“যাহারা রোদন করে, তাহাদের সহিত রোদন কর”
“তোমরা পরস্পরকে আশ্বাস দেও, এবং এক জন অন্যকে গাঁথিয়া তুল।” —১ থিষল. ৫:১১.
১, ২. কীভাবে আমরা শোকার্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা প্রদান করতে পারি, সেই বিষয়টা নিয়ে কেন আমাদের আলোচনা করতে হবে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
সুসি নামে একজন বোন বলেন, “আমাদের ছেলে মারা যাওয়ার পর প্রায় এক বছর ধরে আমরা গভীর ও অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করেছিলাম।” একজন ভাই হঠাৎই মৃত্যুতে তার স্ত্রীকে হারানোর পর বলেছিলেন, তিনি এমন “শারীরিক যন্ত্রণা” ভোগ করেছিলেন, যা “ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।” দুঃখের বিষয় হল, অনেক লোক এই ধরনের যন্ত্রণা ভোগ করে থাকে। বর্তমানে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে এমন অনেক ভাই-বোন রয়েছে, যারা কখনো ভাবেনি যে, তাদের প্রিয়জনরা আরমাগিদোন আসার আগেই মারা যাবে। হতে পারে আপনি মৃত্যুতে কোনো প্রিয়জনকে হারিয়েছেন অথবা আপনি হয়তো এমন কাউকে জানেন, যিনি শোকার্ত। যদি এমনটা হয়ে থাকে, তা হলে আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন, ‘কীভাবে একজন শোকার্ত ব্যক্তি সান্ত্বনা খুঁজে পেতে পারেন?’
২ কেউ কেউ বলে থাকে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ধরনের ক্ষত সেরে যায়। কিন্তু, এটা কি সবসময় সত্য? একজন বিধবা বোন বলেছিলেন, “আমি দেখেছি, এটা বলা আরও সঠিক যে, একজন ব্যক্তি তার সময়কে যেভাবে ব্যবহার করেন, সেটা তাকে তার আবেগগত ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।” শরীরে কোনো ক্ষত হলে, তা সারিয়ে তোলার জন্য সময় ও কোমল যত্নের প্রয়োজন হয়। ঠিক
একইভাবে, আবেগগত ক্ষত সারিয়ে তোলার বা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যও সময় ও কোমল যত্নের প্রয়োজন হয়। তাই, শোকার্ত ব্যক্তিদের আবেগগত যন্ত্রণা কম করার জন্য নির্দিষ্টভাবে কোন বিষয়গুলো তাদের সাহায্য করতে পারে?যিহোবা হলেন “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর”
৩, ৪. কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, আমরা যখন শোক করি, তখন যিহোবা আমাদের অনুভূতি বোঝেন?
৩ আমাদের করুণাময় পিতা যিহোবা হলেন সেই প্রধান ব্যক্তি, যিনি আমাদের প্রয়োজনীয় সান্ত্বনা প্রদান করেন। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১:৩, ৪.) তিনি সমবেদনা দেখানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ স্থাপন করেছেন এবং তিনি তাঁর লোকেদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন: “আমি, আমিই তোমাদের সান্ত্বনাকর্ত্তা।”—যিশা. ৫১:১২; গীত. ১১৯:৫০, ৫২, ৭৬.
৪ আমাদের প্রেমময় পিতাও অব্রাহাম, ইস্হাক, যাকোব, মোশি ও রাজা দায়ূদের মতো বিভিন্ন প্রিয়জনকে মৃত্যুতে হারানোর যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। (গণনা. ১২:৬-৮; মথি ২২:৩১, ৩২; প্রেরিত ১৩:২২) তবে, যিহোবা সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন, যখন তিনি তাদের পুনরুত্থিত করবেন। বাইবেল বলে, “পরে তুমি আহ্বান করিবে, ও আমি উত্তর দিব। তুমি আপন হস্তকৃতের প্রতি মমতা [“আকুল আকাঙ্ক্ষা,” NW] করিবে।” (ইয়োব ১৪:১৪, ১৫) সেই সময়, তারা সুখে থাকবেন এবং নিখুঁত স্বাস্থ্য উপভোগ করবেন। এ ছাড়া, যিহোবা তাঁর প্রথমজাত পুত্রকে মৃত্যুতে হারানোর যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। বাইবেল বলে যে, ঈশ্বরের কাছে যিশু “[তাঁহার] আনন্দজনক” ব্যক্তি ছিলেন। (হিতো. ৮:২২, ৩০, পাদটীকা) আমরা এমনকী কল্পনাও করতে পারি না যে, তাঁর পুত্রকে এক যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু ভোগ করতে দেখাটা যিহোবার কাছে কতটা বেদনাদায়ক ছিল।—যোহন ৫:২০; ১০:১৭.
৫, ৬. কীভাবে যিহোবা আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করেন?
৫ আমরা এই বিষয়ে একেবারে নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন। তাই, আমাদের সবসময় নির্দ্বিধায় তাঁর কাছে প্রার্থনা করা উচিত এবং আমাদের প্রচণ্ড যন্ত্রণা ও শোকের বিষয়ে তাঁকে জানানো উচিত। এটা জানা কতই-না সান্ত্বনাদায়ক যে, যিহোবা আমাদের অনুভূতি বোঝেন এবং তিনি আমাদের প্রয়োজনীয় সান্ত্বনা প্রদান করেন! কিন্তু, কীভাবে তিনি তা করেন?
৬ যিহোবা যে-বিভিন্ন উপায়ে আমাদের আশ্বাস বা সান্ত্বনা প্রদান করেন, সেগুলোর মধ্যে একটা হল, তাঁর পবিত্র আত্মা। (প্রেরিত ৯:৩১) যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, আমাদের পিতা সেইসমস্ত ব্যক্তিকে তাঁর পরাক্রমী পবিত্র আত্মা প্রদান করবেন, যারা সেটার জন্য অনুরোধ করবে। (লূক ১১:১৩) আগে উল্লেখিত বোন সুসি বলেন: “অনেক বার এমনটা হয়েছিল যে, আমরা শুধু হাঁটু গেড়ে যিহোবার কাছে মিনতি করেছিলাম, যেন তিনি আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করেন। আর প্রত্যেক বারই ঈশ্বরের শান্তি আমাদের হৃদয় ও মনকে সত্যিই রক্ষা করেছিল।”—পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.
যিশুও আমাদের অনুভূতি বোঝেন
৭, ৮. কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, যিশু আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করবেন?
৭ পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু কথায় ও কাজে তাঁর পিতার চমৎকার গুণাবলি নিখুঁতভাবে অনুকরণ করেছিলেন। (যোহন ৫:১৯) যিহোবা যিশুকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন যেন তিনি “ভগ্নান্তঃকরণ লোকদের” ও ‘সমস্ত শোকার্ত্ত’ ব্যক্তিকে সান্ত্বনা প্রদান করেন। (যিশা. ৬১:১, ২; লূক ৪:১৭-২১) লোকেরা জানত যে, যিশু তাদের কষ্ট বোঝেন এবং তিনি সত্যিই তাদের সাহায্য করতে চান।—ইব্রীয় ২:১৭.
৮ তরুণবয়সে যিশু সম্ভবত মৃত্যুতে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ও পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, এমনটা মনে হয় যে, যিশু তরুণবয়সেই তাঁর পালক পিতা যোষেফকে মৃত্যুতে হারিয়েছিলেন। * একটু কল্পনা করুন, সেই যত্নশীল তরুণের পক্ষে নিজের শোকের সঙ্গে মোকাবিলা করা এবং একইসঙ্গে তাঁর মা ও ভাই-বোনদের দুঃখের সঙ্গে মোকাবিলা করা নিশ্চয়ই কতটা কঠিন হয়েছিল।
৯. লাসার যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন যিশু কীভাবে সমবেদনা দেখিয়েছিলেন?
৯ যিশু তাঁর পরিচর্যার সময় দেখিয়েছিলেন যে, তিনি সত্যিই লোকেদের অনুভূতি বোঝেন এবং তাদের প্রতি তাঁর সমবেদনা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু লাসার যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন মরিয়ম ও মার্থা যে-প্রচণ্ড যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন, যিশু সেটা অনুভব করেছিলেন। তাদের প্রতি যিশুর সমবেদনা এতটাই দৃঢ় ছিল যে, তিনি কেঁদেছিলেন, এমনকী যদিও তিনি জানতেন, শীঘ্রই তিনি লাসারকে পুনরুত্থিত করতে চলেছেন।—যোহন ১১:৩৩-৩৬.
১০. কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, বর্তমানে আমরা কেমন অনুভব করি, যিশু তা বোঝেন?
১০ কীভাবে অতীতে বলা যিশুর সান্ত্বনাদায়ক কথাগুলো বর্তমানে আমাদের সাহায্য করতে পারে? বাইবেল স্পষ্টভাবে দেখায় যে, যিশু পরিবর্তিত হননি। এটি বলে: “যীশু খ্রীষ্ট কল্য ও অদ্য এবং অনন্তকাল যে, সেই আছেন।” (ইব্রীয় ১৩:৮) তাঁকে ‘জীবনের আদিকর্ত্তা’ বলা হয় কারণ তাঁর দ্বারাই আমাদের জন্য অনন্তজীবন লাভ করা সম্ভবপর হয়েছে। এ ছাড়া, যিশু যেহেতু শোক করার অর্থ কী, তা ব্যক্তিগতভাবে বোঝেন, তাই তিনি “পরীক্ষিতগণের সাহায্য করিতে পারেন।” (প্রেরিত ৩:১৫; ইব্রীয় ২:১০, ১৮) তাই, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, বর্তমানেও যিশু যখন অন্যদের যন্ত্রণা ভোগ করতে দেখেন, তখন তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রভাবিত হন। তিনি শোকার্ত ব্যক্তিদের অনুভূতি বোঝেন এবং তিনি তাদের “সময়ের উপযোগী” সান্ত্বনা প্রদান করতে সক্ষম।—পড়ুন, ইব্রীয় ৪:১৫, ১৬.
‘শাস্ত্রমূলক সান্ত্বনা’
১১. কোন শাস্ত্রপদগুলো ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে সান্ত্বনা প্রদান করেছে?
১১ লাসারের মৃত্যুর সময়ে যিশুর প্রচণ্ড শোকের বিবরণ হল ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া অনেক সান্ত্বনাদায়ক শাস্ত্রপদের মধ্যে কেবল একটা। এটা আমাদের অবাক করে না কারণ “পূর্ব্বকালে যাহা যাহা লিখিত হইয়াছিল, সে সকল আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল, যেন শাস্ত্রমূলক ধৈর্য্য ও সান্ত্বনা দ্বারা আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই।” (রোমীয় ১৫:৪) আপনি যদি শোকার্ত হয়ে থাকেন, তা হলে আপনিও এইরকম কিছু শাস্ত্রপদ থেকে কোমল সান্ত্বনা খুঁজে পেতে পারেন:
-
“সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী, তিনি চূর্ণমনাদের পরিত্রাণ করেন।”—গীত. ৩৪:১৮, ১৯.
-
“আমার আন্তরিক ভাবনার বৃদ্ধিকালে তোমার [সদাপ্রভুর] দত্ত সান্ত্বনা আমার প্রাণকে আহ্লাদিত করে।”—গীত. ৯৪:১৯.
-
“আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আপনি, ও আমাদের পিতা ঈশ্বর, যিনি আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন, এবং অনুগ্রহ দ্বারা অনন্তকালস্থায়ী সান্ত্বনা ও উত্তম প্রত্যাশা দিয়াছেন, তিনি তোমাদের হৃদয়কে সান্ত্বনা দিউন, এবং . . . সুস্থির করুন।”—২ থিষল. ২:১৬, ১৭. *
মণ্ডলী হল প্রচুর সান্ত্বনার এক উৎস
১২. কীভাবে আমরা অন্যদের সান্ত্বনা প্রদান করতে পারি?
১২ এ ছাড়া, শোকার্ত ব্যক্তিরা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মধ্যেও সান্ত্বনা খুঁজে পেতে পারে। (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:১১.) কীভাবে আপনি সেই ব্যক্তিদের শক্তিশালী করতে ও সান্ত্বনা প্রদান করতে পারেন, যাদের ‘আত্মা ভগ্ন’? (হিতো. ১৭:২২) মনে রাখবেন, “নীরব থাকিবার কাল ও কথা কহিবার কাল” আছে। (উপ. ৩:৭) ডালিন নামে একজন বিধবা বোন ব্যাখ্যা করেন, শোকার্ত ব্যক্তিদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও অনুভূতির কথা প্রকাশ করা প্রয়োজন। তাই, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে-কাজটা আপনি করতে পারেন, তা হল তাদের কথায় বাধা না দিয়ে মন দিয়ে শোনা। ইউনিয়া নামে একজন বোন, যার দাদা আত্মহত্যা করেছিলেন, বলেন, “যদিও আপনি হয়তো তাদের শোকের অনুভূতি সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারবেন না, তবুও আপনি যে তাদের অনুভূতি সম্বন্ধে বুঝতে চান, সেটাই হল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
১৩. শোকের বিষয়ে আমাদের কী মনে রাখতে হবে?
১৩ আমাদের এই বিষয়টা মনে রাখতে হবে যে, আমাদের সকলের শোকের অনুভূতি এবং শোক প্রকাশ করার পদ্ধতি এক নয়। কখনো কখনো আমাদের পক্ষে এটা হিতো. ১৪:১০) এমনকী কোনো ব্যক্তি যখন নিজের অনুভূতির কথা প্রকাশ করেন, তখন তিনি আসলে কী বলতে চান, তা বোঝা অন্যদের পক্ষে সবসময় সহজ হয় না।
ব্যাখ্যা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে, আমরা আসলে কতটা যন্ত্রণা ভোগ করছি। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “অন্তঃকরণ আপনার তিক্ততা বুঝে, অপর লোক তাহার আনন্দের ভাগী হইতে পারে না।” (১৪. শোকার্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা প্রদান করার জন্য আমরা কী বলতে পারি?
১৪ কোনো শোকার্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা প্রদান করার জন্য কী বলা যায়, তা বোঝা কঠিন হতে পারে। তবে বাইবেল বলে, “জ্ঞানবানদের জিহ্বা স্বাস্থ্যস্বরূপ” বা সারিয়ে তোলার মতো। (হিতো. ১২:১৮) অন্যদের সান্ত্বনা প্রদান করার জন্য অনেকে আপনার প্রিয়জন যখন মারা যায় (ইংরেজি) শিরোনামের ব্রোশার থেকে বিভিন্ন সান্ত্বনাদায়ক বাক্য খুঁজে পেয়েছে। * সাধারণত আপনি সবচেয়ে সাহায্যকারী যে-কাজটা করতে পারেন, তা হল ‘যাহারা রোদন করে, তাহাদের সহিত রোদন করা।’ (রোমীয় ১২:১৫) গ্যাবি নামে একজন বিধবা বোন বলেন, কখনো কখনো একমাত্র যে-উপায়ে তিনি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন, তা হল কাঁদার মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন: “এই কারণে যখন কয়েক জন বান্ধবী আমার সঙ্গে কাঁদে, তখন আমি কিছুটা সান্ত্বনা লাভ করি। সেইসময় আমি আমার শোকের মধ্যে নিজেকে ততটা একা বলে মনে করি না।”
১৫. আমাদের পক্ষে যদি কোনো ব্যক্তিকে সরাসরি সান্ত্বনা প্রদান করা কঠিন বলে মনে হয়, তা হলে আমরা কী করতে পারি? (এ ছাড়া, “ কোমল সান্ত্বনাদায়ক বাক্য” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
১৫ আপনি যদি কোনো ব্যক্তিকে সরাসরি সান্ত্বনাদায়ক কিছু বলাকে কঠিন বলে মনে করেন, তা হলে আপনার পক্ষে সেই ব্যক্তিকে কার্ড, ই-মেল, টেক্সট মেসেজ অথবা চিঠির মাধ্যমে কিছু লিখে পাঠানো সহজ হতে পারে। আপনি হয়তো কেবল একটা সান্ত্বনাদায়ক শাস্ত্রপদ উদ্ধৃতি করতে পারেন, মৃত ব্যক্তির কোনো বিশেষ গুণের বিষয়ে উল্লেখ করতে পারেন অথবা আপনার স্মৃতিতে থাকা কোনো আনন্দপূর্ণ মুহূর্তের বিষয়ে উল্লেখ করতে পারেন। বোন ইউনিয়া বলেন, ‘উৎসাহজনক কোনো
সংক্ষিপ্ত বার্তা অথবা কোনো সহখ্রিস্টানের সঙ্গে সময় কাটানোর আমন্ত্রণ লাভ করা আমাকে প্রচুর সাহায্য করে। সেই অভিব্যক্তিগুলো আমাকে এইরকম অনুভব করতে সাহায্য করে যে, ভাই-বোনেরা আমাকে ভালোবাসে এবং আমার জন্য চিন্তা করে।’১৬. অন্যদের সান্ত্বনা প্রদান করার খুবই কার্যকরী একটা উপায় কী?
১৬ আমাদের প্রার্থনা আমাদের শোকার্ত ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারে। আমরা তাদের জন্য অথবা এমনকী তাদের সঙ্গে প্রার্থনা করতে পারি। যদিও আপনার পক্ষে তা করা কঠিন হতে পারে কারণ আপনি হয়তো কেঁদে ফেলতে পারেন, তবুও আপনার আন্তরিক প্রার্থনা প্রচুর সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে। বোন ডালিন স্মরণ করে বলেন, ‘কখনো কখনো বোনেরা যখন আমাকে সান্ত্বনা প্রদান করার জন্য আসতেন, তখন আমি তাদের জিজ্ঞেস করতাম, তারা আমার হয়ে প্রার্থনা করতে চান কিনা। প্রার্থনার শুরুতে প্রায়ই তাদের পক্ষে কথা বলা বেশ কঠিন হয়ে পড়ত কিন্তু প্রত্যেক বারই কয়েকটা বাক্য বলার পর তাদের গলার স্বর আরও দৃঢ় হয়ে উঠত আর তারা হৃদয় উজাড় করে প্রার্থনা করত। তাদের দৃঢ়বিশ্বাস এবং আমার প্রতি ভালোবাসা ও চিন্তা আমার বিশ্বাসকে অনেক শক্তিশালী করেছে।’
সান্ত্বনা প্রদান করে চলুন
১৭-১৯. কেন আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করে চলতে হবে?
১৭ একজন ব্যক্তির শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য আসলে কতটা সময়ের প্রয়োজন হবে, তা জানা সম্ভব নয়। যখন একজন ব্যক্তি মৃত্যুতে কোনো প্রিয়জনকে হারান, তখন প্রথম প্রথম তাকে সান্ত্বনা প্রদান করার জন্য তার পাশে অনেক বন্ধু ও আত্মীয়স্বজন থাকে। কিন্তু, কিছুসময় পর তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়ার পরও শোকার্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনার প্রয়োজন হয়। তাই, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন। “বন্ধু সর্ব্বসময়ে প্রেম করে, ভ্রাতা দুর্দ্দশার” বা দুর্দশার সময়ে সাহায্য করার “জন্য জন্মে।” (হিতো. ১৭:১৭) যতক্ষণ পর্যন্ত শোকার্ত ব্যক্তিদের আমাদের প্রয়োজন হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের তাদের আশ্বাস বা সান্ত্বনা প্রদান করে চলতে হবে।—পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৩:৭.
১৮ মনে রাখবেন, একজন ব্যক্তি যেকোনো সময়ই হঠাৎ শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়তে পারেন। এর কারণ হতে পারে কোনো বিশেষ দিন, নির্দিষ্ট কোনো সংগীত, ছবি, কাজ অথবা এমনকী কোনো গন্ধ, আওয়াজ অথবা বছরের কোনো ঋতু। মৃত্যুতে বিবাহসাথিকে হারানোর পর কোনো শোকার্ত ব্যক্তি যখন প্রথম বার কোনো কাজ একা করেন, যেমন হতে পারে সম্মেলনে কিংবা স্মরণার্থ সভায় যোগ দেন, তখন সেটা তার পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হতে পারে। একজন ভাই বর্ণনা করে বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম, আমার স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রথম বিবাহবার্ষিকীর দিনটা প্রচণ্ড বেদনাদায়ক হবে আর সেটা সহজ ছিল না। কিন্তু, কয়েক জন ভাই ও বোন আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে মিলিত হওয়ার আয়োজন করেছিলেন, যাতে আমি একাকিত্ব বোধ না করি।’
১৯ মনে রাখবেন, শোকার্ত ব্যক্তিদের যে কেবল বিশেষ উপলক্ষ্যগুলোতেই সান্ত্বনার প্রয়োজন হয়, এমন নয়। বোন ইউনিয়া ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘প্রায়ই, ভাই-বোনেরা যখন কোনো বিশেষ উপলক্ষ্য ছাড়াই সাহায্য ও সাহচর্য প্রদান করে থাকে, তখন সেটা খুবই উপকারজনক হতে পারে। সেই অপরিকল্পিত মুহূর্তগুলো খুবই মূল্যবান আর সেগুলো প্রচুর সান্ত্বনা প্রদান করে।’ এটা ঠিক যে, আমরা শোকার্ত ব্যক্তিদের সমস্ত শোকের কিংবা একাকিত্বের অনুভূতি সম্পূর্ণভাবে দূর করতে পারি না কিন্তু আমরা তাদের জন্য কিছু করার মাধ্যমে তাদের সান্ত্বনা প্রদান করতে পারি। (১ যোহন ৩:১৮) বোন গ্যাবি বলেন: “আমি সেই প্রেমময় প্রাচীনদের জন্য যিহোবার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ, যারা আমার কঠিন সময়ে প্রতিটা পদক্ষেপে আমাকে সাহায্য করেছেন। তারা সত্যিই আমাকে এটা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছেন যে, আমি যিহোবার প্রেমময় বাহুর সুরক্ষায় রয়েছি।”
২০. কেন যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো প্রচুর সান্ত্বনা প্রদান করে?
২০ এটা জানা সান্ত্বনাদায়ক যে, সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর যিহোবা পুনরুত্থানের সময় সমস্ত শোক পুরোপুরিভাবে দূর করবেন। (যোহন ৫:২৮, ২৯) ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেন, “তিনি মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করিয়াছেন, ও প্রভু সদাপ্রভু সকলের মুখ হইতে চক্ষুর জল মুছিয়া দিবেন।” (যিশা. ২৫:৮) তারপর, ‘যাহারা রোদন করে, তাহাদের সহিত রোদন করিবার’ পরিবর্তে পৃথিবীর সকলে ‘যাহারা আনন্দ করে, তাহাদের সহিত আনন্দ করিবে।’—রোমীয় ১২:১৫.
^ অনু. 8 বাইবেল এই বিষয়ে ইঙ্গিত দেয় যে, যিশুর বয়স যখন ১২ বছর, তখন যোষেফ জীবিত ছিলেন। কিন্তু, যিশুর প্রথম অলৌকিক কাজের সময় অর্থাৎ জলকে দ্রাক্ষারসে পরিণত করার সময় অথবা পরবর্তী কোনো সময়েই যোষেফের বিষয় কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। এর অর্থ হতে পারে, সেই সময়ের আগেই যোষেফ মারা গিয়েছিলেন। এ ছাড়া, যিশু যখন যাতনাদণ্ডে ছিলেন, তখন তিনি প্রেরিত যোহনকে তাঁর মায়ের যত্ন নিতে বলেছিলেন। যোষেফ যদি সেইসময় বেঁচে থাকতেন, তা হলে যিশু সম্ভবত প্রেরিত যোহনকে এই অনুরোধ করতেন না।—যোহন ১৯:২৬, ২৭.
^ অনু. 11 অন্যান্য যে-শাস্ত্রপদ থেকে অনেকে সান্ত্বনা লাভ করেছে, সেগুলো হল গীত. ২০:১, ২; ৩১:৭; ৩৮:৮, ৯, ১৫; ৫৫:২২; ১২১:১, ২; যিশা. ৫৭:১৫; ৬৬:১৩; ফিলি. ৪:১৩ এবং ১ পিতর ৫:৭.
^ অনু. 14 এ ছাড়া, ২০১৬ সালের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার নং ৩ সংখ্যায় দেওয়া “শোকার্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা দিন” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।