিদের নির্দেশনা দিয়েছিল। ইস্রায়েল জাতিকে যে-ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছিল, সেটাকে বাইবেল ‘মোশির ব্যবস্থা’ বলে উল্লেখ করে। (১ রাজা. ২:৩) কিন্তু, বাইবেল এই বিষয়টাও স্পষ্ট করে দেয়, যিহোবাই ইস্রায়েল জাতিকে এই ব্যবস্থা দিয়েছিলেন। আর মোশিকেও সেই ব্যবস্থা পালন করতে হতো। (২ বংশা. ৩৪:১৪) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কীভাবে আবাস নির্মাণ করতে হবে, সেই বিষয়ে যিহোবা যখন মোশিকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তখন “মোশি এইরূপ করিলেন; তিনি সদাপ্রভুর সমস্ত আজ্ঞানুসারে কার্য্য করিলেন।”—যাত্রা. ৪০:১-১৬.
১১, ১২. (ক) যিহোশূয় এবং যে-রাজারা ঈশ্বরের লোকেদের শাসন করেছিলেন, তাদের কী করতে হয়েছিল? (খ) কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য সেই ব্যক্তিদের নির্দেশনা দিয়েছিল, যারা নেতৃত্বে ছিলেন?
১১ যিহোশূয় যখন নেতা হয়েছিলেন, তখন তার কাছে ঈশ্বরের বাক্যের কিছু অংশ ছিল আর যিহোবা তাকে বলেছিলেন: “তন্মধ্যে যাহা যাহা লিখিত আছে, যত্নপূর্ব্বক সেই সকলের অনুযায়ী কর্ম্ম করণার্থে তুমি দিবারাত্র তাহা ধ্যান কর।” (যিহো. ১:৮) পরবর্তী সময়ে যে-রাজারা ঈশ্বরের লোকেদের শাসন করেছিল, তাদের প্রতিদিন ব্যবস্থা পাঠ করতে হয়েছিল, সেটার একটা প্রতিলিপি তৈরি করতে হয়েছিল এবং “ব্যবস্থার সমস্ত বাক্য ও এই সকল বিধি পালন করিতে” হয়েছিল।—পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৮-২০.
১২ কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য সেই ব্যক্তিদের নির্দেশনা দিয়েছিল, যারা নেতৃত্বে ছিলেন? রাজা যোশিয়ের উদাহরণ চিন্তা করুন। মোশির ব্যবস্থা খুঁজে পাওয়ার পর, যোশিয়ের লেখক বা সচিব তার সামনে সেটা পড়তে শুরু করেছিলেন। * “তখন রাজা সেই ব্যবস্থাপুস্তকের বাক্য সকল শুনিয়া আপনার বস্ত্র ছিঁড়িলেন।” ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যোশিয় দেশের সমস্ত প্রতিমা ধ্বংস করেছিলেন এবং এত বড়ো নিস্তারপর্ব উদ্যাপনের ব্যবস্থা করেছিলেন, যেমনটা আগে কখনো হয়নি। (২ রাজা. ২২:১১; ২৩:১-২৩) যোশিয় ও অন্যান্য বিশ্বস্ত নেতারা যেহেতু ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা নির্দেশিত হয়েছিলেন, তাই ঈশ্বরের লোকেদের পরিচালনা করার ক্ষেত্রে তারা রদবদল করতে ইচ্ছুক ছিলেন। সেইসমস্ত পরিবর্তন ঈশ্বরের লোকেদের তাঁর বাধ্য হতে সাহায্য করেছিল।
১৩. কীভাবে ঈশ্বরের লোকেদের নেতারা অন্যান্য জাতির নেতাদের চেয়ে আলাদা ছিলেন?
১৩ অন্যান্য জাতির নেতারা সীমিত মানবপ্রজ্ঞা দ্বারা নির্দেশিত হতো। উদাহরণ স্বরূপ, কনানীয় নেতারা ও তাদের লোকেরা বিভিন্ন জঘন্য কাজ করত, যার মধ্যে ছিল অজাচার বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের সঙ্গে ব্যভিচার, সমকামিতা, পশুগমন বা পশুর সঙ্গে ব্যভিচার, শিশুবলি ও প্রতিমাপূজা। (লেবীয়. ১৮:৬, ২১-২৫) এ ছাড়া, শুচিতা সম্বন্ধে ঈশ্বরের লোকেদের যে-সমস্ত নিয়ম ছিল, বাবিলীয় ও মিশরীয় নেতারা সেইসমস্ত নিয়ম পালন করত না। (গণনা. ১৯:১৩) কিন্তু, ঈশ্বরের লোকেরা দেখতে পেয়েছিল, কীভাবে তাদের বিশ্বস্ত নেতারা তাদের উপাসনাকে বিশুদ্ধ রাখতে, শারীরিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে ও যৌনতা সংক্রান্ত অশুচিতা এড়িয়ে চলতে উৎসাহিত করেন। স্পষ্টতই, যিহোবা তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
১৪. কেন যিহোবা তাঁর লোকেদের উপর নিযুক্ত কোনো কোনো নেতাকে শাসন করেছিলেন?
১ শমূ. ১৩:১৩, ১৪) পরে, যিহোবা এমন একজন ব্যক্তিকে নিযুক্ত করেছিলেন, যিনি ছিলেন একজন সিদ্ধ নেতা।
১৪ ঈশ্বরের লোকেদের উপর যে-রাজারা শাসন করেছিলেন, তারা সকলে তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করেননি। সেই অবিশ্বস্ত রাজারা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা, তাঁর স্বর্গদূত ও তাঁর বাক্যের নির্দেশনা অনুসরণ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে, যিহোবা সেইসমস্ত নেতাকে শাসন করেছিলেন অথবা তাদের জায়গায় অন্য কাউকে মনোনীত করেছিলেন। (যিহোবা একজন সিদ্ধ নেতাকে নিযুক্ত করেন
১৫. (ক) কীভাবে ভাববাদীরা প্রকাশ করেছিলেন, একজন সিদ্ধ নেতা আসতে যাচ্ছেন? (খ) কে সেই সিদ্ধ নেতা ছিলেন?
১৫ শত শত বছর ধরে যিহোবা প্রতিজ্ঞা করে এসেছিলেন, তিনি তাঁর লোকেদের জন্য একজন সিদ্ধ নেতাকে নিযুক্ত করবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মোশি ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্য হইতে, তোমার ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে, তোমার জন্য আমার সদৃশ এক ভাববাদী উৎপন্ন করিবেন, তাঁহারই কথায় তোমরা কর্ণপাত করিবে।” (দ্বিতীয়. ১৮:১৫) যিশাইয় বলেছিলেন, এই ব্যক্তি “জাতিগণের নায়ক” বা নেতা “ও আদেষ্টারূপে নিযুক্ত” হবেন। (যিশা. ৫৫:৪) আর দানিয়েল মশীহ সম্বন্ধে লিখেছিলেন, যিনি “নায়ক” বা নেতা হবেন। (দানি. ৯:২৫) অবশেষে, যিশু খ্রিস্ট নিজেকে “আচার্য্য” বা নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। (পড়ুন, মথি ২৩:১০.) যিশুর শিষ্যরা স্বেচ্ছায় তাঁকে অনুসরণ করেছিলেন আর তিনি যে যিহোবার মনোনীত ব্যক্তি, তা বিশ্বাস করেছিলেন। (যোহন ৬:৬৮, ৬৯) কোন বিষয়টা তাদের দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছিল যে, যিশু খ্রিস্টই হলেন সেই ব্যক্তি, যাঁকে যিহোবা তাঁর লোকেদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ব্যবহার করবেন?
১৬. যিশু যে পবিত্র আত্মার শক্তিতে কাজ করেছিলেন, সেটার কোন প্রমাণ রয়েছে?
১৬ পবিত্র আত্মার শক্তিতে যিশু কাজ করেছিলেন। যিশু যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, তখন যোহন দেখতে পেয়েছিলেন, “আকাশ দুইভাগ হইল, এবং আত্মা কপোতের ন্যায় তাঁহার উপরে নামিয়া আসিতেছেন।” এর অল্পসময় পরেই, “আত্মা তাঁহাকে প্রান্তরে পাঠাইয়া দিলেন।” (যোহন ১:৩২; মার্ক ১:১০-১২) যিশু পৃথিবীতে পরিচর্যা করার সময়, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার শক্তিতে শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং অলৌকিক কাজ করেছিলেন। (প্রেরিত ১০:৩৮) এ ছাড়া, পবিত্র আত্মার সাহায্যে যিশু বিভিন্ন গুণ যেমন, প্রেম, আনন্দ ও দৃঢ়বিশ্বাস দেখাতে পেরেছিলেন। (যোহন ১৫:৯; ইব্রীয় ১২:২) অন্য কোনো নেতা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা লাভ করার এমন প্রমাণ দেখাতে পারেননি। এটা স্পষ্ট যে, যিহোবাই যিশুকে নেতা হিসেবে মনোনীত করেছিলেন।
১৭. যিশুকে সাহায্য করার জন্য স্বর্গদূতেরা কী করেছিলেন?
১৭ স্বর্গদূতেরা যিশুকে সাহায্য করেছিলেন। যিশু বাপ্তিস্ম নেওয়ার অল্পসময় পর, “দূতগণ কাছে আসিয়া তাঁহার পরিচর্য্যা” করেছিলেন। (মথি ৪:১১) মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে, “স্বর্গ হইতে এক দূত দেখা দিয়া তাঁহাকে সবল করিলেন।” (লূক ২২:৪৩) যিশু জানতেন, যখনই তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন হবে, তখনই যিহোবা তাঁকে সাহায্য করার জন্য স্বর্গদূতদের পাঠাবেন।—মথি ২৬:৫৩.
১৮, ১৯. কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য যিশুর জীবনে ও তাঁর শিক্ষায় নির্দেশনা দিয়েছিল?
১৮ ঈশ্বরের বাক্য যিশুকে নির্দেশনা দিয়েছিল। যিশু তাঁর পরিচর্যার শুরু থেকে যাতনা দণ্ডে মৃত্যুবরণ করার আগে পর্যন্ত, শাস্ত্রের নির্দেশনা অনুসরণ করেছিলেন। এমনকী তিনি যখন প্রাণত্যাগ করছিলেন, তখনও তিনি মশীহ সম্বন্ধে ভাববাণী উল্লেখ করেছিলেন। (মথি ৪:৪; ২৭:৪৬; লূক ২৩:৪৬) কিন্তু, সেই সময়ের ধর্মীয় নেতারা যিশুর চেয়ে অনেক আলাদা ছিলেন। তাদের শিক্ষার সঙ্গে যখন ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষার মিল থাকত না, তখন তারা ঈশ্বরের বাক্য উপেক্ষা করতেন। তাদের সম্বন্ধে বলার সময় যিশু ঈশ্বরের বাক্য থেকে এই উদ্ধৃতি করেছিলেন: “এই লোকেরা ওষ্ঠাধরে আমার সমাদর করে, কিন্তু ইহাদের অন্তঃকরণ আমা হইতে দূরে থাকে; এবং ইহারা অনর্থক আমার আরাধনা করে, মনুষ্যদের আদেশ ধর্ম্মসূত্র বলিয়া শিক্ষা দেয়।” (মথি ১৫:৭-৯) যিহোবা তাঁর লোকেদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কখনোই এমন ব্যক্তিদের মনোনীত করতে পারেন না, যারা তাঁর বাক্য অনুসরণ করে না।
১৯ এ ছাড়া, যিশু অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার সময়ও ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করেছিলেন। ধর্মীয় নেতারা যখন তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, তখন তাদের উত্তর দেওয়ার জন্য তিনি নিজের প্রজ্ঞা অথবা অভিজ্ঞতা ব্যবহার করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি শাস্ত্র থেকে লোকেদের শিক্ষা দিয়েছিলেন। (মথি ২২:৩৩-৪০) আর যিশু চাইলে নিজের স্বর্গীয় জীবন সম্বন্ধে অথবা নিখিলবিশ্বের সৃষ্টি সম্বন্ধে চমকপ্রদ গল্প বলে অন্যদের অভিভূত করতে পারতেন। কিন্তু তার পরিবর্তে, তিনি ঈশ্বরের বাক্য ভালোবেসেছিলেন, সেই বাক্য সম্বন্ধে অন্যদের জানাতে আগ্রহী ছিলেন এবং ‘তাঁহাদের বুদ্ধিদ্বার খুলিয়া দিয়াছিলেন, যেন তাঁহারা শাস্ত্র বুঝিতে পারেন।’—লূক ২৪:৩২, ৪৫.
২০. (ক) কীভাবে যিশু যিহোবাকে গৌরব প্রদান করেছিলেন? (খ) যিশু এবং হেরোদ আগ্রিপ্প ১ম-এর মনোভাবের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল?
২০ যিশু যেভাবে কথা বলতেন, তা শুনে তাঁর শ্রোতারা যদিও চমৎকৃত হয়েছিল, কিন্তু যিশু সবসময় তাঁর শিক্ষক অর্থাৎ যিহোবাকে গৌরব প্রদান করেছিলেন। (লূক ৪:২২) একজন ধনী ব্যক্তি যখন “হে সদ্গুরু” বলে সম্বোধন করে যিশুর গৌরব করার চেষ্টা করেছিলেন, তখন যিশু নম্রতার সঙ্গে বলেছিলেন: “আমাকে সৎ কেন বলিতেছ? এক জন ব্যতিরেকে সৎ আর কেহ নাই, তিনি ঈশ্বর।” (মার্ক ১০:১৭, ১৮) কিন্তু হেরোদ আগ্রিপ্প ১ম, যিনি যিশুর মৃত্যুর প্রায় আট বছর পর যিহূদিয়ার নেতা হয়েছিলেন, তিনি যিশুর চেয়ে অনেক আলাদা মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন। একদিন, একটা বিশেষ সভার সময় হেরোদ অত্যন্ত জাঁকালো ও দামি রাজবস্ত্র পরেছিলেন। লোকেরা যখন তাকে দেখেছিল ও বক্তৃতা দিতে শুনেছিল, তখন তারা চিৎকার করে বলেছিল: “এ দেবতার রব, মানুষের নয়।” হেরোদ প্রশংসা শুনতে ভালোবাসতেন। কিন্তু এরপর কী ঘটেছিল? “প্রভুর [ঈশ্বরের] এক দূত তখনই তাঁহাকে আঘাত করিলেন, কেননা তিনি ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করিলেন না; আর তিনি কীটভক্ষিত হইয়া প্রাণত্যাগ করিলেন।” (প্রেরিত ১২:২১-২৩) স্পষ্টতই, যিহোবা হেরোদকে নেতা হওয়ার জন্য মনোনীত করেননি। কিন্তু যিশু প্রমাণ করেছিলেন, ঈশ্বর তাঁকে মনোনীত করেছেন আর তিনি সবসময় যিহোবার লোকেদের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে যিহোবাকেই গৌরব প্রদান করেছিলেন।
২১. পরের প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব?
২১ যিহোবা চেয়েছিলেন যেন যিশু শুধু কয়েক বছরের জন্য নয় বরং আরও বেশি সময়ের জন্য নেতা হন। যিশু পুনরুত্থানের পর তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্ত্তৃত্ব আমাকে দত্ত হইয়াছে।” তিনি এটাও বলেছিলেন: “আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:১৮-২০) কিন্তু, যিশু যেহেতু একজন অদৃশ্য ব্যক্তি আর তিনি স্বর্গে আছেন, তা হলে কীভাবে তিনি পৃথিবীতে ঈশ্বরের লোকেদের নেতৃত্ব দিতে পারেন? পৃথিবীতে যিশুর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য যিহোবা কাকে ব্যবহার করবেন? আর কীভাবে খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের প্রতিনিধিদের শনাক্ত করতে পারবে? পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আলোচনা করা হবে।
^ অনু. 12 এটা হয়তো মোশির লেখা মূল পাণ্ডুলিপি ছিল।