সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরীক্ষার মধ্যেও আপনি বিনয়ী মনোভাব বজায় রাখতে পারেন

পরীক্ষার মধ্যেও আপনি বিনয়ী মনোভাব বজায় রাখতে পারেন

‘নম্রভাবে [“বিনয়ের সঙ্গে,” NW] তোমার ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন কর।’—মীখা ৬:৮.

গান সংখ্যা: ৪৮, 

১-৩. যিহূদার এক ভাববাদী কী করতে ব্যর্থ হন এবং এর পরিণতি কী হয়? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

 রাজা যারবিয়াম বৈথেল নগরে মিথ্যা উপাসনার জন্য এক বেদি নির্মাণ করেন। যিহোবা যারবিয়ামকে এক বিচারের বার্তা জানানোর জন্য যিহূদার একজন ভাববাদীকে পাঠান। সেই ভাববাদী নম্রভাবে যিহোবার বাধ্য হয়ে রাজাকে ওই বার্তা জানান। বার্তা শুনে যদিও রাজা রেগে যান কিন্তু যিহোবা ভাববাদীকে সুরক্ষা করেন।—১ রাজা. ১৩:১-১০.

যিহোবা ভাববাদীকে আদেশ দিয়েছিলেন, যেন তিনি ইস্রায়েলে ভোজন বা পান না করেন এবং ভিন্ন পথ দিয়ে বাড়ি ফিরে যান। ফিরে যাওয়ার পথে ভাববাদীর সঙ্গে একজন বৃদ্ধ লোকের দেখা হয়। সেই বৃদ্ধ তাকে এই মিথ্যা বলেন যে, তিনি যিহোবার কাছ থেকে এক বার্তা পেয়েছেন। ভাববাদীকে তিনি নিজের বাড়িতে এসে ভোজন ও পান করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। ভাববাদী যিহোবার অবাধ্য হন এবং সেই বৃদ্ধের সঙ্গে তার বাড়িতে যান। যিহোবা এতে খুশি হননি। বাড়ি ফেরার পথে একটা সিংহ ভাববাদীকে আক্রমণ করে হত্যা করে।—১ রাজা. ১৩:১১-২৪.

আমরা জানি না যে, কেন ভাববাদী যিহোবার কথা না শুনে সেই বৃদ্ধ ব্যক্তির কথা শুনেছিলেন। কিন্তু, আমরা এটা জানি যে, তিনি ক্রমাগত যিহোবার সঙ্গে ‘বিনয়ের সঙ্গে গমনাগমন’ করেননি। (পড়ুন, মীখা ৬:৮.) বাইবেল অনুযায়ী, যিহোবার সঙ্গে গমনাগমন করার অন্তর্ভুক্ত হল, তাঁর উপর আস্থা রাখা, তাঁর নির্দেশনার উপর নির্ভর করা ও তাঁর বাধ্য থাকা। একজন বিনয়ী ব্যক্তি জানেন, তাকে অবিরত প্রার্থনা করতে হবে। সেই ভাববাদী যদি বিনয়ী হতেন, তা হলে তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে জানার চেষ্টা করতেন যে, তাঁর নির্দেশনা পরিবর্তিত হয়েছে কি না। কখনো কখনো আমাদেরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং আমরা হয়তো স্পষ্ট বুঝতে পারি না যে, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান। কিন্তু, আমরা যদি বিনয়ী হই, তা হলে আমরা যিহোবার কাছে নির্দেশনা চাইব, যেন তিনি আমাদের গুরুতর ভুল করা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করেন।

৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখতে পারব?

আগের প্রবন্ধে আমরা শিখেছি যে, বিনয়ী হওয়ার অর্থ কী এবং কেন এটা আজকে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, কীভাবে আমরা আরও বিনয়ী হতে পারি? আর সেইসঙ্গে, কোন কোন পরিস্থিতিতে আমাদের ‘নম্রতা [‘বিনয়ভাব,’ ইজি-টু-রিড ভারশন]’ পরীক্ষিত হতে পারে অর্থাৎ এটা প্রকাশ পেতে পারে যে, আমরা সত্যিই বিনয়ী কি না? আসুন, আমরা তিনটে পরিস্থিতি বিবেচনা করি।—হিতো. ১১:২.

যখন আমাদের পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়

৫, ৬. কীভাবে বর্সিল্লয় দেখিয়েছিলেন যে, তিনি একজন বিনয়ী ব্যক্তি?

আমাদের পরিস্থিতি বা কার্যভার যখন পরিবর্তিত হয়, তখন আমরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই, তা প্রকাশ করে যে, আমরা সত্যিই বিনয়ী কি না। আমরা রাজা দায়ূদের অনুগত বন্ধু বর্সিল্লয়ের উদাহরণ থেকে শিখতে পারি। বর্সিল্লয়ের বয়স যখন ৮০ বছর, তখন দায়ূদ তাকে রাজসভায় এসে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যদিও এটা এক বড়ো সম্মানের বিষয় ছিল, কিন্তু বর্সিল্লয় বলেছিলেন, এই কার্যভার কিম্‌হম নামে এক যুবককে দেওয়া আরও উত্তম হবে, যিনি সম্ভবত তার ছেলে ছিলেন।—২ শমূ. ১৯:৩১-৩৭.

কেন বর্সিল্লয় সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি? তিনি কি দায়িত্ব এড়াতে অথবা এক সহজ জীবন কাটাতে চেয়েছিলেন? না। বরং, বর্সিল্লয় একজন বিনয়ী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, তার পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই আর তাই তিনি নিজের সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েছিলেন। (পড়ুন, গালাতীয় ৬:৪, ৫.) বর্সিল্লয়ের মতো আমাদেরও বিনয়ী হতে হবে। আমরা যা চাই, সেটার উপর অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়ার অথবা নিজেদেরকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করার পরিবর্তে, আমরা যিহোবাকে সর্বোত্তমটা দেওয়ার উপর মনোযোগ দিতে চাই। এটা বিশেষ কার্যভার লাভ করার অথবা সুপরিচিত হওয়ার চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ। (গালা. ৫:২৬) আমরা যদি বিনয়ী হই, তা হলে আমরা যিহোবাকে সম্মান করার এবং অন্যদের সাহায্য করার জন্য আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে একত্রে কাজ করব।—১ করি. ১০:৩১.

৭, ৮. কীভাবে বিনয়ী মনোভাব আমাদের নিজেদের উপর নির্ভর না করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

আমাদের যদি আরও দায়িত্ব অথবা কর্তৃত্ব দেওয়া হয়, তা হলে বিনয়ী মনোভাব বজায় রাখা আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা নহিমিয়ের উদাহরণ থেকে শিখতে পারি। নহিমিয় যখন জানতে পেরেছিলেন যে, যিরূশালেমে লোকেরা অনেক সমস্যার মধ্যে রয়েছে, তখন তিনি সাহায্য চেয়ে যিহোবার কাছে বিনতি করেছিলেন। (নহি. ১:৪, ১১) যিহোবা নহিমিয়ের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন। রাজা অর্তক্ষস্ত নহিমিয়কে সেই এলাকার শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। যদিও নহিমিয় ক্ষমতাবান ও ধনী ছিলেন কিন্তু তিনি কখনো নিজের উপর নির্ভর করেননি। তিনি যিহোবার কাছে নির্দেশনা চেয়েছিলেন এবং নিয়মিতভাবে ব্যবস্থা পাঠ করেছিলেন। (নহি. ৮:১, ৮, ৯) যদিও নহিমিয়ের কর্তৃত্বের অধীনে অনেক লোক ছিল কিন্তু তিনি কখনো সেই কর্তৃত্ব নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেননি অথবা লোকেদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেননি।—নহি. ৫:১৪-১৯.

নহিমিয়ের মতো, আমরাও যদি আরও দায়িত্ব লাভ করি কিংবা আমাদের কার্যভার পরিবর্তিত হয়, তা হলে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে, আমরা যেন বিনয়ী মনোভাব বজায় রাখি। আমরা কেবল নিজেদের ক্ষমতা অথবা অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করতে চাই না। কীভাবে একজন ব্যক্তি নিজের উপর নির্ভর করা শুরু করতে পারেন? উদাহরণ স্বরূপ, একজন প্রাচীন হয়তো প্রথমে প্রার্থনা না করেই মণ্ডলীর কাজ শুরু করেন। অথবা একজন ভাই কিংবা বোন হয়তো প্রথমে সিদ্ধান্ত নেন এবং এরপর সেই সিদ্ধান্তে আশীর্বাদ করার জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন। কিন্তু, একজন বিনয়ী ব্যক্তি নিজের উপর নির্ভর করেন না, এমনকী সেই কাজ করার সময়ও, যা তিনি পূর্বে একাধিক বার করেছেন। তিনি সবসময় মনে রাখেন যে, তার তুলনায় যিহোবার ক্ষমতা অসীম। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.) বর্তমান জগতে অনেকে স্বার্থপর মনোভাব দেখায় এবং তারা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে চায়। কিন্তু, যিহোবার দাসেরা এমন নয়। আমরা এইরকম মনে করি না যে, দায়িত্ব আছে বলে আমরা পরিবারে অথবা মণ্ডলীতে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এর পরিবর্তে, আমরা ঈশ্বরের ব্যবস্থায় নিজেদের ভূমিকা স্মরণে রাখি এবং আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে একত্রে কাজ করি।—১ তীম. ৩:১৫.

যখন অন্যেরা আমাদের সমালোচনা অথবা প্রশংসা করে

৯, ১০. অন্যেরা যখন অন্যায্যভাবে আমাদের সমালোচনা করে, তখন বিনয়ী মনোভাব কীভাবে আমাদের সাহায্য করে?

কেউ যখন অন্যায্যভাবে আমাদের সমালোচনা করে, তখন আমরা হতাশ হয়ে পড়তে পারি। হান্নার ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছিল। যদিও তার স্বামী তাকে খুবই ভালোবাসতেন কিন্তু তিনি সুখী ছিলেন না। তার সতীন পনিন্না সবসময় তাকে নিয়ে উপহাস করতেন। হান্না সন্তান চাইতেন কিন্তু তিনি বন্ধ্যা ছিলেন। একদিন হান্না যখন খুবই দুঃখিত ছিলেন, তখন তিনি প্রার্থনা করার জন্য আবাসে যান। মহাযাজক এলি তাকে কাঁদতে দেখে ভুলভাবে মাতাল বলে অভিযুক্ত করেন! হান্না এতে রেগে যেতে পারতেন। কিন্তু তা না করে, তিনি এলির সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে, হান্নার এক প্রার্থনায় যিহোবার প্রতি তাঁর বিশ্বাস এবং ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছিল।—১ শমূ. ১:৫-৭, ১২-১৬; ২:১-১০.

১০ বিনয়ী মনোভাব আমাদের ক্রমাগত ‘উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় করিতে’ সাহায্য করে। (রোমীয় ১২:২১) শয়তানের বিধিব্যবস্থা দুরাচার বা মন্দতায় পরিপূর্ণ। তাই, আমাদের সঙ্গে যখন অন্যায্যভাবে আচরণ করা হয়, তখন আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়। যদিও এর ফলে আমাদের মধ্যে রাগ উৎপন্ন হতে পারে, কিন্তু এই অনুভূতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে। (গীত. ৩৭:১) এটা বিশেষভাবে সেই সময় আরও কষ্টকর হতে পারে, যখন মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সঙ্গে আমাদের সমস্যা হয়। যদি এইরকমটা হয়, তা হলে আমরা যিশুকে অনুকরণ করতে চাই। বাইবেল বলে: “তিনি নিন্দিত হইলে প্রতিনিন্দা করিতেন না।” এর পরিবর্তে, তিনি ঈশ্বরের ‘উপর ভার রাখিতেন, যিনি ন্যায় অনুসারে বিচার করেন।’ (১ পিতর ২:২৩) যিশু নম্র ছিলেন এবং তিনি জানতেন, যিহোবা যেকোনো অবিচার দূর করে দেবেন। (রোমীয় ১২:১৯) আমরাও চাই যেন আমরা নম্র মনোভাব দেখাই ও সেইসঙ্গে ‘মন্দের পরিশোধে মন্দ না করি।’—১ পিতর ৩:৮, ৯.

১১, ১২. (ক) অন্যেরা যখন আমাদের প্রশংসা অথবা তোষামোদ করে, তখন কীভাবে আমরা বিনয়ভাব দেখাতে পারি? (খ) কীভাবে আমরা আমাদের পোশাক-আশাক ও আচরণের মাধ্যমে বিনয়ভাব দেখাতে পারি?

১১ এ ছাড়া, সেই সময়ও আমাদের বিনয়ভাব পরীক্ষিত হতে পারে, যখন লোকেরা আমাদের প্রশংসা অথবা তোষামোদ করে। ইষ্টের অনেক প্রশংসা লাভ করেছিলেন এবং তাকে তোষামোদও করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন পারস্যের সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের মধ্যে একজন। অন্যান্য যুবতীর মতো এক বছর ধরে বিশেষ সৌন্দর্য্যবর্ধক দ্রব্যাদি দিয়ে তারও রূপচর্চা করা হয়েছিল, যাতে তারা রাজার দৃষ্টিতে বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন। এরপর রাজা ইষ্টেরকে রানি হিসেবে মনোনীত করেন। কিন্তু, এত মনোযোগ পাওয়া সত্ত্বেও ইষ্টেরের মনোভাব পরিবর্তিত হয়নি। তিনি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাননি। তিনি বিনয়ী, সদয় ও সম্মানপূর্ণ মনোভাব বজায় রেখেছিলেন।—ইষ্টের ২:৯, ১২, ১৫, ১৭.

আমাদের পোশাক-আশাক কি দেখায় যে, আমরা যিহোবা ও সেইসঙ্গে অন্যদের সম্মান করি, না কি এটা প্রকাশ করে যে, আমরা বিনয়ী নই? (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২ আমরা যদি বিনয়ী হই, তা হলে আমরা এমন পোশাক-আশাক পরব এবং এমন উপায়ে আচরণ করব, যা অন্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে ও সেইসঙ্গে নিজেদের জন্য সম্মান নিয়ে আসবে। শ্লাঘা করার অথবা অন্যদের প্রভাবিত করতে চাওয়ার পরিবর্তে আমরা ‘মৃদু ও প্রশান্ত আত্মা’ বজায় রাখার চেষ্টা করব। (পড়ুন, ১ পিতর ৩:৩, ৪; যির. ৯:২৩, ২৪) নিজেদের প্রতি আমাদের মনোভাব একসময় আমাদের কথায় ও কাজে প্রকাশ পাবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা হয়তো নিজেদের অন্যদের সামনে শ্রেষ্ঠ বলে তুলে ধরতে পারি, যদি আমরা বিশেষ সুযোগের অধিকারী হয়ে থাকি বা ভিতরের খবরাখবর জানি অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইদের সঙ্গে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক থাকে। কিংবা প্রশংসা লাভ করার জন্য আমরা হয়তো এমনটা দেখাতে পারি যে, কোনো বিশেষ কাজ আমরা নিজেরা করেছি, যদিও আসলে অন্যেরা আমাদের সাহায্য করেছে। যিশুর কথা চিন্তা করুন। তিনি নিজের জ্ঞান দ্বারা অন্যদের অভিভূত করতে পারতেন। কিন্তু, তা না করে তিনি প্রায়ই ঈশ্বরের বাক্য থেকে উদ্ধৃতি করতেন। তিনি চাননি, যেন লোকেরা তাঁর গৌরব করে। তিনি সবসময় চেয়েছিলেন, যেন সমস্ত গৌরব যিহোবা লাভ করেন।—যোহন ৮:২৮.

যখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই

১৩, ১৪. কীভাবে বিনয়ী মনোভাব আমাদের উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে?

১৩ আমরা যখন সিদ্ধান্ত নিই অথবা অন্যেরা যখন এমন সিদ্ধান্ত নেয়, যেটা আমাদের প্রভাবিত করে, তখন আমাদের বিনয়ী হতে হবে। প্রেরিত পৌল যখন কৈসরিয়াতে ছিলেন, তখন তিনি যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া কার্যভার সম্পন্ন করার জন্য যিরূশালেমে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, ভাববাদী আগাব পৌলকে বলেছিলেন, তিনি যদি যিরূশালেমে যান, তা হলে সেখানে তাকে বন্দি করা হবে। এমনকী তাকে হত্যাও করা হতে পারে। ভাইয়েরা পৌলকে অনুরোধ করেছিলেন, যেন তিনি সেখানে না যান। কিন্তু, পৌল যিরূশালেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এর কারণ কি এই যে, তিনি নিজের উপর নির্ভর করেছিলেন? না, পৌল বিনয়ী ছিলেন এবং যিহোবার উপর পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন। ভাইয়েরাও বিনয়ী মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তাই, তারা পৌলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন এবং তাকে যেতে দিয়েছিলেন।—প্রেরিত ২১:১০-১৪.

১৪ বিনয়ী হওয়া আমাদের উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে আর তা এমনকী সেই সময়ও, যখন সমস্ত বিষয় আমাদের জানা থাকে না অথবা সেগুলোকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমাদের হাতে থাকে না। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা হয়তো পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করার কথা চিন্তা করছি। কিন্তু, আমরা যদি অসুস্থ হয়ে পড়ি, তা হলে? কী হবে, যদি আমাদের বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়? আমরা যখন বৃদ্ধ হয়ে যাব, তখন আমরা কী করব? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি না, এমনকী যদিও এগুলো নিয়ে আমরা প্রার্থনা করি এবং চিন্তা করে থাকি। (উপ. ৮:১৬, ১৭) কিন্তু, আমরা যদি যিহোবার উপর আস্থা রাখি, তা হলে আমরা নিজেদের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করব এবং তা মেনে নেব। আমরা সমস্ত বিষয় পরীক্ষা করব, পরামর্শ চাইব এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নির্দেশনা চেয়ে প্রার্থনা করব। এরপর, যিহোবার আত্মা আমাদের যে-নির্দেশনা দেবে, সেটা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। (পড়ুন, উপদেশক ১১:৪-৬.) যিহোবা আমাদের সিদ্ধান্তে আশীর্বাদ করবেন অথবা তিনি আমাদের সংকল্প বা পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে সাহায্য করবেন।—হিতো. ১৬:৩, ৯.

যেভাবে আমরা আরও বিনয়ী হতে পারি

১৫. যিহোবার বিষয়ে ধ্যান করা কীভাবে আমাদের নত থাকতে সাহায্য করবে?

১৫ কীভাবে আমরা আরও বিনয়ী হতে পারি? আমরা চারটে উপায় বিবেচনা করব। প্রথমত, আমাদের যিহোবার বিষয়ে ধ্যান করতে হবে অর্থাৎ তিনি কী ধরনের ঈশ্বর, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। আমরা যখন নিজেদেরকে যিহোবার সঙ্গে তুলনা করি, তখন আমরা বুঝতে পারি, আমরা কত ক্ষুদ্র এবং আমাদের জ্ঞান কত সীমিত। (যিশা. ৮:১৩) মনে রাখবেন, আমরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সেবা করি, কোনো মানুষ অথবা স্বর্গদূতের নয়। এই বিষয়টা নিয়ে ধ্যান করা আমাদের “ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে” নত হতে সাহায্য করবে।—১ পিতর ৫:৬.

১৬. কীভাবে আমাদের প্রতি যিহোবার প্রেম নিয়ে ধ্যান করা আমাদের বিনয়ী হতে সাহায্য করে?

১৬ দ্বিতীয়ত, যিহোবা যে আমাদের কতটা ভালোবাসেন, তা নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে আমরা আরও বিনয়ী হতে পারি। পৌল মণ্ডলীকে মানবদেহের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। যিহোবা দেহের সমস্ত অঙ্গকে মূল্যবান হিসেবে তৈরি করেছেন। (১ করি. ১২:২৩, ২৪) একইভাবে, যিহোবা আমাদের প্রত্যেককে মূল্যবান বলে গণ্য করেন। তিনি অন্যদের সঙ্গে আমাদের তুলনা করেন না এবং আমরা যখন ভুল করি, তখন তিনি আমাদের প্রতি প্রেম দেখানো বন্ধ করে দেন না। যিহোবা যে আমাদের ভালোবাসেন, তা জেনে আমরা সুরক্ষা অনুভব করি।

১৭. আমরা যদি অন্যদের মধ্যে ভালো কিছু খোঁজার চেষ্টা করি, তা হলে কীভাবে আমরা উপকার লাভ করি?

১৭ তৃতীয়ত, আমরা সেইসময় বিনয়ী মনোভাব দেখাই, যখন আমরা অন্যদের মধ্যে ভালো কিছু খোঁজার চেষ্টা করি, যেমনটা যিহোবা করে থাকেন। মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হতে চাওয়ার অথবা অন্যদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার পরিবর্তে, আমরা তাদের কাছ থেকে পরামর্শ চাইব এবং তাদের মতামত মেনে নিতে ইচ্ছুক হব। (হিতো. ১৩:১০) আমাদের ভাই-বোনেরা যখন বিশেষ কার্যভার লাভ করে, তখন আমরা আনন্দিত হই। আর আমরা যিহোবাকে এই বিষয়ে ধন্যবাদ দিই যে, তিনি আমাদের প্রত্যেককে তাঁর সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন।—১ পিতর ৫:৯.

১৮. কীভাবে আমাদের বিবেককে প্রশিক্ষিত করা আমাদের আরও বিনয়ী হতে সাহায্য করবে?

১৮ চতুর্থত, আমরা যখন আমাদের সংবেদ বা বিবেককে প্রশিক্ষিত করার জন্য বাইবেলের নীতি ব্যবহার করি, তখন আমরা আরও বিনয়ী হই। এই নীতি আমাদের যিহোবার অনুভূতি ও চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে শিখতে সাহায্য করে। আমরা যখন বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি, তখন আমরা তাঁকে খুশি করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হই। আমরা যখন অধ্যয়ন করি, প্রার্থনা করি এবং যা শিখি, তা কাজে লাগাই, তখন আমাদের বিবেক আরও দৃঢ় হয়। (১ তীম. ১:৫) আমরা অন্যদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করতে শিখি। আমরা যদি এগুলো করি, তা হলে যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী আমাদের ‘পরিপক্ব করিবেন’ ও সেইসঙ্গে আমাদের আরও বিনয়ী হতে সাহায্য করবেন।—১ পিতর ৫:১০.

১৯. কী আমাদের চিরকাল বিনয়ী মনোভাব বজায় রাখার জন্য সাহায্য করবে?

১৯ এই প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখিত যিহূদার সেই ভাববাদীর কথা কি আপনার মনে আছে? যেহেতু তিনি বিনয়ী মনোভাব বজায় রাখেননি, তাই তিনি নিজের জীবন ও সেইসঙ্গে যিহোবা সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হারিয়েছিলেন। কিন্তু, এমনকী কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা বিনয়ী মনোভাব বজায় রাখতে পারি। যিহোবার অনেক বিশ্বস্ত দাসের উদাহরণ প্রমাণ দেয় যে, এটা সম্ভব। আমরা যত দীর্ঘসময় ধরে যিহোবাকে সেবা করব, তাঁর উপর আমাদের নির্ভরতা ততই বৃদ্ধি পাবে। (হিতো. ৮:১৩) আমাদের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আমরা ক্রমাগত যিহোবার সঙ্গে গমনাগমন করতে পারি। এটা হচ্ছে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড়ো সম্মান। তাই, আসুন আমরা বিনয়ী মনোভাব বজায় রাখার এবং চিরকাল যিহোবার সঙ্গে গমনাগমন করার জন্য যথাসাধ্য করি।