সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“সদাপ্রভুর প্রশংসা কর”—কেন?

“সদাপ্রভুর প্রশংসা কর”—কেন?

“তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর, কেননা আমাদের ঈশ্বরের প্রশংসা গান করা উত্তম; তাহা মনোহর; প্রশংসার উপযুক্ত।”—গীত. ১৪৭:১.

গান সংখ্যা: ৯, ২৩

১-৩. (ক) গীতসংহিতার ১৪৭ গীত সম্ভবত কোন সময় রচনা করা হয়েছিল? (খ) গীতসংহিতার ১৪৭ গীত অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা কী শিখতে পারি?

 প্রায়ই আমরা সেইসময় কোনো ব্যক্তির প্রশংসা করি, যখন আমরা তার কথা অথবা কাজের দ্বারা অভিভূত হই। যিহোবা ঈশ্বরের প্রশংসা করার জন্য আমরা কতই-না বেশি অনুপ্রাণিত হই! আমরা যিহোবার অসীম শক্তির জন্য তাঁর প্রশংসা করি, যা আমরা তাঁর অপূর্ব সৃষ্টির মধ্যে দেখতে পাই। এ ছাড়া, আমাদের প্রতি দেখানো তাঁর গভীর ভালোবাসার জন্যও আমরা তাঁর প্রশংসা করি, যা আমরা তাঁর নিজ পুত্রকে মুক্তির মূল্যরূপে দান করার মধ্যে দেখতে পাই।

আমরা যখন গীতসংহিতার ১৪৭ গীত পড়ি, তখন এই বিষয়টা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, যিহোবার প্রশংসা করার বিষয়ে গীতরচকের প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল। এ ছাড়া, তিনি অন্যদেরও তার সঙ্গে একত্রিত হয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১৪৭:১, ৭, ১২.

আমরা জানি না, গীতসংহিতার ১৪৭ গীত কে রচনা করেছিলেন। কিন্তু, এই গীতরচক সম্ভবত সেইসময় বেঁচে ছিলেন, যখন ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার অনুগ্রহে বাবিলের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার পর যিরূশালেমে ফিরে এসেছিল। (গীত. ১৪৭:২) গীতরচক যিহোবার প্রশংসা করেছিলেন কারণ তাঁর লোকেরা পুনরায় নিজেদের দেশে তাঁর উপাসনা করার সুযোগ পেয়েছিল। এরপর, গীতরচক যিহোবার প্রশংসা করার আরও কারণ তুলে ধরেছিলেন। সেই কারণগুলো কী? আর উচ্চস্বরে “সদাপ্রভুর প্রশংসা কর” বলে ওঠার জন্য আপনার কাছে কোন কোন কারণ রয়েছে?—গীত. ১৪৭:১.

যিহোবা ভগ্নচিত্তদের সুস্থ করেন

৪. রাজা কোরস যখন ইস্রায়েলীয়দের মুক্ত করেছিলেন, তখন তারা নিশ্চয়ই কেমন অনুভব করেছিল এবং কেন?

কল্পনা করুন, ইস্রায়েলীয়রা বাবিলে নির্বাসিত হিসেবে থাকার সময় কেমন অনুভব করেছিল। যারা তাদের সেখানে এনেছিল, তারা তাদের নিয়ে ঠাট্টা করেছিল এবং বলেছিল: “আমাদের কাছে সিয়োনের একটা গীত গাও।” কিন্তু, যিহুদিরা এতটাই দুঃখিত ছিল যে, তাদের গান গাওয়ার ইচ্ছা হয়নি। তাদের পরম আনন্দের উৎস যিরূশালেমকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। (গীত. ১৩৭:১-৩, ৬) তাদের হৃদয় দুঃখে ভেঙে গিয়েছিল এবং তাদের সান্ত্বনার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, ঠিক যেমন ঈশ্বরের বাক্যে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল, যিহোবা তাঁর লোকেদের সাহায্য করেছিলেন। কীভাবে? পারস্যরাজ কোরস বাবিলকে পরাজিত করেছিলেন এবং যিহোবার বিষয়ে বলেছিলেন: “তিনি . . . যিরূশালেমে তাঁহার জন্য এক গৃহ নির্ম্মাণ করিবার ভার আমাকে দিয়াছেন।” এ ছাড়া, কোরস ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে, তাঁহার সমস্ত প্রজার মধ্যে, যে কেহ হউক, তাহার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহার সহবর্ত্তী হউন, সে সেখানে যাউক।” (২ বংশা. ৩৬:২৩) এই সমস্ত কিছু বাবিলে থাকা ইস্রায়েলীয়দের কতই-না সান্ত্বনা প্রদান করেছিল!

৫. আমাদের সুস্থ করার বিষয়ে যিহোবার ক্ষমতা সম্বন্ধে গীতরচক কী বলেছিলেন?

যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের কেবল একটা জাতি হিসেবে নয় কিন্তু সেইসঙ্গে ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে তাদের সকলকেই সান্ত্বনা প্রদান করেছিলেন। বর্তমানে, যিহোবা আমাদের জন্যও একই বিষয় করেন। গীতরচক লিখেছিলেন, ঈশ্বর “ভগ্নচিত্তদিগকে সুস্থ করেন, তাহাদের ক্ষত সকল বাঁধিয়া দেন।” (গীত. ১৪৭:৩) আমরা যখন অসুস্থ অথবা বিষণ্ণ হয়ে পড়ি, তখন আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন। যিহোবা আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করার এবং আমাদের আবেগগত ক্ষত সারিয়ে তোলার জন্য উৎসুক। (গীত. ৩৪:১৮; যিশা. ৫৭:১৫) তিনি আমাদের জ্ঞান বা প্রজ্ঞা ও শক্তি দেন, যাতে আমরা আমাদের যেকোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি।—যাকোব ১:৫.

৬. কীভাবে আমরা গীতসংহিতা ১৪৭:৪ পদে প্রাপ্ত গীতরচকের কথাগুলো থেকে উপকার লাভ করতে পারি? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

এরপর, গীতরচক আকাশের দিকে তাকিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, যিহোবা “তারাগণের সংখ্যা গণনা করেন” এবং “সকলের নাম ধরিয়া তাহাদিগকে ডাকেন।” (গীত. ১৪৭:৪) গীতরচক আকাশে প্রচুর তারা দেখতে পেয়েছিলেন কিন্তু তার কোনো ধারণা ছিল না যে, সেগুলোর সংখ্যা আসলে কত। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা জানেন, আমাদের ছায়াপথে কোটি কোটি তারা রয়েছে। আর নিখিলবিশ্বে হয়তো কয়েক লক্ষ কোটি ছায়াপথ রয়েছে! মানুষ এই সমস্ত তারার সংখ্যা গণনা করতে পারে না কিন্তু সৃষ্টিকর্তা তা করতে পারেন। সত্যি বলতে কী, তিনি প্রতিটা তারাকে এতটাই ভালোভাবে জানেন যে, সেগুলোর প্রত্যেকটাকেই তিনি একটা করে নাম দিয়েছেন। (১ করি. ১৫:৪১) যে-ঈশ্বর প্রত্যেকটা তারার অবস্থান জানেন, তিনি আপনাকেও জানেন। তিনি সবসময় একেবারে সঠিকভাবে জানেন, আপনার অবস্থান কী, আপনি কেমন অনুভব করেন এবং আপনার কীসের প্রয়োজন!

৭, ৮. (ক) যিহোবা আমাদের বিষয়ে কী বোঝেন? (খ) যিহোবার করুণার বিষয়ে একটা উদাহরণ তুলে ধরুন।

আপনি কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, যিহোবা তা বোঝেন এবং আপনার সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করার জন্য তাঁর কাছে শক্তি রয়েছে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৪৭:৫.) আপনি হয়তো মনে করতে পারেন, আপনার পরিস্থিতি খুবই জটিল এবং আপনি সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবেন না। ঈশ্বর আমাদের সীমাবদ্ধতা বোঝেন আর “আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।” (গীত. ১০৩:১৪) যেহেতু আমরা অসিদ্ধ, তাই আমরা বার বার একই ভুল করে ফেলি আর এইজন্য আমরা হয়তো নিরুৎসাহিত বোধ করি। আমরা হয়তো আমাদের কোনো নির্দিষ্ট কথা, মন্দ আকাঙ্ক্ষা অথবা ঈর্ষার অনুভূতির কারণে খুবই অনুশোচনা বোধ করি! এটা ঠিক যে, যিহোবার কোনো দুর্বলতা নেই কিন্তু তিনি আমাদের অনুভূতি সম্বন্ধে পুরোপুরি বোঝেন।—যিশা. ৪০:২৮.

আপনি কি কখনো ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করেছেন যে, যিহোবার পরাক্রমী হাত আপনাকে পরীক্ষা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করছে? (যিশা. ৪১:১০, ১৩) কিয়োকো নামে একজন অগ্রগামী বোনের এইরকমই এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। যিহোবার সেবায় একটা নতুন কার্যভারের এলাকায় যাওয়ার পর তিনি খুবই নিরুৎসাহিত হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, কীভাবে কিয়োকো বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবা তার সমস্যার বিষয়টা বোঝেন? তার নতুন মণ্ডলীতে এমন অনেক ব্যক্তি ছিল, যারা তার অনুভূতি বুঝতে পেরেছিল। তিনি এমন অনুভব করেছিলেন যেন যিহোবা তাকে বলছেন: “আমি তোমাকে ভালোবাসি আর এটার কারণ শুধু এই নয় যে, তুমি একজন অগ্রগামী কিন্তু এটার কারণ হল, তুমি আমার মেয়ে আর তুমি আমার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছ। আমি চাই যেন তুমি আমার একজন সাক্ষি হিসেবে জীবন উপভোগ করো!” কীভাবে যিহোবা আপনাকে দেখিয়েছেন, “তাঁহার বুদ্ধির ইয়ত্তা নাই” বা সীমা নেই?

যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেন

৯, ১০. যিহোবা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন উপায়ে সাহায্য করবেন? একটা উদাহরণ দিন।

আমাদের সকলেরই খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রয়োজন রয়েছে। হতে পারে আপনি এই ভেবে দুশ্চিন্তা করেন যে, আপনার কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য থাকবে না। কিন্তু, যিহোবা পৃথিবীকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যাতে সবার জন্য ও এমনকী যে-‘দাঁড়কাকের শাবকরা’ খাবারের জন্য “ডাকিয়া উঠে,” তাদের জন্যও পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য উৎপন্ন হয়। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৪৭:৮, ৯.) যিহোবা যদি দাঁড়কাকদের জন্য খাবার জোগাতে পারেন, তা হলে আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি, তিনি আমাদের বস্তুগত প্রয়োজনগুলোও জোগাবেন।—গীত. ৩৭:২৫.

১০ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যিহোবা আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় জুগিয়ে দেন এবং তিনি আমাদের “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি,” তা প্রদান করেন। (ফিলি. ৪:৬, ৭) মুটসুও নামে একজন ভাই ও তার স্ত্রী দেখেছিলেন যে, কীভাবে যিহোবা তাদের সাহায্য করেছেন। ২০১১ সালে যখন একটা সুনামি জাপানে আঘাত হেনেছিল, তখন তারা তাদের ঘরের ছাদে ওঠার মাধ্যমে কোনোরকমে নিজেদের জীবন রক্ষা করেছিলেন। সেই দিন তারা বলতে গেলে তাদের সর্বস্ব হারিয়েছিলেন। তাদের বাড়ির তৃতীয়-তলার একটা অন্ধকার ও ঠাণ্ডা ঘরে তাদের রাত কাটাতে হয়েছিল। সকালে তারা এমন কিছু খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন, যেটা থেকে তারা হয়তো কিছুটা উৎসাহ লাভ করবেন। তারা একমাত্র যে-জিনিসটা খুঁজে পেয়েছিলেন, সেটা হল যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ২০০৬ (ইংরেজি)। সেই বইয়ের পাতাগুলো ওলটানোর সময় ভাই মুটসুও “এযাবৎ রেকর্ডকৃত সবচেয়ে ভয়াবহ কয়েকটা সুনামি” শিরোনামটা দেখতে পেয়েছিলেন। সেই বিভাগে ২০০৪ সালে ঘটা সুমাত্রার একটা ভূমিকম্প সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছিল, যেটার ফলে রেকর্ডকৃত সবচেয়ে মারাত্মক কয়েকটা সুনামি আঘাত হেনেছিল। ভাই মুটসুও ও তার স্ত্রী তাদের ভাই-বোনদের অভিজ্ঞতাগুলো পড়ার সময় কেঁদে ফেলেছিলেন। তারা অনুভব করেছিলেন যে, যিহোবা তাদের একেবারে প্রয়োজনীয় উৎসাহ প্রদান করছেন। এ ছাড়া, যিহোবা অন্যান্য উপায়েও তাদের যত্ন নিয়েছিলেন। জাপানের অন্যান্য অংশে থাকা তাদের ভাইয়েরা তাদের জন্য খাদ্য ও বস্ত্র জুগিয়েছিল। কিন্তু, যে-বিষয়টা তাদের সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী করেছিল, সেটা হল তাদের মণ্ডলীতে শাখা কমিটির ভাইদের পরিদর্শন। ভাই মুটসুও বলেন: “আমার মনে হয়েছিল যেন যিহোবা আমাদের প্রত্যেকের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং আমাদের যত্ন নিচ্ছেন। আমরা কতই-না সান্ত্বনা লাভ করেছিলাম।” ঈশ্বর প্রথমে আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেন আর তারপর আমাদের বস্তুগত প্রয়োজনগুলোর যত্ন নেন।

ঈশ্বরের সাহায্য থেকে উপকার লাভ করুন

১১. ঈশ্বরের সাহায্য থেকে উপকার লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১১ যিহোবা “নম্রদিগকে সুস্থির রাখেন।” তিনি আমাদের ভালোবাসেন এবং আমাদের সাহায্য করার জন্য সবসময় প্রস্তুত। (গীত. ১৪৭:৬ক) কীভাবে আমরা তাঁর সাহায্য থেকে উপকার লাভ করতে পারি? তাঁর সঙ্গে আমাদের এক দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। তা করার জন্য আমাদের নম্র হতে হবে। (সফ. ২:৩) নম্র ব্যক্তিরা যেকোনো অবিচার ও কষ্ট দূর করার জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করে। আর যিহোবা তাদের অনুমোদন করেন।

১২, ১৩. (ক) ঈশ্বরের সাহায্য থেকে উপকার লাভ করার জন্য আমাদের কী এড়িয়ে চলা উচিত? (খ) যিহোবা কাদের উপর খুশি হন?

১২ অন্যদিকে, ঈশ্বর “দুষ্টদিগকে ভূমিতে পাড়িয়া ফেলেন।” (গীত. ১৪৭:৬খ) আমরা চাই না, আমাদের প্রতি এমনটা হোক! আমরা চাই যেন ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁর অনুগত প্রেম দেখান। তাই, আমাদের অবশ্যই সেই বিষয়গুলোকে ঘৃণা করতে হবে, যেগুলোকে তিনি ঘৃণা করেন। (গীত. ৯৭:১০) উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের অবশ্যই যৌন অনৈতিকতাকে ঘৃণা করতে হবে। এর অর্থ হল, আমাদের এমন যেকোনো কিছু এড়িয়ে চলতে হবে, যা আমাদের যৌন অনৈতিকতার দিকে পরিচালিত করতে পারে আর এর অন্তর্ভুক্ত হল পর্নোগ্রাফি। (গীত. ১১৯:৩৭; মথি ৫:২৮) এটা এক কঠিন লড়াই হতে পারে কিন্তু এই বিষয়ে প্রচেষ্টা করা সার্থক হবে কারণ আমরা যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করব।

১৩ আমরা নিজেদের শক্তিতে এই লড়াই চালিয়ে যেতে পারব না। আমাদের অবশ্যই যিহোবার উপর নির্ভর করতে হবে। লোকেরা সাহায্যের জন্য যে-বিষয়গুলোর শরণাপন্ন হয়, আমরা যদি সেগুলোর উপর নির্ভর করি, তা হলে যিহোবা কি খুশি হবেন? না, যিহোবা ‘অশ্বের বলে আনন্দ করেন না।’ আমাদের কি নিজেদের অথবা অন্যদের শক্তির উপর নির্ভর করা উচিত? যিহোবা “পুরুষের চরণেও [“পায়ের শক্তিতেও,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] সন্তুষ্ট হন না।” (গীত. ১৪৭:১০) এর পরিবর্তে, আমাদের সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে ক্রমাগত প্রার্থনা করতে হবে এবং আমাদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য তাঁর কাছে বিনতি করতে হবে। যিহোবা কখনোই আমাদের এই ধরনের প্রার্থনা শুনে বিরক্ত হবেন না। “সদাপ্রভু তাহাদিগেতে সন্তুষ্ট, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, যাহারা তাঁহার দয়ার [“অনুগত প্রেমের,” NW ] অপেক্ষায় থাকে।” (গীত. ১৪৭:১১) যেহেতু যিহোবা হলেন অনুগত এবং তিনি আমাদের ভালোবাসেন, তাই আমরা জানি যে, তিনি আমাদের মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলোর উপর জয় লাভ করার জন্য ক্রমাগত সাহায্য করবেন।

১৪. গীতরচক কোন বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন?

১৪ যিহোবা আমাদের এই আশ্বাস দেন যে, আমাদের সমস্যার সময় তিনি আমাদের সাহায্য করবেন। ইস্রায়েলীয়রা যিরূশালেমে ফিরে যাওয়ার পর যিহোবা কীভাবে তাদের সাহায্য করেছিলেন, সেই বিষয়টা নিয়ে গীতরচক চিন্তা করেছিলেন। তিনি গেয়েছিলেন: “তিনি তোমার দ্বারের অর্গল সকল দৃঢ় করিয়া দিয়াছেন, তিনি তোমার মধ্যে তোমার সন্তানগণকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন। তিনি তোমার পরিসীমা শান্তিময় করেন।” (গীত. ১৪৭:১৩, ১৪) যিহোবা যে নগরের দরজাগুলো দৃঢ় করবেন, এটা জানা গীতরচককে সুরক্ষিত বোধ করতে সাহায্য করেছিল। এই বিষয়টা তাকে আশ্বস্ত করেছিল যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের সুরক্ষিত রাখবেন।

বিভিন্ন পরীক্ষার কারণে আমরা যখন অত্যন্ত উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়ি, তখন ঈশ্বরের বাক্য কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে? (১৫-১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫-১৭. (ক) আমাদের সমস্যার বিষয়ে আমরা হয়তো কখনো কখনো কেমন বোধ করতে পারি কিন্তু কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করার জন্য তাঁর বাক্যকে ব্যবহার করেন? (খ) কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য আমাদের সাহায্য করার জন্য “বেগে ধাবমান হয়,” সেই বিষয়ে একটা উদাহরণ দিন।

১৫ আপনি হয়তো আপনার সমস্যাগুলো নিয়ে উদ্‌বিগ্ন হতে পারেন কিন্তু যিহোবা আপনাকে সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রজ্ঞা দেবেন। গীতরচক বলেছিলেন, ঈশ্বর “পৃথিবীতে আপন আজ্ঞা পাঠান, তাঁহার বাক্য বেগে ধাবমান হয়।” এরপর, গীতরচক তুষার, নীহার বা বরফ এবং হিমানী বা শিলার বিষয়ে উল্লেখ করে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তাঁহার শীতের সম্মুখে কে দাঁড়াইতে পারে?” তারপর তিনি বলেছিলেন, যিহোবা “আপন বাক্য পাঠাইয়া সে সমস্ত দ্রবীভূত করেন” বা গলিয়ে ফেলেন। (গীত. ১৪৭:১৫-১৮) আমাদের ঈশ্বর, যিনি সমস্ত কিছু জানেন আর সমস্ত কিছু করতে পারেন এবং শিলাবৃষ্টি ও তুষারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তিনি নিশ্চিতভাবেই আপনাকে যেকোনো সমস্যার উপর জয় লাভ করার জন্য সাহায্য করবেন।

১৬ বর্তমানে, যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে আমাদের নির্দেশনা দেন। গীতরচক বলেছিলেন, যিহোবার বাক্য আমাদের সাহায্য করার জন্য “বেগে ধাবমান হয়।” ঈশ্বর আমাদের একেবারে সঠিক উপায়ে ও সঠিক সময়ে নির্দেশনা দেন। একটু চিন্তা করুন, কীভাবে আপনি বাইবেল, ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ প্রকাশনাদি, JW ব্রডকাস্টিং, jw.org, প্রাচীনদের এবং আপনার ভাই ও বোনদের মাধ্যমে উপকার লাভ করেন। (মথি ২৪:৪৫) আপনি কি কখনো আপনার জীবনে দেখেছেন যে, যিহোবা আপনাকে দ্রুত নির্দেশনা দিয়েছেন?

১৭ সিমোন নামে একজন বোনের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করুন, যিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য তাকে সাহায্য করেছে। তিনি নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করেছিলেন এবং ভেবেছিলেন যে, যিহোবা তার উপর খুশি নন। কিন্তু, তিনি যখন নিরুৎসাহিত হয়ে যেতেন, তখন তিনি ক্রমাগত যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করতেন। এ ছাড়া, তিনি ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়নও চালিয়ে গিয়েছিলেন। বোন সিমোন বলেছিলেন: “আমি কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি, যেখানে আমি যিহোবার শক্তি ও নির্দেশনা অনুভব করিনি।” এই বিষয়টা তাকে আরও ইতিবাচক এক মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।

১৮. কেন আপনি মনে করেন যে, যিহোবা আপনার নিকটবর্তী এবং ‘সদাপ্রভুর প্রশংসা করিবার’ জন্য আপনার কোন কোন কারণ রয়েছে?

১৮ গীতরচক জানতেন, যিহোবা পৃথিবীর সমস্ত জাতির মধ্যে থেকে প্রাচীন ইস্রায়েল জাতিকে তাঁর লোক হওয়ার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। এটাই ছিল একমাত্র জাতি, যার লোকেরা ঈশ্বরের “বাক্য” ও তাঁর “বিধি” লাভ করেছিল। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৪৭:১৯, ২০.) বর্তমানে, ঈশ্বরের নামে পরিচিত হওয়ার বিশেষ সুযোগ আমাদের রয়েছে। আমরা এই বিষয়ে খুবই কৃতজ্ঞ যে, আমরা তাঁকে জানি, নির্দেশনা লাভ করার জন্য আমাদের কাছে তাঁর বাক্য রয়েছে এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। গীতসংহিতার ১৪৭ গীতের রচয়িতার মতো আপনারও ‘সদাপ্রভুর প্রশংসা করিবার’ এবং অন্যদেরও একই বিষয় করার জন্য উৎসাহিত করার অনেক কারণ রয়েছে।